www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শিরোনামহীন (শেষ পর্ব)

আগের অংশের পর...

কথায় কথায় কে যেন একবার বলেছিল দুঃসংবাদ নাকি বলে কয়ে আসে না।আমার ক্ষেত্রে হল উল্টোটা। সুসংবাদ বলে আসল না।এমন একটি সংবাদ যা শোনার জন্যে গত তিন রাত আমার ঘুম হয়নি।নিলুর নাকি জ্ঞান ফিরেছে।কি করব বুঝতে পারছি না।দেখতে যাওয়া উচিত।কি আশ্চর্য!দুদিন হসপিটালে ছিলাম। ইশ্ খবরটা তখন আসতে পারল না! কি অপয়া আমি।

রোগীকে দেখতে গেলে নাকি খালি হাতে যাওয়া অভদ্রতা।নিলু বলত। কি নেওয়া যায়?আংটি নাকি চুড়ি। হাত ভরা চুড়িতে নিলুকে যা লাগে না!

বেডটা একটু উচু করে রাখা। বেশীক্ষণ এভাবে ঘুমোলে ঘাড় ব্যাথা হওয়ার কথা।নিলু যে কিভাবে শোয়ে আছে কে জানে।এত্ত গোলাপ দেখে অবাক হল ও।৫০০ তো আর সংখ্যায় কম নয়।ও ভাঙ্গাঁ গলায় বকে দিল আমাকে।এরকম পাগলামো করে কেউ?আমি ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বললাম-ভালবাসি যে তোমাকে।ও আস্তে করে ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল।কি আশ্চর্য!লোকলজ্জার পাঠের বুঝি এখানেই সমাপ্তি!

-'আমার স্বপ্নকে আমি গোলাপ রাঙ্গা আলোয় দেখতে চাই নিলু।'
কিছু বলল না নিলু।অনেকক্ষণ পর বলল,
-'আলোটা বন্ধ করে দিবা।'
-'আমাকে দেখতে বুঝি ভয় লাগে?'
-'তা কেন আমার যে আধারে না আলোতেই ভয়।আচ্ছা গিটারটা আনছ? আর্টসেলের ঐ গানটা একটু গেয়ে শোনাও না।'
-'আমি কি পারি!'
জোর করল নিলু।আনাড়ি হাতে গিটারটা ধরলাম।নিলুর গিটার।কত মায়া আর ভালবাসায় আবৃত এটা। আমার হাতে মানায় নাকি।গাইতে গাইতে থেমে গেলাম।
-'নিলু আমি বরং বাজাই।'
ও হাসল।সম্মতিসূচক হাসি।

আস্তে করে নিলুর আধমরা হাতটা ধরলাম।চোখের সামনে একটা রঙিন কাগজ মেলে হাসলাম।ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি ফোটাল নিলু। মরা কন্ঠে বলল,
-'বিধাতা দিছেন প্রাণ
থাকি সদা ম্রিয়মাণ,
শক্তি মরে ভীতির কবলে,
পাছে লোকে কিছু বলে।'
হাসলাম আমি।লোকে কি ভাবে না ভাবে সে ভয়টা তাহলে এখনও কাটেনি!অনেকদিন পর ওর কন্ঠে আবৃতি শোনলাম।মরা কন্ঠ।এই মরা কন্ঠের আবৃতিই যে আমার কানে অমৃতের মতো বিধে। আরেকটা শোনাও না,নিলু।আমার কবিতাগুলো যে ঝরে গেছে অমিত, সুনিলের হলদে পাতার মতো।

কাঁদছে নিলু।কিছু বললাম না। কাঁদুক মেয়েটা।কান্নাই হয়তো এখন ওর একমাত্র সঙ্গীঁ।আমাদের নিয়ম কানুন গুলো যে বড়ই অদ্ভুত। আমরা যে সামাজিক জীব।আচ্ছা, এই 'আমাদের' মধ্যে কি ও পরে? মনে হয়না।জানালার দিকে তাকালাম।পরিষ্কার চাঁদ দেখা যাচ্ছে।আহ্,মায়াবী চাঁদ!কাঁদে না নিলু,আমি তো আছি!

<৫>
অবাক জোছনা পড়েছে আজ। কৃত্রিম আলোর দরকার নেই।ইশ্ এখন যদি লোডশেডিং হতো!ভাবছি গত কয়েকদিনের কথা।মানুষ কত দ্রুতই না বদলে যায়।মনে পড়ছে আমাকে Mention করে বন্ধুর দেওয়া Status টা।
"শোনালাম Shining amim এর বান্ধবীকে নাকি গত দুদিন খোঁজে পাওয়া যায় নি?কিউরিয়াস মাইন্ড জানতে চায় এই দুদিনে ও কি করল?
#কেউ আম্রে মাইরালা"
কানে বাজছে বেড়াতে আসা খালার কথাগুলো।
-'শোনলাম নিলু নাকি হসপিটালে। থাকবে তো?'
কি লাভ থেকে?কতদিন আর থাকতে দিবে তোমরা?কাছের মানুষগুলো কত তাড়াতাড়ি দূরে চলে যেতে পারে তা আমার থেকে ভাল আর কে বুঝে।

-'কি কর,ভাইয়া।'
-'কিছু নারে।'
বোনটা যে কখন কাছে এসে বসেছে টেরই পাইনি।
-'কবিতা শুনবি দীপু,জীবনানন্দের কবিতা?'
-'শুনি'
-'পান্ডুলিপি কাছে রেখে ধূসর দীপের কাছে ছিলাম বসে
শিশির পড়ছিল ধীরে ধীরে খসে,
নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি,
উড়ে গেল কুয়াশায় কুয়াশার থেকে দূরে আরো কোন কুয়াশায়।'


মনে মনে বললাম তৈরী হয়ে যা রে বোন।সময় এসে গেছে।ছুড়ে ফেললে উড়ে কুয়াশা হয়ে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়ে যা।

সমাপ্ত।।

কৃতজ্ঞতা:জীবনানন্দ দাশ,কামিনী রায় এবং অসম্ভব প্রিয় মানুষ মুস্তাকিম মান্নাকে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৬৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/১১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর,আরো সুন্দর, না অনেক সুন্দর। ট্রেজেডি বরাবরের মতই ভাল লাগে তার মধ্যে তিনটা পর্বেই ধোঁয়া ধোঁয়া কাহিনী! পুরাই জোশ।এন্ডিং টাও চরম। তবে জীবনানন্দ দাশ,কামিনী রায়দের সাথে নিজের নাম যে একই কাতারে থাকবে সেটা কল্পনাতীত।আমি গর্বিত কারন আমি তোমার বন্ধু,
    আমি গর্বিত কারন আমি মুস্তাকিম হতে পেরে। ধন্য হোক তোমার চলার পথ, ধন্য হোক সকল সৃষ্ট সাহিত্য,ধন্য হোক!
  • শেষ কেনাে........................?
 
Quantcast