www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অভিমান

১.

প্রিয় রুদ্র,

"আঁধারে ডুবে থাকতে থাকতে আমার শরীরে জমাট বাঁধা রক্তগুলো কালচে হয়ে গেছে। এক নতুন সূর্যোদয়ের আশায় আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আজ... চার দেয়ালে বন্দী থেকে আর কতোকাল? সাধ আহলাদকে পিষে পিষে মেরে ফেলেছে আমার নিয়তি! তবু আমি আজ আবার বাঁচার স্বপ্নে ছেড়ে চলে যাচ্ছি নিজের হাতে সাজানো ঘর! যে স্বপ্নে নিয়ে সমাজের নিয়ম মেনেই আশ্রয় নিয়েছিলাম তোমার এই নীড়ে, অবহেলার ঝড়ে তছনছ করে দিয়েছো তুমি তিলে তিলে। সাত পাঁকে বাঁধার সময় অগ্নিকে সাক্ষী রেখে তুমি যে প্রতিজ্ঞা করেছিলে, সে প্রতিশ্রুতি গ্রাস করেছে তোমার অতিরিক্ত ব্যস্ততা আর আরো উপরে উঠার বাসনা! অথচ একবার ভাবো আমি তো তোমার কাছে দালান কোঠার নির্জনতা চাই নি; চেয়েছি কুঁড়েঘরে এক চিলতে ভালোবাসা! আমি টাকার বিছানায় শুয়ে থাকতে চাই নি, আমি চেয়েছিলাম মেঝেতে শুয়ে শুয়েই ভালোবাসার স্বপ্ন বুনতে। সোনালী দিনগুলো অতি অল্পতেই বিলীন হয়ে গেলো বিবর্ণ চাদরে। যাক! পেছনে ফেরার সময় এখন আর নেই! চোখের জলগুলো নাক-গাল বেয়ে পড়েছে অজস্র বার, তোমার চোখ আমার কান্নার যে ভাষা বোঝে নি। সন্ধ্যা নামার আগেই আমি চলে যাচ্ছি আমার পুরনো ঠিকানায়। হয়তো আমার বাবা-মা আমার এই চলে যাওয়াকে মেনে নিবে না সহজে। কিন্তু আমি নিরুপায়, আর আমার শেষ আশ্রয়স্থল তুমি নও, আমার বাবা-মা। ফ্রিজে তোমার প্রিয় খাবার রান্না করা আছে। গরম করে নিতে একটু কষ্ট করতে হবে আর কি! জানি অভ্যাস হয়ে যাবে দু'দিন পরেই। পারলে নিজের যত্ন নিও। আর এখন থেকে অফিস থেকে ফিরে নিজের জামা-কাপড়গুলো খুলে একটু গুছিয়ে রেখো, এতে তোমারই সুবিধা হবে। আমি চলে যাচ্ছি। তুমি ভালো থেকো। ওহ! শেষ কথা! নিজেকে পুরোপুরি না শোধরে ভুল করেও আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে এসো না......"

ইতি
চন্দ্রিমা

২.

" কেনো জানি আজ স্বাধীন স্বাধীন মনে হচ্ছে। জানালাটা খুলে রেখে এক মগ গরম কফির সাথে একটা আস্ত ধূম্রশলাকা হজম করলাম। আজ আমাকে নিষেধ করার কেউ নেই! অফিস থেকে ফিরে এসে টেবিলের উপর রেখে যাওয়া তোমার চিঠিটা একবার পড়লাম। একবারই! দ্বিতীয়বার পড়ার সাহসটা আর সঞ্চয় করতে পারলাম না! আজ রাত স্বাধীনভাবে হয়তো কতো কিছু করলাম, কিন্তু তোমার চিন্তার বেড়াজাল থেকে মুক্তি পেলাম কই? তুমি তো না থেকেও আমার ঘাড়ে এসে বসে রইলে! আমার মনের কথাগুলো ঠিকমতো কখনোই বুঝাতে পারি নি তোমাকে। হয়তো ব্যস্ততা আমাকে সে সময়টা দেয়ই নি! পেটের দায়ে আমি ছুটেছি মত্ত হয়ে; করি নি প্রেমের অণ্বেষণ! তাই বলে কি আমার বুকে ভালোবাসা জমে নি! তুমি শুধু বাহিরের আবরণটাই দেখলে! খোলসটার ভেতরের তাজা রক্তের সঞ্চালন দেখলে না! আমি জানি আমার আজকের লেখা এই ডায়েরির পাতা টা তুমি দেখবে না কখনো। তাই বলছি আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি! কিন্তু বিধির পরিহাস!!

তোমায় নিয়ে একদিন ছুটির দিনে বাইরে গিয়ে না ঘুরে, আমি কেনো ওভার টাইম করি জানো?? তোমার জন্যেই। যাতে মাস শেষে আমার অর্থ-থলেতে ক'টা টাকা বেশি আসে! মাঝে মাঝে যখন তুমি অভিযোগ করতে বিয়ের পর আমি তোমাকে কিছু দিতে পারি নি! আমার বুকের বাম দিকে তীরের মতো বিঁধতো! আমি তো আট দশটা স্বামীর মতো তোমাকে ফুটফুটে কোন সন্তান উপহার দিতে পারি নি এই পাঁচ বছরের সংসারে! তাই আমি চাইতাম তোমাকে বৈষয়িক সব সুখ দিতে! আসলে আমি ভুল ছিলাম! একটা মেয়ের কাছে মাতৃত্বের সুখানুভূতির চেয়ে বেশি আনন্দ আর কিসে হতে পারে!

আমার দেয়া সকল কষ্ট সহ্য করতে পারবে এই কথাটা বলেই তুমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এই অধমের কাছাকাছি প্রথম এসেছিলে, ভুলে গেলে?? আমি বলতাম বাস্তবতা খুব কঠিন! তুমি বলতে তোমার ভালোবাসা দিয়ে তুমি সব কঠিনকে পানির মতো স্বচ্ছ করে দিবে, চলে যাবার আগে একবারো কথাগুলো কানে বাজলো না তোমার!! তবে কি আমি ধরে নিবো, তোমার অতৃপ্তির সমস্ত জায়গা জুড়েই আমার সেই পুরষত্বের ব্যর্থতা?? এই ভেবেই তোমার এতো অভিমান!! তবে আমার নির্ঘুম রাত আজ আমি তোমাকে দিলাম।

আমি তোমাকে ফেরাতে যাবো না তোমার আঙিনায়। তবে আমার হৃদয়ের দ্বার সদা উন্মোচিত থাকবে তোমার অপেক্ষায়। কারণ আমি আজো বিশ্বাস করি, সম্পর্কের টানাপোড়নে অশান্তি ক্ষণিকের জন্য চলে আসে, বিতৃষ্ণায় ভরে যায় মন; ভালোবাসা তবু মরে না।।"

০৫.০৮.২০১৭
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭২৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৮/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast