www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

দার্জিলিং রোমাঞ্চকর ও নৈসর্গিক দৃশ্যের মেলাবন্ধন

কোথাও কোন ঝাপিয়ে পড়া ঝরনা ও তার নেচে চলা গর্জন, কোথাওবা ইউক্যালিপ্টাসের গন্ধে ম-ম করছে জঙ্গল, কোথাও শীর্ণকায় খাড়াই পথ আবার কোথাও মাইলের পর মাইল সবুজ উপত্যাকা, হিমালয়ের মাথায় সর্পিল আকারের পথে চলন্ত গাড়ি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা’র অতুলনীয় মোহনীয় দৃশ্য! ভারী মজার সেসব দৃশ্য! মেঘের ভেতর দিয়ে, বাইরে আগস্ট মাসের প্রচন্ড গরমে পুরো দার্জিলিং যেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিশাল কম্পার্টমেন্ট। মেঘ ছোঁ’য়া যায়-যেন হিমেল ঠান্ডা বরফ!

ছবি- দার্জেলিং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা’র অপুর্ব দৃশ্য।

নিউজলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি। তারপর ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে ‘সুকনা’ স্টেশন পেরোতেই চোখ জুড়িয়ে গেল সৌন্দর্যে।মায়াময় চা বাগানের ভেতর দিয়ে ট্যাক্সি চলছে আপন গতিতে।চা বাগানগুলো যেন অসম্ভব সুন্দর-যেন সবুজের সিঁড়ি যা মিশে গেছে আকাশে। আকাশ আর চা বাগান গুলো যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে! যতই পথ এগোয় ততই মুগ্ধ হই।‘ঘুম’ স্টেশন দেখে অবাক! মেঘ কুয়াশায় যেন ঢাকা ঘুম স্টেশন সহ সমগ্র দার্জিলিং।এদৃশ্য পাহাড়েও।


ছবি- ঘুম স্টেশন।

কার্শিয়াং’র ডাইহিল গার্লস স্কুল, চা বা কমলালেবুর বাগান আর রঙিন আলোয় কাঞ্চনজংঘার অসামান্য দৃশ্য-এক কথায় অপর্ব! যেন সবুজের জলসাঘর।লম্বা লম্বা ইউক্যালিপ্টাস বা অন্য প্রজাতির কিছু বৃক্ষ,পাহাড় বেয়ে পড়া স্বচ্ছ সাদা ঝাপিয়ে পড়া ঝরনা,উচুঁ-নিচু মাইলের পর মাইল সবুজ উপত্যাকা যেন প্রাকৃ্তিক সৌ্ন্দর্যের নীলাভূমি।সৃষ্টিকর্তা যেন এসব তৈ্রি করেছেন আপন মাধুরী দিয়ে।সড়কের পাশে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ফাঁকা ফাঁকা আধাপাঁকা ঘর বা সুদৃশ্য আবাসিক হোটেল যেন আমাদের দেশের দোকান (টং) ঘর। এ দৃশ্য সড়ক পথে দিয়েছে নান্দনিকতা।বর্ষা যদিও প্রায় শেষ তবুও ঝরনার পানির পরিমান বেশ।এসব দৃশ্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে!

পাহাড় কেটে তৈ্রি আঁকাবাঁকা সড়ক পথ যে মনে করিয়ে দেয় ছবির দৃশ্য। যা দেখে এতোদিন কল্পনা করতাম এমন দৃশ্য কি হতে পারে! হিমশীতল মেঘ ছঁতে ছঁতে সর্পিল পথে যতই যাচ্ছি রোমাঞ্চ ততই বাড়তে থাকে।আর দুরের কাঞ্চনজঙ্ঘা’র অভূতপুর্ব দৃশ্য না দেখলে বিস্বাসই হবে না। মেঘ যে ছোঁইয়া যায় বা মেঘের ভেতর দিয়ে যাওয়া যায় তা দার্জিলিং এ না আসলে সেসব কাহিনী রুপকথা বলে মনে হতো।চিমটি কেটে দেখি বাস্তব না দৃষ্টিভ্রম! কী অপুর্ব দৃশ্য! ভোলা যাবে না কোনদিন!

ছবি- পাহাড়ের গায়ে চা বাগান

অনেকটা দুরত্বে প্রায় সোয়া তিন ঘন্টা চড়াই পথ অতিক্রম করে আমরা পৌঁছালাম দার্জিলিং পিকে।ওয়াচ টাওয়ার বা সুউচ্চ হোটেল থেকে দার্জিলিং শহর, কাঞ্চঞ্জঙ্ঘা’র দৃশ্য, মেঘ আর মাঝে মাঝে বৃষ্টি’র মধ্যে শহরটা দেখতে খুবই মনোরম।পাহাড়ের গায়ে পরিকল্পিত চা বাগান আর সড়কপথ ধরে হিমালয়ের ট্রয় ট্রেনের লাইন,পাহাড়ের বুক চিরে ছোট ছোট স্টেশন- যেন স্বপ্নময় ভূবনে হারিয়ে যাচ্ছি! পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত “ঘুম” স্টেশন, পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আপনমনে চলাফেরা বা কাজকর্ম, নির্জন আবাসভূমিতে মাঝে মাঝে পাখির ডাক বা ট্রয় ট্রেনের ধীর গতিতে ঝমঝম শব্দ পরিবেশকে করে আন্দোলিত করে।সৃষ্টি হয় রোমাঞ্চকর অনুরণ!পাইনের বন, হাউজিং কমপ্লেক্স, পুরাতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুরম্য স্থাপত্য আরো কত কী! ‘টাইগার হিল” (ওয়াচ টাওয়ার) থেকে দেখা যায় ছোট ছোট জঙ্গল, হিমশীতল মেঘস্তর আর গাছের ডালে ডালে খাবার খঁজে বেড়াচ্ছে রঙিন বিভিন্ন পাখি, শীত পোষাক পরে কর্মব্যস্ত পাহাড়ি জনগন! যেন রঙিন দুনিয়া! ‘টাইগার হিল” থেকে দেখা যায় সুর্যোদয়ের অপুর্ব দৃশ্য!

কোলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নিউজলপাইগুড়ি ৫৮৬ কিমি। নিউজলপাইগুড়ি এনজেপি নামেই পরিচিত। এনজেপি থেকে ভাড়ায় বা শেয়ারে ট্যাক্সি করে তিন ঘন্টার পথ দার্জিলিং।ইচ্ছে করলে যে কেউ ‘হিমালয়ন ট্রয় ট্রেন” এ যেতে পারবেন। সময় লাগবে ৭-৮ ঘন্টা। শিয়ালদহ বা হাউড়া থেকে এনজেপি বা গোয়াহাটিগামী যে কোন ট্রেনে চেপে যাওয়া যায়।উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস,কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস,পদাতিক, বা সর্বাধিক পরিচিত “দার্জিলিং মেল” এ নিউজলপাইগুড়ি তারপর দার্জিলিং! রিজার্ভেশন টিকেট করতে হলে আগেই বুকিং দিতে হবে।এনজেপি, শিলিগুড়ি বা দার্জেলিং এ থাকার জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।তবে আগে থেকেই বুকিং দিলে ভাল হয়।দার্জিলিং এ প্রচন্ড শীত।তাই শীতের পোষাক নিতে ভুলবেন না সাথে একটি ছাতাও।
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ১৪১৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৯/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ... ২৫/১১/২০১৪
    আপনার লেখা পড়ে দার্জিলিং এর একটি ছবি মনের ভেতর এঁকে নেয়া যায়। তবে, আপনি লিখেছেন ছবির কথা কিন্তু পোষ্টে কোন ছবি নেই। সম্ভব হলে ছবিগুলো আপলোড করে দিয়ে পোষ্টটিকে আরো হৃদয়গ্রাহী করে তুলতে পারেন।

    সর্বপরি, আপনার লেখা ভালো লাগলো। তবে, আরো বিস্তারিতভাবে তুলে দিতে পারলে, আমরা যারা কখনো দার্জিলিং-এর শুধু নাম শুনেছি, কিন্তু দেখিনি; তারা আপনার লেখার আঁচরে একটি কল্পচিত্র তৈরী করতে পারতাম।

    ভালো থাকুন।
  • ধন্যবাদ
  • সহিদুল হক ০১/১০/২০১৪
    জানলাম।
 
Quantcast