ব্যাংকিং খাতে আর্থিক অনিয়ম বিষয়ে আমার কিছু কথা
--------------------------------------------
এই মুহুর্তে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কথা বেশ মনে পড়ছে। সামনে পেলে তার কাছে ক্ষমা চাইতাম। কেন ক্ষমা চাইতাম অলরেডি চিন্তাশীল বন্ধুরা বুঝতে পেরেছেন। যারা কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করার মত সময় বা ধৈর্য পান না তাদের জন্য বলছি। ক্ষমা চাইতাম কারণ তাঁর বলা একটি কথা শুনে আমরা হাসাহাসি করেছিলাম। সেই যে ৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে তিনি বলেছিলেন সামান্য টাকা। তখন আমরা হাসাহাসি করেছিলাম। ছয় হাজার কোটি টাকা নাকি সামান্য টাকা! আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর নিতে নেই প্রবাদটিও আবার প্রমানিত হলো। আমরা আদার ব্যাপারী তাই জাহাজের খবর নিতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছি।
আমরা নবগঙ্গা নদীর মাঝি তাই সাগরের ঢেউ বা গভীরতা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। সে কারণেই ৬ হাজার কোটি টাকাকে মাত্র বা সামান্য বলা শুনে আমরা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি তার বলা কথাটা পুরোপুরি সত্য। এই যে কয়েকটি ব্যাংক থেকে একটি মাত্র গ্রুপ ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে এটা দেখেতো তাঁর কথাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ৩০ হাজার কোটি টাকার পাশে ছয় হাজার কোটি টাকা রাখলে তা অবশ্যই সামান্য মনে হবে। এই পরিমান টাকা খরচ করে পুরো পৃথিবীকে বিনোদন দিতে বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে কাতার!
শুনতে ৩০ হাজার কোটি টাকা খুব সহজেই শোনা গেলেও বাস্তবে এই পরিমান টাকা একসাথে রাখলে পুুরো বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের মত একটা বড় বিল্ডিং ভরে যাবে।
এখন কথা হলো ঘরের চালে যে টিন থাকে তাতে ছিদ্র কিন্তু একদিনে বড় হয় না। প্রথমে সুই হয়ে ঢোকে তারপর কুড়াল হয়ে বের হয় বলে যে একটা আঞ্চলিক প্রবাদ আছে ঘটনা কিন্তু সেরকম। এই যে বিরাট অংকের কারসাজি এটিতো একবারে হয়নি। হয়েছে ধীরে ধীরে এবং পরিকল্পিত ভাবে। আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া ছিল তা এক অজ্ঞাত কারণে ২০২০ সালে সরিয়ে নেওয়া হয়! জাতির সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হতে পারে কেন এবং কোন যুক্তিতে পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল? যারা সরিয়ে নিয়েছিলেন তাদেরকে এর জবাব দিতে হবে। ঋণ অনিয়মতো আজকের ঘটনা নয়। এই সন্দেহ তৈরি হয়েছিল আরও এক যুগ আগে। ঋণ অনিয়মের আশঙ্কায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক (তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা ব্যাংকটির বিভিন্ন সভায় অংশ নিতে শুরু করেন।
প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেলো বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি শিল্প গ্রুপের হাতে চলে যায়। প্রথম আলোর ভাসুর হয় বলে সম্ভবত গ্রুপের নাম উল্লেখ করা হয়নি অথবা তাদের কী এক সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুযায়ী নাম উল্লেখ করেনি। তবে সবাই জানে গ্রুপটির নাম এসআলম গ্রুপ। এরপর ২০২০ সালের মার্চে ওই পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক! বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক (তৎকালীন) গভর্নর ফজলে কবির ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক রাখার পক্ষে ছিলেন না। এই তথ্যটি জেনে আমি সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছি। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর যদি পক্ষে না থাকেন তাহলে আর কী বলার থাকে। যদিও এখনো অন্য ছয়টি ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত পর্যবেক্ষক রয়েছে। তাহলে ইসলামী ব্যাংকে থাকলে দোষ কী ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর নেই। এর বাইরে নতুন করে আরও কয়েকটি ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়েছে। এখন আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে যে মাননীয় গর্ভনর সাহেব কেন এবং কোন যুক্তিতে এর পক্ষে ছিলেন না?
মালিকানা বদলের পর ইসলামী ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন বিবেচনায় পর্যবেক্ষক সরিয়ে নিল, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ এ কথাও বলছেন এখন, অনিয়মের সুযোগ করে দিতেই ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কাগুজে কোম্পানির নামে যে প্রক্রিয়ায় ব্যাংকটি থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের আদলেই।
ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক ঋণ অনিয়মের ঘটনা সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক, বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়মের চেয়েও ভয়াবহ বলে মনে করছেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকটি থেকে কী পরিমাণ অর্থ এখন পর্যন্ত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা অনুসন্ধানে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন দল। আমার মতে শুধু ওই ব্যাংকে খতিয়ে দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত হবে না বরং গ্রুপের অন্যান্য ব্যাংকেও খোঁজ নিতে হবে পাশাপাশি সেই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা পর্ববেক্ষক সরিয়ে নিয়েছিলেন তাদের বিষয়েও খোঁজ নিতে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করলে তা কতটা স্বচ্ছ হবে সেটাও ভাবার বিষয়।
ধান ভানতে শীবের গীত বলে যে প্রবাদটি আছে তাও এখানে টেনে আনতে চাই। এই যে খাস বাংলায় বাঁশ খাওয়া বলে যে একটা কথা প্রচলিত আছে আমরা নানা ক্ষেত্রে তা দেখতে পাই। ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে কথাটা কিছুটা প্রযোজ্য কারণ বাঁশখালী,পটিয়া,সাতকানিয়া নামে এলাকাও যে এর সাথে কিছু অংশে যুক্ত। যাদের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি হওয়ার যোগ্যতা নেই তারাও বাঁশখালী ও এর আশেপাশের লোক হওয়ায় অনায়াসে ব্যাংকার বনে গেছে। শুধু তাই নয় যতটা জেনেছি তাতে বুঝেছি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় নিজস্ব লোক রাখা আছে এটা মনিটর করার জন্য যে কেউ যেন গ্রুপের বিষয়ে কিছু বললে তা উপর মহলকে জানানো যায়। চাকরি দেওয়ার সময় যোগ্যতা বিবেচনা না করে বাঁশখালী বা নির্দিষ্ট এলাকা বিবেচনা করে চাকরি দেওয়াটাও ব্যাংকের জন্য কাল হয়েছে। ক্ষমা চাইছি নানা ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণীর চাকরি যারা করেন তাদের কাছে এবং পটিয়া,সাতকানিয়া, বাঁশখালীর অন্যদের কাছে। আমি তাদেরকে ছোট করতে চাইনি।
সাতকানিয়া,পটিয়া এবং বাঁশখালী এলাকার যত সংখ্যক মানুষ গ্রুপের ব্যাংকে আছে তার বিশ ভাগের একভাগ লোকও অন্যান্য পঞ্চাশটি ব্যাংকে নেই যাদের বাড়ি ওই এলাকায়। যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি না দিয়ে এলাকাভিত্তিক এবং নিজেদের ফায়দা লুটে নেওয়ার জন্য কিছু মানুষকে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে যে কোনো প্রতিষ্ঠান ধ্বসে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে আপনাকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া মানেই আপনার মুখ বন্ধ রেখে আপনাকে দিয়ে কিছু করিয়ে নেওয়া। হয়েছেও তাই। একটি লোনের আবেদন থেকে শুরু করে পাশ হয়ে গ্রাহকের হাত অব্দি যাওয়া পর্যন্ত কী পরিমান প্রসিডিউর ফলো করতে হয় তা আমি ব্যক্তিগত লোন নিতে গিয়ে দেখেছি এবং স্টাডি করে দেখেছি বড় লোনগুলো আরও কতটা জটিল। এই যে ফিল্টারিং হয় বা স্তরে স্তরে ব্যারিকেড পার হয়ে একটি লোন পাশ হয়। কোথাও না কোথাও ঘাপলা ধরা পড়বেই। কিন্তু প্রতিটি চেক পোস্টে বাংলা সিনেমার মত যদি নিজস্ব চামচা বা পাচাটা লোক থাকে তবে আপনাকে কোনো চেকপোস্টেই আটকানো হবে না। আপনি অনায়াসেই পার হয়ে যেতে পারবেন।
ব্যাড লোনগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টা এমনই ঘটে। আর যখন ক্ষমতাধরদের অন্যায় কেউ আপস করতে রাজি হয় না তখন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। যার নজির অহরহ।
আবার ফিরে আসি প্রথম আলোর প্রতিবেদনে।এদিকে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখলাম ইসলামী ব্যাংক থেকে কেন পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তার যথাযথ কোনো উত্তর দিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো মন্তব্য না করার নীতি নিয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদের কাছে গতকাল সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক নিয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়ার পর ব্যাংকটি থেকে কাগুজে কোম্পানি খুলে অর্থ বের করা শুরু হয়। প্রথমে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এই অনিয়ম শুরু হয়। ফলে পাঁচ বছরে এই শাখার ঋণ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বের হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।
চট্টগ্রামে ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শাখা থেকে একই প্রক্রিয়ায় টাকা বের করা হয়। আর ২০১৭ সাল থেকে খাতুনগঞ্জ শাখার দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের ঋণসংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পাশাপাশি দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া প্রধান কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তাও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। এভাবে ২০ থেকে ৩০ কর্মকর্তা মিলে ব্যাংকটিতে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আর ব্যাংকটির পরিচালকেরা বেশির ভাগ একটি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হওয়ায় তারাও এতে সমর্থন দেয়।
ব্যাংকটির ঋণের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কাগুজে কোম্পানিগুলোর নামে সর্বোচ্চ ঋণের পরিমাণ ছিল দেড় হাজার কোটি টাকার কিছু কম। কারণ, ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধন ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা। এর ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৫০৪ কোটি ঋণ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। আর ওই পরিমাণের কম ঋণ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়ার দরকার হয় না। তাই কাগুজে কোম্পানিগুলোর ঋণের পরিমাণ ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনা উল্লেখ করি। আমার ফেসবুক বন্ধু নুরুল আবসার ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন যার শিরোনাম ছিল “ শেষ পযর্ন্ত ইসলামী ব্যাংকেও খেয়ে দিতে হলো”? আমি সেখানে মন্তব্য করেছিলাম এটা কি আজকের ঘটনা? যবে থেকে এসআলম গ্রুপের হাতে গেছে ব্যাংক তবে থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে। এখন আমার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই এমন এক ভদ্রলোক আমাকে মেসেজ দিয়ে জানতে চেয়েছেন “ এস আলম গ্রুপ আপনার কোনো ক্ষতি করেছে?” দেখলাম ভদ্রলোক অফিসার হিসেবে ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত আছেন। আমি বললাম তর্ক করতে চাই না। পত্র পত্রিকায়তো দেখতেই পাচ্ছেন। আমি যদিও তার সাথে তর্ক করতেত চাইনি তবে আমি একজন সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে এবং চিন্তক হিসেবে আমার মতামত নিশ্চই বলতে পারি। তিনি জানতে চেয়েছিলেন আমার কোনো ক্ষতি করেছে কি না। আমার স্পষ্ট জবাব আমার কোনো ক্ষতি করেনি । কিন্তু ক্ষতি করেছে পুরো দেশের,পুরো জাতির! আর সেই জাতির একজনতো আমিও। সুতরাং আমারওতো ক্ষতি করেছে বলতে হয়। কিভাবে করেছে তা নিশ্চই বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। তবুও অল্প কথায় বলি। আর্থিক এই বিরাট অনিয়মের কারণে দেশের মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে এবং দেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উপর প্রেসার বেড়েছে। তাদের মর্যাদাও নষ্ট হচ্ছে। রেপুটেশন খারাপ হচ্ছে। জনমনে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে যে সব ব্যাংক এভাবে দেউলিয়া হয়ে যাবে বা গ্রাহকের টাকা হারিয়ে যাবে। এ বিষয়ে আপনারা নিশ্চই জানেন যে কিছুদিন আগেও এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্য হয়ে সার্কুলার জারি করে কিছুটা সামাল দিয়েছে। পাশাপাশি আমি দেখেছি আমার লিস্টের ব্যাংকার বন্ধুরাও তাদের টাইমলাইনে সেটা পোস্ট করে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।
একটি প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের নয়ছয় বা খামখেয়ালিতো শুধু ওই প্রতিষ্ঠানকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেয় না বরং একই ঘরানার অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং পুরো জাতিকেই বিব্রত করে। পুরো জাতির ক্ষতি করে। শুধু তাই নয় হয়তো দেখা যাবে অনেক ব্যক্তির নামেও দুই চার কোটি টাকার লোন হয়ে আছে কিন্তু সে জানেই না! যারা নামে বেনামে প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা নিয়ে নেয় তারা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কারো ছবি আর নাম ব্যবহার করে দুই চার কোটি নিতে পারে না বা নেয়নি তারও কোনো গ্যারান্টি নেই। যদি এমন হয়ে থাকে তবে আল্লাহ ভালো জানেন কতজনের কপাল পুড়বে। ধরুন যে অফিসারটি ৬০ হাজার বা এক লাখ টাকা বেতন পান এবং একমাত্র আয়ের মাধ্যম তার ওই বেতন তার নামে দুই চার কোটি টাকা লোন পাশ হয়ে গেছে কিন্তু সে জানেই না। তাহলে পরে যদি এটা সে জানতে পারে তার কি সাধ্য আছে সেটা শোধ করার? আমরা দেখেছি ২০/৩০ হাজার টাকা লোন নিয়ে পরিশোধ করতে পারেনি বলে কত কৃষকের কোমরে দড়ি (রুপক অর্থে অথবা বাস্তবে) বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ রাঘববোয়ালরা সব সময় অধরাই থেকে গেছে। যখন যোগ্য ও মেধাবীদের বদলে অযোগ্য আর সুবিধাবাদিদের নিয়োগ দেওয়া হয় বা দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন ফলাফল ভালো হয় না। সেটা ক্রিকেট খেলা হোক,ফুটবল খেলা হোক, রাজনৈতিক দল হোক বা কোনো চাকরি হোক। সবক্ষেত্রেই অযোগ্যদের দায়িত্ব দিলে সর্বনাশই হয়। আর একদল মানুষ চায় ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান বা দেশের ক্ষতি হয় হোক আমার ক্ষতি না হলেই হলো। আর তাইতো কিছু মানুষ লুটেপুটে সুইচ ব্যাংক বোঝাই করে। বলির পাঠা হয় দেশ এবং দেশের আপামর খেটে খাওয়া মানুষ। দুর্নামের ভাগিদার হয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। সন্দেহ মাথায় নিয়ে সংসার করতে হয়। উল্লেখ্য এই সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সনদ চেক করলে অনেক জাল সনদও পাওয়া যাবে বলে আমার ধারণা। কারণ এর আগে যতদূর জানি ইউনিয়ন ব্যাংকে এমন জাল সনদধারীদের ২৭ জনের চাকরি গিয়েছিল। ইউনিয়ন ব্যাংকের যে ঘটনাটি উল্লেখ করলাম তার তথ্যসূত্র আমার কাছে নেই।
লেখকঃ জাজাফী
১ ডিসেম্বর ২০২২
https://zazafee.com/
এই মুহুর্তে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কথা বেশ মনে পড়ছে। সামনে পেলে তার কাছে ক্ষমা চাইতাম। কেন ক্ষমা চাইতাম অলরেডি চিন্তাশীল বন্ধুরা বুঝতে পেরেছেন। যারা কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করার মত সময় বা ধৈর্য পান না তাদের জন্য বলছি। ক্ষমা চাইতাম কারণ তাঁর বলা একটি কথা শুনে আমরা হাসাহাসি করেছিলাম। সেই যে ৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে তিনি বলেছিলেন সামান্য টাকা। তখন আমরা হাসাহাসি করেছিলাম। ছয় হাজার কোটি টাকা নাকি সামান্য টাকা! আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর নিতে নেই প্রবাদটিও আবার প্রমানিত হলো। আমরা আদার ব্যাপারী তাই জাহাজের খবর নিতে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছি।
আমরা নবগঙ্গা নদীর মাঝি তাই সাগরের ঢেউ বা গভীরতা সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। সে কারণেই ৬ হাজার কোটি টাকাকে মাত্র বা সামান্য বলা শুনে আমরা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি তার বলা কথাটা পুরোপুরি সত্য। এই যে কয়েকটি ব্যাংক থেকে একটি মাত্র গ্রুপ ৩০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে এটা দেখেতো তাঁর কথাকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ৩০ হাজার কোটি টাকার পাশে ছয় হাজার কোটি টাকা রাখলে তা অবশ্যই সামান্য মনে হবে। এই পরিমান টাকা খরচ করে পুরো পৃথিবীকে বিনোদন দিতে বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে কাতার!
শুনতে ৩০ হাজার কোটি টাকা খুব সহজেই শোনা গেলেও বাস্তবে এই পরিমান টাকা একসাথে রাখলে পুুরো বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের মত একটা বড় বিল্ডিং ভরে যাবে।
এখন কথা হলো ঘরের চালে যে টিন থাকে তাতে ছিদ্র কিন্তু একদিনে বড় হয় না। প্রথমে সুই হয়ে ঢোকে তারপর কুড়াল হয়ে বের হয় বলে যে একটা আঞ্চলিক প্রবাদ আছে ঘটনা কিন্তু সেরকম। এই যে বিরাট অংকের কারসাজি এটিতো একবারে হয়নি। হয়েছে ধীরে ধীরে এবং পরিকল্পিত ভাবে। আমি আশ্চর্য হয়ে দেখলাম বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া ছিল তা এক অজ্ঞাত কারণে ২০২০ সালে সরিয়ে নেওয়া হয়! জাতির সামনে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হতে পারে কেন এবং কোন যুক্তিতে পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল? যারা সরিয়ে নিয়েছিলেন তাদেরকে এর জবাব দিতে হবে। ঋণ অনিয়মতো আজকের ঘটনা নয়। এই সন্দেহ তৈরি হয়েছিল আরও এক যুগ আগে। ঋণ অনিয়মের আশঙ্কায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালক (তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক) পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা ব্যাংকটির বিভিন্ন সভায় অংশ নিতে শুরু করেন।
প্রথম আলোর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেলো বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক থাকা অবস্থায় ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা চট্টগ্রাম ভিত্তিক একটি শিল্প গ্রুপের হাতে চলে যায়। প্রথম আলোর ভাসুর হয় বলে সম্ভবত গ্রুপের নাম উল্লেখ করা হয়নি অথবা তাদের কী এক সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুযায়ী নাম উল্লেখ করেনি। তবে সবাই জানে গ্রুপটির নাম এসআলম গ্রুপ। এরপর ২০২০ সালের মার্চে ওই পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক! বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক (তৎকালীন) গভর্নর ফজলে কবির ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক রাখার পক্ষে ছিলেন না। এই তথ্যটি জেনে আমি সবচেয়ে বিস্মিত হয়েছি। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর যদি পক্ষে না থাকেন তাহলে আর কী বলার থাকে। যদিও এখনো অন্য ছয়টি ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংক নিযুক্ত পর্যবেক্ষক রয়েছে। তাহলে ইসলামী ব্যাংকে থাকলে দোষ কী ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর নেই। এর বাইরে নতুন করে আরও কয়েকটি ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া শুরু হয়েছে। এখন আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে যে মাননীয় গর্ভনর সাহেব কেন এবং কোন যুক্তিতে এর পক্ষে ছিলেন না?
মালিকানা বদলের পর ইসলামী ব্যাংক থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন বিবেচনায় পর্যবেক্ষক সরিয়ে নিল, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। কেউ কেউ এ কথাও বলছেন এখন, অনিয়মের সুযোগ করে দিতেই ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কাগুজে কোম্পানির নামে যে প্রক্রিয়ায় ব্যাংকটি থেকে অর্থ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের আদলেই।
ইসলামী ব্যাংকের সাম্প্রতিক ঋণ অনিয়মের ঘটনা সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক, বেসিক ও ফারমার্স ব্যাংকের অনিয়মের চেয়েও ভয়াবহ বলে মনে করছেন ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা। ব্যাংকটি থেকে কী পরিমাণ অর্থ এখন পর্যন্ত সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তা অনুসন্ধানে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি পরিদর্শন দল। আমার মতে শুধু ওই ব্যাংকে খতিয়ে দেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত হবে না বরং গ্রুপের অন্যান্য ব্যাংকেও খোঁজ নিতে হবে পাশাপাশি সেই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা পর্ববেক্ষক সরিয়ে নিয়েছিলেন তাদের বিষয়েও খোঁজ নিতে হবে। এবং এ ক্ষেত্রে খোদ বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করলে তা কতটা স্বচ্ছ হবে সেটাও ভাবার বিষয়।
ধান ভানতে শীবের গীত বলে যে প্রবাদটি আছে তাও এখানে টেনে আনতে চাই। এই যে খাস বাংলায় বাঁশ খাওয়া বলে যে একটা কথা প্রচলিত আছে আমরা নানা ক্ষেত্রে তা দেখতে পাই। ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে কথাটা কিছুটা প্রযোজ্য কারণ বাঁশখালী,পটিয়া,সাতকানিয়া নামে এলাকাও যে এর সাথে কিছু অংশে যুক্ত। যাদের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি হওয়ার যোগ্যতা নেই তারাও বাঁশখালী ও এর আশেপাশের লোক হওয়ায় অনায়াসে ব্যাংকার বনে গেছে। শুধু তাই নয় যতটা জেনেছি তাতে বুঝেছি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় নিজস্ব লোক রাখা আছে এটা মনিটর করার জন্য যে কেউ যেন গ্রুপের বিষয়ে কিছু বললে তা উপর মহলকে জানানো যায়। চাকরি দেওয়ার সময় যোগ্যতা বিবেচনা না করে বাঁশখালী বা নির্দিষ্ট এলাকা বিবেচনা করে চাকরি দেওয়াটাও ব্যাংকের জন্য কাল হয়েছে। ক্ষমা চাইছি নানা ক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণীর চাকরি যারা করেন তাদের কাছে এবং পটিয়া,সাতকানিয়া, বাঁশখালীর অন্যদের কাছে। আমি তাদেরকে ছোট করতে চাইনি।
সাতকানিয়া,পটিয়া এবং বাঁশখালী এলাকার যত সংখ্যক মানুষ গ্রুপের ব্যাংকে আছে তার বিশ ভাগের একভাগ লোকও অন্যান্য পঞ্চাশটি ব্যাংকে নেই যাদের বাড়ি ওই এলাকায়। যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি না দিয়ে এলাকাভিত্তিক এবং নিজেদের ফায়দা লুটে নেওয়ার জন্য কিছু মানুষকে নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে যে কোনো প্রতিষ্ঠান ধ্বসে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে আপনাকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া মানেই আপনার মুখ বন্ধ রেখে আপনাকে দিয়ে কিছু করিয়ে নেওয়া। হয়েছেও তাই। একটি লোনের আবেদন থেকে শুরু করে পাশ হয়ে গ্রাহকের হাত অব্দি যাওয়া পর্যন্ত কী পরিমান প্রসিডিউর ফলো করতে হয় তা আমি ব্যক্তিগত লোন নিতে গিয়ে দেখেছি এবং স্টাডি করে দেখেছি বড় লোনগুলো আরও কতটা জটিল। এই যে ফিল্টারিং হয় বা স্তরে স্তরে ব্যারিকেড পার হয়ে একটি লোন পাশ হয়। কোথাও না কোথাও ঘাপলা ধরা পড়বেই। কিন্তু প্রতিটি চেক পোস্টে বাংলা সিনেমার মত যদি নিজস্ব চামচা বা পাচাটা লোক থাকে তবে আপনাকে কোনো চেকপোস্টেই আটকানো হবে না। আপনি অনায়াসেই পার হয়ে যেতে পারবেন।
ব্যাড লোনগুলোর ক্ষেত্রে বিষয়টা এমনই ঘটে। আর যখন ক্ষমতাধরদের অন্যায় কেউ আপস করতে রাজি হয় না তখন তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। যার নজির অহরহ।
আবার ফিরে আসি প্রথম আলোর প্রতিবেদনে।এদিকে প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখলাম ইসলামী ব্যাংক থেকে কেন পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তার যথাযথ কোনো উত্তর দিতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো মন্তব্য না করার নীতি নিয়েছে। সংস্থাটির মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদের কাছে গতকাল সাংবাদিকেরা এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক নিয়ে কোনো মন্তব্য করবে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পর্যবেক্ষক সরিয়ে নেওয়ার পর ব্যাংকটি থেকে কাগুজে কোম্পানি খুলে অর্থ বের করা শুরু হয়। প্রথমে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে এই অনিয়ম শুরু হয়। ফলে পাঁচ বছরে এই শাখার ঋণ ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা থেকে বের হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা।
চট্টগ্রামে ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকলে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলা শাখা থেকে একই প্রক্রিয়ায় টাকা বের করা হয়। আর ২০১৭ সাল থেকে খাতুনগঞ্জ শাখার দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তাদের দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের ঋণসংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পাশাপাশি দ্রুত পদোন্নতি পাওয়া প্রধান কার্যালয়ের কিছু কর্মকর্তাও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয়। এভাবে ২০ থেকে ৩০ কর্মকর্তা মিলে ব্যাংকটিতে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। আর ব্যাংকটির পরিচালকেরা বেশির ভাগ একটি গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হওয়ায় তারাও এতে সমর্থন দেয়।
ব্যাংকটির ঋণের নথিপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কাগুজে কোম্পানিগুলোর নামে সর্বোচ্চ ঋণের পরিমাণ ছিল দেড় হাজার কোটি টাকার কিছু কম। কারণ, ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণমূলক মূলধন ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা। এর ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ১ হাজার ৫০৪ কোটি ঋণ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়। আর ওই পরিমাণের কম ঋণ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেওয়ার দরকার হয় না। তাই কাগুজে কোম্পানিগুলোর ঋণের পরিমাণ ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।
সাম্প্রতিক একটি ঘটনা উল্লেখ করি। আমার ফেসবুক বন্ধু নুরুল আবসার ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন যার শিরোনাম ছিল “ শেষ পযর্ন্ত ইসলামী ব্যাংকেও খেয়ে দিতে হলো”? আমি সেখানে মন্তব্য করেছিলাম এটা কি আজকের ঘটনা? যবে থেকে এসআলম গ্রুপের হাতে গেছে ব্যাংক তবে থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে। এখন আমার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই এমন এক ভদ্রলোক আমাকে মেসেজ দিয়ে জানতে চেয়েছেন “ এস আলম গ্রুপ আপনার কোনো ক্ষতি করেছে?” দেখলাম ভদ্রলোক অফিসার হিসেবে ইসলামী ব্যাংকে কর্মরত আছেন। আমি বললাম তর্ক করতে চাই না। পত্র পত্রিকায়তো দেখতেই পাচ্ছেন। আমি যদিও তার সাথে তর্ক করতেত চাইনি তবে আমি একজন সমাজ সচেতন নাগরিক হিসেবে এবং চিন্তক হিসেবে আমার মতামত নিশ্চই বলতে পারি। তিনি জানতে চেয়েছিলেন আমার কোনো ক্ষতি করেছে কি না। আমার স্পষ্ট জবাব আমার কোনো ক্ষতি করেনি । কিন্তু ক্ষতি করেছে পুরো দেশের,পুরো জাতির! আর সেই জাতির একজনতো আমিও। সুতরাং আমারওতো ক্ষতি করেছে বলতে হয়। কিভাবে করেছে তা নিশ্চই বুঝিয়ে বলার দরকার নেই। তবুও অল্প কথায় বলি। আর্থিক এই বিরাট অনিয়মের কারণে দেশের মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে এবং দেশের অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উপর প্রেসার বেড়েছে। তাদের মর্যাদাও নষ্ট হচ্ছে। রেপুটেশন খারাপ হচ্ছে। জনমনে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে যে সব ব্যাংক এভাবে দেউলিয়া হয়ে যাবে বা গ্রাহকের টাকা হারিয়ে যাবে। এ বিষয়ে আপনারা নিশ্চই জানেন যে কিছুদিন আগেও এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্য হয়ে সার্কুলার জারি করে কিছুটা সামাল দিয়েছে। পাশাপাশি আমি দেখেছি আমার লিস্টের ব্যাংকার বন্ধুরাও তাদের টাইমলাইনে সেটা পোস্ট করে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।
একটি প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের নয়ছয় বা খামখেয়ালিতো শুধু ওই প্রতিষ্ঠানকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দেয় না বরং একই ঘরানার অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং পুরো জাতিকেই বিব্রত করে। পুরো জাতির ক্ষতি করে। শুধু তাই নয় হয়তো দেখা যাবে অনেক ব্যক্তির নামেও দুই চার কোটি টাকার লোন হয়ে আছে কিন্তু সে জানেই না! যারা নামে বেনামে প্রতিষ্ঠান খুলে হাজার কোটি টাকা নিয়ে নেয় তারা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কারো ছবি আর নাম ব্যবহার করে দুই চার কোটি নিতে পারে না বা নেয়নি তারও কোনো গ্যারান্টি নেই। যদি এমন হয়ে থাকে তবে আল্লাহ ভালো জানেন কতজনের কপাল পুড়বে। ধরুন যে অফিসারটি ৬০ হাজার বা এক লাখ টাকা বেতন পান এবং একমাত্র আয়ের মাধ্যম তার ওই বেতন তার নামে দুই চার কোটি টাকা লোন পাশ হয়ে গেছে কিন্তু সে জানেই না। তাহলে পরে যদি এটা সে জানতে পারে তার কি সাধ্য আছে সেটা শোধ করার? আমরা দেখেছি ২০/৩০ হাজার টাকা লোন নিয়ে পরিশোধ করতে পারেনি বলে কত কৃষকের কোমরে দড়ি (রুপক অর্থে অথবা বাস্তবে) বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অথচ রাঘববোয়ালরা সব সময় অধরাই থেকে গেছে। যখন যোগ্য ও মেধাবীদের বদলে অযোগ্য আর সুবিধাবাদিদের নিয়োগ দেওয়া হয় বা দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন ফলাফল ভালো হয় না। সেটা ক্রিকেট খেলা হোক,ফুটবল খেলা হোক, রাজনৈতিক দল হোক বা কোনো চাকরি হোক। সবক্ষেত্রেই অযোগ্যদের দায়িত্ব দিলে সর্বনাশই হয়। আর একদল মানুষ চায় ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান বা দেশের ক্ষতি হয় হোক আমার ক্ষতি না হলেই হলো। আর তাইতো কিছু মানুষ লুটেপুটে সুইচ ব্যাংক বোঝাই করে। বলির পাঠা হয় দেশ এবং দেশের আপামর খেটে খাওয়া মানুষ। দুর্নামের ভাগিদার হয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। সন্দেহ মাথায় নিয়ে সংসার করতে হয়। উল্লেখ্য এই সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের সনদ চেক করলে অনেক জাল সনদও পাওয়া যাবে বলে আমার ধারণা। কারণ এর আগে যতদূর জানি ইউনিয়ন ব্যাংকে এমন জাল সনদধারীদের ২৭ জনের চাকরি গিয়েছিল। ইউনিয়ন ব্যাংকের যে ঘটনাটি উল্লেখ করলাম তার তথ্যসূত্র আমার কাছে নেই।
লেখকঃ জাজাফী
১ ডিসেম্বর ২০২২
https://zazafee.com/
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সেলিম রেজা সাগর ২০/০১/২০২৩প্রয়োজনীয় আলোচনা
-
রাফিয়া নূর পূর্বিতা ১৯/০১/২০২৩Good
-
মোঃ মেহেদী হাসান মান্না ০৩/১২/২০২২প্রিয়তে রাখলাম ভাই। ভালোবাসা জানবেন।
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ০২/১২/২০২২ভাল লেখা