www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমাদের হিমু (এখন পর্যন্ত সবটুকু)

আমাদের হিমু

রাত ৩টার সময় যদি আপনার পাশে কাউকে অনুভব করেন, তাহলে নিশ্চয় ভাল লাগার কথা নয় । তার শরীরের গন্ধ নাকে আসছ । কম দামি আতরের কটু গন্দ । হিমু ভাবছে পাশ ফিরে তাকাবে কি না । টিনের উপর বৃষ্টির শব্দ জানান দিছে যে, ঝড় হচ্ছে ।
পাশের মানুষটা হটাত বলে উঠল, * ভাই ঘুম ভাংছে ?*
পাশ না ফিরেই উত্তর দিলাম, তাই ত মনে হচ্ছে ।
ভাই আমি জহির ।
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে বললাম, কেমন আছেন জহির ভাই ?
জি, আলহামদুল্লিলা
ভাল । ভাইজান কি আমার পরিচয় জানতে চান ?
আপনার নাম জহির, বাহিরে বৃষ্টি ছিল, তাই এ মেস এর বারিন্দায় দাঁড়ান । আমার ঘরের দরজা খুলা থাকায় আপনার আগ্রহ জাগে । আপনি ঘরে ঢুকার
পর জানালা খোলা দ্যাখতে পান । বৃষ্টির পানি ভিতরে আসতে দেখে আপনি বন্ধ করে দেন । এক সময় বিছানায় বশে পড়েন । তার পর আর কিছু আপনার মনে নেই । ২ মিনিট হয় আপনি ঘুম থেকে উঠেছেন ।
জহির এর মুখ হা হএ গেল । তার জামির দাঁত পর্যন্ত দেখা গেল । সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বলল, ভাই কি সজাগ ছিলেন ?
আমার কাছ থেকে সে শুধু সবজান্তার একটা হাসি উপহার পেল।
ভাই কি আমার উপর রাগ করেছেন ?
আমি বললাম অবশ্যই করেছি, আপনার রুমে যদি কেউ না বলে ঢুকে পড়ে তাহলে কি আপনি খুশি হবেন ?
জহির এর মুখ ছুটো হয়ে গেল ।
রাতে কিছু খয়েছেন ?
জবাব পালাম না ।
চলেন লোকমান মিয়ার হোটেল থেকে খেয়ে আসি ।
জহির কিছু না বলে উঠে দাঁড়াল ।
আমরা বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বের হলাম ।
আমি খালি পা এ হাঁটছি, আর জহির একটু পর পর আমার দিকে তাকাচ্ছে ।
লোকমান মিয়ার হোটেল সারারাত খুলা থাকে । লোকমান মিয়া দেখতে দানব এর মত । মাথার সব চুল সাদা ।
লোকমান মিয়ার সবচে প্রিয় জিনিস হল মোছ এ তা দেয়া । সে এক হাতে রান্না করবে, অন্য হাতে মোছে তা দিবে । কথা বলার সময় সে একি কাজ করতে থাকে । আমাকে দেখে সে এমন ভাব দেখাল যে সে চরম বিরক্ত । কিন্তু তার সব কর্মচারী যানে যে সে কতখানি খুসি ।
আমি বললাম, লোকমান ভাই কি খবর ?
আর খবর, বেচাকেনা নাই, খালি বাকি ।
আমার কাছে ত ভাই টাকা নাই ।
লোকমান বিড়বিড়েএ বলল, আমি কি তার কাছে টাকা চাইছি যে আমারে টাকার কথা শুনায় । তার টাকারে আমি ইএ করি ।
আমাদের সামনে ভাত দেওয়া হয়েছে । সাথে মুরগী, রুই মাছ, ডিম আর সালাদ । জহির ভাই এর টাসকি খাওয়ার মত অবস্থা । আমি যখন বললাম ভাই শুরু করেন । বেচারা ভাত এ হাত দিল । তার খাবার গতি বলে দিল তার খুদার পরিমান।
আমি আরাম করে সিগারেট ধরালাম। সিগারেট টা এক কর্মচারী আমার সামনে এনে রাখে গিয়াছিল। যখনি লোকমান মিয়ার হোটেল আসি, লোকমান মিয়ার লোক এক প্যাকেট বেন্সন টেবিল রেখে যায়। লোকমান মিয়া আমার রক্তের কেউ না। আমার সাথে যে তার ভাল সম্পর্ক, তাও না। তার পরও কেন জানি মানুষটা আমাকে ভালবাসে।
হিমু ভাই,
চোখ তুলে তাকাতে দেখলাম লোকমান মিয়ার হাতে একটা খাম।
সাইফুল ভাই আইছিল, কইল খুব দরকার। এই চিঠি আর একটা মোবাইল দিয়া গেসে।
লোকমান একটা মোবাইল পকেট থাকে বের করল।
মোবাইল দেখে জহির ভাই বলল, ভাই চাইনিজ মোবাইল। ১২০০ টাকা দাম। কথায় বলেনা, “ চাইনা, গেলে আর আসেনা “।
আমি জহির কে খুশি করার জন্য বললাম, “ কি, আমাকে চাইনিজ মোবাইল দেয়, কত বড় সাহস, সে জানে না আমি জাপান এর জিনিস ছাড়া অন্য কিছু ব্যাবহার করি না । ”
জহির ভাই আমার কথা শুনে খুশি হল।
প্রতেক মানুষ নিজের জ্ঞান দেখানোর চেষ্টায় থাকে। আমার এই ছুটো কথার কারনে জহির নামের মানুষটা কতখানি খুশি হল তা শুধু এইরকম অবস্থায় যারা পড়েছেন তারা জানেন।
জদিও মানুষকে খুসি করা হিমুদের কাজ নয়, তবুও আমি ত আর compiler না যে “ ; “ এর জন্য error দেখাবে।
জহির ভাই এর খাওয়া শেষ হয়েছে। তিনি আমাকে মোবাইল এর খুঁটিনাটি দেখাতে লাগলেন।
ইতিমধ্যে পান চলে আসেছে । আমরা পান খেতে খেতে বের হলাম। লোকমান মিয়াকে একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত না দিয়ে। পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা ধন্যবাদ
এর ধার ধারে না। শুধু ভালবেসে যায়।
আমি হাঁটছি, পিছনে জহির ভাই। আমি বললাম, ভাই একটা গান ধরেন ত।
“ যদি তর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবা একলা চল রে “ এই গান কত শুনাছি, তবে মনে হল এই গান শুধু এই মানুষ টার কণ্ঠে ভাল শুনাছে।
হঠাত পুলিশ এর সিইরেন শুনা গেল। চারিদিকে কথাও পুলিশ এর দেখা নেই। একটু পর খেয়াল করলাম সিইরেন আমার মোবাইলেই বাজছে। মোবাইল এর রিংটোন ছিল এইটা।
মোবাইল ধরতেই সাইফুল এর কণ্ঠ, এই তুই কই ?
আমি মাঝ রাস্তায়, গাড়ি ঘোড়া নাই, শান্ত পরিবেশ। খালি পা, একটু টাণ্ডা লাগছে তবু খুব ভাল লাগছে।
সাইফুল এর মাথা এমনিতেই খারাপ, আরও খারাপ করে দিল আমার কথাগুলো।
সাইফুল কাঁদকাঁদ গলায় বলল, তর ভাবি আমাকে ফেলে চলে গেছে।
ভাল হয়েছে, তর মত গাধাকে বিয়ে করাই তার ভুল ছিল। শেষ পর্যন্ত সে তার ভুল থেকে বের হতে পেরেছে।
আমি সাইফুল এর অবস্থা অনুমান করতে পারছি। সে তুতলাতে শুরু করল।
মা..নে কি, আমি কি এত..ই খারাপ?
আমি ত তকে খারাপ বলিনি, বলেছি গাধা। গাধা অনেক পরিশ্রমী প্রাণী। শধু একটাই সমস্যা, তাকে কাজ করাতে পরিশ্রম করতে হয়।
তুই তর বউকে ভালবাসিস থিকই, কিন্তু প্রকাশ করার ভঙ্গী অন্য সবার থাকে আলাদা। ঠিক কি করেছিস বল ?
ওর জন্মদিন ছিল, আমি ওর জন্য ওর প্রিয় মাছ পুঠি নিয়ে বাসায় এসেছি, মাছ দেখেই সে তার বাপের বাড়ি চলে গেছে। আমি এত করে বুঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু সে বুঝলোনা। আমার এখন কি হবে।
আমি বললাম,” না তর ত কুনো দোষ নেই, এত ভাল জন্মদিন এর উপহার ত শাহজাহানও দিতে পারত না।“
তুই আ...মার সাথে ইয়া..র..কি করছিস? আবার সাইফুল এর তুতলামি শুরু হয়ে গেল।
না । খুঁজ নিয়ে দেখ মমতাজ এর প্রিয় মাছ কি তার সম্পর্কে শাহজাহান জানত না।
সাইফুল করুন কণ্ঠে বলল,” ভাই দেখনা নুপুর কে বুঝাতে পারিস কি না?
দেখি চেষ্টা করে ।
আমার কথা যেন সাইফুল এর মরুভুমিতে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে নামলো ।
ভাই একটু নুপুরকে ফোন কর। তর মোবাইল এ ১০০ টাকা ভরা আছে , এখনি ফোন কর ।
এত রাতে কি কাউকে ফোন করা যায়। কাল সকালে করব।
সাইফুলকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলাম।
মোবাইল হাতে থাকলে আমার যে পুরনো রোগটা আছে টা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। চিন্তা করলাম কাকে ফোন করা যায়।
রুপাদের বাসার নাম্বার মুখস্ত আছে। দেখি কি আছে কপালে।
৩বার রিং হতেই একটা পুরুষ কণ্ঠ বলে উঠল, “ হেলো “
আমি বললাম, “ অহে “
What ? কি আবোল তাবোল বকছেন?
না স্যার। শধু বাংলায় হেলো বললাম।
কাকে চাই?
স্যার, এইটা কি রেলওয়ে ‌‌‌‌ইনফরমেশন?
বেয়াদব, শয়তান, ফাইজলামির জায়গা পাওনা। এতরাতে বিরক্ত করতে তুমার লজ্জা করা না?
স্যার, লজ্জা করে কিন্তু পারাবত এর খবর জানা আমার খুব জরুরি। নাহলে আমার ২৫০ টাকা বেশি দিয়ে বাস এ যাতে হবে।
কাইন্ডলি কয়টায় ছারবে একটু বলে দিন না স্যার?
ঠাস করে রিসিবার রাখার শব্দ পাওয়া গেল।
বেচারার আজরাতে আর ঘুম হবে না।
মানুষকে রাগাতে একধরনের আনন্দ আছে। আমি কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি রুপার বাবার সারা মুখ লাল হয়ে গেছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। পারছেন না আমাকে কামড়ে খেতে, না পারছেন নিজেকে কামড়াতে।
এতক্ষণ জহির ভাই আমার কান্ডো কারখানা দেখছিলেন, মনেহয় তার ভিতর আমাকে নিয়ে ভয় কাজ করতে শুরু করেছে। আমি সুযোগ বুঝে বললাম, ভাই আমার মাথায় বেথা করছে আপনি এখন যান।
জহির ভাই কিছু না বলে অন্যপথে হাটা দিলেন।
মানুষটা কিছু না বলে চলেযাচ্ছে। আমার জায়গায় বাকের ভাই হলে বলতেন,” একটা সালাম দিল না, no respect “ .
আমার কাছে বাকের ভাই এর মত চেইন নাই, থাকলে ঘুরাতে ঘুরাতে হাঁটতাম আর মনে মনে শিস দিতাম,” হাওয়া মে উরতা যায়ে, মোরা লাল দুপাট্টা মলমলকা, ও জি, ও জি “ ।
মনে করলাম আমার হাতে একটা চেইন, মাথায় গানটা চালু করলাম। হাতের চেইনটা ঘুরাতে লাগলাম।
রাস্তায় হাটছে হিমু
সামনের দিকে
নাকি রাস্তাটা পিছনে চলে যাছে..........................................।।























আবার সেই সাইরেন এর শব্দ। মোবাইল ধরতেই একটা মিষ্টি কণ্ঠ বলে উঠল, হিমু ভাই, কেমন আছেন?
ভাল, তুমি কেমন আছো নুপুর?
ভাল, আপনি কি করে বুঝলেন যে আমি?
আমি উত্তর দিলাম না।
ভাই, জানেন আপনার বন্ধু কি করেছে? সে আমার জন্মদিনে আমার জন্য পুঠি মাছ নিয়ে বাসায় এসেছে। বলে নাকি আমার জন্মদিন এর উপহার।
এই রকম লোকের সাথে কি ঘর করা যায়, আপনি বলেন। শুধু তাই নয়, সারাক্ষণ শুধু আমার আঁচল ধরে থাকে। আর এত কথা বলতে পারে, সারাক্ষণ শুধু বকবক করে।
আমার ত মনে হয়না যে তুমি তার এই কারজকালাপে বিরক্ত, তুমি ত মহা খুসি যে তুমার স্বামী তুমাকে এত ভালবাসে। তুমি চলে এসেছ যাতে সে তুমার জন্য অস্তির হয়ে যায়। তুমি তার ভালোবাসার চুটিয়ে মজা নিতে চাও।
নুপুরের গলা থেকে যেন কথা বের হচ্ছে না, সে আমাকে কটু কথা বলার জন্য শব্দ খুঁজতে লাগল, আমি ফোন কেটে দিল্মম।
কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলে সে নিজেকে ছোট মনে করতে থাকে। নুপুরের ও এই মুহূর্তে এই অনুভুতি হচ্ছে।
আমি জানি আকন সে সাইফুলকে ফোন করবে, আমার সম্পকে নানা বাজে কথা বলবে।
আমি সাইফুল এর ফোন আসার আগ পযন্ত ঘুমানোর চিন্তা করলাম।
কিন্তু মনে হল একবার রুপাদের বাসায় ফোন করা যায়, প্রথম রিং এই সেই পরিচিত কণ্ঠসর, হেলো
রুপা, কেমন আছো?
ভাল, তুমি কাল রাতে ফোন করেছিলে, তাই না ?
হু, কি করে বুজলে?
বাবার কাছে যখন তুমাদের আলাপছারিতা শুনলাম, এবং বাবার মানসিক অবস্থা দেখলাম, বুজলাম এ কাজ শুধু তুমার দারাই সম্ভব।
আমাকে তুমি ভাল পড়তে পার, তাই না ?
না, জদি পারতাম তবে আমার এ অবস্থা হত না।
কি অবস্থা ?
বাদ দাও। বল কি কারনে ফোন করেছ ?
তুমি কি রবীন্দ্রনাথ এর ঐ গান টা আছে, “ তুমরা যে বল ভালবাসি... ভালবাসি, সখি ভালবাসা কারে কয় ?”
কিছুক্ষণ চুপচাপ, তারপর রুপার অস্রুসিক্ত কণ্ঠ বলে উঠল, না নেই।
ভাল থেক রুপা, রাখি।
ফোন রাখার পর মনটা খারাপ হয়ে গেল, আমি রুপাকে কষ্ট দিয়েছি, কিন্তু আবার যখন আমি তাকে ফোন করব, সে আমার সাতে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলবে যেন কিছুই হয়নি।
পৃথিবীর বুকে কিছু মানুষ আছে যাদের ভালোবাসার বাধন অনেক শক্ত। রুপা তাদেরই আকজন, আমি জানিনা বাধন ছিঁড়ছি, না আরও জড়িয়ে যাচ্ছি।
যাইহোক, এ নিয়ে চিন্তা করার সময় আমার নেই। আজ আমার অনেক কাজ। আমার লতায় পাতায় খালা, যার নাম হ্যাপি, তার বাসায় যেতে হবে। আমাকে তার নাকি খুব দরকার। তিনবার আমার খুঁজে লোক পাঠিয়েছেন, দুইবার নিজে এসেছেন। একবার তার বাসা থেকে ঘুরে আসতে হবে।
হ্যাপি খালা আগারগাও এ থাকেন। ফ্ল্যট বাসা, ১০তালায়। ২৪ঘন্টা লিফট।
আমি সিঁড়ি বেঁয়ে যখন তার দরজায় পৌঁছলাম, আমার শাঁস ফুলে গেছে। বেল বাজিয়ে অপেক্ষা করছি।
কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিল। আমাকে সে এর আগেও দেখেছে। কিন্তু দরজা থেকে সরে দাঁড়ানর ইচ্ছা নেই।
আমি খেয়াল করেছি কাজের লোকেরা আমাকে দাম দেয় না। তারা হয়তো আমাকে তাদের সমমানের মনে করে। পৃথিবীতে মানুষ তার সমমানের মানুষকে দাম দেয় না। উপরের শ্রেনীর মানুষ শ্রধ্যা পার, কারন মানুষটা তার মত হতে চায়, নিচু শ্রেনীর মানুষ করুণা পায়। যত সমস্যা সম শ্রেনীর মানুষকে নিয়ে। না পারে শ্রধ্যা করতে, না পারে করুণা করতে।
আমি বললাম, খালা বাসায় আছে?
খালায় ঘুমায়। এখন ডাকোন জাইব না। মাজা বেথা বারছে, হারা রাইথ ঘুমাইতে পারে নাই।
আমি ড্রইংরুমে অপেক্ষা করছি, খালা উঠলে দেখা করব।
সে অনিচ্ছা সত্তেও সরে দাঁড়াল।
খালার ড্রইংরুমটা বিশাল। দেয়ালে LCD TV লাগান, প্রতিটি দেয়ালে পেইন্টিং ঝুলানো। তিনটা সোফা, কাঁচের টেবিল, ফুলদানি আরও কতো কি।
খালু পুলিস অফিসার ছিলেন। খালার বাসার অবস্থা দেখে খালুর সততা নিয়ে সন্দেহ না করা পাপ।
চিন্তায় বাধা দিলো খালার কণ্ঠসর, শেষ পর্যন্ত তুই এলি। আমিতো মনে করেছিলাম মরার আগে তর দেখা পাবো না।
এইটা খালার মুদরা দোষ। প্রতি ২ কথার পর পর তিনি মরার আগে শব্দ দুটি ব্যাবহার করবেন।
কোথায় ছিলি এতদিন?
বেস্তো ছিলাম, কেন ডেকেছো বল ?
কি আর বলব, বাতের বেথা মরার আগে আমায় মেরে ফেলল।
ডাক্তার দেখাও, শুনেছি কবিরাজিতে ভালো কাজ দেয়।
কত ডাক্তার দেখিয়াছি, শুধু ডাক্তার গুলে খাওয়ানো বাকি। এক কবিরাজ ১৫ডীণ পর পর আসে, ঝেড়ে দিয়ে যায়, ২দিন আরামে কাটে, টাড়পোড় আবার সেই একি অবস্থা।
আমাকে ডেকেছো কেন? আমি ত ঝাড় ফূক জানি না।
আমার সাথে ফাইজলামি করবি না।
ফাজিল যে, সে ফাইজলামি করবে, আমি ত এর মাদ্রাসায় পড়াশুনা করিনি।
মানে ?
যে ডাক্তার সে ডাক্তারি পড়েছে, যে উকিল, সে উকলাতি পড়েছে, সেই যুক্তি মতে যে ফাজিল , সে ফাইজলামি পড়েছে।
খালার মুখ দেখে মনে হল তিনি তার দাঁত দিয়ে দাঁত ভাঙ্গার চেষ্ঠা করছেন। খালা সফল হওয়ার আগেই তাড়াতাড়ি বললাম, কি করতে হবে বল?
খালার মুখ সাভাবিক হল ।
তাহলে শোন, সিলেটে এক কবিরাজ আছে যার নাম উদলা বাবা, তিনি সব সময় খালি গায়ে থাকেন বলে এই নাম। কি শীত, কি বর্শা, সব সময় একই অবস্থা।
শুধু নিচে লুঙ্গী পরেন, তাও আবার সেলাই ছাড়া। তিনি নাকি বাতের বাথার ভাল চিকিৎসা করেন।
আচ্ছা খালা, তুমি কি করে জানলে যে তিনি সেলাই ছাড়া লুঙ্গী পরেন ? আর আর পিছনে যুক্তিই বা কি?
খালাকে বিরক্ত দেখাল, আমি কি করে জানব তিনি কেন পরেন? আমি কি তার খাদেম নাকি?
ভাল বলেছ। এখন আমাকে কি করতে হবে বল?
এই প্রথম খালার মুখে হাসি ফুটল।
তুই সিলেট যাবি, আমার জন্য তার কাছ থেকে কবিরাজি ঔষধ নিয়ে আসবি। মরার আগে শেষ চেষ্টা করতে চাই।
আমি বললাম, অবশ্যই যাব, তুমি ত আর রাস্তার কেউ না। হিমুর খালা।
খালা দাঁত বেরকরে হাসলেন। পান খাওয়া, কাল দাগ পড়া দাঁত। যারা টুথপেষ্ঠ এর বিজ্ঞাপন বানায়, তারা যদি খালার দাঁত দেখত, তবে বিজ্ঞাপনে টুথপেষ্ঠ দিয়ে দাঁত ঘষানোর আগে খালার দাঁত দেখাত।
খালা বলতে লাগলেন, আমার ত আর আপন কেউ নেই তুই ছাড়া। তাই তকেই কষ্টটা করতে হবে।
আমি মনে মনে হাসছি। হ্যাপি খালার মধ্যে মানুষের একটা চিরাচরিত লক্ষণ বেশি প্রকাশ পায়। আজ আমাকে তার দরকার তাই এত সমাদর করে কথা বলছেন।
কিছদিন আগে এমনি তার বাসায় এসেছিলাম, আমার সাথে তিনি হাসি মুখে ত দূরে থাক, এমন ভাব করেছিলেন যেন ছিতাইকারির কবলে পবেছেন।
মানুষ স্বার্থের কারনে নানা সময় নানা আচরন করে, অন্য প্রাণী তা পারে না।
এই হিমু, খালার কথায় বাস্থবে ফিরলাম।
এখন বল কবে যাবি?
আমি ত এই ৭দিনের মধ্যে কোথাও যেতে পারব না। আমার ঢাকায় অনেক কাজ। সাইফুলের বউ তাকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে। তাকে বুজাতে হবে। নাহলে সাইফুল না আবার কিছু করে বসে।
সাইফুল কে?
যে তার বউকে জন্মদিনে পুঁটি মাছ গিফট করেছিল।
আরে ধুর, কেউ জন্মদিনে পুঁটি মাছ গিফট করে নাকি?
অবশ্যই করে। পটি মাছ ত কিছুই না, যখন তার তার বউ এর মাথার চুল পরে যাচ্ছিলো, সে অনেক কষ্ট করে জোঁক এর পেষ্ঠ নিয়ে আসে বলেছিল মাথায় লাগাতে।
তুই যে কি বলিস, জোঁক এর পেষ্ঠ কেউ লাগায় নাকি?
তুমি জাননা খালা? এটা অনেক পুরনো কবিরাজি। ১০০ ভাগ কার্যকরী। বিফলে মূল্য ফেরত।
খালা মনে হয় একটু একটু বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন।
আমি বললাম, খালা যাই?
তুই আমার কাজটা করে দিবিনা?
অবশ্যই, তুমি এক কাজ কর একটা নাম্বার দিচ্ছি, ফোন করে ৮দিন পরের, মানে ১২তারিখ এর পারাবত এর ১টা টিকেট করে ফেল।
খালা টেলিফোনের পাশে রাখা কাগজ কলাম দেখিয়ে দিলেন।
আমি রুপাদের বাসার নাম্বার লিখলাম।
কল্পনায় খালা ও রুপার বাবার মধ্যের কথপকথন দেখলাম।

হেলো, রেলওয়ে বুকিং।
অভদ্র, এখন মহিলার কণ্ঠে ফোন করেছ। মনে করেছ আমি বুঝতে পারব না। বাঁদরামি করার আর জায়গা পাও না।
কি আবোল তাবোল বকছেন, আমি ত মহিলাই। পাগল নাকি?
এক চড় মেরে তর সব দাঁত ফেলে দেব, মনে করেছ আমি দুধ খাই? আমি পলিশে খবর দেব।
ঐ শালা তুই আমার দাঁত ফালাবি? আয় দেখি তর হাত কত লম্বা। আর তুমি দুধ খাও আর ঘি খাও তাতে আমার কিছু যায় আসে না, আমার স্বামী পলিশে ছিলেন, দেখি তর কথ বড় বুকের পাঁটা।
রুপার বাবা ঠাশ করে ফোন রেখে দিবেন।
খালা ঘাম মুছতে মুছতে বলবেন, আমারে পলিশ এর ডর দেখায়। আরে এক জীবন পলিশের সাথে ঘর করলাম, জীবনে আমার দিকে চোখ তুলে তাকানর সাহস পেল না, আর সে আমারে পলিশ দেখায়?


খালার বাসা থেকে বের হয়ে চিন্তা করছি কই যাওয়া যায়। আফজল চৌধুরীর বাসায় যাওয়া যায়। আফজল চৌধুরী পেশায় জাদুকর।
তাকে ঢাকার নানা রাস্তার পাশে ফুটপাতে ম্যাজিক দেখাতে দেখা যায়। বেশ ভাল মানের জাদুকর।
পয়সা থেকে শুরু করে, আস্ত মানুষ পর্যন্ত গায়েব করতে জানেন।
তবে তার প্রিয় জাদু হচ্ছে মানুষ এর একটি বিশেষ অঙ্গ গায়েব করা।
জাদু দেখানোর ফাঁকে ফাঁকে তিনি আংটি বিক্রি করেন।
এই আংটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে। একটি আংটির দাম ৫০ টাকা।
এই আংটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে কি না, আমি জানি না। তবে আফজল চৌধুরীর ভাগ্য পরিবরথন করেনি।
“বাড়ির গরু বাড়ির ঘাস খায় না ”। এইটাই হয়তো কারণ ।
আফজল চৌধুরীর সাথে আমার প্রথম দেখা হয় সনি সিনেমা হল এর সামনে। দেখলাম অনেকগুলো মানুষ গুল হয়ে দাড়িয়ে আছে।
ভিড় ঠেলে এগিয়ে দেখলাম মাঝারি গড়ের একজন পুরুষ দড়ি হাতে দাড়িয়ে আছে।
আর চিৎকার করে বলছে, ভাইসব, এই জাদু ভারতবর্ষে প্রচলিত ছিল। এর নাম ইন্ডিয়ান রোপ ট্রিক, বা রশির জাদু।
এই আমি দড়িটা ঝুড়িতে রাখলাম। আমি বাঁশি বাজানোর সাথে সাথে দড়িটা সুজা উপরে উঠে যাবে।
আরপর সে বাঁশি বাজাতে লাগল।
দেখলাম সত্তিই দড়িটা বাতাসে উঠতে লাগল।
এরপর তার ছেলেকে দড়ি বেঁয়ে উঠতে বলল।
ছেলেটা তরতর করে উঠতে লাগল, যেন সে সুপারি গাছে উঠছে।
সবাই তালি বাজাতে লাগল। খেয়াল করলাম আমিও তালি বাজাচ্ছি ।
হিমুরা সহজে মুগ্ধ হয় না । কিন্তু এই street magician আমাকে মুগ্ধ করেছে
জাদু দেখান শেষ। আফজল চৌধুরী তার জিনিসপত্র ব্যাগে ভরছে। আমি এগিয়ে গেলাম।
ভাই আপনি ত ভাল জাদু জানেন। আপনি ত জুয়েল আইচ এর বাপ।
আফজল চৌধুরী বিনয়ের সাথে মাথা নিচু করে হাসল।
সত্যিকারের বিনয়ের সাথে প্রশংসা গ্রহন করতে সবাই জানে না।
জুয়েল স্যার অনেক বড় মাপের জাদুকর। তার সাথে তুলনা করে আমারে শরম দিয়েন না।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই এখন কই যাবেন?
ভাই বাসায় জামু। দুপুরে খাই নাই।
আমি বললাম, ভাই আমার সাথে চলেন, কুনো হোটেলে ডুকা যাক।
আফজল চৌধুরী বিনয়ের সাথে আবার হাসল। ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। কিন্তু আমার পরিবার আমার জন্য অপেক্ষা করতাছে, আপনি বরং আমর সাথে চলেন আমার বাসায়, যা আছে তাই খাইবেন।
এত সহজভাবে কেউ আমাকে আমাকে কখন দাওয়াত করেনি।
আমি রাজি হয়ে গেলাম
আফজল চৌধুরীর বাসা একতলা। তার স্ত্রী আমাকে দেখে কুনো প্রশ্ন পর্যন্ত করল না। এমন আচরন করল যেন সে জানত আমি আসব।
মেঝেতে বিছানার চাদর পেতে আমাকে নিয়ে আফজল চৌধুরীর তার ছেলে সহ খেতে বসলেন।
সাধারণ খাবার, ভাত, ট্যাংরা মাছের ঝোল, আলু ভর্তা।
আমি খেতে খেতে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই আপনার সন্তান কয়জন?
একটাই পুলা। এর থেকে বেশি সন্তান মানুষ করার ক্ষমতা আমার নাই। পুলার স্কুল বন্ধ, তাই আমার সাথে গেছিল, নাইলে স্কুলে থাকত।
মানুষটার বাস্তবধর্মী চিন্তা আমার ভাল লাগল।
খাবার শেষে যখন বিদায় নিচ্ছিলাম লোকটা আমাকে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেল।

এরপর আর তার সাথে দেখা হয় নি।
আজ অনেকদিন পর তার বাসার দরজায় আমি কড়া নাড়ছি।
আফজল চৌধুরীর স্ত্রী দরজা খুলে দিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ভাবি কেমন আছেন?
মানুষটা শীতে ফাটা ঠোট নিয়ে মানুষ যে রকম হাসে, সে রকম করে হাসল।
হিমু ভাই, ভিতরে আসেন।
আমি ভিতরে ঢুকে দেখি একটা কঙ্কালসার মানুষ বিছানায় শুয়ে আছে, একটা চাদর দিয়ে বুক পর্যন্ত ডাকা।
বিছানার পাশে একটা হুইল চেয়ার।
আরে হিমু ভাই যে, আমার কি শুভাগ্য। আসেন আসেন, আমার পাশে বসেন।
আমি বিছানার পাশে বসতে বসতে জিজ্ঞাসা করলাম, ভাই কেমন আছেন?
আফজল চৌধুরী চাদরতা সরিয়ে বলল, এমন আছি ভাই।
দেখলাম মানুষটার দুই পা হাঁটুর উপরে কাটা। এখনও ব্যান্ডেজ বাঁধা।
ভাই, মনে হয় ভয় খাইছেন?
মানুষটার মুখে হাসি।
কি হয়েছিল ভাই?
আফজল চৌধুরী মুখ ফিরিয়ে নিয়ে জানালার দিকে তাকাল,
সবি নসিব রে ভাই। গত মাসের ২৫ তারিখ জাদু দেখানোর পর বাসায় ফিরছিলাম। বিক্সায় বসে আছি। দেখলাম, সামনে থেকে একটা প্রাইভেট কার আইতাছে।
তারপর আর কিছু কইতে পারি না। সজাগ হইয়া দেখলাম আমি হাসপাতালে। আমার বউ আমার পাশে বইসা আছে।
আমি জিগাইলাম কি হইসে?
বই কিছু কয় না, খালি কান্দে।
একটু পরে ডাক্তার আইসা যখন চাদর শরাইয়ে পরীক্ষা করল, থখন খেয়াল করলাম, আমার পা হাঁটুর নিচ থাইকা গায়েব হইয়া গেসে।
মানুষটা খুব সাধারণ ভাবে কথাগুলো বলল, যেন কুন গল্প করছে।
ভাই, সারা জীবন গায়েব করার জাদু দেখাইছি ত, তাই মনে হয় উপরওয়ালা তার জাদু আমারে দেখাইছে।
মানুষটা নিজের অবস্থা নিয়ে রসিকতা করছে।
আমি মানুষটার দিকে আর তাকাতে পারছি না। আমি মাটির দিকে তাকিয়ে আছি।
আফজল চৌধুরীর স্ত্রী আসে বলল, ভাই হাত মুখ ধুইয়া আসেন, ভাত দিতাছি।
আমি বললাম আজ না ভাই, আরেকদিন খাব। আজ যাই।
আমি বিদায় নিয়ে আসছি। আমাকে এগিয়ে দিতে এসে আফজল চৌধুরীর স্ত্রী বলতে লাগলেন, ভাই বাসার মালিক কইয়া গেসে বাসা ছাড়নের লাইগা।
আমি কিছু বললাম না।
আমি চলে আসছি। পিছনে রেখে আসছি একটি অসহায় পরিবার, যার কর্তা বিছানায় শুয়ে নিজের ভাগ্য নিয়ে হাসছেন, তার স্ত্রী ভবিষ্যৎ এর চিন্তায় উদ্বিগ্ন।
আমি মাথা থেকে এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে চাইলাম।
কোনকিছু মাথা থেকে দূর করার সহজ উপায় হল অবাস্তব কোনকিছু নিয়ে চিন্তা করা।
আমি কাক নিয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। আমরা যে ঢাকাকে পরিস্কার করার জন্য এত কথা বলি, একবার চিন্তা করি না যে, পরিস্কার ঢাকায় কি কাক মানিয়ে নিতে পারবে?
এখনও ঢাকায় অনেক মানুষ আছে যাদের ঘুম কাকের ডাকে ভাংগে ।
ঢাকায় কাক না থাকলে, তাদের ঘুম কে ভাঙাবে?
লেখকরা কি আর ঢাকার কাক ডাকা ভোর নিয়ে কিছু লিখতে পারবেন?
আমাদের এই জিনিশকি হারিয়ে যাবে?
পৃথিবীতে বাঘ বাচাও, কুমির বাচাও সংস্থা আছে।
কাক বাচাও সংস্থা কি আছে?
এই কাক নিয়ে কি কেউ গবেষণা করে না?
কাক নিয়ে চিন্তা করতে ভালই লাগছে।
যদি পরীক্ষায় কাক নিয়ে রচনা লিখতে দিত, তবে ছেলেমেয়েরা কি লিখত।
কাকের রচনা লেখা গেল না, চিন্তায় বাঁধা পরল পরিচিত কণ্ঠে আমার নাম শুনে।
এই হিমু,
দেখলাম রাস্তার ওপাশ থেকে সাইফুল আমাকে ডাকছে।
সাইফুল রাস্তা পার হবার চেষ্টা করছে, কিন্তু পারছে না।
একবার চিন্তা করলাম এই সুযোগ, সাইফুল এর হাত থেকে বাঁচতে হলে পালানো দরকার।
একবার যদি আমাকে পেয়ে যায় তবে সারাদিন আর পিছু ছাড়বে না।
কিন্তু সে সুযোগ পাওয়া গেল না।
সাইফুল যেভাবে রাস্তা পার হল টা যদি কুনো পুলিশ দেখত তবে আজ রাত তাকে ছিন্তাই এর দায়ে হাজতে কাটাতে হত।
আমাদের দেশে ত আর মানুষকে ধরতে পুলিশের কারণ লাগে না।
কিছু না পেলেই জঙ্গি, না হয় ইভটিজিং। মামা যাবা কই।
তুই ফোন ধরিস না কেন? আমি তকে হাজারবার ফোন দিয়েছি। তর কি একবারও ফোন ধরার সময় হল না।
আমি কিছুই বললাম না।
পৃথিবীতে কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলো কথার মাঝে করা হয়, যার উত্তর প্রশ্নকর্তা চান না।
আগুল শুধু করার জন্যই করা।
সাইফুল আবার প্রশ্ন করল, তুই তর ভাবিকে কি বলেছিস?
আমি বললাম, কেন কি হয়েছে?
তকে বলেছিলাম নুপুরকে বুঝানোর জন্য, আর তুই তাকে এমন কি বলেছিস যে সে আমাকে সাফ বলে দিয়েছে হয় আমি তার সাথে ঘর করব, নাহয় তর সাথে সম্পর্ক রাখব। আমি আমতা আমতা করতেই সে বলল আমার সাথে তার আর কুনো সম্পর্ক নেই, আমি যেন তার চোখের সামনে না পড়ি। আমাকে দেখলে সে প্রথমে আমাকে গুলি করে মারবে, তারপর নিজেকে গুলি করবে।
আমি মুখ গম্ভীর করে বললাম, তর অবস্থা ত সত্তিই খারাপ। এখন কি করবি বলে ঠিক করলি?
সাইফুল বলল, আমি কিছুই জানি না। তুমার কারনে আজ আমার এই অবস্থা। তুমিই আমাকে এর থেকে বার করবে।
মানে কি?
মানে ফানে জানি না, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার বউ আমার কাছে ফিরে না আসছে, ততোক্ষণ পর্যন্ত আমি তুমাকে ছাড়ছি না।
একেবারে সিনবাদের ভুত হয়ে যাবি?
সাইফুল কিছু বলল না।
আমি বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম। আমাকে ঘুমাতে হবে। আজ পূর্ণিমা। আমাকে জোছনায় ভিজার জন্য তৈরি হতে হবে।

আমি হাঁটছি।

পিছনে আমার দুইটি ছায়া হাঁটছে।


জোছনায় ভিজতে হলে কিছু নিয়ম মানতে হয়। যেমন,
১ঃ অপবিত্র হয়ে কখন জোছনায় ভিজা যায় না।
২ঃ ভরা পেটে জোছনায় ভিজ যায় না।
৩ঃ ধূমপান করতে করতে জোছনায় ভিজ যায় না।
মেসে এসে লম্বা ঘুম দিয়েছি। ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
দেখলাম সাইফুল বিছানার সামনের চেয়ারে বসে সিগারেট টানছে।
আমি তাকে কিছু না বলে মুখ ধুতে গেলাম।
এসে দেখি সাইফুল বিছানায় শুয়ে আছে।
আমি বললাম,” কি রে ঘুমিয়ে পরলি নাকি?
ঘুমাব না ত কি করব? গান গাইব, ” আমি বউ হারা কলঙ্কিনী, আমি বউ হারা কলঙ্কিনী, আমারে কেউ ছুইয় না গো সজনী।“
আমি মুখ স্বাভাবিক রেখে বললাম, তা গাইতে পারিস।
সাইফুল একেবারে ভেঙ্গে পরল।
বন্ধু, কিছু একটা কর ।আমি নুপুরকে ছাড়া বাঁচবো না। আমি তার জন্য সব করতে পারি।
তাহলে এক কাজ কর নুপুরকে ফোন করে বল তুই ছিনতাইকারীর হাতে পড়েছিলি।
তারা তর কাছে পর্যাপ্ত পরিমান টাকা না পাওয়ায় তকে মেরে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে।
এই কথা শুনার পর সে আর তকে দেখলে গুলি করবে না।
সাইফুল নিরাশ মুখে বলল, তুই নুপুরকে চিনিস না। সে যখন দেখবে আমার হাত ঠিক আছে, তখন সে সত্যিই গুলি করবে।
আমি বললাম, সে তর হাত ধিক দেখবে কেন? সে দেখবে তর হাত ভাঙ্গা। তুই ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি।
সাইফুল বিরক্ত হয়ে বলল, আমার হাত ভাঙবে কে? তুই?
না। গাইনজা মামুন ভাঙবে।
গাইনজা মামুন টা আবার কে?
সরকারি দলের নেতা।
ওস্তাদ লোক। মানুষের হাত তার স্পেসালিটি।
এমন ভাবে প্যাঁচ মারে যে শুধু একটা মট করে শব্দ হয়। তারপর দেখবি তর হাতের কবজি ডিসলোকেটেড হয়ে গেছে, যা তুই অনায়াসে ভাঙ্গা বলে চালাতে পারবি।
তর বউ তর খবর শুনে পাগলের মত ছুতে আসবে। সে সব কিছু ভুলে আদুরে গলায় বলবে, ওগো তুমার একই অবস্থা? আমাকে তুমি ক্ষমা কর। আমার ভুল হয়ে গেছে। এরপর তুই খুস, নূপুরও খুস। আমি ত এমনিতেই খুস।
সাইফুল মনে মনে দৃশ্যটা কল্পনা করতে লাগল।
তার মুখে হাসির আভাস। আমার দিকে ফিরে বলল,

বেশি বেথা পাব না ত?
আরে না। মামুন ভাই রেসলিং দেখে এই মাইর শিখেছে। সুই গাঁথলে জেই রকম বেথা হয়, সে রকম বেথা পাবি। একদিনেই রিলিজ পেয়ে যাবি।
সাইফুলকে দেখে মনে হল সে মনে মনে প্রস্তুত হচ্ছে।
আছা, উনার নাম গাইনজা মামুন কেন? উনি কি গাঁজা খান, না বিক্রি করেন?
আরে না। স্কুলে থাকতে একবার গাঁজাখুরের ভুমিকায় অভিনয় করেছিলেন। অভিনয়টা এতই চমৎকার হয়েছিল যে, নাতকের শেষে প্রধান অথিতি তাকে নিয়ে গিয়ে তাকে ১০০ তাকে উপহার দেন এবং বলেন, তুমাকে সত্যিই গাঁজাখুরের মত লাগছিলো। তুমি বড় হয়ে অনেক বড় অভিনেতা হবে।
এরপর থেকে তার বন্ধুরা তাকে গাইনজা মামুন বলেই ডাকতো।
এখন তাকে গাইনজা মামুন নামে সারা ঢাকা চিনে। এতে তার কুনো দুঃখ নেই, ববং তিনি গরব বোধ করেন।
সাইফুল জিজ্ঞাসা করল, তাকে কই পাওয়া যাবে?
আমি তাকে জামাল মিয়ার দোকানের ঠিকানা দিয়ে বললাম, তুই এই দোকানে গিয়ে আমার কথা বলবি। সে তকে মামুন ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাবে।
সাইফুল আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছে।

এই দৃশ্যটা যদি বাংলা নাটকের হত, তবে ব্যাকগ্রাউন্ড এ গান বাজত।

“ ভালবাসা মোরে ভিখারি করেছে, তুমাকে করেছে রানি।“


কাল রাতে জোছনা দেখা হয় নি। কথা নেই বার্তা নেই এমন ঝড় হল যে মনটা খারাপ করে দিল।
ঝড় যে আমার অপছন্দ তা না। কিন্তু আমি জোছনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, ঝড়ের জন্য নয়। তারপরও রাতটা খারাপ কাটেনি।
একটু পরপর মনে হছিল এই বুঝি টিনের চাল হার মেনে নিবে। একদিকে ঝড়, একদিকে টিনের চাল। সারারাত ধরে যুদ্ধ চলল।
একটু থামে, আবার ঝড় এসে শত্রু শিবিরে হানা দিয়ে যায়।
টিন, তাঁর, লোহার প্রাচীর দিয়ে টিনের চাল তার সাম্রাজ্য রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল।
ঝড় তার শিলা, বাতাস, বৃষ্টি সহ সমস্ত শক্তি নিয়ে চেষ্টা করল।
একসময় বৃষ্টি তার হার মেনে নিল।
আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
দুপুরে ঘুম ভাংল।
বাথরুমে যাওয়ার জন্য বের হয়েছি, দেখলাম অপু সাহেব বারান্দায় পেপার হাতে বসে আছেন।
আমাকে দেখেই বললেন হিমু সাহেব, একবার সময় করে একটু দেখা করে যাবেন। আমি এখানেই আছি।
অপু সাহেব মাঝারি গড়ের মানুস। বয়স প্রায় ৪৫।
সারা মুখে কিশোরী মেয়েদের মত ব্রন। এই ব্রনের জন্য তাকে প্রায়ই নানা কিছু বেবহার করতে দেখা যায়। এই নিয়ে মেসে সবাই হাসাহাসি করে।
অপু সাহেব এখন বিয়ে করেননি।
তাকে মাঝে মাঝে ঢাকা শহরের মহিলা কলেজের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
একদিন দাড়িয়ে থাকা অবস্তায় এক মহিলা এসে জিজ্ঞাসা করেছিল, ভাই আপনার মেয়ে কুন ইয়ার এ পড়ে?
এই কথা চিন্তা করতে করতে বাথরুমে ঢুকলাম।
বের হবার পর দেখি অপু সাহেব আগের জায়গায় বসে আছেন। আমি তার কাছেই যাচ্ছি।
আমি জানি তিনি কি বলবেন।
তার জন্য কোথায় মেয়ে দেখা হয়েছে। মেয়ের কি নাম ।
উচ্চতা কত।
কতটুকু পড়াশুনা।
কি বংশ।
শুকনা না মোটা তার বর্ণনা করতে শুরু করবেন।
মানুষটা খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারে।
আমি তার পাশের চেয়ারে গিয়ে বসলাম।
অপু সাহেব পেপার থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। এ যেন বিশ্ব বিজয়ের হাসি।
হিমু ভাই, খুশির খবর। আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
আমি বললাম, আরে এটা ত বিশাল খুশির খবর। তা মিষ্টি কই?
অপু সাহেব লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন।
লজ্জায় লাল হতে শুনেছি, কিন্তু এই প্রথম দেখলাম।
অপু সাহেব চোখ নিচের দিকে করে রেখেছেন। তার মুখে হাসির আভাশ। মুখের মধ্যে যেন সারা শরীরের রক্ত এসে পড়েছে।
যেন আর একটু সময় গেলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে তিনি মারা যাবেন।
হিমু ভাই,
আমি দেখলাম অপু সাহেব সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন।
ভাই, আর আগেও একবার আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল, আমাদের পাশের গ্রামের মেয়ে।
পরিবার থেকেই ঠিক করেন। আমার কোন পছন্দের মানুষ ছিল না।
মেয়েটার নাম ছিল শারমিন। মাত্র উচ্চমাধমিকে উঠেছে।
আমাকে কনে দেখতে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
যখন আমি প্রথম তাকে দেখি, তাকে একটা নীল শাড়ি পরিয়ে আমার সামনে এনে বসান হয়েছিল।
আমি দেখলাম একটা ছোট দেহ গুটিসুটি মেরে বসে আছে। আমি তার মুখের দিকে চাইলাম।
যেন ছাঁচে বশিয়ে কেউ এই মুখখানা বানিয়েছে। তারপর সেই ছাঁচ নষ্ট করে ফেলেছে।
আমি আমার জীবনে এত নিখুত মুখ আর দেখিনি।
বাসায় আসার পর যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে মেয়ে পছন্দ হয়েছে কি না, তখন আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছিল,
আমি এই মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছি, আমি তাকে ছাড়া বাঁচব না। তুমরা যত তাড়াতাড়ি পার বিয়ের আয়োজন কর।
আমার মনের অবস্থা হয়ত তারা বুজতে পেরেছিলেন, তাই ১৫ দিন পর বিয়ের তারিখ ঠিক হল।
এদিকে আমার যেন দিন কাটে না। আমি তার কথা সারাক্ষণ ভাবতে লাগলাম।
বাজার থেকে প্রসাধনি কিনে আনলাম, ঘর থকে বের হওয়া বন্ধ করে দিলাম কালো হয়ে যাওয়ার ভয়ে।
আমার এই চেষ্টা ছিল যাতে তার পাশে আমাকে বেমানান না লাগে।
আমি দিন গুনতে লাগলাম।
এই নিয়ে আমার সামনেই সবাই ঠাঠা করতে লাগল।
কিন্তু আমার খারাপ লাগার বদল গর্ব হত।
বিয়ের যখন চারদিন বাকি, আমি আমাদের পুকুর ঘাটে বসে আছি, পিছন থেকে কে যেন আমাকে ডাকছে।
মাথা ঘুরিয়ে দেখলাম, শারমিনদের বাড়ির কাজের ছেলে যাকে আগে আমি তাদের বাড়িতে আগে দেখেছি সে দাড়িয়ে আছে।
আমাকে একটা চিঠি দিয়ে সে বলল, শারমিন আপায় দিছে।
আমি চিঠিটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম, আমার জীবনে এই প্রথম কুনো মেয়ে আমাকে চিঠি লিখেছে।
আমার যে কি ভাল লাগছিলো বুজাতে পারব না।
আমি ৫ মিনিট চিঠিটা হাতে নিয়ে বসে ছিলাম।
চিঠিটা খুলার পরে দেখলাম এত সুন্দর হাতের লেখা যা শুধু যেন শারমিনের পক্ষেই লেখা সম্ভব ছিল।
কিন্তু চিঠিটা পড়ার পর আমার মনের আনন্দ আমার চুখের জলের সাথে ধুয়ে চলে গেল।
কয়েক লাইনের চিঠি।
চিঠিতে লেখা ছিল,
“আমি একজনকে ভালবাসি। আমার পক্ষে তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব না। কিন্তু আমার পক্ষে বাবার অমতে বিয়ে করাও সম্ভব না। এখন শুধু আপনি পারেন আমাকে রক্ষা করতে। আপনি এই বিয়ে ভেঙ্গে দিন। তাহলে আমার অনেক বদনাম হবে। আমাকে যখন অন্য কেউ বিয়ে করতে রাজি হবে না, তখন বাবা আমাকে তার কাছে বিয়ে দিতে বাধ্য হবেন। আমি বিষ হাতে নিয়ে এই চিঠি লিখছি। আপনি যদি এই বিয়ে ভেঙ্গে না দেন, তাহলে আমি বিষ খাব। আমি বিয়ের দিন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করব।“
আমি দেখলাম অপু সাহেবে চোখে জল।
অপু সাহেব আবার বলতে লাগলেন,
আমি থখন কি করব চিন্তা করে পাছিলাম না।
একবার ভাবলাম বাবাকে সব বলি, আবার ভাবলাম যদি শারমিন কিছু করে বসে?
সে অন্য জনকে ভালবাসে, কিন্তু আমি ত তাকে এই কয়দিনে আমার মন প্রাণ উজাড় করে দিয়েছি।
আমি সিধান্ত নিলাম কাউকে কিছু না বলে ঢাকায় চলে আসার।
আমি সব দুশ আমার কাধে নিয়ে ঢাকায় চলে আসলাম।
এরপর গত ১৫দিন আগপর্যন্ত বাবা আমার সাথে কথা বললেন নি।
আমার বাবার মনটা বিশাল তাই হয়ত আমাকে মাফ করে দিয়েছেন।
আমার জন্য পাত্রি খুঁজেছেন। আমাকে বাড়ি যেতে বলেছেন।
অপু সাহেব হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।
আমি তাকে সান্তনা দেবার চেষ্টা করলাম।


আমার জানা ভাল মানুষের খাতায় আরেকটা নাম উঠল।

আমি এখন হ্যাপি খালার বাসর দরজায়।
বেল বাজানোর সাথে সাথে দরজা খুলে গেল। দরজা হ্যাপি খালা খুলেছেন।
বেল বাজানোর পর এই শ্রেনীর মানুষকে দরজা খুলতে দেখলে সাধারনত মানুষ ভয় পায়। কারণ নিশ্চয়ই কুনো অঘটন ঘটেছে।
কুনো অঘটন না ঘটলে তারা নিজে দরজা খুলেন না, দরজা খুলবে কাজের লোক। আপনাকে সে জেরা করার পর ড্রয়িংরুমে নিয়ে বসাবে, এবং একটু পর পর উকি দিয়ে দেখবে আপনার দারা তার মালিকের শো-পিছের কুনো ক্ষতিসাধন হচ্ছে কি না।
তাই এই পরিস্থিতির জন্য সবাই মনে মনে প্রস্তুত থাকে।
আমি হাসি মুখে বললাম, কি খালা, কাজের মেয়ে সব নিয়ে ভেগেছে? আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম। বলব বলব করে বলা হয়নি।
খালা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালেন, আমাকে বলার জন্য কথা খুঁজতে লাগলেন।
অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে বললেন, তুই কি করে জানলি? তর ত জানার কথা না।
আমি ভবঘুরেরে মত হাসলাম।
যে হাসিতে কুনো অর্থ থাকে না, কিন্তু মন ভাল হয়ে যায়।
আমার হাসিতে খালার মন ভাল ত হলই না বরং খালা আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
বাঁদরের মত দাঁত বের করে হাসছিস কেন? আমার এত বড় সর্বনাশ হয়ে গেল, আর তুই হাসছিস?
আমি বললাম, মানুষের কষ্টে কষ্ট পাবার মত মানুষ এই পৃথিবীতে আর নেই গ খালা।
সবাই কষ্ট পাবার অভিনয় করে, যদিও এই অভিনয়ের জন্য কেউ অস্কার পেয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে তারা এই পুরস্কারের যুগ্য দাবিদার।
কারণ কেউই এই অভিনয় ধরতে পারে না।
পাগলের মত কি বকবক করছিস। একবারও জিজ্ঞাসা করলি না কি কি নিয়েছে।
আমি আগ্রহ নিয়ে খালার দিকে তাকালাম।
মানুষের এটি আরেকটি অভ্যাস। কিছু চুরি বা হারিয়ে গেলে মানুষ তা নিয়ে গল্প করে ভালবাসে।
বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলবে, এবং প্রতিবার নতুন নতুন তথ্য যুগ হবে। প্রথমবার হয়ত তিনি কি রঙের কাপড় পরে ছিলেন, তা বলতে ভুলে গিয়েছেলেন। অথবা কাকে কাকে তিনি সন্দেহ করছেন। প্রতিবার নতুন নতুন সন্দেহভাজন তালিকায় যুক্ত হবে। আপনাকে তিনি এর তালিকা করতে সাহায্য করে বললেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।
খালা যা বললেন তার সারমর্ম হল কাজের মেয়ে তেমন সুবিধা করতে পারেনি। শুধু তার দামি মেকআপ বক্স, কিছু গহনা, আর হাজার দশেক টাকা নিয়েছে।
আমি হতাস কণ্ঠে বললাম, এ ত রিতিমত অন্যায় করেছে সে। আর সব কিছু ঠিক আছে, মেকআপ বক্স নেবার তার কি দরকার ছিল। এখন তুমি বাহিরে গিয়ে যে আরেকটা কিনবে তারও উপায় নেই।
খালা অবাক হয়ে বললেন মানে কি?
আমি মুখ স্বাভাবিক রেখে বললাম, তুমি ত মেকআপ ছাড়া বাসায় আসা মেহমানের সামনে যাও না, তুমার পক্ষে মেকআপ ছাড়া মার্কেটে যাওয়া অসম্ভব। অন্য কাউকে দিয়ে আনালে তুমার পছন্দ হবে না।
এক কাজ কর খালা, কাউকে দিয়ে একটা বুরখা কিনে আন, নেকাব সহ। তাহলে মার্কেটে যেতে তুমার অসুবিধা হবে না। তুমি তুমার পছন্দমত কিনতে পারবে।
খালা রাগে লাল হয়ে গেলেন। মানুষ লজ্জা পেলেও লাল হয়, আবার রাগেও লাল হয়।
খালা আমাকে বললেন, আমার সাথে ইয়ারকি করিস, আমি কি তর ভাবি?
তুমি ত আমার ভাবিই।
মানে?
প্রতিটি মুসলমান একে অন্যের ভাই, তাহলে খালু আমার ভাই। তুমি আমার ভাবি।
খালা চিৎকার করে বললেন, বাহির হ হারামজাদা, এখনি আমার বাড়ি থেকে বাহির হ।
আমি আবার রাস্তায় নেমেছি।




মুখে লেগে আছে একটুকর হাসি.........।।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৬২৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৬/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • জসীম উদ্দিন ১৭/০২/২০১৫
    ভাল লাগার মত
  • জহির রহমান ১৬/০২/২০১৫
    অসাধারণ লেগেছে। কোনটিরই ঘাটতি ছিল না। শুভেচ্ছা জানাচ্ছি অনেক অনেক অনেক...
  • সবুজ আহমেদ কক্স ১৬/০২/২০১৫
    darun @@@khub sonder @@@@
  • md rasel mahmud ১৬/০২/২০১৫
    খুবই মজা পাইলাম ভাই।
    • ইউরিদ ১৬/০২/২০১৫
      আপনি মজা পেয়েছেন শুনে আনন্দ পেলাম।
      ধন্যবাদ আপনাকে
  • একে বারে পুরো উপন্যাস। ধন্যবাদ। প্রকাশ না করে উপায় নেই। দিলাম। প্রকাশ করে.......
    চালিয়ে যান।
 
Quantcast