চল ফিরে-ফিরে আসি (বদলে যাই)
“আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও
আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব।”
এটা বিখ্যাত নেপোলিয়ানের কথা। আমি তাঁর এ কথার সাথে সবসময় একমত, কখনো এ কথার দ্বিমত পোষন করি না কিংবা করার কিছু নেই। কিন্তুু আমার কথা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে বা আমাদের বর্তমান চারিপাশ নিয়ে। একটা সময় ছিল যখন আমাদের ছেলে-মেয়েরা কিংবা আমরা পড়ার অবসরে বিনোদনের জন্য উপন্যাস বা কবিতার বই পড়ে সময় পার করতো আর এখন আপনি কিংবা আমরা যদি একটু ভালো করে লক্ষ করি, একটা জিনিস বুঝতে পারবেন আমাদের ছেলে-মেয়েরা বা আমরা আর আগে মত বই পড়ি না। আর সেই জায়গা বা স্থান দখল করেছে মুঠোফোন (মোবাইল)। আমরা এখন কি কাজে, কি অবসরে মুঠোফোনে ব্যস- ইন্টারনেট ব্রাউজিং, এম এম এস, এস এম এস, ভয়েস চ্যাট অথবা আরো অনেক কিছু। আমি এখানে একটা বিষয়ে মুঠোফোন ও নেটওর্য়াক সেবাপ্রদানকারী কোম্পানী গুলো এবং অতি আধুনিকমনা পিতা-মাতার কাছে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে, যারা নির্দ্বিধায় ছেলে-মেয়ের হাতে তুলে দিচ্ছেন এই যন্ত্র । আসলে আমি এখানে কাউকে ছোট কিংবা কারো ব্যবসায়ের ক্ষতি করার জন্য কথাগুলো বলছি না।আমি শুধুমাত্র তখন আর এখন এই দুইটা সময়ের মধ্যে একটা পার্থক্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ।আমি আধুনিকতার বিপক্ষে নই। আমিও চাই দেশ তথা পৃথিবী এগিয়ে যাক আরো উন্নতির দিকে বিজ্ঞানের হাত ধরে। একবার শুধু একবার একটু সময় নিয়ে ভাবুনতো কি দিচ্ছে আমাদের কিংবা আমাদের সন্তানদের বিজ্ঞানের এই মহা আবিস্কার মুঠোফোন? কিছু যে দেয়নি তা কিন্তু- নয়, দিয়েছে অনেক কিছু, বরং আমি এখানে বলতে পারি কি দেয়নি এই মুঠোফোন। মুঠোফোনের অবদানে আজ সারা ধরণী এখন হাতের মুঠোয়। চোখের পলকে পৌছে যাচ্ছে আমাদের কথা এক প্রান্ত- থেকে অন্য প্রান্তে । মিলতে পারি একে অন্যের সাথে প্রাণের আবেগে। কিছু দিন আগেও মুঠোফোন দিয়ে কথা বলা ছাড়া আর কিছুই করা যেতো না আর এখন মুঠোফোন মানে একের ভিতর সব। বর্তমান মাল্টিমিডিয়া মুঠোফোনে মাধ্যমে সব সম্ভব হচ্ছে । মাল্টিমিডিয়া মুঠোফোন গুলো আমাদের তরুণ-তরুণীদের দিন দিন বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা আসলে সর্বদা কেন যে ভালোটাকে সহজে গ্রহণ করতে চাই না।দুরকে কাছে, অজানাকে জানা সবই ঠিক আছে। আসলে মনে রাখছি কতক্ষন?তারপরও মাঝে মাঝে দৈনিক পত্রিকাগুলো সংবাদ ছাপা হয় “ রং নম্বরে পরিচয় ভালবেসে অভিনয় পরে সর্বশান্ত-।” আমরা এরকম আর কত সংবাদ পড়বো? আমরা সব কিছু থেকে যদি ভালো দিকটা গ্রহণ করি তাহলে আর সমস্যা হয় না। কেন যেন সর্বদা নেগেটিভ এর দিকে আমাদের ঝোঁক। মুঠোফোনের বাটন টিপে টিপে ক্ষয় হয়ে গেছে কিন্তু- বইয়ের পাতা সবগুলো এখনো চকচকে। আগে বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে বিভিন্ন ধরণের মজার মজার বই উপহার পাওয়া যেত। এখন সেই স্থান দখল করেছে বিভিন্ন দরণের হিন্দি, ইংরেজী গান কিংবা মুভির সিডি অথবা ডিভিডি।বাসার ছোট্র সেই ছেলেটা আর আদর করে বাবার কাছে বলে না, বাবা আমাকে একটা ছড়ার বই কিনে দিবে। এখন তার আবদার কোন কার্টুন বা গেইম এর সিডি। বাবা তো ছেলের কথায় মহাখুশি, একবারও চিন্তা নেই ভুলতে বসেছি আমরা আমাদের সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে। প্রথমে শুরু কেিছলাম নেপোলিয়ানের কথা দিয়ে, আর বলতে বলতে বলছি মূঠোফোনের কথা। আসলে কি জানেন পৃথিবীতে এক একটা কাজের সাথে বা এক একটা কথার সাথে আরো অনেকগুলো কাজ বা কথার সর্ম্পক আছে। প্রথমে বলেছিলাম শিক্ষিত মায়ের কথা, ওখানে কিন্তু- নেপোলিয়ান একটি দিকে কথা বলেছিলেন আর তাহলো শিক্ষিত মা। সেখানে আরেকটা দিক কিন্তু বাকি রয়ে গিয়েছিল তাহলো সন্তান। শিক্ষিত মা অবশ্যই শিক্ষিত জাতি উপহার দিবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। নেপোলিয়ানের কথায় বরাবর আমি একমত। কিন্তু যখন নেপোলিয়ান একথা বলেছিলেন, তখন আর এখন অনেক তফাৎ। তাই আমি বর্তমান সময়ে দাড়িয়ে একটা কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই শিক্ষিত মায়ের মায়ের সাথে সাথে সেই মতো সন্তানও প্রয়োজন। কেননা আমরা আজ সভ্যতার দিকে অগ্রসর হতে হতে সবার সাথে আপন হতে গিয়ে বরং পর হতে চলেছি। মাকে আর মায়ের মতো ভালবাসি না, মা আর আগের মতো সন্তানদের প্রতি . . . . ., থাক সে কথা।
আগে মায়ের কোলে মাথা রেখে মিষ্টি মিষ্টি ছড়া আর মধুর সুরে গান শুনতাম - আয় আয় চাঁদ মামা, টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা অথবা ঘুম পাড়ানী মাসি পিসি মোদের বাড়ি এসো, খাট নেই পালং নেই চোখ পেতে বসো। এখন মায়েরা আর সেই গান, ছড়া শোনান না। এখন তারা শোনান -
Twinkle twinkle little star,
How I wonder what you are
Up above the world so high
Like a diamond in the sky.
আগে জোৎস্না রাতে বাড়ির উঠানে শীতল পাটি পেতে দাদী নানীদের কাছে শোনতাম রাক্ষস ক্ষোকসদের গল্প। এখন আর চাঁদণী রাতও নেই, দাদীও নেই, নানীও নেই। থাকবে কেমন করে আমরাতো ব্যস্ত আধুনিকতার হাত ধরে নগরায়নে। চাঁদণী রাততো তখন, যখন নীল আকাশে তাকালে দেখা মিলবে রূপালী চাঁদের আর ধরণী মাতবে জোৎস্না স্নাণে। এখন আকাশের দিকে তাকালে আকাশ দেখা যায় না। দেথা যায় আকাশ ছোয়া বড় বড় অট্রলিকা। দাদী আর নাণী তারাতো এখন গল্পের মতো। মা অথবা বাবার কাছ থেকে শুনতে হয় তাদের বাবা মার কথা।যারা হয়তোবা পড়ে আছে নাড়ীর টানে অথবা সন্তানেরা সুখে থাক এই আশায় গ্রামের বাড়ি। যেটা আমাদের আসল ঠিকানা। আমরা যে এখন একাকী থাকতে বড় বেশী ভালবাসি। আজ মনে পড়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়েকটি লাইন -
চল ফিরে চল মাটির টান
সেখানে বাতাস গন্ধ উদাস
সোহাগ জানায় কানে কানে।
যৌথ পরিবারের কথা আষাঢ়ে গল্পের মতো মনে হয়। বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় আমরা আজ উন্নতির চরম শিখরে। কিন্তু ক্ষতি একটা আমাদের হচ্ছে, আর তাহলো দিন দিন আমরা আমাদের নিজেদেরকেই ভুলতে বসেছি। আমরা আজ পশ্চিমা আগ্রাসনে আসক্ত হয়ে কাক থেকে কোকিল সাজতে চেষ্টা করছি বা সেজেছি। মা কে আমরা মাম্মি আর বাবাকে বাপ্পি অথবা ড্যাডি বলতেই বেশী ভালবাসি। হ্বদয়ের গভীর থেকে যে ভালবাসা সে যেন আজ হারাতে বসেছে। ভালবাসতে হবে তাই যেন আমাদের এই মিথ্যে ভালবাসার কষ্টসাধ্য অভিনয়। কি প্রয়োজন আমাদের এই মিথ্যে অভিনয়ের?মিথ্যে করে অনেক বেশী নয়, সত্যি করে একটু ভালবাসি। আমরা বাঙ্গালী, রক্তে তার টান অনূভব করি। কেন এগিয়ে যাবোনা অবশ্যইএগিয়ে যাবো।তবে কেন তা নিজেকে ভুলে গিয়ে? মাকে মা বলে ডাকি আর বাবাকে বাবা। কবি গোলাম মোস্তফার একটি লাইন বারবার মনে পড়ছে -
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুর অন্তরে।
হ্যাঁ আমরা প্রত্যেকে শিশু, প্রত্যেকে পিতা। শিশুর মধ্যে পিতার বসবাস, পিতার মধ্যে শিশু।আসলে আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের অবন্থান থেকে বদলে দিতে পারি অস্থির এই ধরিত্রী। প্রথমআলো তার দশম বছরে এসে বদলে দেয়ার প্রত্যয়ে নতুন স্লোগানে সবার মাঝে -বদলে যাও, বদলে দাও।তার মানে কি, আগে আমাদের নিজেদের বদলাতে হবে। তারপর আমাদের পরিবার, তারপর আমাদের গ্রাম, তারপর থানা এমনিভাবে বদলাতে বদলাতে একদিন আমরা বদলে দিতে পারবো আমাদেরএই চিরসবুজ বাংলাদেশ অতঃপর সমগ্র বিশ্ব। আমরা সৃষ্টির শুরু থেকেই বদলে বিশ্বাস করি। বদলের বিশ্বাস বুকে নিয়ে বিবর্তনে আজকের এই অবস্থানে। কেন আমরা সবাই নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস- থাকি? অণ্যদের নিয়ে কেন আমরা একটু সময় ভাবতে পারিনা? একা একা আর কত? আসুন না আমরা আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের হাত শক্ত করি সবার সাথে হাতে হাত রেখে গড়ে তুলি সুন্দর একটা সরল পৃথিবী। হাদীস শরীফে আছে - বেশী বেশী মসজিদে যাও, যত কম পারো বাজারে। ভাবতে পারেন কেন বললাম এই কথা? সে হলো আমরা গড়ে উঠি ঠিক আমাদের চারপাশের পরিবেশের উপর ভিত্তি করে। আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশটাকে সুন্দর করি। যেন আমি , আমরাসহ আমাদের পরর্বতী প্রজন্ম সেই রেখে যাওয়া পরিবেশে সুন্দর মানুষ হয়ে উঠতে পারে। ভাগ করি আমাদের আনন্দ-ব্যাথাগুলো, বিলিয়ে দেই নিজেদের সুখগুলো সবার মাঝে। আমরা মুসলমান নামাজ রোজার ভিতর থাকলে মন আত্না পবিত্র থাকে। তেমনি অন্য ধর্মের লোকজন উপাসনার মাঝে থাকলে তাদেরও আত্না পবিত্র হয়। আমরা চাই সর্বদা পবিত্র থাকতে, ভালো কিছুর মাঝে থাকতে। আসুন না সবাই পবিত্র হয়ে যাই।যে পবিত্রতায় সবাই স্পর্শ করতে পারি সবার আত্নাকে। ভালবাসতে পারি মানুষকে ভালবাসার মতো করে । মন বা আত্নাকে পবিত্র রাখতে পারে বই। জীবনের প্রথম থেকে শেষ বই মানুষের এমন আপন/বন্ধু যে, কখনো শত্রুতা/বিশ্বাসঘাতকতা করে না।বই মানুষের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বন্ধু।বই মানুষকে ভালবাসতে ভালবাসাতে শিখায়। আপনি হয়তোবা ভাবতে পারেন লেখার প্রথমে শিক্ষিত মা মাঝখানে এতকিছু ঘুরে আসা কেন? লেখার মাঝে আমি একবার বলেছিলাম এক একটা কাজ এক একটা কথা অনেকগুলো কাজ বা কথার সাথে সর্ম্পক রেখে চলে।শিক্ষিত মা হতে হলে তাকে অবশ্যই পড়াশোনা করতে হবে আর তার জন্যইতো দরকার বই। জানার জন্য ঞ্জানের জন্য আমাদের পথ চলা তার জন্য প্রয়োজন বই।একটু যদি ভালো করে ভাবেন দেখবেন এখানে কোন অপ্রাসঙ্গিক কথা নেই। আসলে বই পড়লেই কি সবাই প্রকৃত মানুষ হতে পারে? না পারে না। বই পড়লাম আর তার অর্থ অন-রে অনুধাবন করলাম না, তাহলে তো সেখানে কোন ফলাফল আশা করা যায় না। বই পড়তে হবে আর তার অর্থ হ্বদয় দিয়ে বুঝতে তবেই না আসবে ফলাফল। আসুন না আমারা দেশকে ভালবাসি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এর মতো। আলোকিত মানুষ হবার লক্ষে গড়ে তুলি সবার বুকের মাঝে এক একটা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র।দেশকে ভালবাসি নজরুলের মতো রক্তে বিদ্রোহের আগুন জ্বালাই। ভালবাসে গ্রামকে ছুটে যাই পল্লী কবি জসিম উদ্দীনের নকশী কাথার মাঠে আর সুজন বাদীয়ার ঘাটে। হ্বদয় বাধি লালনের গানে। হয়ে যাই নেপোলিয়ানের শিক্ষিত সেই মায়ের সন-ান যার হাত ধরে আমরা সবাই গড়ে তুলবো শিক্ষিত জাতি, মাথা তুলে বুক ফুলিয়ে দাড়াই সারা বিশ্বের সামনে বীরের ন্যায়। থেকে থেকে মন বলে -
উদাস দুপুর বেলা বটের ছায়ায়
রাখালের বাঁশির টান,
ক্লান্ত- দেহখানি মোর শুনে সেই সুর
শীতল হয় আমার প্রাণ।
আমি তোমাদের একটি শিক্ষিত জাতি দেব।”
এটা বিখ্যাত নেপোলিয়ানের কথা। আমি তাঁর এ কথার সাথে সবসময় একমত, কখনো এ কথার দ্বিমত পোষন করি না কিংবা করার কিছু নেই। কিন্তুু আমার কথা বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে বা আমাদের বর্তমান চারিপাশ নিয়ে। একটা সময় ছিল যখন আমাদের ছেলে-মেয়েরা কিংবা আমরা পড়ার অবসরে বিনোদনের জন্য উপন্যাস বা কবিতার বই পড়ে সময় পার করতো আর এখন আপনি কিংবা আমরা যদি একটু ভালো করে লক্ষ করি, একটা জিনিস বুঝতে পারবেন আমাদের ছেলে-মেয়েরা বা আমরা আর আগে মত বই পড়ি না। আর সেই জায়গা বা স্থান দখল করেছে মুঠোফোন (মোবাইল)। আমরা এখন কি কাজে, কি অবসরে মুঠোফোনে ব্যস- ইন্টারনেট ব্রাউজিং, এম এম এস, এস এম এস, ভয়েস চ্যাট অথবা আরো অনেক কিছু। আমি এখানে একটা বিষয়ে মুঠোফোন ও নেটওর্য়াক সেবাপ্রদানকারী কোম্পানী গুলো এবং অতি আধুনিকমনা পিতা-মাতার কাছে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে, যারা নির্দ্বিধায় ছেলে-মেয়ের হাতে তুলে দিচ্ছেন এই যন্ত্র । আসলে আমি এখানে কাউকে ছোট কিংবা কারো ব্যবসায়ের ক্ষতি করার জন্য কথাগুলো বলছি না।আমি শুধুমাত্র তখন আর এখন এই দুইটা সময়ের মধ্যে একটা পার্থক্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। ।আমি আধুনিকতার বিপক্ষে নই। আমিও চাই দেশ তথা পৃথিবী এগিয়ে যাক আরো উন্নতির দিকে বিজ্ঞানের হাত ধরে। একবার শুধু একবার একটু সময় নিয়ে ভাবুনতো কি দিচ্ছে আমাদের কিংবা আমাদের সন্তানদের বিজ্ঞানের এই মহা আবিস্কার মুঠোফোন? কিছু যে দেয়নি তা কিন্তু- নয়, দিয়েছে অনেক কিছু, বরং আমি এখানে বলতে পারি কি দেয়নি এই মুঠোফোন। মুঠোফোনের অবদানে আজ সারা ধরণী এখন হাতের মুঠোয়। চোখের পলকে পৌছে যাচ্ছে আমাদের কথা এক প্রান্ত- থেকে অন্য প্রান্তে । মিলতে পারি একে অন্যের সাথে প্রাণের আবেগে। কিছু দিন আগেও মুঠোফোন দিয়ে কথা বলা ছাড়া আর কিছুই করা যেতো না আর এখন মুঠোফোন মানে একের ভিতর সব। বর্তমান মাল্টিমিডিয়া মুঠোফোনে মাধ্যমে সব সম্ভব হচ্ছে । মাল্টিমিডিয়া মুঠোফোন গুলো আমাদের তরুণ-তরুণীদের দিন দিন বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা আসলে সর্বদা কেন যে ভালোটাকে সহজে গ্রহণ করতে চাই না।দুরকে কাছে, অজানাকে জানা সবই ঠিক আছে। আসলে মনে রাখছি কতক্ষন?তারপরও মাঝে মাঝে দৈনিক পত্রিকাগুলো সংবাদ ছাপা হয় “ রং নম্বরে পরিচয় ভালবেসে অভিনয় পরে সর্বশান্ত-।” আমরা এরকম আর কত সংবাদ পড়বো? আমরা সব কিছু থেকে যদি ভালো দিকটা গ্রহণ করি তাহলে আর সমস্যা হয় না। কেন যেন সর্বদা নেগেটিভ এর দিকে আমাদের ঝোঁক। মুঠোফোনের বাটন টিপে টিপে ক্ষয় হয়ে গেছে কিন্তু- বইয়ের পাতা সবগুলো এখনো চকচকে। আগে বিভিন্ন উৎসব আয়োজনে বিভিন্ন ধরণের মজার মজার বই উপহার পাওয়া যেত। এখন সেই স্থান দখল করেছে বিভিন্ন দরণের হিন্দি, ইংরেজী গান কিংবা মুভির সিডি অথবা ডিভিডি।বাসার ছোট্র সেই ছেলেটা আর আদর করে বাবার কাছে বলে না, বাবা আমাকে একটা ছড়ার বই কিনে দিবে। এখন তার আবদার কোন কার্টুন বা গেইম এর সিডি। বাবা তো ছেলের কথায় মহাখুশি, একবারও চিন্তা নেই ভুলতে বসেছি আমরা আমাদের সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে। প্রথমে শুরু কেিছলাম নেপোলিয়ানের কথা দিয়ে, আর বলতে বলতে বলছি মূঠোফোনের কথা। আসলে কি জানেন পৃথিবীতে এক একটা কাজের সাথে বা এক একটা কথার সাথে আরো অনেকগুলো কাজ বা কথার সর্ম্পক আছে। প্রথমে বলেছিলাম শিক্ষিত মায়ের কথা, ওখানে কিন্তু- নেপোলিয়ান একটি দিকে কথা বলেছিলেন আর তাহলো শিক্ষিত মা। সেখানে আরেকটা দিক কিন্তু বাকি রয়ে গিয়েছিল তাহলো সন্তান। শিক্ষিত মা অবশ্যই শিক্ষিত জাতি উপহার দিবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। নেপোলিয়ানের কথায় বরাবর আমি একমত। কিন্তু যখন নেপোলিয়ান একথা বলেছিলেন, তখন আর এখন অনেক তফাৎ। তাই আমি বর্তমান সময়ে দাড়িয়ে একটা কথা স্পষ্টভাবে বলতে চাই শিক্ষিত মায়ের মায়ের সাথে সাথে সেই মতো সন্তানও প্রয়োজন। কেননা আমরা আজ সভ্যতার দিকে অগ্রসর হতে হতে সবার সাথে আপন হতে গিয়ে বরং পর হতে চলেছি। মাকে আর মায়ের মতো ভালবাসি না, মা আর আগের মতো সন্তানদের প্রতি . . . . ., থাক সে কথা।
আগে মায়ের কোলে মাথা রেখে মিষ্টি মিষ্টি ছড়া আর মধুর সুরে গান শুনতাম - আয় আয় চাঁদ মামা, টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা অথবা ঘুম পাড়ানী মাসি পিসি মোদের বাড়ি এসো, খাট নেই পালং নেই চোখ পেতে বসো। এখন মায়েরা আর সেই গান, ছড়া শোনান না। এখন তারা শোনান -
Twinkle twinkle little star,
How I wonder what you are
Up above the world so high
Like a diamond in the sky.
আগে জোৎস্না রাতে বাড়ির উঠানে শীতল পাটি পেতে দাদী নানীদের কাছে শোনতাম রাক্ষস ক্ষোকসদের গল্প। এখন আর চাঁদণী রাতও নেই, দাদীও নেই, নানীও নেই। থাকবে কেমন করে আমরাতো ব্যস্ত আধুনিকতার হাত ধরে নগরায়নে। চাঁদণী রাততো তখন, যখন নীল আকাশে তাকালে দেখা মিলবে রূপালী চাঁদের আর ধরণী মাতবে জোৎস্না স্নাণে। এখন আকাশের দিকে তাকালে আকাশ দেখা যায় না। দেথা যায় আকাশ ছোয়া বড় বড় অট্রলিকা। দাদী আর নাণী তারাতো এখন গল্পের মতো। মা অথবা বাবার কাছ থেকে শুনতে হয় তাদের বাবা মার কথা।যারা হয়তোবা পড়ে আছে নাড়ীর টানে অথবা সন্তানেরা সুখে থাক এই আশায় গ্রামের বাড়ি। যেটা আমাদের আসল ঠিকানা। আমরা যে এখন একাকী থাকতে বড় বেশী ভালবাসি। আজ মনে পড়ে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়েকটি লাইন -
চল ফিরে চল মাটির টান
সেখানে বাতাস গন্ধ উদাস
সোহাগ জানায় কানে কানে।
যৌথ পরিবারের কথা আষাঢ়ে গল্পের মতো মনে হয়। বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় আমরা আজ উন্নতির চরম শিখরে। কিন্তু ক্ষতি একটা আমাদের হচ্ছে, আর তাহলো দিন দিন আমরা আমাদের নিজেদেরকেই ভুলতে বসেছি। আমরা আজ পশ্চিমা আগ্রাসনে আসক্ত হয়ে কাক থেকে কোকিল সাজতে চেষ্টা করছি বা সেজেছি। মা কে আমরা মাম্মি আর বাবাকে বাপ্পি অথবা ড্যাডি বলতেই বেশী ভালবাসি। হ্বদয়ের গভীর থেকে যে ভালবাসা সে যেন আজ হারাতে বসেছে। ভালবাসতে হবে তাই যেন আমাদের এই মিথ্যে ভালবাসার কষ্টসাধ্য অভিনয়। কি প্রয়োজন আমাদের এই মিথ্যে অভিনয়ের?মিথ্যে করে অনেক বেশী নয়, সত্যি করে একটু ভালবাসি। আমরা বাঙ্গালী, রক্তে তার টান অনূভব করি। কেন এগিয়ে যাবোনা অবশ্যইএগিয়ে যাবো।তবে কেন তা নিজেকে ভুলে গিয়ে? মাকে মা বলে ডাকি আর বাবাকে বাবা। কবি গোলাম মোস্তফার একটি লাইন বারবার মনে পড়ছে -
ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুর অন্তরে।
হ্যাঁ আমরা প্রত্যেকে শিশু, প্রত্যেকে পিতা। শিশুর মধ্যে পিতার বসবাস, পিতার মধ্যে শিশু।আসলে আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের অবন্থান থেকে বদলে দিতে পারি অস্থির এই ধরিত্রী। প্রথমআলো তার দশম বছরে এসে বদলে দেয়ার প্রত্যয়ে নতুন স্লোগানে সবার মাঝে -বদলে যাও, বদলে দাও।তার মানে কি, আগে আমাদের নিজেদের বদলাতে হবে। তারপর আমাদের পরিবার, তারপর আমাদের গ্রাম, তারপর থানা এমনিভাবে বদলাতে বদলাতে একদিন আমরা বদলে দিতে পারবো আমাদেরএই চিরসবুজ বাংলাদেশ অতঃপর সমগ্র বিশ্ব। আমরা সৃষ্টির শুরু থেকেই বদলে বিশ্বাস করি। বদলের বিশ্বাস বুকে নিয়ে বিবর্তনে আজকের এই অবস্থানে। কেন আমরা সবাই নিজেদের স্বার্থ নিয়ে ব্যস- থাকি? অণ্যদের নিয়ে কেন আমরা একটু সময় ভাবতে পারিনা? একা একা আর কত? আসুন না আমরা আমাদের নিজেদের প্রয়োজনে নিজেদের হাত শক্ত করি সবার সাথে হাতে হাত রেখে গড়ে তুলি সুন্দর একটা সরল পৃথিবী। হাদীস শরীফে আছে - বেশী বেশী মসজিদে যাও, যত কম পারো বাজারে। ভাবতে পারেন কেন বললাম এই কথা? সে হলো আমরা গড়ে উঠি ঠিক আমাদের চারপাশের পরিবেশের উপর ভিত্তি করে। আমরা আমাদের চারপাশের পরিবেশটাকে সুন্দর করি। যেন আমি , আমরাসহ আমাদের পরর্বতী প্রজন্ম সেই রেখে যাওয়া পরিবেশে সুন্দর মানুষ হয়ে উঠতে পারে। ভাগ করি আমাদের আনন্দ-ব্যাথাগুলো, বিলিয়ে দেই নিজেদের সুখগুলো সবার মাঝে। আমরা মুসলমান নামাজ রোজার ভিতর থাকলে মন আত্না পবিত্র থাকে। তেমনি অন্য ধর্মের লোকজন উপাসনার মাঝে থাকলে তাদেরও আত্না পবিত্র হয়। আমরা চাই সর্বদা পবিত্র থাকতে, ভালো কিছুর মাঝে থাকতে। আসুন না সবাই পবিত্র হয়ে যাই।যে পবিত্রতায় সবাই স্পর্শ করতে পারি সবার আত্নাকে। ভালবাসতে পারি মানুষকে ভালবাসার মতো করে । মন বা আত্নাকে পবিত্র রাখতে পারে বই। জীবনের প্রথম থেকে শেষ বই মানুষের এমন আপন/বন্ধু যে, কখনো শত্রুতা/বিশ্বাসঘাতকতা করে না।বই মানুষের প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বন্ধু।বই মানুষকে ভালবাসতে ভালবাসাতে শিখায়। আপনি হয়তোবা ভাবতে পারেন লেখার প্রথমে শিক্ষিত মা মাঝখানে এতকিছু ঘুরে আসা কেন? লেখার মাঝে আমি একবার বলেছিলাম এক একটা কাজ এক একটা কথা অনেকগুলো কাজ বা কথার সাথে সর্ম্পক রেখে চলে।শিক্ষিত মা হতে হলে তাকে অবশ্যই পড়াশোনা করতে হবে আর তার জন্যইতো দরকার বই। জানার জন্য ঞ্জানের জন্য আমাদের পথ চলা তার জন্য প্রয়োজন বই।একটু যদি ভালো করে ভাবেন দেখবেন এখানে কোন অপ্রাসঙ্গিক কথা নেই। আসলে বই পড়লেই কি সবাই প্রকৃত মানুষ হতে পারে? না পারে না। বই পড়লাম আর তার অর্থ অন-রে অনুধাবন করলাম না, তাহলে তো সেখানে কোন ফলাফল আশা করা যায় না। বই পড়তে হবে আর তার অর্থ হ্বদয় দিয়ে বুঝতে তবেই না আসবে ফলাফল। আসুন না আমারা দেশকে ভালবাসি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ এর মতো। আলোকিত মানুষ হবার লক্ষে গড়ে তুলি সবার বুকের মাঝে এক একটা বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র।দেশকে ভালবাসি নজরুলের মতো রক্তে বিদ্রোহের আগুন জ্বালাই। ভালবাসে গ্রামকে ছুটে যাই পল্লী কবি জসিম উদ্দীনের নকশী কাথার মাঠে আর সুজন বাদীয়ার ঘাটে। হ্বদয় বাধি লালনের গানে। হয়ে যাই নেপোলিয়ানের শিক্ষিত সেই মায়ের সন-ান যার হাত ধরে আমরা সবাই গড়ে তুলবো শিক্ষিত জাতি, মাথা তুলে বুক ফুলিয়ে দাড়াই সারা বিশ্বের সামনে বীরের ন্যায়। থেকে থেকে মন বলে -
উদাস দুপুর বেলা বটের ছায়ায়
রাখালের বাঁশির টান,
ক্লান্ত- দেহখানি মোর শুনে সেই সুর
শীতল হয় আমার প্রাণ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
পরশ ০৩/০২/২০১৬বেশ ভাল
-
মনিরুজ্জামান জীবন ১৯/০১/২০১৬বেশ ভালো লাগলো, তবে লেখার মধ্যে ভীষণ ভাবে দৃষ্টিকোণ রাখতে হবে। কবির জন্য শুভকামনা রইলো।
-
প্রদীপ চৌধুরী ১৮/০১/২০১৬লেখাটা ভালো কিন্তু অলেক অ-সংগতি দেখতে পেলাম, আস্তে আস্তে উন্নতি হবে লিখতে থাকুন আমরা আপনাদের পাশে আছি|
কেউ সমালোচনা করলে তাঁকে খারাপ ভাববেন না কারণ তিনি আপনার উন্নতির জন্যই খারাপ দিক গুলোকে সংশোধন করার চেষ্টা করেন| -
দেবব্রত সান্যাল ১২/০১/২০১৬লেখাটি শুরু হয়েছিল , "Give me an educated mother, I shall promise you the birth of a civilized, educated nation" ~ "Napoleon Bonaparte". দিয়ে। তারপর যুক্তির স্রোত অন্য খাতে বইতে শুরু করলো। যুক্তির বন্ধন শিথিল ও দুর্বল। লেখাটি অনাবশ্যক দীর্ঘ। অতি চেনা ছড়ার পুরোটা দেবার প্রয়োজন হয়না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানটি ও দেখে নিন। ভাষা ও বানান তো অবশ্যই দেখবেন।