এক হতদরিদ্র মায়ের আত্মকাহিনী
অনেক খুঁজাখুঁজির পর রাহাতের খুঁজ পেল ।ছেলেটি খুঁজে পাবার পর মানিকের কোন কথার তোয়াক্কা না করে সোজা ডুকে পড়ল রাহাতের অফিসে ।
প্রবেশ করেই দেখে ,খুব ব্যস্ত গোলটেবিলে বসা দশ পনের জন মানুষ কিসের যেন আলোচনা করছে ,বোঝাই যাচ্ছে মিটিং চলছে ।
রাহাত হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে ...
ছেলেটি কাঁধ থেকে তার ব্যাগটা নামিয়ে বলল, "স্যার স্মালাইকুম ।কেমন আছেন স্যার ?? আমাকে চিনতে পেরেছেন ?? আমি অভি,স্যার ।"
রাহাত আসলেই অভিকে চিনতে পারে নি ,হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে রয়ল ,কে না কে হঠাত্ অনুমতিও নেই ,মিটিং এর মাঝেই যেন ডুকে পড়ল ।
অত্যন্ত রাগের বসত ,রাহাত মানিককে ডাকল , "এসব যে সে রাস্তার ছেলে হুট করে কথা নেই বার্তা নেই অফিসে ডুকে পড়ে ,ডিউটিতে এসে ঘুমাও নাকি ,দেখো না ,তুমি কী ডিউটি কর ?"
মানিক ভয়ের ঘোরে বলে ,"আসলে স্যার ছেলেটি আমার কোন কথায় শুনল না ,বাধা-নিষেধ মানতে চাইল না স্যার ,এক রকম জোর করেই ঢুকে পড়ল ,আর বলল আমি স্যারের কাছে যাবো ,স্যারের খুব দরকার ।"
" কি দরকার জিজ্ঞেস করতে পারতে না হয় গেস্টরূমে অপেক্ষা করাতে ! "
স্যার ,বিশ্বাস করেন ছেলেটা কেমন করল তা আপনি দেখেন নি ,তাই বলছেন ।
রাহাত ঠান্ডা মেজাজে হঠাত্ বিগড়ে গেল ।অফিসের সবাইকে ছুটি দিয়ে দিলেন রাহাত সাহেব ।
খানিকটা ধমকের সুরে বললেন ,"এই ছেলে ,আমার কাছে তোমার কি দরকার ?নাকি অন্য কোন মতলব নিয়েই ঢুকে পড়লে ?"
অভি স্যারকে চিনে হিসেবে সাহসের সাথেই বলে ,সব পরে বলবো স্যার ,আগে বলেন ,আপনি কি আমায় চিনতে পেরেছেন ?
রাহাত অনেক চেষ্টা করল তবুও মনে করতে পারলো না ,কে সে ?
রাহাত স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে ,"দেখো বাবা ,ইদানিং বেশী টেনশনে কাটছে আমার ,অফিসিয়াল কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে আমি খুব টেনশনে আছি ,দয়া করে আর কোন নতুন টেনশান না বাড়িয়ে এবার বিদায় হলে সত্যি আমি খুব খুব কৃতজ্ঞ হয় ।"
ছেলেটিও যেন দমবার পাত্র নয় ।"স্যার আমি তো চলেইই যাবো ,আমি আপনাকে অনেক কষ্টে ,অনেক খুঁজেছি শুধুমাত্র আপনাকে আপনার আমানত ফেরত দেয়ার জন্যে ।আপনার আমানতের জিনিসটা ফেরত দিতেই পারলেই আমি চলে যাবো স্যার "
রাহাত খুব দুশ্চিন্তাই পড়ে ,ছেলেটা আবোলতাবোল এইসব বলে কি ?কোন বড় ধরণের সমস্যা পাকাচ্ছে নাতো !
রাহাতো ছেলেটাকে বিদেয় না করে কোন কাজ করতে পারছে না ।এদিকে অফিসের এক টেনশান ইতিমধ্যে আরেকটা বাড়তি চাপ ।
রাহাত খুব শান্ত হয়ে শান্ত কন্ঠেই ,অভির পিঠে হাত বুলিয়ে বলে ,"বলতো বাবা ,সত্যি করে তুমি কি বলতে এসেছো ?"
অভি বলল ,"স্যার আপনার সাথে আমার দেখা সেই চৌরাস্তার মোড়ে ,নাজিরহাট বাসস্ট্যান্ডের সেখানে ,আপনি বোধয় সেদিন গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিলেন ।তখন ফোটা ফোটা বৃষ্টিও হচ্ছিল ।"
রাহাতের মনে পড়ে যায় সেদিনের সে কান্নাভেজা ঘটনা ,স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে উঠে বৃষ্টি ভেজা চৌরাস্তার মোড়ের কথা . . .
রাহাত বাসের টিকেট কাটার জন্য টিকেট কাউন্টারে ,টিকেট নিয়ে ফিরতে রাহাতের কানে ভেসে আসে একটা কিশোরের আওয়াজ , "স্যার আমাকে শ'খানের টাকা দিবেন ?আমার মায়ের চিকিত্সা করাবো ।"
রাহাত পকেট থেকে দুইটা দুই টাকার নোট অভির হাতে ,অভি সেই টাকা নেই না ....অভি টাকাগুলা রাহাত সাহেবের হাতে দিয়ে বলে ,
" স্যার আমি ভিক্ষুক নই স্যার ।আমার মায়ের চিকিত্সার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ,অভাবী মায়ের ছেলে তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় আসল স্যার ,তাই আপনার কাছ থেকে শ'খানেক টাকা চাইলাম ।
রাহাত চলে যেতেই পিছু ফিরে ছেলেটির দিকে তাকালেন ,আসলেই ছেলেটিকে ভিক্ষুকের মত লাগে না ,কাছে এসেই রাহাত সাহেব বললেন ," এই ছেলে কাজ করতে পারো না ?"লোকের কাছে হাত না পেতে কাজ করলেই তো হয় ?"
- স্যার ,বাহ বেশ কথাই তো বললেন ।আসলে স্যার মায়ের চিকিত্সার জন্য যে প্রিমাণ অর্থের প্রয়োজন সে পরিমাণ অর্থ যদি আমার কাজ দিয়ে আসত তাহলে আর পথে আসতাম না ,একটু থমকে থাকা গলায় অভি বলল ।
" আগে স্যার মায়ের চিকিত্সার টাকা তুলি তারপর নিশ্চয় কাজ করব স্যার " -অভি বলল ।
- লেখাপড়া করো নো কেন ?
- সে অনেক কথা স্যার !
- পরিবারে কে কে আছে ?
- মা আর একমাত্র বোন !
- কেন বাবা নেই ।
- না স্যার ,আমি এই অভাগার চোখে বাবাকে দেখারো সুযোগ হয় নি ,আমার জন্মের আগেই নাকি বাবা মারা গেছেন ।
- তা তোমাদের সংসার চলে কেমনে ?
- তা চলে ,অনেক কষ্টে ,অনেক বেলা না খাওয়ার মধ্যেই ।
এতোক্ষণে রাহাত সাহেবের বাস ছাড়ার সময় হলো ।বাসের উঠার আগে রাহাত সাহেবের মন অনেক খারাপ হয়ে যায় আর অভির হাতে পাঁচশত টাকার নোট দিয়ে বলেন মায়ের চিকিত্সা করিও ,তোমার মা যেন সুস্থ হয়ে উঠে সে কামনাই করি ,আর বলল কি নাম যেন তোমার ?
- স্যার অভি ।
অভির চোখে আনন্দের অশ্রু ,টাকা হাতে পেয়ে অভি আর কোন কথা বলতে পারলো না সে ।বাস স্ট্যান্ডের সেই বাসের দিকে তাকিয়ে রয়ল ,এক সময় বাস অদৃশ্য হয়ে গেল ।
অভি বাসস্ট্যান্ডের ওইদিন একটা কাপড়ের হাত ব্যাগ পেয়েছিল ,তাতে রাহাত সাহেবের অনেক জরূরী কাগজপত্র ছিল ,আর ফ্ল্যাটকিনার জন্য একটা চেকবইও ছিল ....ব্যাগের মধ্যে রাহাতের এড্রেস লিখা ছিল ছোট্ট একটা কাগজে ।আধা পড়া অভি তা পড়ে বুঝতে পেরেছিল যে এই ব্যাগটা তার ।কিন্তু অভির পৌঁছে দেয়ার কোন পথ জানা ছিল না ।
রাহাত চেয়ার ছেড়ে উঠে অভির কাঁধে হাত দিয়ে বলে ,"হ্যাঁ রমজান ,আমার সব মনে পড়েছে ,সব " ।
এখন বলো ,তোমার মা কেমন আছেন ?
" স্যার মা তো আর বেঁচে নেই ।"
" কি বলো তুমি ? মায়ের চিকিত্সা করানো হয় নি ?"
" চিকিত্সার টাকা উঠেছিল ,চিকিত্সাও করানো হয়েছিল ,মা সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে ছিলেন ,কিছু দিন পর মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে ।এই জন্যেও ডাক্তার দেখানো হয়েছিল ।ডাক্তার বলে ,উনাকে ভালো কোন হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে এবং এর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ।"
অভি আরো বলে "মায়ের ক্যান্সার থেকে পরিত্রাণের জন্য যে টাকার প্রয়োজন তা জোগাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না স্যার ।"
রাহাত সাহেব অভির গল্প শুনে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে ,বাকশূণ্য হয়ে রাহাত সাহেব অভিকে বলে ,
"এখন তুমি কি কর ? "
"স্যার এখন গ্রামে ব্যাংক থেকে কিস্তি নিয়ে ছোট্ট একটা পান - সিগারেটের দোকান দিয়েছি ।এই দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে ।"
অভির এবার বিদেয়ের সময় হলো ,অভি যাবার বেলায় আমানতের ব্যাগটা রাহাত সাহেব কে দেই ....
বিদেয়ের বেলায় অভির শেষ কিছু কান্নাভেজা কন্ঠে ,
স্যার যদি কখনো সুযোগ হয় আমার গ্রামের বাড়িতে আসবেন আর আমার ছোট্ট দোকানটা দেখে যাবেন দয়া করে ।
স্যার আসি দোয়া করবেন আর অবশ্যই একদিন আসবেন আমার বাড়িতে ।
রাহাত ব্যাগ খুলে দেখে ,
ব্যাগ যেই রকম ছিল ঠিক সেইরকমেই আছে ,যেভাবে কাগজ - পত্র রেখেছিল ঠিক সেভাবেই আছে ,আর চেকবইটিও ঠিক যেভাবে রেখেছিল সেভাবে পড়ে আছে ।ব্যাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল অভি পাওয়ার পর তা খুলেও দেখে নি ।
চেকের কাগজটা পেলে হয়ত অভি তার মাকে আজ সুস্থ করে তুলতে পারতো ,মা কে হারাতে হত না ।
এই সব ভেবে সেদিন আর রাহাত সাহেবের কাজে মন বসে নি ,হয়ত আর কোন দিন সেকাজে মন বসবেও না .....
#দার্শনিক_ওয়াহিদ
প্রবেশ করেই দেখে ,খুব ব্যস্ত গোলটেবিলে বসা দশ পনের জন মানুষ কিসের যেন আলোচনা করছে ,বোঝাই যাচ্ছে মিটিং চলছে ।
রাহাত হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে ...
ছেলেটি কাঁধ থেকে তার ব্যাগটা নামিয়ে বলল, "স্যার স্মালাইকুম ।কেমন আছেন স্যার ?? আমাকে চিনতে পেরেছেন ?? আমি অভি,স্যার ।"
রাহাত আসলেই অভিকে চিনতে পারে নি ,হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে রয়ল ,কে না কে হঠাত্ অনুমতিও নেই ,মিটিং এর মাঝেই যেন ডুকে পড়ল ।
অত্যন্ত রাগের বসত ,রাহাত মানিককে ডাকল , "এসব যে সে রাস্তার ছেলে হুট করে কথা নেই বার্তা নেই অফিসে ডুকে পড়ে ,ডিউটিতে এসে ঘুমাও নাকি ,দেখো না ,তুমি কী ডিউটি কর ?"
মানিক ভয়ের ঘোরে বলে ,"আসলে স্যার ছেলেটি আমার কোন কথায় শুনল না ,বাধা-নিষেধ মানতে চাইল না স্যার ,এক রকম জোর করেই ঢুকে পড়ল ,আর বলল আমি স্যারের কাছে যাবো ,স্যারের খুব দরকার ।"
" কি দরকার জিজ্ঞেস করতে পারতে না হয় গেস্টরূমে অপেক্ষা করাতে ! "
স্যার ,বিশ্বাস করেন ছেলেটা কেমন করল তা আপনি দেখেন নি ,তাই বলছেন ।
রাহাত ঠান্ডা মেজাজে হঠাত্ বিগড়ে গেল ।অফিসের সবাইকে ছুটি দিয়ে দিলেন রাহাত সাহেব ।
খানিকটা ধমকের সুরে বললেন ,"এই ছেলে ,আমার কাছে তোমার কি দরকার ?নাকি অন্য কোন মতলব নিয়েই ঢুকে পড়লে ?"
অভি স্যারকে চিনে হিসেবে সাহসের সাথেই বলে ,সব পরে বলবো স্যার ,আগে বলেন ,আপনি কি আমায় চিনতে পেরেছেন ?
রাহাত অনেক চেষ্টা করল তবুও মনে করতে পারলো না ,কে সে ?
রাহাত স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে ,"দেখো বাবা ,ইদানিং বেশী টেনশনে কাটছে আমার ,অফিসিয়াল কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে আমি খুব টেনশনে আছি ,দয়া করে আর কোন নতুন টেনশান না বাড়িয়ে এবার বিদায় হলে সত্যি আমি খুব খুব কৃতজ্ঞ হয় ।"
ছেলেটিও যেন দমবার পাত্র নয় ।"স্যার আমি তো চলেইই যাবো ,আমি আপনাকে অনেক কষ্টে ,অনেক খুঁজেছি শুধুমাত্র আপনাকে আপনার আমানত ফেরত দেয়ার জন্যে ।আপনার আমানতের জিনিসটা ফেরত দিতেই পারলেই আমি চলে যাবো স্যার "
রাহাত খুব দুশ্চিন্তাই পড়ে ,ছেলেটা আবোলতাবোল এইসব বলে কি ?কোন বড় ধরণের সমস্যা পাকাচ্ছে নাতো !
রাহাতো ছেলেটাকে বিদেয় না করে কোন কাজ করতে পারছে না ।এদিকে অফিসের এক টেনশান ইতিমধ্যে আরেকটা বাড়তি চাপ ।
রাহাত খুব শান্ত হয়ে শান্ত কন্ঠেই ,অভির পিঠে হাত বুলিয়ে বলে ,"বলতো বাবা ,সত্যি করে তুমি কি বলতে এসেছো ?"
অভি বলল ,"স্যার আপনার সাথে আমার দেখা সেই চৌরাস্তার মোড়ে ,নাজিরহাট বাসস্ট্যান্ডের সেখানে ,আপনি বোধয় সেদিন গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিলেন ।তখন ফোটা ফোটা বৃষ্টিও হচ্ছিল ।"
রাহাতের মনে পড়ে যায় সেদিনের সে কান্নাভেজা ঘটনা ,স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে উঠে বৃষ্টি ভেজা চৌরাস্তার মোড়ের কথা . . .
রাহাত বাসের টিকেট কাটার জন্য টিকেট কাউন্টারে ,টিকেট নিয়ে ফিরতে রাহাতের কানে ভেসে আসে একটা কিশোরের আওয়াজ , "স্যার আমাকে শ'খানের টাকা দিবেন ?আমার মায়ের চিকিত্সা করাবো ।"
রাহাত পকেট থেকে দুইটা দুই টাকার নোট অভির হাতে ,অভি সেই টাকা নেই না ....অভি টাকাগুলা রাহাত সাহেবের হাতে দিয়ে বলে ,
" স্যার আমি ভিক্ষুক নই স্যার ।আমার মায়ের চিকিত্সার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ,অভাবী মায়ের ছেলে তাই বাধ্য হয়ে রাস্তায় আসল স্যার ,তাই আপনার কাছ থেকে শ'খানেক টাকা চাইলাম ।
রাহাত চলে যেতেই পিছু ফিরে ছেলেটির দিকে তাকালেন ,আসলেই ছেলেটিকে ভিক্ষুকের মত লাগে না ,কাছে এসেই রাহাত সাহেব বললেন ," এই ছেলে কাজ করতে পারো না ?"লোকের কাছে হাত না পেতে কাজ করলেই তো হয় ?"
- স্যার ,বাহ বেশ কথাই তো বললেন ।আসলে স্যার মায়ের চিকিত্সার জন্য যে প্রিমাণ অর্থের প্রয়োজন সে পরিমাণ অর্থ যদি আমার কাজ দিয়ে আসত তাহলে আর পথে আসতাম না ,একটু থমকে থাকা গলায় অভি বলল ।
" আগে স্যার মায়ের চিকিত্সার টাকা তুলি তারপর নিশ্চয় কাজ করব স্যার " -অভি বলল ।
- লেখাপড়া করো নো কেন ?
- সে অনেক কথা স্যার !
- পরিবারে কে কে আছে ?
- মা আর একমাত্র বোন !
- কেন বাবা নেই ।
- না স্যার ,আমি এই অভাগার চোখে বাবাকে দেখারো সুযোগ হয় নি ,আমার জন্মের আগেই নাকি বাবা মারা গেছেন ।
- তা তোমাদের সংসার চলে কেমনে ?
- তা চলে ,অনেক কষ্টে ,অনেক বেলা না খাওয়ার মধ্যেই ।
এতোক্ষণে রাহাত সাহেবের বাস ছাড়ার সময় হলো ।বাসের উঠার আগে রাহাত সাহেবের মন অনেক খারাপ হয়ে যায় আর অভির হাতে পাঁচশত টাকার নোট দিয়ে বলেন মায়ের চিকিত্সা করিও ,তোমার মা যেন সুস্থ হয়ে উঠে সে কামনাই করি ,আর বলল কি নাম যেন তোমার ?
- স্যার অভি ।
অভির চোখে আনন্দের অশ্রু ,টাকা হাতে পেয়ে অভি আর কোন কথা বলতে পারলো না সে ।বাস স্ট্যান্ডের সেই বাসের দিকে তাকিয়ে রয়ল ,এক সময় বাস অদৃশ্য হয়ে গেল ।
অভি বাসস্ট্যান্ডের ওইদিন একটা কাপড়ের হাত ব্যাগ পেয়েছিল ,তাতে রাহাত সাহেবের অনেক জরূরী কাগজপত্র ছিল ,আর ফ্ল্যাটকিনার জন্য একটা চেকবইও ছিল ....ব্যাগের মধ্যে রাহাতের এড্রেস লিখা ছিল ছোট্ট একটা কাগজে ।আধা পড়া অভি তা পড়ে বুঝতে পেরেছিল যে এই ব্যাগটা তার ।কিন্তু অভির পৌঁছে দেয়ার কোন পথ জানা ছিল না ।
রাহাত চেয়ার ছেড়ে উঠে অভির কাঁধে হাত দিয়ে বলে ,"হ্যাঁ রমজান ,আমার সব মনে পড়েছে ,সব " ।
এখন বলো ,তোমার মা কেমন আছেন ?
" স্যার মা তো আর বেঁচে নেই ।"
" কি বলো তুমি ? মায়ের চিকিত্সা করানো হয় নি ?"
" চিকিত্সার টাকা উঠেছিল ,চিকিত্সাও করানো হয়েছিল ,মা সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয়ে ছিলেন ,কিছু দিন পর মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে ।এই জন্যেও ডাক্তার দেখানো হয়েছিল ।ডাক্তার বলে ,উনাকে ভালো কোন হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে এবং এর জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন ।"
অভি আরো বলে "মায়ের ক্যান্সার থেকে পরিত্রাণের জন্য যে টাকার প্রয়োজন তা জোগাড় করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না স্যার ।"
রাহাত সাহেব অভির গল্প শুনে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ে ,বাকশূণ্য হয়ে রাহাত সাহেব অভিকে বলে ,
"এখন তুমি কি কর ? "
"স্যার এখন গ্রামে ব্যাংক থেকে কিস্তি নিয়ে ছোট্ট একটা পান - সিগারেটের দোকান দিয়েছি ।এই দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে ।"
অভির এবার বিদেয়ের সময় হলো ,অভি যাবার বেলায় আমানতের ব্যাগটা রাহাত সাহেব কে দেই ....
বিদেয়ের বেলায় অভির শেষ কিছু কান্নাভেজা কন্ঠে ,
স্যার যদি কখনো সুযোগ হয় আমার গ্রামের বাড়িতে আসবেন আর আমার ছোট্ট দোকানটা দেখে যাবেন দয়া করে ।
স্যার আসি দোয়া করবেন আর অবশ্যই একদিন আসবেন আমার বাড়িতে ।
রাহাত ব্যাগ খুলে দেখে ,
ব্যাগ যেই রকম ছিল ঠিক সেইরকমেই আছে ,যেভাবে কাগজ - পত্র রেখেছিল ঠিক সেভাবেই আছে ,আর চেকবইটিও ঠিক যেভাবে রেখেছিল সেভাবে পড়ে আছে ।ব্যাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল অভি পাওয়ার পর তা খুলেও দেখে নি ।
চেকের কাগজটা পেলে হয়ত অভি তার মাকে আজ সুস্থ করে তুলতে পারতো ,মা কে হারাতে হত না ।
এই সব ভেবে সেদিন আর রাহাত সাহেবের কাজে মন বসে নি ,হয়ত আর কোন দিন সেকাজে মন বসবেও না .....
#দার্শনিক_ওয়াহিদ
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী. ১৪/০৯/২০১৩খুবই ভালো লাগলো পড়ে। আরো ছোট গল্প আশা করি।
-
সালমান মাহফুজ ১৩/০৯/২০১৩আমার মনে হয়, এত দীর্ঘ গল্প একসাথে না দিয়ে দু'তিনটি পর্বে ভাগ করে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করলে ব্যাপারটা আরো দারুণ লাগত ।