www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

একটি অলৌকিক বক্তৃতা

আজ (১২/২/২০১৫ রাত) একটা স্বপ্ন দেখলাম। এমনিতে স্বপ্ন-টপ্ন দেখিনা খুব একটা। যাদের স্বপ্ন বারে বারে ভেঙে ভেঙে খানখান হয়ে যায় তাদের স্বপ্ন দেখা ঠিক না। আমাদের জাতীয়ভাবে স্বপ্ন দেখা এবং তা ভঙ্গ হওয়া একটা সংস্কৃতি। আমরা আশান্বিত হই, জেগে উঠি, আবার ঢলে পড়ি হতাশায়। তাই স্বপ্ন দেখা উচিত নয়। কিন্তু আজ দেখলাম। এটাকে অবশ্য স্বপ্ন না বলে দুঃস্বপ্ন বলা উচিত। দেখলাম, আমি কোন এক মোড়-টোড়, না এই জাতীয় কোন জনসংযোগে দাঁড়িয়ে পড়েছি। অথবা কোন সম্মেলন-টম্মেলন কিছু একটা হবে। সে যাই হোক। সেখানে আমার কিছু কথা আছে সে রকমই ভাব  মনে হলো। একটা দরজা খুললাম (মোড়ে দরজা কোথা থেকে এসেছিলো সেটা কোনদিনই খুঁজে বের করতে পারবে না কোন গবেষক, স্বপ্ন বলে কথা!)

আমি এবার কথা শুরু করি, অর্থাৎ ভাষণ। আগে কি ছাই মাথা বলেছি সেগুলো মনে নেই। কিন্তু নিচের কথাটা একেবারে স্মরণযোগ্য। স্পষ্ট মনে আছে। আমি বললাম (আমার গলায় সে কি তেজ! এতো তেজ কোথায় পেয়েছিলাম স্বপ্নে জানি না)

...... মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার বাবা আমাদের সবার বাবা, অর্থাৎ জাতির পিতা বলছেন, যাদের জন্য এ রাজনীতি, তাদের জন্য যারা দু’মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে পারে না, তাদের রাজনীতি থেকে সরে যাওয়া উচিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার রাজনীতি ছেড়ে দেয়া উচিত......

এরপরে আরও কিছু বলেছিলাম। কিন্তু আর মনে করতে পারিনি। স্বপ্নের কথা সব কিছু মনে থাকে না। একেবারে যা না ভোলা যায়, অর্থাৎ মনে দাগ কেটে যাবার মত কিছু হলে সেটা মনে থাকে। আমারও সে’রম হয়েছে।
তারপর দেখলাম আমাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি নাকি রাষ্ট্রদ্রোহীতার মত জঘন্য অপরাধ করেছি!

যদি স্বপ্নে দেখতাম যে জাতির পিতা বেঁচে আছেন তবে স্বপ্নের মধ্যে কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি তাঁকেও রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে গ্রেফতার করতেন? কারণ এ কথা তো আমার নিজের কথা নয়। এ যে স্বয়ং জাতির পিতার উক্তি! অর্থাৎ্ স্বপ্নের মধ্যে ভাবছি যে জাতির পিতার উক্তি।
বিষয়টা কি জটিল হয়ে যাচ্ছে? একে স্বপ্ন, তায় আবার জাতির পিতা সে কথা বলেছিলেন কি না সেটা কিন্তু আমি জানি না। স্বপ্নে আমার মনে হতে পারে যে এটা হয়ত জাতির পিতারই কথা! তাই আমি হরমোন-এর অত্যধিক ক্ষরণ বাঁচাতে মোড়ে মওকা পেয়ে ঝেড়ে দিয়েছিলুম কথাগুলো।
স্বপ্নে আরও দেখলাম যে, আমাকে নিয়ে যাচ্ছে ওরা। ওরা বলতে আমি রাষ্ট্রের চোর ধরার কাজে নিযুক্ত পুলিশদেরকে বুঝিয়েছি। আমি তো চুরি করিনি, কিন্তু তাও আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, এটা আমার অনুভব হতে লাগে। পরে বুঝতে পারি আমাকে ওই ভাষণের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে।

কিন্তু আমি তো মন্দ কিছু বলিনি। দেশে অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য রাজনীতিকদের কোন চিন্তা নেই। ইচ্ছেও নেই। থাকবে কেন? রাজনীতি তো এখন সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা, আখের গোটানো পেশা। সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সেই পেশায় বাঁধা পড়তে পারে। ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এটা আঁচ করেছিলেন। তিনি বললেন,
বাবুরা কংগ্রেস করছেন, আস্ফালন করছেন, বক্তৃতা করছেন, ভারত উদ্ধার করছেন, কিন্তু দেশের হাজার হাজার লোক প্রতিদিন অনাহারে মরছে, সেদিকে কারও চোখ নেই।

যাদের জন্য রাজনীতি তাদের সাথে মিশে না গিয়ে দামী গাড়ি আর সাত তারকাওয়ালা লাইফ স্টাইল অবলম্বন করে মুখে বড় বড় কথা বলে যে রাজনীতি, তার নাম ধোঁকা। আমরা কি সেটা বুঝতে পারছি?  জনগনের দাবীর মুখেও আমরা রাজনীতিকেরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকি। জনগন জিম্মি, কিন্তু আমরা বলি তারা মুক্ত। ক্ষেতমজুর আর কৃষকের ও তাদের পরিবারের নিত্যদিনের হাহাকার রাজনৈতিক সভা-সমিতি আর মিটিং-ফিটিং এর ডামাডোলে চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু তার পরও কিছু লেজুড় বুদ্ধিজীবিরা বচন ছেড়ে যাচ্ছেন, কই দেশ তো এগিয়েছে! দেশের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে! ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার প্রশ্ন হলো, ক্ষুধায় যদি এ দেশের একটি, শুধুমাত্র একটি মানুষও কষ্ট পায়, তবে দেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্পন্ন হয়েছে বলা যাবে না। আর এখন তো ক্ষুধার্তের পরিসংখ্যন কোটির হিসেব দেয়। তারপরও কি বাগাড়ম্বর –আমরা স্বাধীন! আমরা স্বাধীন, আমরা এগিয়ে গেছি, আমরা পেরে গেছি, আমরা হ্যান, আমরা ত্যান ইত্যাদি বাক্য দিয়ে সাধারণ জনগণকে মাথায় হাত বুলিয়ে চুপ করে রাখা রাজনীতিকেরা আসলে জর্জ বার্নার্ড শ’এর ভাষায় এক সারি ক্ষয়ে যাওয়া মোমের পুতুল, যারা আসলে সীমালংঘনকারী, এবং তারা একটি দুষ্ট ও স্বয়ংক্রিয় সরকার ব্যবস্থার মধ্যে ঝুলে আছে, যে ব্যবস্থার একমাত্র মন্ত্র হচ্ছে ফাঁকা বুলি এবং মিথ্যা গল্প।

সে যাক।

স্বপ্ন এখনও শেষ হয়নি। পথে হেঁটে যাচ্ছি, সংগে পুলিশ। রাস্তায় দেখি পঙ্গপালেরা পড়ে আছে কোটি কোটি। প্রথমে আমার মনে হলো মৃত পঙ্গপাল যেনো নয়, রাস্তায় যেনো বাসর সাজানো, যেনো  ফুলের বিছানা। কিন্তু মোহ ভাংলো আমার। অযুত পঙ্গপালেরা কেমন করে ফুলের বিছানায় শোভা পায়! অগুনতি মৃত পঙ্গপালের মধ্য দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যাওয়া হলো। ভাগ্যিস সে গুলো মৃত মানুষ ছিলো না। নাকি মৃত মানুষই, কিন্তু আমি দেখেছি পঙ্গপাল!

যেতে যেতে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা। বন্ধু বলতে ছোটবেলায় এক সাথে পড়তাম। আমাকে দেখে বলে, আরে তোর এ কি অবস্থা!

আমি বলি, আরামেই তো আছো। কোনরকমে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে এহন সরকারের ছাত্র সংগঠনের চামচাগিরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার হইছো। এখন যে চীটাররা (আসলে চীট)-ই টিচার হচ্ছে সেটা আস্ত দেখতে পাচ্ছি। আচ্ছা তুই যে ওয়েটিং থেকে চান্স পেলি, না পেলে কি করতি! ভাগ্য ভালো যে তলানি থেকে হলেও উঠে এসেছিস। নইলে নিঘঘাত মন্দিরের পুরোহিত হতে হতো তোকে। তাও তো পারতি না, তোদের তো আবার কাস্ট-ফাস্ট এর ব্যাপার-স্যাপার আছে। কি যে হতো তোর! আমার মনে আছে তুই ভর্তি পরীক্ষার ফল বেরোবার পর নিজের রোল নম্বর খুঁজে পাচ্ছিলি না। আর সে কি দুঃখ তোর! আর ছালে, আর এখন মওকা পেয়ে ফুলে উঠেছিস! আর বুকও ফুলছে আত্মগর্বে! তোর নিজের মধ্যে কি কোন লজ্জাবোধ নেই!

দেখি, ও হাসে আমার কথা শুনে। বুঝতে পারি ওর কোন লজ্জা করছে না। লজ্জা না পাওয়ারই কথা। আমরা যুগবোধ হারিয়ে ফেলেছি, লজ্জাবোধের প্রশ্নই ওঠে না।

আমাকে এরপর টানতে টানতে নিয়ে আসা হলো জেলখানার সামনে। সেখানে দেখি স্বয়ং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে! তাঁর সাথে আমার কথা হচ্ছে –
- এ সব কি কথা বলা হয়েছে?
- ক্ষমা করবেন, কোন কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?
- বুঝতে পারছো না, কচি খোকা সাজা হচ্ছে বুঝি?
- ক্ষমা করবেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মানে মানে...
- আমার বাবাকে নিয়ে...
- মানে মহান জাতির পিতাকে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী?
- তবে আর বলছি কি!


তখন আমার আবার মনে হতে থাকে আমি আর কোন এক জন -সংগমে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছি। সামনে অনেক মানুষ। তারা সবাই আমার কথা শুনছে। চারিদিকে নিরবতা। কেউ কোন কথা বলছে না। এক পাশে প্রধানমন্ত্রীও দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি বলছি -
...... জনগনের মৌলিক অধিকার নিয়ে রাজনীতির যে ইশতেহার ছিলো তার কিছু কি পালিত হয়েছে, আপনারা-ই বলুন। কেন চুপ করে আছেন? কেন চুপ করে থাকবেন? আর কতদিন চুপ করে থাকবেন। গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থেকে এ দেশের স্বার্থবাদী রাজনীতিকেরা আগেও রাষ্ট্রীয় সংকট তৈরি করেছে, আজও আমাদের মতামত, জীবন ও ইচ্ছের কোন মূল্য দিতে তারা মোটেও ইচ্ছুক নয়......

অর্থাৎ ভোটের আগে তারা (ভোটার এবং জনগণ) ছিলো। এখন ক্ষমতা পেয়েছি। এখন তারা অতীত। অনেকটা বার্কলের দর্শনের মত, আমার সামনে যা আছে, তা আছে, আমি যদি এখানে না থাকি, তবে সে জিনিষগুলোকে বলতে হবে, তারা ছিলো - অর্থাৎ অনেকটা ভোটের আগে জনগণ আছে, এ রকম। কিন্তু ভোটের পরে, তারা ছিলো । অর্থাৎ রাজনীতিকদের মনে হওয়া ছাড়া জনগণের কোনও অস্তিত্ব নেই। ফলে, মনে যদি না হয় যে জনগণ আছে, তবে কার জন্য এত এত কাজ, আর কি-ই বা হবে সে কাজ করে! অতএব নিজের আখের গোটাও।

প্রধানমন্ত্রী তখন আঙ্গুলের ইশারা করলেন পুলিশদেরকে। এর অর্থ, পুলিশ, লে যাও ইস বদমাসকো।

পুলিশ আমাকে টানতে টানতে নিয়ে যায়।
তবে কি সত্য ভাষণের জন্য আমার এই শাস্তি?
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১৪৫২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৮/০৩/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • T s J ১২/০৬/২০১৫
    ধন্যবাদ
  • পরিতোষ ভৌমিক ২৪/০৩/২০১৫
    আপনার এই অভিজ্ঞতা বিষয়ক লেখার চেতনার মান অনেক উপরে , আপনার স্বপ্ন যদি সত্যি হতো আমাদের দেশ আবার কিছু সৎ মানুষের প্রতিষ্ঠা পেতো । অসাধারন আপনারর্চনা ভঙ্গি । অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই, চালিয়ে যান, এ ধরনের লেখার মান অনেক অনেক বেশী, আবার এ লেখা দিয়েই মানুষের চেতনা সমৃদ্ধ হবে - এতটুকু আশা তো করতেই পারি !
    • ভানু ভাস্কর ২৫/০৩/২০১৫
      চেতনা বলছেন? অপকর্ষের নষ্টমদে চেতনা এখন নেশাগ্রস্তের মত - আমার স্বপ্নটাও তাই। আমার এক পরিচিত বলেছেন, ভানু, এই রকম স্বপ্ন বেশি দেখা-টেখা ভালো না। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আপনার মন্তব্যের ভাষা অনেক সমৃদ্ধ। আবারও ধন্যবাদ।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ১৯/০৩/২০১৫
    ভাল লাগলো ভাবনা
  • ভিন্নধর্মী রচনা।
    • ভানু ভাস্কর ২৫/০৩/২০১৫
      ধন্যবাদ সামন্ত। সামন্তবাদের যুগ শেষ, কিন্তু দাসত্ব এখনও সেই আগের মত, তাই না? অথবা... ... .
  • ভানু ভাস্কর ২৩/০২/২০১৫
    সম্পাদক সাহেব, লেখাটা ছাপার যোগ্য না হলে বলছেন না কেন যে 'ছাপা হবে না!'
 
Quantcast