একজন গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়লের বক্তৃতা ১
(২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে চা শ্রমিকদের সন্তানদের স্কুলগুলো নিয়ে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও আলোচনাসভার প্রধান অতিথি প্রদত্ত বক্তৃতা)
১৯ ফাব্রুয়ারি, ২০১৪। সন্ধ্যা।
(সামনের কোমলমতি শিশুদের উদ্দেশ্যে)
আমার খুব ইচ্ছে করছে আমি তোমাদের সাথে নিচে গিয়ে এক সাথে বসি। আমার এ উঁচু আসনে বসতে ইচ্ছে করে না তোমাদের ছেড়ে। খুবই ইচ্ছে করছে যে, এখনই তোমাদের কাছে গিয়ে বসি। তোমরা আমার বন্ধু।
কতবার আমি এসেছি তোমাদের এ দিকে, ওই রাস্তা দিয়ে কতবার আমি হেঁটে গেছি, কতবার তোমাদের ওই টিলাগুলিতে ঘুরে বেড়িয়েছি, কতবার ওই বন পেরিয়ে মাঠ, চা বাগান দলে রাবার বনের দিকে চলে গেছি ক্লান্ত বিকেলে। অবসন্ন শরীরে কতবার আমি বসে থেকেছি বনের মধ্যে! কিন্তু কে জানত আজকে এখানে যেভাবে আসা, সেভাবে একদিন আসতে হবে? এখন মনে হচ্ছে কেন আরো আগে এভাবে আসা হল না। তাহলে তোমাদের সাথে খাতিরটা আরো আগে জমে উঠত!
(অনুষ্ঠানের আয়োজকদের উদ্দেশ্যে)
বাস্তবিকপক্ষে এ অনুষ্ঠানের যে গুরুদায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন আপনারা, আমার মত সাধারনের পক্ষে সে ভার বহণ করা খুবই কঠিন। সত্যিই আমার মত সাধারনের জন্য প্রধান অতিথি ও বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ন হওয়ার ভার অত্যন্ত কঠিন। সে ভার আমাকে আপনারা আজ দিয়েছেন বলে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি, কিন্তু সে দায়িত্বের কতটুকু পালন করতে পেরেছি তা জানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
ছোট্ট বন্ধুরা! তোমরা আজ যে বিষয়ের উপর ছবি এঁকেছ তোমরা কি তার উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল জানো? তোমরা কি জানো শহিদ মিনার কেন তৈরি করেছিলাম আমরা? তোমরা কি জানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি কি? তোমরা কি জানো আজ যে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছি সে অধিকার আমরা কেমন করে পেলাম? (তোমরা কি ভাষায় কথা বল, বাংলায় তো? এ প্রশ্ন করতে ওরা হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ল, কেউ কেউ শব্দ করে উত্তর দিল।)
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে তোমরা সবাই এত সুন্দর করে শহিদ মিনারের ছবি এঁকেছ। আমি এখানে আসার আগে ভাবতেও পারিনি যে তোমাদের এমন স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি দেখতে পাব। ভেবেছিলাম হয়ত গুটি কতক ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দেখতে পাব এখানে। কিন্তু উপস্থিত প্রতিযোগীদের সংখ্যাটা বেশি হয়েছে, আমার ভাবনার চেয়ে। সুতরাং আমার খুবই কষ্ট হচ্ছিল যে কাকে ছেড়ে কাকে প্রথম স্থান দেব, দ্বিতীয় স্থান দেব। এটা খুবই কঠিন কাজ আমার জন্য। আমার মনে হয় এবং আমার বিশ্বাস তোমরা সবাই প্রথম হয়েছ। কিন্তু তবুও শেষে কাউকে না কাউকে স্থান দিতে হয়েছে।
আমি আবারও আগের প্রশ্নটা করতে চাই, তোমরা কি জানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি কি? (অনেকেই মাথা নেড়েছে)
তাহলে শোন। ১৯৫২ সালের এই দিনে আমাদের অনেক ভাই কে প্রাণ দিতে হয়েছিল। কিছু দুষ্ট এবং নষ্ট চরিত্রের লোকেরা আমাদেরকে বাংলায় কথা বলতে দেবে না বলে পণ করেছিল। আমাদের ভাইয়েরা প্রাণ দিয়েছিলেন কারন, তাঁরা চেয়েছিলেন আমরা যেন সবাই বাংলাতেই কথা বলতে পারি। সে দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। সেদিন রাজপথ লাল হয়ে গিয়েছিল আমাদের শহিদ ভাইদের বুকের রক্তে। তাই তো পরের দিন, তাদের স্মরণে তৈরি করে ফেললাম আমরা শহিদ মিনার, আজ যার ছবি তোমরা আঁকলে। মনে রাখবে ৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগের জন্যই জন্য আজ আমরা সবাই বাংলাতে কথা বলতে পারছি। সুতরাং শুধু, শহিদ মিনারে ফুল ছিটালেই হবে না, আমাদের শহিদ ভাইদের আত্মত্যাগের চেতনায় বাংলা ভাষাকে মনের ভেতরে ধারণ করে নিতে হবে ভাল করে, বাংলায় কথা বলা শিখতে হবে ভাল করে, লিখতে শিখতে হবে ভাল করে।
তোমরা হয়ত জানো, এই ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে সারা পৃথিবী কত সম্মান দিয়েছে! ভাষা আন্দোলনের সেই ঘটনা, যা একটু আগে তোমাদেরকে বললাম, তার স্মরণে সারা পৃথিবী এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দিয়েছে। তোমাদের জীবনের সমস্ত চিন্তা-চেতনা যেন ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঘিরে আবর্তিত হয়। কিন্তু সেটা হোউক সত্যিকারের দেশপ্রেমের বন্দনায়। নকল, সাজানো, বানানো, মেকি, আর পোশাকি দেশপ্রেমের অভিশাপ যেন তোমাদের স্পর্শ না করে।
তোমরা নিশ্চয় হয়ত দেখে থাকবে তোমাদেরকে অনেকে অবজ্ঞা করছে, নীচু করছে। অনেকে হয়ত ভাবছে তোমরা কখনই তাদের সমান নও, তোমরা ছোট। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, তোমরা নিজেদের কখনই হীন ভাববে না, নিচু ভাববে না। তোমাদেরকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখতে হবে। তার জন্য পড়াশোনা করতে হবে তোমাদের। একমাত্র পড়াশোনা করলেই তোমরা তাদের এমন মন্দ আচরণের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে পারবে।
মনে রাখবে একমাত্র শিক্ষা-ই তোমাদেরকে ভাল ভাবে বাঁচতে শেখাবে। আজ থেকে প্রতিজ্ঞা কর, কোন প্রতিকূলতা-ই যেন তোমাদেরকে বিদ্যা শিক্ষা থেকে দূরে ঠেলতে না পারে। শত চক্রান্তের মাথা দলে তোমরা এগিয়ে চল, মানুষের মত বাঁচতে শেখো, আমার কাছে এর চেয়ে বড় প্রার্থনা আর নেই।
অনেক স্নেহ ও আদর র’ল ।
১৯ ফাব্রুয়ারি, ২০১৪। সন্ধ্যা।
(সামনের কোমলমতি শিশুদের উদ্দেশ্যে)
আমার খুব ইচ্ছে করছে আমি তোমাদের সাথে নিচে গিয়ে এক সাথে বসি। আমার এ উঁচু আসনে বসতে ইচ্ছে করে না তোমাদের ছেড়ে। খুবই ইচ্ছে করছে যে, এখনই তোমাদের কাছে গিয়ে বসি। তোমরা আমার বন্ধু।
কতবার আমি এসেছি তোমাদের এ দিকে, ওই রাস্তা দিয়ে কতবার আমি হেঁটে গেছি, কতবার তোমাদের ওই টিলাগুলিতে ঘুরে বেড়িয়েছি, কতবার ওই বন পেরিয়ে মাঠ, চা বাগান দলে রাবার বনের দিকে চলে গেছি ক্লান্ত বিকেলে। অবসন্ন শরীরে কতবার আমি বসে থেকেছি বনের মধ্যে! কিন্তু কে জানত আজকে এখানে যেভাবে আসা, সেভাবে একদিন আসতে হবে? এখন মনে হচ্ছে কেন আরো আগে এভাবে আসা হল না। তাহলে তোমাদের সাথে খাতিরটা আরো আগে জমে উঠত!
(অনুষ্ঠানের আয়োজকদের উদ্দেশ্যে)
বাস্তবিকপক্ষে এ অনুষ্ঠানের যে গুরুদায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন আপনারা, আমার মত সাধারনের পক্ষে সে ভার বহণ করা খুবই কঠিন। সত্যিই আমার মত সাধারনের জন্য প্রধান অতিথি ও বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ন হওয়ার ভার অত্যন্ত কঠিন। সে ভার আমাকে আপনারা আজ দিয়েছেন বলে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি, কিন্তু সে দায়িত্বের কতটুকু পালন করতে পেরেছি তা জানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
ছোট্ট বন্ধুরা! তোমরা আজ যে বিষয়ের উপর ছবি এঁকেছ তোমরা কি তার উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিল জানো? তোমরা কি জানো শহিদ মিনার কেন তৈরি করেছিলাম আমরা? তোমরা কি জানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি কি? তোমরা কি জানো আজ যে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলছি সে অধিকার আমরা কেমন করে পেলাম? (তোমরা কি ভাষায় কথা বল, বাংলায় তো? এ প্রশ্ন করতে ওরা হ্যাঁ সূচক ঘাড় নাড়ল, কেউ কেউ শব্দ করে উত্তর দিল।)
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে তোমরা সবাই এত সুন্দর করে শহিদ মিনারের ছবি এঁকেছ। আমি এখানে আসার আগে ভাবতেও পারিনি যে তোমাদের এমন স্বতস্ফুর্ত উপস্থিতি দেখতে পাব। ভেবেছিলাম হয়ত গুটি কতক ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দেখতে পাব এখানে। কিন্তু উপস্থিত প্রতিযোগীদের সংখ্যাটা বেশি হয়েছে, আমার ভাবনার চেয়ে। সুতরাং আমার খুবই কষ্ট হচ্ছিল যে কাকে ছেড়ে কাকে প্রথম স্থান দেব, দ্বিতীয় স্থান দেব। এটা খুবই কঠিন কাজ আমার জন্য। আমার মনে হয় এবং আমার বিশ্বাস তোমরা সবাই প্রথম হয়েছ। কিন্তু তবুও শেষে কাউকে না কাউকে স্থান দিতে হয়েছে।
আমি আবারও আগের প্রশ্নটা করতে চাই, তোমরা কি জানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি কি? (অনেকেই মাথা নেড়েছে)
তাহলে শোন। ১৯৫২ সালের এই দিনে আমাদের অনেক ভাই কে প্রাণ দিতে হয়েছিল। কিছু দুষ্ট এবং নষ্ট চরিত্রের লোকেরা আমাদেরকে বাংলায় কথা বলতে দেবে না বলে পণ করেছিল। আমাদের ভাইয়েরা প্রাণ দিয়েছিলেন কারন, তাঁরা চেয়েছিলেন আমরা যেন সবাই বাংলাতেই কথা বলতে পারি। সে দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে। সেদিন রাজপথ লাল হয়ে গিয়েছিল আমাদের শহিদ ভাইদের বুকের রক্তে। তাই তো পরের দিন, তাদের স্মরণে তৈরি করে ফেললাম আমরা শহিদ মিনার, আজ যার ছবি তোমরা আঁকলে। মনে রাখবে ৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগের জন্যই জন্য আজ আমরা সবাই বাংলাতে কথা বলতে পারছি। সুতরাং শুধু, শহিদ মিনারে ফুল ছিটালেই হবে না, আমাদের শহিদ ভাইদের আত্মত্যাগের চেতনায় বাংলা ভাষাকে মনের ভেতরে ধারণ করে নিতে হবে ভাল করে, বাংলায় কথা বলা শিখতে হবে ভাল করে, লিখতে শিখতে হবে ভাল করে।
তোমরা হয়ত জানো, এই ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে সারা পৃথিবী কত সম্মান দিয়েছে! ভাষা আন্দোলনের সেই ঘটনা, যা একটু আগে তোমাদেরকে বললাম, তার স্মরণে সারা পৃথিবী এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দিয়েছে। তোমাদের জীবনের সমস্ত চিন্তা-চেতনা যেন ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঘিরে আবর্তিত হয়। কিন্তু সেটা হোউক সত্যিকারের দেশপ্রেমের বন্দনায়। নকল, সাজানো, বানানো, মেকি, আর পোশাকি দেশপ্রেমের অভিশাপ যেন তোমাদের স্পর্শ না করে।
তোমরা নিশ্চয় হয়ত দেখে থাকবে তোমাদেরকে অনেকে অবজ্ঞা করছে, নীচু করছে। অনেকে হয়ত ভাবছে তোমরা কখনই তাদের সমান নও, তোমরা ছোট। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, তোমরা নিজেদের কখনই হীন ভাববে না, নিচু ভাববে না। তোমাদেরকে মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখতে হবে। তার জন্য পড়াশোনা করতে হবে তোমাদের। একমাত্র পড়াশোনা করলেই তোমরা তাদের এমন মন্দ আচরণের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে পারবে।
মনে রাখবে একমাত্র শিক্ষা-ই তোমাদেরকে ভাল ভাবে বাঁচতে শেখাবে। আজ থেকে প্রতিজ্ঞা কর, কোন প্রতিকূলতা-ই যেন তোমাদেরকে বিদ্যা শিক্ষা থেকে দূরে ঠেলতে না পারে। শত চক্রান্তের মাথা দলে তোমরা এগিয়ে চল, মানুষের মত বাঁচতে শেখো, আমার কাছে এর চেয়ে বড় প্রার্থনা আর নেই।
অনেক স্নেহ ও আদর র’ল ।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জহির রহমান ১২/০২/২০১৫প্রধান অতিথি কে ছিলেন? অল্প কথায় মনোরম একটি বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন!
-
সবুজ আহমেদ কক্স ১২/০২/২০১৫valo laglo
-
সবুজ আহমেদ কক্স ১২/০২/২০১৫khub sonder @@@@ bhi
-
অ ১১/০২/২০১৫সুন্দর ...।।