অবহেলিত মানুষের কথা
মনি, গ্রামে বড় হওয়া এক মেয়ে। তার বাবা-মা গ্রামেই কৃষিকাজ করে জীবনযাপন করেন। মনি খুবই মেধাবী এবং তার পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল অসীম। গ্রামের স্কুলে সে বরাবরই প্রথম হতো। সবাই তাকে ভালোবাসত এবং তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় প্রার্থনা করত। মনি গ্রামের অন্যান্য শিশুদের থেকে আলাদা ছিল। তার চোখে স্বপ্ন ছিল এবং সে জানত যে পড়াশোনাই তার স্বপ্ন পূরণের একমাত্র উপায়।
মনি যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছিল, তখনই তার জীবনে বড় একটি সমস্যা দেখা দিল। তার বাবার হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং মনির পড়াশোনার খরচ চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। মনির মা-বাবা খুবই দুঃখ পেলেও মেয়েকে আর স্কুলে পাঠাতে পারছিলেন না। মনির দুঃখের সীমা ছিল না। সে জানত যে পড়াশোনা ছাড়া তার জীবনে কোনো গতি নেই।
মনির পড়াশোনার খরচ চালাতে সে বাড়ির কাজকর্মের পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিউশনির কাজ শুরু করে। গ্রামের অনেকেই মনির এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করল এবং তাকে সহযোগিতা করল। মনির মা-বাবাও তাকে সমর্থন দিতে লাগল। ধীরে ধীরে মনি আবার পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারল এবং স্কুলে ভালো ফলাফল করতে লাগল।
একদিন মনির গ্রামে নতুন একটি স্কুল খোলার ঘোষণা দেওয়া হলো। এই স্কুলে শিক্ষার মান অনেক ভালো হবে এবং গ্রামের শিশুদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ হবে। কিন্তু স্কুলের ভর্তি ফি অনেক বেশি ছিল, যা মনি বা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না। মনির দুঃখের সীমা ছিল না। সে জানত যে এই স্কুলে ভর্তি হতে পারলে তার ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে। কিন্তু টাকা কোথা থেকে আসবে?
মনি সিদ্ধান্ত নিল যে সে গ্রাম থেকে টাকা সংগ্রহ করবে। গ্রামের মানুষের সাহায্য নিয়ে সে স্কুলে ভর্তি হতে চায়। মনির এই সিদ্ধান্তে গ্রামের অনেকেই বিস্মিত হলো এবং তার প্রচেষ্টায় সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হলো। মনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা সংগ্রহ করতে লাগল। গ্রামের মানুষের সহানুভূতিতে সে অভিভূত হলো এবং কয়েক দিনের মধ্যেই তার ভর্তি ফি সংগ্রহ হয়ে গেল।
তবে, এই কাহিনীতে মনির গ্রামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি, রমেশ চৌধুরী, ছিলেন। তিনি ছিলেন গ্রামের সবচেয়ে ধনী মানুষ এবং তার মনে কোনো দিনই মনির পরিবারের প্রতি সহানুভূতি ছিল না। রমেশ চৌধুরী নিজে মনে করতেন যে শুধুমাত্র ধনীদের সন্তানরাই উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারে এবং তারাই সমাজের উন্নতি করতে পারে। তিনি গ্রামের গরীব মানুষের শিক্ষার প্রচেষ্টাকে বরাবরই তুচ্ছজ্ঞান করতেন।
মনির সংগ্রহ করা টাকা যথেষ্ট না হওয়ায়, সে শেষমেশ রমেশ চৌধুরীর কাছে সাহায্য চাইতে গেল। রমেশ চৌধুরী মনির কথা শুনে হাসলেন এবং বললেন, "তোমার মতো গরীবের সন্তানদের এত বড় স্বপ্ন দেখা উচিত নয়। তুমি তোমার পরিবারের মতোই কৃষিকাজ করো। শিক্ষার জন্য তোমার বয়স হয়েছে।"
মনি নিরাশ হয়ে ফিরে এল। কিন্তু গ্রামের অন্যান্য মানুষ রমেশ চৌধুরীর এই কথা শুনে ক্ষিপ্ত হলো এবং তারা মনি ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়াল। তারা নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে মনিকে নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দিল।
মনির কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের ফলস্বরূপ সে নতুন স্কুলেও প্রথম হলো এবং তার স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে চলল। তার সফলতার গল্প গ্রামে সবাইকে অনুপ্রাণিত করল। গ্রামের অন্যান্য শিশুরাও মনির মতো পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হলো এবং তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য মনির কাছ থেকে শিক্ষা নিল।
মনি গ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, "আমাদের জীবনে অনেক সময় অনেক কঠিন পরিস্থিতি আসতে পারে। কিন্তু যদি আমরা চেষ্টা করি, অধ্যবসায় করি এবং সঠিক পথে এগিয়ে চলি, তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়।"
মনির জীবনের শিক্ষনীয় কথা হলো যে কঠিন পরিস্থিতিতে সাহস হারানো উচিত নয়। প্রচেষ্টা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব। সমাজের অবহেলিত মানুষদের সহানুভূতি এবং সহযোগিতা দিয়ে তাদের জীবনে পরিবর্তন আনা যায়। মনি নিজেও জীবনের কঠিন সময়ে সাহস এবং সহযোগিতার মাধ্যমে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিল।
রমেশ চৌধুরীর মতো বড়লোকি ভাবনা এবং অবহেলার ফলাফল সমাজকে উন্নত হতে বাধা দেয়। কিন্তু মনি এবং তার গ্রামের মানুষের দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে একতা, সহানুভূতি এবং অধ্যবসায়ই সমাজের প্রকৃত উন্নতির চাবিকাঠি
তাং- ১৪/০৭/২০২৪ ইং
মনি যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছিল, তখনই তার জীবনে বড় একটি সমস্যা দেখা দিল। তার বাবার হঠাৎ করে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায় এবং মনির পড়াশোনার খরচ চালানো তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। মনির মা-বাবা খুবই দুঃখ পেলেও মেয়েকে আর স্কুলে পাঠাতে পারছিলেন না। মনির দুঃখের সীমা ছিল না। সে জানত যে পড়াশোনা ছাড়া তার জীবনে কোনো গতি নেই।
মনির পড়াশোনার খরচ চালাতে সে বাড়ির কাজকর্মের পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে টিউশনির কাজ শুরু করে। গ্রামের অনেকেই মনির এই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করল এবং তাকে সহযোগিতা করল। মনির মা-বাবাও তাকে সমর্থন দিতে লাগল। ধীরে ধীরে মনি আবার পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারল এবং স্কুলে ভালো ফলাফল করতে লাগল।
একদিন মনির গ্রামে নতুন একটি স্কুল খোলার ঘোষণা দেওয়া হলো। এই স্কুলে শিক্ষার মান অনেক ভালো হবে এবং গ্রামের শিশুদের জন্য এটি একটি বড় সুযোগ হবে। কিন্তু স্কুলের ভর্তি ফি অনেক বেশি ছিল, যা মনি বা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না। মনির দুঃখের সীমা ছিল না। সে জানত যে এই স্কুলে ভর্তি হতে পারলে তার ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে। কিন্তু টাকা কোথা থেকে আসবে?
মনি সিদ্ধান্ত নিল যে সে গ্রাম থেকে টাকা সংগ্রহ করবে। গ্রামের মানুষের সাহায্য নিয়ে সে স্কুলে ভর্তি হতে চায়। মনির এই সিদ্ধান্তে গ্রামের অনেকেই বিস্মিত হলো এবং তার প্রচেষ্টায় সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত হলো। মনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে টাকা সংগ্রহ করতে লাগল। গ্রামের মানুষের সহানুভূতিতে সে অভিভূত হলো এবং কয়েক দিনের মধ্যেই তার ভর্তি ফি সংগ্রহ হয়ে গেল।
তবে, এই কাহিনীতে মনির গ্রামের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি, রমেশ চৌধুরী, ছিলেন। তিনি ছিলেন গ্রামের সবচেয়ে ধনী মানুষ এবং তার মনে কোনো দিনই মনির পরিবারের প্রতি সহানুভূতি ছিল না। রমেশ চৌধুরী নিজে মনে করতেন যে শুধুমাত্র ধনীদের সন্তানরাই উচ্চশিক্ষা লাভ করতে পারে এবং তারাই সমাজের উন্নতি করতে পারে। তিনি গ্রামের গরীব মানুষের শিক্ষার প্রচেষ্টাকে বরাবরই তুচ্ছজ্ঞান করতেন।
মনির সংগ্রহ করা টাকা যথেষ্ট না হওয়ায়, সে শেষমেশ রমেশ চৌধুরীর কাছে সাহায্য চাইতে গেল। রমেশ চৌধুরী মনির কথা শুনে হাসলেন এবং বললেন, "তোমার মতো গরীবের সন্তানদের এত বড় স্বপ্ন দেখা উচিত নয়। তুমি তোমার পরিবারের মতোই কৃষিকাজ করো। শিক্ষার জন্য তোমার বয়স হয়েছে।"
মনি নিরাশ হয়ে ফিরে এল। কিন্তু গ্রামের অন্যান্য মানুষ রমেশ চৌধুরীর এই কথা শুনে ক্ষিপ্ত হলো এবং তারা মনি ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়াল। তারা নিজেরা অর্থ সংগ্রহ করে মনিকে নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দিল।
মনির কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের ফলস্বরূপ সে নতুন স্কুলেও প্রথম হলো এবং তার স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে চলল। তার সফলতার গল্প গ্রামে সবাইকে অনুপ্রাণিত করল। গ্রামের অন্যান্য শিশুরাও মনির মতো পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী হলো এবং তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য মনির কাছ থেকে শিক্ষা নিল।
মনি গ্রামবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, "আমাদের জীবনে অনেক সময় অনেক কঠিন পরিস্থিতি আসতে পারে। কিন্তু যদি আমরা চেষ্টা করি, অধ্যবসায় করি এবং সঠিক পথে এগিয়ে চলি, তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়।"
মনির জীবনের শিক্ষনীয় কথা হলো যে কঠিন পরিস্থিতিতে সাহস হারানো উচিত নয়। প্রচেষ্টা এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব। সমাজের অবহেলিত মানুষদের সহানুভূতি এবং সহযোগিতা দিয়ে তাদের জীবনে পরিবর্তন আনা যায়। মনি নিজেও জীবনের কঠিন সময়ে সাহস এবং সহযোগিতার মাধ্যমে তার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছিল।
রমেশ চৌধুরীর মতো বড়লোকি ভাবনা এবং অবহেলার ফলাফল সমাজকে উন্নত হতে বাধা দেয়। কিন্তু মনি এবং তার গ্রামের মানুষের দৃঢ় মনোবলের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো যে একতা, সহানুভূতি এবং অধ্যবসায়ই সমাজের প্রকৃত উন্নতির চাবিকাঠি
তাং- ১৪/০৭/২০২৪ ইং
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
suman ২৮/০৯/২০২৪
মুগ্ধতা অবিরাম