www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

যার ঘরে এমন মেয়ে থাকে

ছোট্ট গ্রামে রিয়া বাস করত। রিয়া ছিল খুবই মেধাবী, সদালাপী এবং সবসময় অন্যদের সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকত। সে তার মা-বাবার খুব আদরের সন্তান ছিল এবং গ্রামের সবাই তাকে অনেক ভালোবাসত।

রিয়ার বাবা কৃষক ছিলেন। তারা খুব বেশি ধনী ছিল না, কিন্তু তারা সুখে-শান্তিতে দিন কাটাত। রিয়ার মা ঘরের কাজ সামলাতেন এবং সময় পেলে গ্রামের অন্যান্য মহিলাদের সাহায্য করতেন। রিয়া পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিল এবং সবসময় প্রথম হত। সে স্বপ্ন দেখত বড় হয়ে ডাক্তার হবে এবং গ্রামের মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিবে।

একদিন গ্রামে একটি বড় মেলা বসেছিল। রিয়া তার মা-বাবার সাথে মেলায় গেল। মেলায় অনেক রকমের দোকান বসেছিল, বিভিন্ন ধরনের খেলনা, মিষ্টি, ফল-মূল, এবং হস্তশিল্পের সামগ্রী ছিল। রিয়া মেলায় গিয়ে খুবই আনন্দিত হল। সে তার মাকে বলল, "মা, আমি এখানে কিছু সময় ঘুরে বেড়াতে চাই। তুমি আর বাবা একটু বিশ্রাম নাও। আমি এক্ষুণি ফিরে আসব।"



রিয়ার মা-বাবা তাকে অনুমতি দিলেন এবং রিয়া মেলায় ঘুরতে বের হল। সে একটার পর একটা দোকান দেখল, মিষ্টির দোকানে গিয়ে কিছু মিষ্টি খেল, আর হস্তশিল্পের দোকানে গিয়ে কিছু সুন্দর জিনিসপত্র দেখল। কিছুক্ষণ পরে, সে দেখল এক বুড়ি মহিলা তার দোকানে বসে কিছু পুরনো বই বিক্রি করছেন। রিয়া বই পড়তে খুব ভালোবাসত, তাই সে সেই দোকানে গেল।



বুড়ি মহিলাটি বললেন, "এই বইগুলো অনেক পুরনো, কিন্তু খুবই মূল্যবান। যদি তুমি ইচ্ছা কর, একটা বই বেছে নিতে পার।"



রিয়া বইগুলো ঘেঁটে ঘেঁটে দেখল এবং একটি বই বেছে নিল। বইটির নাম ছিল "নিঃস্বার্থ ভালোবাসার গল্প।" বুড়ি মহিলাটি বললেন, "এই বইটা খুবই বিশেষ। এর ভেতরে এমন একটি শক্তি আছে যা তোমাকে এবং তোমার আশেপাশের মানুষদের ভালো করতে সাহায্য করবে।"



রিয়া বইটি কিনে নিল এবং বাড়ি ফিরল। সে বইটি পড়তে শুরু করল এবং দেখল যে এটি বিভিন্ন মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার গল্প নিয়ে লেখা। প্রতিটি গল্পে একেকটি বিশেষ শিক্ষা ছিল।



একদিন, রিয়ার মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রিয়া খুব দুঃশ্চিন্তায় পড়ল এবং দ্রুত ডাক্তার ডাকাল। ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে বললেন যে তার মায়ের অনেক যত্নের প্রয়োজন এবং কিছু ওষুধেরও দরকার। রিয়া তার মাকে সারাদিন সারারাত যত্ন নিত এবং ওষুধ খাওয়াত। কয়েকদিন পর তার মা সুস্থ হয়ে উঠলেন।



কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, কিছুদিন পর রিয়ার বাবা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রিয়া এবং তার মা অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারলেন না কারণ গ্রামের কাছাকাছি ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। রিয়ার বাবা মারা যাওয়ার পর, রিয়া ও তার মা ভীষণ কষ্টে দিন কাটাতে লাগলেন। এই ঘটনার পর, রিয়া আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞা করল যে সে একজন ডাক্তার হবে এবং তার গ্রামের মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিবে যাতে কেউ আর তার বাবার মতো অকালে মারা না যায়।

রিয়ার মা তখনও অসুস্থ থাকায়, রিয়া তার পড়াশোনার পাশাপাশি মায়ের যত্ন নিতে লাগল। সে গ্রামে গিয়ে গৃহশিক্ষক হিসেবে পড়াত এবং সেই টাকা দিয়ে মায়ের ওষুধ কিনত। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটানোর পর, রিয়া উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম স্থান অধিকার করল এবং সরকারি বৃত্তি পেয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হল।

মেডিকেল কলেজে পড়াশোনার সময়েও রিয়া তার মায়ের যত্ন নিত এবং অবসর সময়ে গ্রামে এসে গ্রামের মানুষদের সাহায্য করত। তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং পরিশ্রমের জন্য সে সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠল। মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে রিয়া গ্রামে ফিরে এল এবং নিজের একটি ছোট ক্লিনিক খুলল। সেখানে সে গ্রামের মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিতে শুরু করল।

রিয়ার এই নিরলস পরিশ্রম এবং নিঃস্বার্থ ভালোবাসার জন্য তার ক্লিনিকটি ধীরে ধীরে গ্রামের সবার আস্থার স্থল হয়ে উঠল। গ্রামের সবাই রিয়াকে দেখে গর্ব অনুভব করল এবং বলল, "যার ঘরে এমন মেয়ে থাকে, সে ঘর কখনো দুঃখী হতে পারে না।"

রিয়ার জীবন আমাদের শিখিয়ে গেল যে ভালোবাসা, নিষ্ঠা, এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা সবকিছু অর্জন করতে পারি। তার জীবন আমাদের সবার জন্য একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

"নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে আমরা সবকিছু অর্জন করতে পারি।"ভালোবাসা এবং নিঃস্বার্থ সাহায্য করার মানসিকতা আমাদের সবার মধ্যেই থাকা উচিত।

তাং- ১২/০৭/২০২৪ ইং
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/০৯/২০২৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • তুলনাহীন
  • ফয়জুল মহী ২৬/০৯/২০২৪
    অতুলনীয়
 
Quantcast