ভাগ্য- বিড়ম্বনা ১ ও ২
ভাগ্য- বিড়ম্বনা!
প্রথম পর্ব: রূপালি চেইনের হকার!
প্রথম পর্ব: রূপালি চেইনের হকার!
সময়টা ১৯৯৯ সালের আগষ্ট। সিলেট থেকে ফিরছি এস. আর পরিবহনে। আকাশ মেঘে ঢাকা, টিপটপ বৃষ্টি ঝরছে মাঝে মাঝে। ভৈরব ফেরিঘাট থেকে ৫ মাইল দূরে থাকতেই রাস্তায় ভীষণ জ্যাম। গাড়ি চলছে খুঁড়িয়ে আর গড়িয়ে...
হাতে, কাঁধে, ঝুলিতে রূপালি চেইন নিয়ে এক হকার গাড়িতে উঠে বলল-( হকারদের বিখ্যাত কন্ঠে ও সূরে) "আজ তার বেচাকেনা শেষ, বাসায় ফেরার পথে শেষ বারের মত এই বাসে সে উঠেছে।"
তার হাতে থাকা রূপার(!) চেইনগুলো বৃটিশ আমলে এই দেশে প্রচলিত রূপালি কয়েন দিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরি। এর রঙ কখনো উঠবে না, বলেই চেইনগুলো গাড়ি ঘষতে থাকে। এর দাম দোকানে ৩০ টাকার উপরে হলেও সে এখন এগুলো কোম্পানির দামে ১০ টাকাতে বিক্রি করবে, কারণ সে কোম্পানি প্রতিনিধি।
ইচ্ছে করলে যে কেউ তা হাতে নিয়ে দেখতে পারে, কিনতে হবে এমন কোনো কথা নেই, তাছাড়া আজ সে যথেষ্ট বিক্রি করেছে। এটা তার লাস্ট গাড়ি।
কখনো সে বলছে, সে কোম্পানির প্রচার প্রতিনিধি; বিক্রি হোক চাই না হোক তাতে তার কোনো ক্ষতি নেই, কোম্পানি তাকে নির্দিষ্ট বেতন দেবেই।
অনেকক্ষণ যাবত সে চিল্লালেও কেউ তার দিকে নজর দিচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। এই বাদলদিনে মোলায়েম পরিবেশে গাড়ির মৃদুমন্দ গানের তালে কেউ আমার মত পেপার বা বই পড়ছে, কেউ ঘুমাচ্ছে।
ত্রিশ মিনিটের মত হয়েছে হকারের গাড়িতে উঠার। কেউ চেইন কিনবে দূরের কথা, হাতে নিয়ে দেখার গরজটুকুও দেখাল না।
গাড়ি যখন ভৈরব ফেরিঘাটের কাছাকাছি এসে পুরোপুরি থেমে গেল তখন সে মনের ক্ষোভের যা বলল, তার সারমর্ম হল-
আজ তার এটাই প্রথম গাড়ি, আগে কয়েকটা গাড়ি ছেড়ে দিয়ে বড় গাড়ি দেখে এই গাড়িতে সে উঠেছে। তার কপালটাই খারাপ! গাড়ির সব প্যাসেঞ্জার তার মতে কুফা!
কতক্ষণ গালি গালাজ! শূন্যের উদ্দেশ্যে।
তারপর কাঁদতে কাঁদতে গাড়ি থেকে নময়ণ।
তার এই কষ্টে আমার পেল হাসি।
একেই বলে ভাগ্য বিড়ম্বনা! প্রথমে এসে সে যে জাড়িটুকু দিয়েছিল পরন্তবেলায় তাই তার কপালে জুটল।
২য় পর্ব: বাস কন্ট্রাক্টর!
শাহবাগ থেকে মতিঝিল যাচ্ছি! গাড়িতে প্রচন্ড ভিড়। দম বন্ধ হয়ে আসার মত। দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রী বাসের কাচ টানতেই তা ভেঙ্গে গেল। গাড়ির কন্ট্রাক্টর এসেই যাত্রীকে ধমকাতে লাগল। যাত্রী তাকে বুঝাতে লাগল এতে তার কোনো দোষ নেই, সে যথেষ্ট নরম হাতেই জানালার কাচটা টেনেছিল। কন্ট্রাক্টর তারচে গরম কন্ঠে বলল, এটার কাচ কোনো ঠুনকো নয় যে ধরলেই ভেঙ্গে যাবে। সে কাচের দাম চেয়ে বসে। বাসের অন্যযাত্রীরা যাত্রীর পক্ষ নিলে সে জানালার আরেকটা কাচ টেনে দেখাতে লাগল যে, কাচ টানলেই তা ভেঙ্গে যায় না। কন্ট্রাক্টরের দূর্ভাগ্য! সে কথাটা বলে কাচ টানতেই ঐ কাচটি ভেঙ্গে যায়। এরপর আরেকটি কাচ টানতে সেটাও ভেঙ্গে গেলে সে বাসের সামনে চলে যায়। তখন তার মুখটি দেখতে যা হয়েছিল তা কোনো লেখক বর্ণনা করতে পারবে না।
হাতে, কাঁধে, ঝুলিতে রূপালি চেইন নিয়ে এক হকার গাড়িতে উঠে বলল-( হকারদের বিখ্যাত কন্ঠে ও সূরে) "আজ তার বেচাকেনা শেষ, বাসায় ফেরার পথে শেষ বারের মত এই বাসে সে উঠেছে।"
তার হাতে থাকা রূপার(!) চেইনগুলো বৃটিশ আমলে এই দেশে প্রচলিত রূপালি কয়েন দিয়ে বিশেষ ভাবে তৈরি। এর রঙ কখনো উঠবে না, বলেই চেইনগুলো গাড়ি ঘষতে থাকে। এর দাম দোকানে ৩০ টাকার উপরে হলেও সে এখন এগুলো কোম্পানির দামে ১০ টাকাতে বিক্রি করবে, কারণ সে কোম্পানি প্রতিনিধি।
ইচ্ছে করলে যে কেউ তা হাতে নিয়ে দেখতে পারে, কিনতে হবে এমন কোনো কথা নেই, তাছাড়া আজ সে যথেষ্ট বিক্রি করেছে। এটা তার লাস্ট গাড়ি।
কখনো সে বলছে, সে কোম্পানির প্রচার প্রতিনিধি; বিক্রি হোক চাই না হোক তাতে তার কোনো ক্ষতি নেই, কোম্পানি তাকে নির্দিষ্ট বেতন দেবেই।
অনেকক্ষণ যাবত সে চিল্লালেও কেউ তার দিকে নজর দিচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে না। এই বাদলদিনে মোলায়েম পরিবেশে গাড়ির মৃদুমন্দ গানের তালে কেউ আমার মত পেপার বা বই পড়ছে, কেউ ঘুমাচ্ছে।
ত্রিশ মিনিটের মত হয়েছে হকারের গাড়িতে উঠার। কেউ চেইন কিনবে দূরের কথা, হাতে নিয়ে দেখার গরজটুকুও দেখাল না।
গাড়ি যখন ভৈরব ফেরিঘাটের কাছাকাছি এসে পুরোপুরি থেমে গেল তখন সে মনের ক্ষোভের যা বলল, তার সারমর্ম হল-
আজ তার এটাই প্রথম গাড়ি, আগে কয়েকটা গাড়ি ছেড়ে দিয়ে বড় গাড়ি দেখে এই গাড়িতে সে উঠেছে। তার কপালটাই খারাপ! গাড়ির সব প্যাসেঞ্জার তার মতে কুফা!
কতক্ষণ গালি গালাজ! শূন্যের উদ্দেশ্যে।
তারপর কাঁদতে কাঁদতে গাড়ি থেকে নময়ণ।
তার এই কষ্টে আমার পেল হাসি।
একেই বলে ভাগ্য বিড়ম্বনা! প্রথমে এসে সে যে জাড়িটুকু দিয়েছিল পরন্তবেলায় তাই তার কপালে জুটল।
২য় পর্ব: বাস কন্ট্রাক্টর!
শাহবাগ থেকে মতিঝিল যাচ্ছি! গাড়িতে প্রচন্ড ভিড়। দম বন্ধ হয়ে আসার মত। দাঁড়িয়ে থাকা এক যাত্রী বাসের কাচ টানতেই তা ভেঙ্গে গেল। গাড়ির কন্ট্রাক্টর এসেই যাত্রীকে ধমকাতে লাগল। যাত্রী তাকে বুঝাতে লাগল এতে তার কোনো দোষ নেই, সে যথেষ্ট নরম হাতেই জানালার কাচটা টেনেছিল। কন্ট্রাক্টর তারচে গরম কন্ঠে বলল, এটার কাচ কোনো ঠুনকো নয় যে ধরলেই ভেঙ্গে যাবে। সে কাচের দাম চেয়ে বসে। বাসের অন্যযাত্রীরা যাত্রীর পক্ষ নিলে সে জানালার আরেকটা কাচ টেনে দেখাতে লাগল যে, কাচ টানলেই তা ভেঙ্গে যায় না। কন্ট্রাক্টরের দূর্ভাগ্য! সে কথাটা বলে কাচ টানতেই ঐ কাচটি ভেঙ্গে যায়। এরপর আরেকটি কাচ টানতে সেটাও ভেঙ্গে গেলে সে বাসের সামনে চলে যায়। তখন তার মুখটি দেখতে যা হয়েছিল তা কোনো লেখক বর্ণনা করতে পারবে না।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ডাঃ প্রবীর আচার্য নয়ন ২৪/০৯/২০১৩
-
সুবীর কাস্মীর পেরেরা ২৩/০৯/২০১৩বাঃ একদম বাস্তব চিত্র। মন ভরে পড়লাম।
-
Înšigniã Āvî ২৩/০৯/২০১৩
-
সহিদুল হক ২৩/০৯/২০১৩অভিজ্ঞতাটা বেশ মজার তো।অনেক সময় এমন হয়,চ্যালেঞ্জ জানাবার পর নিজেই হেরে গিয়ে লজ্জায় পড়ে যায়।
দ্বিতীয় পর্ব- নশ্বর পৃথিবীতে সব কিছুর একটা মেয়াদ থাকে। খুব ভালো লেখা