বিনুর কবিতা
বিনুতি ছিল আড্ডাপ্রিয় মেয়ে। সেটা ঐ বিয়ের আগে পর্যন্ত। বিয়ে হতে না হতেই সে কেমন নিঃসঙ্গ হয়ে গেল। কোথাও যেতে মন চায় না, কোথাও অনেকক্ষণ আলাপও করে না। এমন চিরচেনা মেয়েটা অপরিচিত হয়ে যাবে কেউ ভাবে নি। বিনুতির বর আরও বেশি লাজুক; বউয়ের সাথে জমিয়ে গল্প করতে পারে না। তবে বউকে বড্ড ভালোবাসে। একদিন অফিস থেকে ফিরে বিনুতিকে বলল, তুমি আমার শহরটি ঘুরে দেখ নি, চল কাল থেকে ঘোরাঘুরি শুরু করি। বিনুতিকে চা বানাতে ব্যস্ত দেখে সে ভাবল, বউ বুঝি তার কথা কানে নিতে চাচ্ছে না। তেমন কোনো সাড়া না পেয়ে বর নীরব হয়ে গেল। রান্নাঘর থেকে প্লেট ভাঙ্গার শব্দ এল, বিনুতির গলায় গোঙানি। বর ছুটে গিয়ে দেখে বেশ খানিকটা চোট পেয়েছে বিনুতি। চায়ের কাপ আর প্লেট দুটোই হাত থেকে পড়ে গিয়ে দুপায়ের উপর পড়েছে। অন্য কোনো বউ হলে বলত, সয়ন, তুমি কি চেয়েই থাকবে নাকি একটা কিছু করবে? সয়ন সত্যি অবাক হয়ে যায় বউয়ের নির্লিপ্ততা দেখে। বউ নিজে নিজে তার পায়ের শুশ্রূষা করছে। সয়ন যে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এ যেন বেমালুম তার মাথায় নেই। বিনুতি এরকমই, বিয়ের পরে এরকমটাই দেখে এসেছে সয়ন। কেন এমন, তার কোনো কূল-কিনারা ভেবে পায় না।
বিনুতি ধীরে ধীরে আরেক কাপ চা বানিয়ে সয়নকে দিল। সয়ন বিনুতির হাত চেপে তার পাশে বসালো। সয়নের কাতরতা, দেখ বিনু, তুমি যদি ভাবো যে, এভাবেই জীবন কাটাবে তবে আমি বলব, আমি একাই থাকব। তোমার মনের ভাষা আমি যেন ঠাউর করতে পারছি না। তুমি কি চাও? কীভাবে তোমার ভালো লাগবে, কি করতে তোমার ইচ্ছে, এ তুমি নির্দ্ধিধায় আমাকে বলতে পারো। বিনুতি এক দৃষ্টিতে চায়ের কাপে তাকিয়ে রইল। কোনো উত্তর নেই। কোনো নড়াচড়া নেই। সয়ন বিনুতির চোয়াল ধরে তার দিকে ফেরালো, বলো বিনু, বলো। এভাবে আমরা কেমন করে থাকব। কেমন করে? বিনু আস্তে আস্তে চোখ দুটো সয়নের মুখের উপর ফেলল, কিছুক্ষণ, আবার হারিয়ে গেল আগের মতো। না, বিনু, না। সায়ন আরও শান্ত স্বরে বলল, কাল থেকে আমার সঙ্গে বেরোবে চলো, একবারটি সায় দাও। আমাদের কি শুধু প্রয়োজনের সম্পর্ক, দরকারি কথা ছাড়া কি কোনো কথা হবে না আমাদের মধ্যে। এই ধরো, কোনো কবি নিয়ে, কারও লেখা নিয়ে, কবিতার ভেতর লুকিয়ে থাকা পরাবাস্তব নিয়ে। আরও কিছু বলতে যাবে এমন সময় ঘরের আলো চলে গেল। এই সময়ে শহরে ইদানিং বেশ লোড শেডিং হয়, আজকেও তাই। বিনু যে এখন কোথায় তাকিয়ে আছে সয়ন বুঝতে পারে না। একটা কোমল হাতের স্পর্শ টের পেল; বিনু তার দুহাত দিয়ে সয়নের মুখ খুঁজছে।
নাকের উপর, চোখের উপর, কপালের উপর, কেমন যেন এক অসীম তৃষ্ণা নিয়ে বিনু আঁকাআঁকি করছে। কবিতাগুলো কেমন? এদের কি মুখ আছে, এদের কি নাক আছে, এদের কি ঠোঁট হয়? বিনু বলতে লাগল, এদেরকে কেমন করে সৃষ্টি করলে সুখ বেশি দেয়, বিদ্রোহের সুরে নাকি প্রেমের বাঁধনে। এদের স্রষ্টা কারা? পাখির পালকের মতো কি তাদের হৃদয়। তাদের হৃদয়ের ধুক ধুক শব্দই কি কবিতার লাইনে ছন্দ আনে। ছন্দের বার্তা উড়ে উড়ে পাঠকের ভেতর নিবিষ্ট হলে তাদের হৃদয়েও কি একই ছন্দ বেজে উঠে? কবি, কবিতা, পাঠক সব কেমন একাকার হয়ে যায়, তাই না। সয়ন মুগ্ধ, সয়ন স্তব্ধ। এ কার কথা শুনছে সে। এ কী সেই বিনু, নাকি কল্পনার আশ্রয়ে নতুন কেউ কথা বলছে। বিনুর কন্ঠে ভেসে আসে মহাদেব সাহার কবিতা, সয়ন নিষ্পলক চোখে অন্ধকার ঘরে বিনুকে খুঁজে। বিনুর গলায় তখন কবিতার ঝংকার।
বিনুতি ধীরে ধীরে আরেক কাপ চা বানিয়ে সয়নকে দিল। সয়ন বিনুতির হাত চেপে তার পাশে বসালো। সয়নের কাতরতা, দেখ বিনু, তুমি যদি ভাবো যে, এভাবেই জীবন কাটাবে তবে আমি বলব, আমি একাই থাকব। তোমার মনের ভাষা আমি যেন ঠাউর করতে পারছি না। তুমি কি চাও? কীভাবে তোমার ভালো লাগবে, কি করতে তোমার ইচ্ছে, এ তুমি নির্দ্ধিধায় আমাকে বলতে পারো। বিনুতি এক দৃষ্টিতে চায়ের কাপে তাকিয়ে রইল। কোনো উত্তর নেই। কোনো নড়াচড়া নেই। সয়ন বিনুতির চোয়াল ধরে তার দিকে ফেরালো, বলো বিনু, বলো। এভাবে আমরা কেমন করে থাকব। কেমন করে? বিনু আস্তে আস্তে চোখ দুটো সয়নের মুখের উপর ফেলল, কিছুক্ষণ, আবার হারিয়ে গেল আগের মতো। না, বিনু, না। সায়ন আরও শান্ত স্বরে বলল, কাল থেকে আমার সঙ্গে বেরোবে চলো, একবারটি সায় দাও। আমাদের কি শুধু প্রয়োজনের সম্পর্ক, দরকারি কথা ছাড়া কি কোনো কথা হবে না আমাদের মধ্যে। এই ধরো, কোনো কবি নিয়ে, কারও লেখা নিয়ে, কবিতার ভেতর লুকিয়ে থাকা পরাবাস্তব নিয়ে। আরও কিছু বলতে যাবে এমন সময় ঘরের আলো চলে গেল। এই সময়ে শহরে ইদানিং বেশ লোড শেডিং হয়, আজকেও তাই। বিনু যে এখন কোথায় তাকিয়ে আছে সয়ন বুঝতে পারে না। একটা কোমল হাতের স্পর্শ টের পেল; বিনু তার দুহাত দিয়ে সয়নের মুখ খুঁজছে।
নাকের উপর, চোখের উপর, কপালের উপর, কেমন যেন এক অসীম তৃষ্ণা নিয়ে বিনু আঁকাআঁকি করছে। কবিতাগুলো কেমন? এদের কি মুখ আছে, এদের কি নাক আছে, এদের কি ঠোঁট হয়? বিনু বলতে লাগল, এদেরকে কেমন করে সৃষ্টি করলে সুখ বেশি দেয়, বিদ্রোহের সুরে নাকি প্রেমের বাঁধনে। এদের স্রষ্টা কারা? পাখির পালকের মতো কি তাদের হৃদয়। তাদের হৃদয়ের ধুক ধুক শব্দই কি কবিতার লাইনে ছন্দ আনে। ছন্দের বার্তা উড়ে উড়ে পাঠকের ভেতর নিবিষ্ট হলে তাদের হৃদয়েও কি একই ছন্দ বেজে উঠে? কবি, কবিতা, পাঠক সব কেমন একাকার হয়ে যায়, তাই না। সয়ন মুগ্ধ, সয়ন স্তব্ধ। এ কার কথা শুনছে সে। এ কী সেই বিনু, নাকি কল্পনার আশ্রয়ে নতুন কেউ কথা বলছে। বিনুর কন্ঠে ভেসে আসে মহাদেব সাহার কবিতা, সয়ন নিষ্পলক চোখে অন্ধকার ঘরে বিনুকে খুঁজে। বিনুর গলায় তখন কবিতার ঝংকার।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এম,এ,মতিন ১১/০৬/২০১৭মুগ্ধতা রেখে গেলাম প্রিয়। খুব সুন্দর লেখনী।
-
জয়শ্রী রায় মৈত্র ২৭/০৫/২০১৭সুন্দর । খুব ভাল লিখেছেন ।
-
ইমরান খাঁন সুজল ২৭/০৫/২০১৭অসাধারণ।
-
শেলি ২৬/০৫/২০১৭সুন্দর
-
মোনালিসা ২৬/০৫/২০১৭খুব ভাল
-
শাহারিয়ার ইমন ২৬/০৫/২০১৭চমতকার
-
সুরজিৎ দাস ২৬/০৫/২০১৭ভালো লাগলো আমার ।
-
আলম সারওয়ার ২৫/০৫/২০১৭দারুন হয়েছে বলে শুভেচ্ছা