বঙ্গভঙ্গ
কলকাতা থেকে ঢাকা কিংবা ঢাকা থেকে কলকাতা যেতে কতক্ষণ সময় লাগে; এক ভাতঘুম দিয়ে যাত্রা শেষ করা যায়। কিন্তু ও আসবে না; পশ্চিম বাংলার মেদিনীপুর তার কাছে যতটা না প্রিয় তার চেয়ে ঢের বেশি অপ্রিয় আমার দেশ। আমি বললাম, দেখো, নির্মলেন্দু গুণ আছেন, সৈয়দ শামসুল হক এখনো দুহাত ভরে লিখে যাচ্ছেন, তুমি হাসান আজিজুল হককেও চেনো, তবে কেন এমন করে স্বপ্নগুলোকে ২৬ ফেব্রুয়ারিতেই মেরে ফেলবে! ও জবাব দিতে চায় না, শুধু বলে, আমি তো অভিজিৎ রায় হতে পারব না !
গল্প লেখার প্রতিযোগিতা হয়েছিল বছর তিনেক আগে। দুজনেই লিখলাম। রৌদ্রতপ্ত নীল আকাশে কালো মেঘের ভেসে বেড়ানো দেখে পাখিরা আনন্দে বিহ্বল হয়ে ভুলেই যায় বৃষ্টি হবে, ঠিক তেমন করে ওর প্রতিটি শব্দ এমন নিখুঁত দৃষ্টিতে চয়নকৃত যে ভুলেই গিয়েছিলাম লেখাটি হঠাৎ করে শেষ হয়ে যাবে। অসাধারণ লিখেছিল, তার পুরস্কারও পেয়েছিল প্রথম হয়ে। সেখান থেকেই পরিচয়। দুই বাংলার দুটি হৃদয় ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করল যেন।
কবিতার সংগঠনে জড়িয়ে আবৃত্তি নিয়ে মেতে উঠলাম। রবার্ট ফ্রস্টের সেই কবিতাটি আবৃত্তি করতে খেই হারিয়ে ফেলতাম, সেই বনের ভেতর, ঘন অন্ধকার, কাঠের গুঁড়ি, ঘুরে আসতে ইচ্ছে হতো। আমি কবিতা পাঠাতাম, ও আবৃত্তি করে রেকর্ড শুনাতো। কখনোই মনে হয় নি আমি অতটা অপূর্ব লিখি যতটা ওর মিহি গলায় শুনতাম।
আহা একদিন, অনেক বলে কয়ে ওকে বাংলা একাডেমির আবৃত্তি মঞ্চে উঠালাম, সেদিন ওর প্রথম বাংলাদেশ আসা, বই উৎসবের মাস। সেই দিন সেই ক্ষণে চারিদিক বনভূমি হয়ে উঠল, একটি কালো ঘোড়া আর আমি, হেঁটে যাচ্ছি, ঘন কাঠের সাজানো সেই বনের ভেতর দিয়ে, কোথাও হয়তো পাখি ডাকছে, কোথাও অচেনা কন্ঠ, এই বুঝি ঘুমিয়ে পড়লাম! রবার্ট ফ্রস্ট স্বয়ং যেন নেমে এলেন ওর গলায়।
সেই একুশে বইমেলার পরের বছর আমিও গেলাম কলকাতার বইমেলায়। কী বিশাল আয়োজন, না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না। ওর প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এক অখ্যাত এপার বাংলার এক ছোকরার হাত ধরে। তাজ্জব কান্ড রটে গেল বই পাড়ায়; বইয়ের কাটতি দেখেই তা বুঝা যায়।
যেখানেই সাহিত্য আড্ডা হতো আমরা যেতাম যতটা পারতাম। ওর সঙ্গে কি পেরে উঠা যায়! আমি নিশ্চিন্ত মনে একটি কথাই ভাবতাম, গল্প-কবিতার শেষ লাইন আছে, কিন্তু এই সাহিত্যরসের শেষ হবে না, হতে পারে না।
সময়ের কাঁটা উল্টোও তো ঘুরে, সেই ঘড়িকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া গেলেও ও পারে নি। সেই ২৬ ফেব্রুয়ারির পর ও এখানে না আসার কথা বলেই দিল।
এ মাটির বুকে জীবনানন্দ, এ মাটির দেশে জসীমউদ্দীন, ভাষার জন্য রক্তের চিহ্ন তো এই মৃত্তিকাতেই লেগে আছে। আমারও যে পরবাসী হতে ইচ্ছে করল না, তবে কি বঙ্গভঙ্গই সত্য। শরৎচন্দ্রের কথাগুলো প্রায়ই আমার কানে বাজে, “এই জীবনের কোনো কিছুই সত্যি নয়, সত্যি শুধু চঞ্চল মুহূর্তগুলো, আর এর চলে যাওয়ার ছন্দটুকু।”
গল্প লেখার প্রতিযোগিতা হয়েছিল বছর তিনেক আগে। দুজনেই লিখলাম। রৌদ্রতপ্ত নীল আকাশে কালো মেঘের ভেসে বেড়ানো দেখে পাখিরা আনন্দে বিহ্বল হয়ে ভুলেই যায় বৃষ্টি হবে, ঠিক তেমন করে ওর প্রতিটি শব্দ এমন নিখুঁত দৃষ্টিতে চয়নকৃত যে ভুলেই গিয়েছিলাম লেখাটি হঠাৎ করে শেষ হয়ে যাবে। অসাধারণ লিখেছিল, তার পুরস্কারও পেয়েছিল প্রথম হয়ে। সেখান থেকেই পরিচয়। দুই বাংলার দুটি হৃদয় ১৯১১ সালের বঙ্গভঙ্গ রদ ঘোষণা করল যেন।
কবিতার সংগঠনে জড়িয়ে আবৃত্তি নিয়ে মেতে উঠলাম। রবার্ট ফ্রস্টের সেই কবিতাটি আবৃত্তি করতে খেই হারিয়ে ফেলতাম, সেই বনের ভেতর, ঘন অন্ধকার, কাঠের গুঁড়ি, ঘুরে আসতে ইচ্ছে হতো। আমি কবিতা পাঠাতাম, ও আবৃত্তি করে রেকর্ড শুনাতো। কখনোই মনে হয় নি আমি অতটা অপূর্ব লিখি যতটা ওর মিহি গলায় শুনতাম।
আহা একদিন, অনেক বলে কয়ে ওকে বাংলা একাডেমির আবৃত্তি মঞ্চে উঠালাম, সেদিন ওর প্রথম বাংলাদেশ আসা, বই উৎসবের মাস। সেই দিন সেই ক্ষণে চারিদিক বনভূমি হয়ে উঠল, একটি কালো ঘোড়া আর আমি, হেঁটে যাচ্ছি, ঘন কাঠের সাজানো সেই বনের ভেতর দিয়ে, কোথাও হয়তো পাখি ডাকছে, কোথাও অচেনা কন্ঠ, এই বুঝি ঘুমিয়ে পড়লাম! রবার্ট ফ্রস্ট স্বয়ং যেন নেমে এলেন ওর গলায়।
সেই একুশে বইমেলার পরের বছর আমিও গেলাম কলকাতার বইমেলায়। কী বিশাল আয়োজন, না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না। ওর প্রথম বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এক অখ্যাত এপার বাংলার এক ছোকরার হাত ধরে। তাজ্জব কান্ড রটে গেল বই পাড়ায়; বইয়ের কাটতি দেখেই তা বুঝা যায়।
যেখানেই সাহিত্য আড্ডা হতো আমরা যেতাম যতটা পারতাম। ওর সঙ্গে কি পেরে উঠা যায়! আমি নিশ্চিন্ত মনে একটি কথাই ভাবতাম, গল্প-কবিতার শেষ লাইন আছে, কিন্তু এই সাহিত্যরসের শেষ হবে না, হতে পারে না।
সময়ের কাঁটা উল্টোও তো ঘুরে, সেই ঘড়িকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেওয়া গেলেও ও পারে নি। সেই ২৬ ফেব্রুয়ারির পর ও এখানে না আসার কথা বলেই দিল।
এ মাটির বুকে জীবনানন্দ, এ মাটির দেশে জসীমউদ্দীন, ভাষার জন্য রক্তের চিহ্ন তো এই মৃত্তিকাতেই লেগে আছে। আমারও যে পরবাসী হতে ইচ্ছে করল না, তবে কি বঙ্গভঙ্গই সত্য। শরৎচন্দ্রের কথাগুলো প্রায়ই আমার কানে বাজে, “এই জীবনের কোনো কিছুই সত্যি নয়, সত্যি শুধু চঞ্চল মুহূর্তগুলো, আর এর চলে যাওয়ার ছন্দটুকু।”
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।