পুরুষ ও বিয়ে
আচ্ছা, সবাইকেই বিয়ে করতে হবে কেন? বিয়ে ছাড়া কী জীবনের নিরাপত্তা নেই আমাদের! তুমি এই বিষয়টি নিয়ে আর আমাকে ফোন দিও না, আমি রাখলাম। ফোনটা রেখে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম; বিয়ের জন্য আমার মা-বাবা, কাক-কাকী সবাই উঠে পড়ে লেগেছে। আমার নিরাপত্তা নিয়ে তারা ভেবে অস্থির। এতদূর একা থাকি, একা একা থাকা-খাওয়া কেমন করে চলে তারা এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় মগ্ন। আমার জীবন আমি সহজ ভাবেই চালিয়ে নিচ্ছি। মাস শেষ হলে নিজে যাই কিংবা মানি অর্ডার করে বাড়িতে টাকা পাঠাই, সব কিছুই বৃথা; আমাকে আমার মতো কেউ ভাবে নি কোনোদিন, আমাকে তারা মেয়ে ভেবেছে, স্ত্রী লিঙ্গ ছাড়া আমি যেন কিছু নই।
আমি বাঁশি বাজাতে পারি, মাঝে মাঝে পুরোনো সেতারায় সুর তোলে পুরোনো দিনকে ভুলে থাকি। ভুলে থাকতে ইচ্ছা করে, পুরোনোকে জড়িয়ে আর কতদিন! এই গহীন চা বাগানে আমি বছর খানেক আসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হয়ে বাংলোতেই দিন কাটাচ্ছি। সুখে-দুখে ভালোই দিন কাটছে। চা-শ্রমিকদের জীবনের সঙ্গে মিশে একটি জিনিস ভালো করেই শিখেছি, ভেঙ্গে পড়া চলবে না, ভেঙ্গে পড়লেই তোমাকে জেঁকে বসবে। আমার দিনগুলো কাটে ব্যস্ততায়, রাত আসে নির্জনতার।যখন রাতের আকাশে চাঁদের আলো কিংবা কোনো বৃষ্টির রাত, আমি সামনের সাজানো-গোছানো বাগানের সবুজ ঘাসে গা এলিয়ে দিয়ে আকাশ দেখি। কত বিশাল এই আকাশ; আকাশে কত ভাবনা উড়ে বেড়ায়, ভাবনাগুলো একে অপরের সাথে মিশে যায়, কার ভাবনা কার সঙ্গে মিশে তা কিন্তু বুঝতে পারি না।
জীবনের কত কিছু আছে যা বুঝে উঠতে উঠতে জীবন চলে যায়। কতক মানুষ এই না বোঝা ব্যাপারগুলোর পেছন আপ্রাণ ছুটে মরে। আমি তাদের দলে নই; যা বুঝতে সহজ, সেই সহজকেই আমি ভালোবাসি। হ্যা, ভালোবাসি, যা সহজ, এই ফুলে ভরা বাগান, চা বাগানের সরল মানুষ- সবার ভেতর সুদীপ্ত সহজত্বকে আমার ভালো লাগে। সব কিছুতো এত সহজ নয়- এ তো মুখের কথা। আমরা সত্যিই যাকে সহজ করে দেখি, সেটাই সহজ।
আমার বাগানের ম্যানেজার একজন পুরুষ। তিনি প্রায়ই আমার বাংলোতে আসেন। আমি একা থাকি, তিনি সেটা কেমন চোখে দেখেন, তা আমি তার কথা দিয়ে বুঝি। যখন তিনি বলেন, আমার বউ আমি ঘরে না থাকলে অস্থির হয়ে উঠে, রাতের বেলা আমাকে পাশে না পেলে ভয়ে গুটিশুটি মেরে এক কোণে কাঁদতে শুরু করে। শুনে আমি হাসি; ম্যানেজারের বউয়ের জন্য দুঃখ হয়, কতটা দুর্বল করে তাকে ঘরের বিছানার সঙ্গী বানানো হয়েছে, আঃ। ম্যানেজারের ঘরে গিয়ে রাতের খাবার খেয়েছি কয়েকবার, তিনি আমায় এত রাতে ফিরতে মানা করেন, আমার কাছে ব্যাপারটা দুর্বলতার, সেটা মানতে আমি পারি নি।
এই তো সেদিন ম্যানেজার এল, তার সঙ্গে আরও কয়েকজন, তাদেরকে কোথায় দেখেছি খেয়াল করতে পারলাম না। ও, তারা, এই বাগানের টেন্ডারের সাথে জড়িত, ম্যানেজারের সাথে ভালো পরিচয়। কথা প্রসঙ্গে অনেক ইস্যু তৈরি হলো। সময় খানিকটা পেরিয়ে গেল, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। আমি সামান্য জলযোগের ব্যবস্থা করলাম। তারা যে কী উদ্দেশ্য নিয়ে এল, পরিষ্কার হতে পারলাম না। সবকিছু ছাপিয়ে একটা কথাই মাথায় আসল, আমি একা, আমি সাহসী। আহা, আমার সাহস! পাঁচ পাঁচজন পুরুষের সঙ্গে লড়ার জন্য বুকের পাঁঠা থাকতে হয়। আমাকে হারাতে এতগুলো পুরুষ লাগে, সত্যি অদ্ভূত পৃথিবী। জয় তো আমার, আমার শরীরের একটা স্পর্শ পেতে তাদের রক্ত দিতে হয়েছে। যাক সে কথা। আমি এখনও চা বাগানে। কাজ করে যাচ্ছি। বিয়ে করতে হলে পুরুষকেই তো করতে হবে, তা আমি কেমন করে করি!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আলম সারওয়ার ১৬/০৫/২০১৭সুন্দর লেখালেখির জন্য শুভেচ্ছা থাকল।