আজ বিয়ে
মোবাইলের আলো এখন আর জ্বলবে না। ব্যাটারি বের করে টেবিলে রেখেছি। একমাস এভাবেই থাকবে। বাসায় থাকব, বাইরের কারও খোঁজ এই একমাস আমি নিতে চাই না। কেউ আমার খবর নিতে চাইলে বাসায় আসতে হবে। অবশ্য বাসার খোঁজ কয়জনই বা জানে। ভার্সিটি এক মাস বন্ধ।
আমার বিয়ের আলাপ চলছে, আমাকে দেখা হয়ে গিয়েছে; ছেলেপক্ষ সায় দিয়েছে। এখন আমাদের পক্ষ থেকে কিছু জানাতে হবে, বাবা আমার সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছেন, আমি এক মাস সময় নিয়েছি। বাবা বললেন, এক মাস, এতদিন কি তারা অপেক্ষা করবেন! এ কথা শুনে আমি ভেবে নিলাম, হ্যা, এটা অবশ্য ঠিক, সিদ্ধান্ত জানতে এক মাস অপেক্ষা করা অনেক বেশি যাতনার। কতদিন থাকা যায় এমন করে। ছেলেটির সঙ্গে এই ব্যাপারে আলাপ করে নিয়েছি; সে আপত্তি করে নি।
এই এক মাসের ভেতর আমার অনেক গুলো কাজ করে নিতে হবে। আমি রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ এবং মানিকের লেখা সেরা উপন্যাসগুলো কিনে আনলাম। রাত-দিন এক করে পনের দিনের মধ্যে বইগুলো শেষ করলাম। তারপর পাঁচদিন নিয়ে একটা ছোট উপন্যাস লিখলাম। উপন্যাসের নায়িকা নিজের চরিত্রের সাথে মিল রেখেই তৈরি করলাম, পড়তে দিলাম একটি সাহিত্য বিষয়ক ওয়েবে। ভালো সাড়া পেলাম, লেখাটা তাহলে উপভোগ্য। বাকি রইল দশদিন। মোবাইল বন্ধ, তাই চিঠি লেখা শুরু করলাম। যাদের ঠিকানা ডায়েরিতে পেলাম, তাদেরই পাঠিয়ে দিলাম। তেমন একটা সাড়া পেলাম না। এখন তবে চিঠি তেমন একটা নাড়া দেয় না। না, একজন অবশ্য পাঠাল। সে আমার নাম জানতে চাইল, আমার ঠিকানা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করল। আমি এড়িয়ে গেলাম। আমি আমার শেষ করা উপন্যাসগুলো নিয়ে আমার মন্তব্য জানালাম। সে আমার চাইতেও গভীর প্রজ্ঞা প্রদর্শন করল। বেশ ভালো লাগল, বেশ নিশ্চিন্ত বোধ করলাম।
একমাস শেষ হল। মোবাইল অন করতে ইচ্ছে হলো না, থাকি না এমন করে আরও কয়েকদিন। এদিকে বাবা জিজ্ঞেস করল, তুই তো সিদ্ধান্ত জানালি না! আর, তোর চিঠি এমন করে আর কতদিন আমাকে আনতে হবে! আসলে বাবার অফিসের ঠিকানা দিয়ে একটি ছদ্মনামে আমি চিঠি পাঠিয়েছি। বাবার অফিস আরেক উপজেলায়। বাবা প্রায়ই আমার চিঠি পড়তে চান, আমি বলি, অন্যের চিঠি পড়া অন্যায়। যাক, আমার আবার ভার্সিটি লাইফ শুরু। এবার কী করব, তার সঙ্গে কেমন করে যোগাযোগ রাখব, ভেবে আমি অস্থির। অবশেষে মোবাইল অন করে নতুন সিম দিয়ে আলাপ জমে উঠল। এদিকে, আমার হবু বরের পক্ষ থেকে আর কোনো খবর নেই। বাসার সবাই ভাবল, তারা নীরবে সরে পড়েছেন।
আজ আমার বিয়ে। বেশ ধুমধাম করে বিয়ে হচ্ছে! বিয়ের গেইট সাজানো হলো। বর আসল যথা সময়ে। আমার বর যখন পাশে বসল, আমরা দুজনই খুব লজ্জা পাচ্ছিলাম। এক বছর ধরে চিঠি মোবাইল, সাহিত্য, মনের বিশ্লেষণ। শরীর তো থাকবে না একদিন, কিন্তু আমাদের শুভ চিন্তাগুলো তরঙ্গের মতো বয়ে বেড়াবে এজন থেকে অন্যজন। ছেলেটির কথা বলা হয় নি। ছেলেটি আমার স্কুল বন্ধু। একসাথে পড়েছিলাম। আমরা তখন এক শহরে। বাবার বদলি হতেই আমার নতুন স্কুল, ওর হলো অন্য। আবার বিশ বছর পর, আমরা আবার এক সাথে। ভাবা যায়!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শেলি ১৭/০৫/২০১৭ভাল লাগল
-
মধু মঙ্গল সিনহা ১৬/০৫/২০১৭বেশ ভালো লাগলো।
-
কাকলি মল্লিক ১৬/০৫/২০১৭বাহ্ দারুন তো ,বেশ একরকম রেশ লেগে গেল
মনে । অভিনন্দন কবি।