বারান্দায় আবার
আকাশের রোদ কারও মুখের উপর পড়লে সে কেমন যেন আঁতকে উঠে। রোদ বড্ড অসহ্য। রোদের কাছে আমরা কেউ যেতে চাই না। সবুজ সবুজ উদ্ভিদ্গুলো কিন্তু তার ব্যতিক্রম। তারা রোদ বড় ভালোবাসে। যেদিকে রোদ সেদিক পানে ছুটে যেতে চায়, আটকে রাখবে এমন সাধ্যি কার আছে! সবুজ ধান রোদে পুড়ে সোনালী হয়ে উঠে, কৃষকের যাওয়া আশা অবিরত, মধ্য গগনের গনগনে সুয্যি তার কাছে নস্যি, তারা ধান ভালোবাসে; তারা তাদের স্বপ্নগুলোকে ঘরে তোলে। এমন প্রেম এমন মাটির মানুষকেই করতে দেখি। এখনকার প্রেমের সে কী ছিরি! পৃথিবীর অন্ধকার তাদের ভালো লাগে, জোছনার আলো তাদের স্পর্শ পায় না। এ তো প্রেম হতে পারে না; প্রেম তো প্রকৃতিকে জানতে চাওয়া, প্রকৃতির বুকে নিজেদের উজাড় করে হারিয়ে যাওয়া। প্রেম তো দৈহিক নয়, প্রেম হয় আলোর, বিচ্ছুরিত আলো মিলে মিশে একাকার হয়ে আকাশকে জাগিয়ে তোলা। প্রেমের ছন্দ নদীর সেই ঢেউয়ের মতো, কুলকুল ধ্বনিতে এগিয়ে গিয়ে এক সুবিশাল আধারে গর্জন তোলা। হায় প্রেম, আমার ভালোবাসা।
সবুজ উদ্ভিদ আর সেই বারান্দাটি। সবুজের কাছে তার ছুটে আসা। উদ্ভিদ্গুলো রোদের শেষ আলোটা নেয়ার জন্য আকুল হয়ে উঠেছে। হলদে পাখির মতো মেয়েটি হাত বাড়িয়ে সেই সূর্যকে বিদায় জানায়; আবার দেখা হবে, দেখতে দেখতে লাল আভা নিভে যায়। চারিদিকে এক নিবিড় ছন্দ; কান পেতে শুনতে হয়, সেই ছন্দ বিষাদের, আবার দেখা হবে, হবে তো। আলোর বুকে আঁধার ঘনিয়ে আসে। মেয়েটি হাত বাড়িয়ে সযত্নে উদ্ভিদগুলোতে আলতো ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়, ভালোবাসা। এ তো ভালোবাসা, এমন স্নেহভরা আদর কে কাকে দেয়। উদ্ভিদগুলো ভুলে যেতে থাকে বিষাদের ছন্দ, অনুভবে হলদে মেয়েটির পরশ। সেই পরশ পাবার খানিকটা আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে বনভূমির; তাদের গায়ে পরশ বুলানোর কেউ তো নেই, কে জানত- এমন ইট-কংক্রিটের বদ্ধ ঘরে মাটির মানুষ লুকিয়ে আছে। আমি দেখেছি তারে, এখন আমার দৃষ্টিজুড়ে সেই মায়াবী পরশ খেলে যাচ্ছে এক তরঙ্গময় আকুলতা নিয়ে। বনভূমি জেনে গেলে মেয়েটিকে আগলে রাখত, তাদের বুক জুড়ে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ত এমন জোছনাহীন মেঘভরা রাতে। মেঘ এসে কখন যে দরজায় কড়া নাড়ছে টের পাই নি। বিজলির চমক, হিমেল হাওয়া, ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলো মনে করিয়ে দিল- আমি এই মেঘ ভরা আকাশের চাইতে হলদে আলোকেই আপন করে ফেলেছি; ভুলে গেছি কখন কোন কোণে মেঘ এসে আমাকে ঘুম ভাঙ্গালো। আমি তো ঘুমিয়ে নেই, আমি সেই মায়াবী রাতের অলৌকিক আলোর দিকে তাকিয়ে ভেবে ভেবে অস্থির- সে হারিয়ে যাবে না তো, আবার দেখতে পাবো তো। আবার আসবে তো সকাল, আবার আসবে তো হলুদ মেয়েটি। আমার অপেক্ষা শেষ হতে চায় না। আমার কানে বৃষ্টির ছন্দকে আজ স্বাভাবিক শব্দ মনে হয়। আমি তো এমন নই; আমি তো সারা প্রকৃতি জুড়ে ছন্দ খুঁজে ফিরি। আজ আমার কোনো ছন্দ নেই, আমি আজ ছন্দহীন। আমি যে সীমাহীন রহস্যময় এক কবিতার ভেতর, এখানে কেমন করে ছন্দ খুঁজতে হয় আমি তো তা জানি না; আমি একেবারেই হারিয়ে যাওয়া এক দুরন্ত হাওয়া। আমার বাধা নেই, তবু আমি ধাক্কা খাই অবিরাম।
সবুজ উদ্ভিদ আর সেই বারান্দাটি। সবুজের কাছে তার ছুটে আসা। উদ্ভিদ্গুলো রোদের শেষ আলোটা নেয়ার জন্য আকুল হয়ে উঠেছে। হলদে পাখির মতো মেয়েটি হাত বাড়িয়ে সেই সূর্যকে বিদায় জানায়; আবার দেখা হবে, দেখতে দেখতে লাল আভা নিভে যায়। চারিদিকে এক নিবিড় ছন্দ; কান পেতে শুনতে হয়, সেই ছন্দ বিষাদের, আবার দেখা হবে, হবে তো। আলোর বুকে আঁধার ঘনিয়ে আসে। মেয়েটি হাত বাড়িয়ে সযত্নে উদ্ভিদগুলোতে আলতো ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়, ভালোবাসা। এ তো ভালোবাসা, এমন স্নেহভরা আদর কে কাকে দেয়। উদ্ভিদগুলো ভুলে যেতে থাকে বিষাদের ছন্দ, অনুভবে হলদে মেয়েটির পরশ। সেই পরশ পাবার খানিকটা আকাঙ্ক্ষা জাগতে পারে বনভূমির; তাদের গায়ে পরশ বুলানোর কেউ তো নেই, কে জানত- এমন ইট-কংক্রিটের বদ্ধ ঘরে মাটির মানুষ লুকিয়ে আছে। আমি দেখেছি তারে, এখন আমার দৃষ্টিজুড়ে সেই মায়াবী পরশ খেলে যাচ্ছে এক তরঙ্গময় আকুলতা নিয়ে। বনভূমি জেনে গেলে মেয়েটিকে আগলে রাখত, তাদের বুক জুড়ে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ত এমন জোছনাহীন মেঘভরা রাতে। মেঘ এসে কখন যে দরজায় কড়া নাড়ছে টের পাই নি। বিজলির চমক, হিমেল হাওয়া, ল্যাম্পপোস্টের আবছা আলো মনে করিয়ে দিল- আমি এই মেঘ ভরা আকাশের চাইতে হলদে আলোকেই আপন করে ফেলেছি; ভুলে গেছি কখন কোন কোণে মেঘ এসে আমাকে ঘুম ভাঙ্গালো। আমি তো ঘুমিয়ে নেই, আমি সেই মায়াবী রাতের অলৌকিক আলোর দিকে তাকিয়ে ভেবে ভেবে অস্থির- সে হারিয়ে যাবে না তো, আবার দেখতে পাবো তো। আবার আসবে তো সকাল, আবার আসবে তো হলুদ মেয়েটি। আমার অপেক্ষা শেষ হতে চায় না। আমার কানে বৃষ্টির ছন্দকে আজ স্বাভাবিক শব্দ মনে হয়। আমি তো এমন নই; আমি তো সারা প্রকৃতি জুড়ে ছন্দ খুঁজে ফিরি। আজ আমার কোনো ছন্দ নেই, আমি আজ ছন্দহীন। আমি যে সীমাহীন রহস্যময় এক কবিতার ভেতর, এখানে কেমন করে ছন্দ খুঁজতে হয় আমি তো তা জানি না; আমি একেবারেই হারিয়ে যাওয়া এক দুরন্ত হাওয়া। আমার বাধা নেই, তবু আমি ধাক্কা খাই অবিরাম।
টুপ টুপ টুপ। টুপুর টুপুর টুপুর। ছন্দে ছন্দে বৃষ্টি। মাঝে মাঝে বজ্রপাতের রাগিণী। ঘোর অন্ধকার চারিদিক। আলো নেই, প্রাণ নেই, কথা নেই। সবার মনে বৃষ্টির অনুভব। আমি বৃত্তের বাইরে। কেউ আমার নয়। কোনো আলো এসে বলছে না, এই যে তোমার হলুদ পাখি। আমার চোখে বারান্দার সবুজ আর হলুদটাই লেগে আছে, আর কিছু নয়। বৃষ্টি হলো সারারাত। কয়েক যুগ ধরে। কত যুগ ধরে অপেক্ষা করে আছি বৃষ্টি থামার। বৃষ্টি থামলে পরে ব্যাঙ আর রাতের নিঝুম নীরবতা আমার হৃদয় মন বিদীর্ন করে ফেলল। আলো আসল না। আমি পৃথিবীর কেউ নই। আমার কথা কেউ শুনল না। সে কী শুনল।
আমি কারও উপস্থিতি টের পাচ্ছি। বারান্দার গ্রিলে চুড়িগুলো বেজে উঠল। আমি দেখলাম সেই অপার্থিব দৃশ্যকে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় যাকে দেখতে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি প্রাণ, প্রাণের টানে সে যে এল শুধু তা নয়, চুড়ির শব্দে আমার নির্ঘুম রাতের প্রতিটি ক্ষণ মায়াবী রাত করে তুলল সে। আমার বারান্দায় আমি, ও বারান্দায় সে।
হারিয়ে যেতে যেতে ফিরে পেলাম, আবার হারিয়ে যাওয়া
বার বার হারিয়ে যাওয়ার দিনগুলো মোর, কতবার কতযুগের
আলো-আঁধার, মেঘের কণা, তারপর, বৃষ্টি হাওয়া
মিলেমিশে একাকার, সব গন্ধ, স্নিগ্ধ নির্মল বুকের ভেতর
বাজতে থাকে, বিরতি ছাড়া, ছন্নছাড়া, বার বার, সব এক সরলরেখার।
বার বার হারিয়ে যাওয়ার দিনগুলো মোর, কতবার কতযুগের
আলো-আঁধার, মেঘের কণা, তারপর, বৃষ্টি হাওয়া
মিলেমিশে একাকার, সব গন্ধ, স্নিগ্ধ নির্মল বুকের ভেতর
বাজতে থাকে, বিরতি ছাড়া, ছন্নছাড়া, বার বার, সব এক সরলরেখার।
হয়তো শেষ নয়, তবুও
রাত কেটে যাবে, তখন আমায় ভালো করে দেখো, এখন এভাবে দেখতে পাবে না আমায়। কেন পাবো না দেখতে। বাঃরে, আমি যে সবুজ ভালোবাসি, ভালোবাসি রোদ। আহা, তুমি রোদকে ভালোবাসো, তাইতো তুমি রোদ। আমি কি রোদের মতো। তা নয়তো কী! সাঁঝ বেলা থেকে তোমার অপেক্ষায়। অপেক্ষা করেছ তাইতো এলাম, তবুও বুঝি অভিমান। না, না, আর অভিমান নয়। যাবে, যেখানে সবুজ। সবুজ, কোথায় সবুজ। যাবে কিনা বলো? একদম যাবো। বের হবে কেমন করে! আমি পারব, তুমি? আমার তো সহজ, এই বেরুলাম।
বাইরে হাড়ে হিম ধরা ঠান্ডা আর নীরবতা। দুটো বারান্দা এখন শূণ্য, বারান্দার প্রেম বাইরে বেরুলো মাত্র। আমরা হাঁটতে শুরু করলাম, শব্দহীন, অস্তিত্বহীন। অস্তিত্বের লেশ মাত্র অনুভব হয় নি সেদিন। আলো নেই, জোছনা নেই। শুধু এক জোড়া প্রাণ, ঘুরে ঘুরে যাচ্ছে অনেক দূর, অনেক দূর। তাদেরকে কেউ চিনতে পারে নি। ঈশ্বর কী এমন করে হেঁটে নীরবে সবুজের ছোঁয়া পেতে চলে যায় অনেক দূরে। হয়তো তাই। হয়তো!
বাইরে হাড়ে হিম ধরা ঠান্ডা আর নীরবতা। দুটো বারান্দা এখন শূণ্য, বারান্দার প্রেম বাইরে বেরুলো মাত্র। আমরা হাঁটতে শুরু করলাম, শব্দহীন, অস্তিত্বহীন। অস্তিত্বের লেশ মাত্র অনুভব হয় নি সেদিন। আলো নেই, জোছনা নেই। শুধু এক জোড়া প্রাণ, ঘুরে ঘুরে যাচ্ছে অনেক দূর, অনেক দূর। তাদেরকে কেউ চিনতে পারে নি। ঈশ্বর কী এমন করে হেঁটে নীরবে সবুজের ছোঁয়া পেতে চলে যায় অনেক দূরে। হয়তো তাই। হয়তো!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আলম সারওয়ার ১৭/০৫/২০১৭অসাধারণ গল্প ।শুভেচ্ছা
-
মুহাম্মাদ রাসেল উদ্দীন ১৫/০৫/২০১৭ভালো লেখনী