www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

যখন যেখানে যেমন (মধ্যাহ্ন পর্ব)

কলেজে উঠে বেশ ডাগর হয়ে গেছিস ছোটন- এই বাক্য কে বলল, কয়জন বলল এই হিসেবটা আমার চেয়ে মা-ই ভালো জানবে। আমাকে এখানে দেখেছে, ঐখানে দেখেছে; এই শোনাতে শোনাতে আমার বাসা অস্থির। আমি চিন্তা করেছি, আমি পালাবো, আমি অনেক দূরে গা ঢাকা দেব, তোরা সাথে থাকলে থাক,আর না থাকলে নাই। রতনের মুখ চুপসে গেছে, পবন বেশ মজা পাচ্ছে, আর কমলের চোখে আরও কিছু শোনার প্রবল ইচ্ছা। আমি তিনজনকেই বললাম, দেখ, এভাবে থাকা যায় না, তোরা ভালো করে চিন্তা করে দেখ। তোরা নিজেরাও তো এমন সমস্যা পার হয়ে আসছিস, এখনও সহ্য করে যাচ্ছিস, তোরাই বল, এটা কি সহ্য করার মতো ? কমল বেশ জোর গলায় বলল, এটা সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে, আমি কোথায়, কখন, কী কী করব; সবরকম হিসেব নাকি দিতে হবে, এটা কি অন্যায় নয় ? পবনকে আড়চোখে দেখে যাচ্ছি, সে দেখছি মুচকি মুচকি হাসছে, এটা কেউ না ধরতে পারলেও আমি ঠিকই ধরে ফেলেছি। আমি কমলের দিকে চোখ ফিরিয়ে ধমক দিলাম, এই, তুই থামবি, তোর ব্যাটা একবিন্দু সাহস নেই, তুই আসছস পালানোর জন্য, তুই যে অভিনয় করে মজা পাচ্ছিস আমি কি সেটা বুঝতে পারছি না, যা ভাগ, যা বলছি। সবকিছু একমুহূর্তে নিশ্চুপ; এক মধ্যরাতের বটগাছের ছায়া হয়ে গেল, আমি লক্ষ্য করলাম- কমল খুব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়েছে, আমার উপর বেশ চটে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে, প্রিয় বন্ধুর এহেন আচরণে যে কেউ কষ্ট পাবে এ আমি বুঝতে পারছি। তবে আসল ব্যাপারটা বের হয়ে এল পবনের দিকে তাকাতেই, এটাই আমি চেয়েছিলাম যার জন্য কৃত্তিম ধমকটা দিতে হলো কমলকে। ঠোঁটের মাঝে লুকিয়ে রাখা পবনের মিচকে হাসিটা মিলিয়ে গেছে তো গেছেই, দেখে মনে হচ্ছে চোর ধরা পড়েছে। অন্যদিকে রতনের অবস্থা আরও শোচনীয়, ভীতুটা যেন ভয় পেয়ে আরও কাবু হয়ে গেছে। এই হলো আমার বন্ধুদের অবস্থা। আমরা একসাথে থেকেও বুঝতে পারি না, কে কেমন, কে কী চায়, কার ভেতরে কী আছে, কে ঠকিয়ে যায়, কে ঠকাতে চায়। অনেক সময় বুঝতে পেরেও তফাৎ হওয়ার উপায় থাকে না, এটাই জগতের নিয়ম, কে পারে সব নিয়ম ভেঙ্গে দিয়ে জয়ের মালা গলায় দিতে!

সেই পুরোনো আমলের ঘাটবাঁধা পুকুরটার কথা আমার এখনও মনে পড়ে, সেই পুকুরের হাওয়া আর জলের শব্দ আমাকে এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়। আমি কান পেতে, শঙ্খে কান দিয়ে, সেই নিবিড় শব্দটাই শুনতে চাই, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে, কোথায় যেন চলে গেছে সবকিছু। এই পাড়াটা একেবারেই অন্যরকম, হয়তো বা এটাই এখনকার আধুনিকতা। এখানে খুব ছোট ছোট ছেলে- মেয়ে কী যেন খেলে আমি বুঝতে পারি না, সেটাও সময়ের ফ্রেমে বেঁধে দেওয়া হয় কোনো এক অদৃশ্য কৃত্তিম আদেশে; মা-বাবা না এলেও তারা নিজেরাই চলে যায় সূর্য যখন ডুবতে শুরু করে।

স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ জীবন শুরু হতেই কে যেন বলে উঠে, মেয়েদের দিকে তাকালে কেমন অনুভূতি হয় রে ? আমি সেই অনুভূতি চোখ থেকে কানে, তারপর আরও বিস্তৃতভাবে অনুভব করতে শুরু করি। আমি একটু স্বাধীনতা চাই, আমি একটু মুক্তি চাই, আমি দৌড়াতে চাই, অনেকেদূর, অনেক অনেক দূর......
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৭৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৩/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast