যখন যেখানে যেমন ( সূচনা পর্ব )
পাড়ায় যখন খেলা হতো তখন কে যেন বলত-খেলিস না ছোটন । আমি তবুও খেলতে যেতাম, কখনও ফুটবল, কখনও কানামাছি, আবার কখনও ব্যাডমিন্টন; তখন র্যাকেট হাতে উড়িয়ে দিতাম পাখির পালক। বেশিরভাগ সময় যে খেলাটা আমি ভালোবাসতাম সেটা শুধুই ব্যাট-বলের চার-ছক্কা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। আমাকে প্রথম প্রথম দুধ-ভাত হিসেবে রেখে দিত তারা, আমি শান্ত স্বভাবের ছেলে; উচ্চবাচ্য কখনই করা হত না আমার পক্ষে। যে ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং-এর অপেক্ষায় শেষ অবধি বাউন্ডারির কাছে মুখ গোমড়া করে বসে থাকত, আমি তাদেরকে সঙ্গ দিতাম; কেউ কেউ দলের অধিনায়ক ভাইয়ার সঙ্গে খাতির জমাতো, কেউ কেউ বলত-একে নামানোটা ঠিক হয় নি, আবার কেউ কেউ এটাও বলত- ও আউট হয়ে গেলেই ভালো। চার-ছক্কা হলে আমি সবার সাথে জোরে জোরে হাততালি দিয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম যারা তাদেরকে খুব উৎসাহ দিয়ে জোর গলায় চিৎকার করত, ঠিক পরক্ষণেই তাদের নিন্দা করত যেটা খুব সরু গলার, এটা সবাই শুনতে পেত না, আমি তো দুধ-ভাত, হয়তো তাই আমার কাছে ধৃত হওয়ার ভয় ছিল না। আমার কাছে একটা জিনিস অবাক লাগত, যে কিনা ওপেনিং ব্যাটসম্যান হয়ে খেলত, সেই আবার ওপেনিং বোলার হয়ে যেত, সবাই তাদের এত বাহবা দিত, এতে আমিও খানিকটা হাসির খোরাক খুঁজে পেতাম। আমি যে দলে খেলতাম সেই দল প্রায়ই হেরে যেত, সেটা কোনো এক দৈব নির্দেশে, তা না হলে ব্যাটিং কিংবা বোলিং অর্ডারে পরিবর্তন না এনে উপায় ছিল না। তবে মাঝে মধ্যে আমাদের দলও জিতে যেত, সেটাও কোনও এক দৈব প্রতিভায়, মুখ গোমড়া ছেলেগুলো জিতিয়ে দিতে পারে এটা খুব একটা প্রকাশ পেত না। তবু কিছু কিছু আলো তাদের উপর এসে পড়ত, কেন পড়ত, সেটা হয়ত সে জানে, সে সেটা দমিয়ে রেখে একদিন হঠাৎ খেলা ছেড়ে অন্যদিকে মন বসিয়ে চলে যেত আড়ালে আবডালে। ওপেনিং কিংবা খেলার কর্তৃত্ব আগের মতোই চলতে থাকত, নতুন নতুন দুধ-ভাত এসে জুটে যেত যার কারণে খেলার গতি বন্ধ হতো না, তবে দুধ-ভাত খেলোয়াড়গুলো একটার পর একটা হারিয়ে গিয়ে নতুনদের জায়গা করে দিত, আর অন্যদের জায়গা সেই বহাল তবিয়তে থেকে যেত। আমাকেও একদিন খেলা ছেড়ে দিতে হলো, মা একদিন আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে বলল, ছোটন, আমরা একটি নতুন বাসা পেয়েছি রে, ভাড়া একটু বেশি, তবে জায়গাটা বেশ। এখানে থেকে থেকে তোর শরীর খারাপ হয়ে যাচ্ছে, পড়াশুনাও হচ্ছে না ভালো।
আমি বুঝে গেলাম, এভাবে মাঠে থেকে শেষ ব্যাটসম্যানকে সঙ্গ দিতে দিতে আমার জন্য এই ভবিষ্যতটাই তৈরি হয়ে গেছে। মা-বাবা আমার পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন যার মুক্তি হয়তো এভাবেই খুঁজলেন।
এই পাড়াটা ছিল একটা পুরোনো আমলের পুকুরের কাছে, সেই পুকুরে আমি অনেকবার স্নান করতে গিয়েছি, আমার দাদু যখন গ্রাম থেকে আসত, আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে সাঁতার শেখাতে নিয়ে যেতেন সেখানে। জলের প্রতি মনের টান সেটা সেই আদ্যিকাল থেকেই চলে আসছে, আমারও খুব মায়া হতো, আমি সাহস করে একা একাই চলে আসতাম এই পুকুরটাকে দেখতে, একটা নিবিড় আন্তরিক স্নেহ আমাকে জড়িয়ে ধরত এটার হাওয়া আর জলের শব্দে। যেদিন চলে আসছি, সেদিন আমার হাতে একটি ছোট্ট চিঠি ছিল, সেই চিঠিটা এই জলের ঢেউয়ে ভাসিয়ে দিয়ে যখন নতুন বাসায় ঢুকছি তখন ভেতর থেকে একটা অচেনা ব্যথার অনুভূতি আমাকে বিহ্বল করে রাখল যা আমাকে দু-তিন দিন কিছু না খেতে পারার পীড়া দিয়েছে......
আমি বুঝে গেলাম, এভাবে মাঠে থেকে শেষ ব্যাটসম্যানকে সঙ্গ দিতে দিতে আমার জন্য এই ভবিষ্যতটাই তৈরি হয়ে গেছে। মা-বাবা আমার পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন যার মুক্তি হয়তো এভাবেই খুঁজলেন।
এই পাড়াটা ছিল একটা পুরোনো আমলের পুকুরের কাছে, সেই পুকুরে আমি অনেকবার স্নান করতে গিয়েছি, আমার দাদু যখন গ্রাম থেকে আসত, আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে সাঁতার শেখাতে নিয়ে যেতেন সেখানে। জলের প্রতি মনের টান সেটা সেই আদ্যিকাল থেকেই চলে আসছে, আমারও খুব মায়া হতো, আমি সাহস করে একা একাই চলে আসতাম এই পুকুরটাকে দেখতে, একটা নিবিড় আন্তরিক স্নেহ আমাকে জড়িয়ে ধরত এটার হাওয়া আর জলের শব্দে। যেদিন চলে আসছি, সেদিন আমার হাতে একটি ছোট্ট চিঠি ছিল, সেই চিঠিটা এই জলের ঢেউয়ে ভাসিয়ে দিয়ে যখন নতুন বাসায় ঢুকছি তখন ভেতর থেকে একটা অচেনা ব্যথার অনুভূতি আমাকে বিহ্বল করে রাখল যা আমাকে দু-তিন দিন কিছু না খেতে পারার পীড়া দিয়েছে......
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অ ২৭/০৩/২০১৫বেশ ভালো ।।
-
সবুজ আহমেদ কক্স ২৭/০৩/২০১৫গল্প টা ভালো