জংলি
তখনও সকালের সূর্য ওঠেনি,বাতাসে একটা মিষ্টি গন্ধ ।স্টেশনের কিছু চায়ের দোকানে উননে দিনের প্রথম ধুঁয়া উড়ছে।পাখি গুলো সকালেই তাদের সভা বসিয়েছে।প্রত্যেকেই যেন প্রচণ্ড প্রানবন্ত।কেউ মধুর সংলাপ কেউ বা ক্ষোভ প্রকাশ করছে একে অপরের প্রতি ।কোথায় যেন একটি বৃহৎ পরিবার ,একটা আত্মার সম্পর্কে আবদ্ধ ওরা ।
একটা নতুন দিনের শুরু ।এখন আধুনিকতার ছোয়ায় আমাদের জীবনটা অলসতায় ভরা দেখতে দৃষ্টিনন্দন একটা ধরা বাঁধা খাচায় পরিনত হয়েছে ।ভোরের সূর্য যে কতদিন দেখিনি ! সকাল ৭:৩০ এ উঠে এক কাপ চা সঙ্গে একটুকরো খবরের কাগজ ।তার পর ৮:৩০ এ ঝোলা নিয়ে বাজার ।রাস্তায় কিছু নতুন পুরনো মানুষের সম্ভাষণ সংলাপ -মাস্টার মশাই ভালো আছেন ?
-ভালো ,আপনি ভালো তো ?
পিতার সমতূল্য মানুষ গুলোও মাঝে মাঝে দাদা বলে সম্বধণ করে ।খুব বিরক্ত সঙ্গে অবাক লাগে,জানি না আজ কোন রিস্কো চালক কিমবা সবজি ওয়ালা হলে একই রকম আচরন করতো কি না ! তারপর বাজার পর্ব শেষ করে বাড়ি।স্নান খাওয়া দাওয়া করে স্কুলের দিকে রওনা হওয়া ,বিকেলে ফিরে সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় আসর।এই হল সুন্দর খাচার জীবনযাত্রা।তাই আজ সমস্ত বাঁধন ছেড়ে বিদ্রহ ঘোষনা ।গন্তব্য কলেজ জীবনের বন্ধু তন্ময়ের বাড়ি অর্থাৎ কল্যাণী ।তন্ময় ও স্কুলের শিক্ষক ।কল্যাণীতে চাকরি করে।
ওর বিয়ে ,গৃহপ্রবেশ কোনটাতেই যাওয়া হয়নি ।আর এত দিন পর অন্নপ্রাশনের একটা কার্ড ,ওর মেয়ের মুখেভাত ।তাই এবার আর সুযোগ হাতছাড়া করলাম না।
স্টেশনে বসে আছি এমন সময় ট্রেনের ঘোষণা হলো _ডাউন লালগোলা শিয়ালদহ ভাগীরথি এক্সপ্রেস ৪০মিনিট দেরিতে আসছে ।আরও কিছুক্ষণ বসতে হবে,তাই চায়ের দোকানে একটা চা বললাম ।গরম চা মুখে দিতে যাবো এমন সময় একটা বোম ফাটার ন্যায় বিকট আওয়াজ এ চমকে গেলাম।দোকানের সামনেই ইলেকট্রিক পোলে খেলা করছিলো একটা হনুমানের বাচ্চা।ইলেকট্রিকের সক লেগেরাস্তায় ছিটকে পরেছে বাচ্চাটি।কিছুক্ষণ ছটপট করে তার পর কেমন যেন নিস্তেজ হয়েগেল বাচ্চাটা।সকালের মুগ্ধতা কোথায় যেন বিষাদে পরিনত হলো ।তারপর যা দেখলাম তা মনটাকে আরও চঞ্চল ,আবেগতারিত করে দিলো। মূহুর্তের মধ্যে জনা বিশেক হনুমান তারস্বরে চিৎকার করে দোকান ,গাছপালা নারিয়ে গোল হয়ে ঘিরে ফেললো বাচ্চাটাকে।ওদের মধ্যে কেউ বাচ্চার পা ধরে টানতে লাগলো ,কেউ বুকে হাত বোলাতে লাগলো।একজন বাচ্চাটার মুখের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে অপ্রান চেষ্টা করতে লাগলো তার নিজের সমস্ত প্রান বায়ু দিয়ে যেন বাচ্চাটাকে বাচানো যায়।বাকিরা তখন বাচ্চাটাকে গোলকরে ঘিরে রয়েছে যাতে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।দু একজন ওদের কায্যকলাপ দেখতে লাগলো।তার পর যে যার গন্তব্যে রওনা হলো ।পাশ থেকে একটা অচেনা কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো আমার দিকে।
-দেখুন একদম মানুষের মতন ।তাই না ?
-মানুষের মতন ! হ্যাঁ তা বটে।কিন্তু কি জানেন হনুমান মরলে হনুমানই এগিয়ে আসে তাইনা বলুন ?
-একটু সহাস্য মুখে অচেনা মুখটি বললে তা বটে,তা বটে।তাছাড়া কারো হাতে অতো সময় কোথায় ।
-হ্যা সেই ঠিকই বলেছেন।
-এতো সামান্য পশু ,রাস্তায় কোন মানুষের দূঃঘটনা ঘটে গেলে তাই কেউ..........।
কেন এইতো সেদিনের ঘটনা ,রেল লাইনে কাজ করতে গিয়ে অসাবধানতা বশত ট্রেনে একটা হাত কাটা গিয়েছিল এক গ্যাংম্যানের।কয়েক ঘন্টা ওখানে পরে দাপাদাপি করেছে,কেউ এগিয়ে আসেনি ।এমনকি ওর সহকর্মিরাও না ।তারপর নিজেই নিজের কাটা হাত নিয়ে হাজির হয়েছে হসপাতালে।
-বলেন কি কেউ আসেনি ! নিজেই নিজের কাটা হাত নিয়ে গিয়েছে ?
-আসবেই বা কেন বলুন তো ।অত বড় একটা ট্রেন এসে হাত কেটে চলে গেল ,কিচ্ছুটি বুঝতে পারলো না ।ব্যাটা নির্ঘাত মাল খেয়েছিল ।
আর মানুষ কি আর জংলী হনুমানের মতো বোকা নাকি ? যে তার সমস্ত কাজকর্ম ভুলে তাকে ঘিরে ধরবে।কেউ হাত পা ধরে টানাটানি করবে !হাসপাতালে নিয়ে যাবে ।তাছাড়া আইনের হ্যাপা যানেন না তো ! কে হয় !নিজের তো কেউ নয় ।মানুষ কি আর হনুমান নাকি ,অনেক বেশি উন্নতবুদ্ধীসম্পন্ন ,অনেক বেশি প্রাক্টিকাল।আর রাস্তায় চলতে গেলেহামেসাই এমন ঘটনা ঘটবে,তাতে থামলে চলবে।
-তা যা বলেছেন ।
-তারপর এই তো কয়েক দিন আগে কোলকাতার ফুটপাতের ঘটনা শুনেন নি ?
-কোন ঘটনা টা বলুন তো ?
-আরে ফুটপাতবাসি ওই যে ১২ বছরের মেয়েটাকে দিনের আলোয় কিছু ট্যাক্সি ডাইভার গনধর্ষন করে মেরে ফেললো।
-হ্যা খবরের কাগজে দেখলাম।খুব মর্মান্তিক।
-ফুটপাতের মেয়ে কি কখনো ভালো হয় গো ?নিশ্চই ও মেয়ের চরিত্রের দোষ আছে দেখুন গে ।
ওদের যা কালচার ! তাতে এমন ঘটনা ঘটবেই।কই আমার আপনার মতো সভ্য ফ্যামেলিতে কি এমন ঘটনা কখনও ঘটতে শুনেছেন ?
-তা বটে।
-আর যদি ঘটেও যায় ,তখন আমি আপনি কি করতে পারবো বলুন তো ?
-কে বললো পারবো না ! সন্ধ্যায় বুদ্ধিজীবিদের সঙ্গে মোমবাতি নিয়ে পায়ে পা মেলাব ।তাছাড়া আমিতো শিক্ষক,আমি ওই দলেই পরি।রাতের টিভিতে ব্রেকিং নিউজ হবে।সকালে স্কুলের পথে কিছু মানুষ বলবে মাস্টার মশাই গতকাল আপনাকে টিভিতে দেখলাম ।টিফিনে স্টাফ রুমে এই নিয়ে কিছু গুরুগম্ভির আলোচনা হবে।সকলে সকলের সাথে সুরে সুর মেলাবে "আমাদের সমাজটা যাচ্ছে কোথায় বলুন তো..!!"
একটা নতুন দিনের শুরু ।এখন আধুনিকতার ছোয়ায় আমাদের জীবনটা অলসতায় ভরা দেখতে দৃষ্টিনন্দন একটা ধরা বাঁধা খাচায় পরিনত হয়েছে ।ভোরের সূর্য যে কতদিন দেখিনি ! সকাল ৭:৩০ এ উঠে এক কাপ চা সঙ্গে একটুকরো খবরের কাগজ ।তার পর ৮:৩০ এ ঝোলা নিয়ে বাজার ।রাস্তায় কিছু নতুন পুরনো মানুষের সম্ভাষণ সংলাপ -মাস্টার মশাই ভালো আছেন ?
-ভালো ,আপনি ভালো তো ?
পিতার সমতূল্য মানুষ গুলোও মাঝে মাঝে দাদা বলে সম্বধণ করে ।খুব বিরক্ত সঙ্গে অবাক লাগে,জানি না আজ কোন রিস্কো চালক কিমবা সবজি ওয়ালা হলে একই রকম আচরন করতো কি না ! তারপর বাজার পর্ব শেষ করে বাড়ি।স্নান খাওয়া দাওয়া করে স্কুলের দিকে রওনা হওয়া ,বিকেলে ফিরে সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায় আসর।এই হল সুন্দর খাচার জীবনযাত্রা।তাই আজ সমস্ত বাঁধন ছেড়ে বিদ্রহ ঘোষনা ।গন্তব্য কলেজ জীবনের বন্ধু তন্ময়ের বাড়ি অর্থাৎ কল্যাণী ।তন্ময় ও স্কুলের শিক্ষক ।কল্যাণীতে চাকরি করে।
ওর বিয়ে ,গৃহপ্রবেশ কোনটাতেই যাওয়া হয়নি ।আর এত দিন পর অন্নপ্রাশনের একটা কার্ড ,ওর মেয়ের মুখেভাত ।তাই এবার আর সুযোগ হাতছাড়া করলাম না।
স্টেশনে বসে আছি এমন সময় ট্রেনের ঘোষণা হলো _ডাউন লালগোলা শিয়ালদহ ভাগীরথি এক্সপ্রেস ৪০মিনিট দেরিতে আসছে ।আরও কিছুক্ষণ বসতে হবে,তাই চায়ের দোকানে একটা চা বললাম ।গরম চা মুখে দিতে যাবো এমন সময় একটা বোম ফাটার ন্যায় বিকট আওয়াজ এ চমকে গেলাম।দোকানের সামনেই ইলেকট্রিক পোলে খেলা করছিলো একটা হনুমানের বাচ্চা।ইলেকট্রিকের সক লেগেরাস্তায় ছিটকে পরেছে বাচ্চাটি।কিছুক্ষণ ছটপট করে তার পর কেমন যেন নিস্তেজ হয়েগেল বাচ্চাটা।সকালের মুগ্ধতা কোথায় যেন বিষাদে পরিনত হলো ।তারপর যা দেখলাম তা মনটাকে আরও চঞ্চল ,আবেগতারিত করে দিলো। মূহুর্তের মধ্যে জনা বিশেক হনুমান তারস্বরে চিৎকার করে দোকান ,গাছপালা নারিয়ে গোল হয়ে ঘিরে ফেললো বাচ্চাটাকে।ওদের মধ্যে কেউ বাচ্চার পা ধরে টানতে লাগলো ,কেউ বুকে হাত বোলাতে লাগলো।একজন বাচ্চাটার মুখের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে অপ্রান চেষ্টা করতে লাগলো তার নিজের সমস্ত প্রান বায়ু দিয়ে যেন বাচ্চাটাকে বাচানো যায়।বাকিরা তখন বাচ্চাটাকে গোলকরে ঘিরে রয়েছে যাতে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে।দু একজন ওদের কায্যকলাপ দেখতে লাগলো।তার পর যে যার গন্তব্যে রওনা হলো ।পাশ থেকে একটা অচেনা কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো আমার দিকে।
-দেখুন একদম মানুষের মতন ।তাই না ?
-মানুষের মতন ! হ্যাঁ তা বটে।কিন্তু কি জানেন হনুমান মরলে হনুমানই এগিয়ে আসে তাইনা বলুন ?
-একটু সহাস্য মুখে অচেনা মুখটি বললে তা বটে,তা বটে।তাছাড়া কারো হাতে অতো সময় কোথায় ।
-হ্যা সেই ঠিকই বলেছেন।
-এতো সামান্য পশু ,রাস্তায় কোন মানুষের দূঃঘটনা ঘটে গেলে তাই কেউ..........।
কেন এইতো সেদিনের ঘটনা ,রেল লাইনে কাজ করতে গিয়ে অসাবধানতা বশত ট্রেনে একটা হাত কাটা গিয়েছিল এক গ্যাংম্যানের।কয়েক ঘন্টা ওখানে পরে দাপাদাপি করেছে,কেউ এগিয়ে আসেনি ।এমনকি ওর সহকর্মিরাও না ।তারপর নিজেই নিজের কাটা হাত নিয়ে হাজির হয়েছে হসপাতালে।
-বলেন কি কেউ আসেনি ! নিজেই নিজের কাটা হাত নিয়ে গিয়েছে ?
-আসবেই বা কেন বলুন তো ।অত বড় একটা ট্রেন এসে হাত কেটে চলে গেল ,কিচ্ছুটি বুঝতে পারলো না ।ব্যাটা নির্ঘাত মাল খেয়েছিল ।
আর মানুষ কি আর জংলী হনুমানের মতো বোকা নাকি ? যে তার সমস্ত কাজকর্ম ভুলে তাকে ঘিরে ধরবে।কেউ হাত পা ধরে টানাটানি করবে !হাসপাতালে নিয়ে যাবে ।তাছাড়া আইনের হ্যাপা যানেন না তো ! কে হয় !নিজের তো কেউ নয় ।মানুষ কি আর হনুমান নাকি ,অনেক বেশি উন্নতবুদ্ধীসম্পন্ন ,অনেক বেশি প্রাক্টিকাল।আর রাস্তায় চলতে গেলেহামেসাই এমন ঘটনা ঘটবে,তাতে থামলে চলবে।
-তা যা বলেছেন ।
-তারপর এই তো কয়েক দিন আগে কোলকাতার ফুটপাতের ঘটনা শুনেন নি ?
-কোন ঘটনা টা বলুন তো ?
-আরে ফুটপাতবাসি ওই যে ১২ বছরের মেয়েটাকে দিনের আলোয় কিছু ট্যাক্সি ডাইভার গনধর্ষন করে মেরে ফেললো।
-হ্যা খবরের কাগজে দেখলাম।খুব মর্মান্তিক।
-ফুটপাতের মেয়ে কি কখনো ভালো হয় গো ?নিশ্চই ও মেয়ের চরিত্রের দোষ আছে দেখুন গে ।
ওদের যা কালচার ! তাতে এমন ঘটনা ঘটবেই।কই আমার আপনার মতো সভ্য ফ্যামেলিতে কি এমন ঘটনা কখনও ঘটতে শুনেছেন ?
-তা বটে।
-আর যদি ঘটেও যায় ,তখন আমি আপনি কি করতে পারবো বলুন তো ?
-কে বললো পারবো না ! সন্ধ্যায় বুদ্ধিজীবিদের সঙ্গে মোমবাতি নিয়ে পায়ে পা মেলাব ।তাছাড়া আমিতো শিক্ষক,আমি ওই দলেই পরি।রাতের টিভিতে ব্রেকিং নিউজ হবে।সকালে স্কুলের পথে কিছু মানুষ বলবে মাস্টার মশাই গতকাল আপনাকে টিভিতে দেখলাম ।টিফিনে স্টাফ রুমে এই নিয়ে কিছু গুরুগম্ভির আলোচনা হবে।সকলে সকলের সাথে সুরে সুর মেলাবে "আমাদের সমাজটা যাচ্ছে কোথায় বলুন তো..!!"
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
০।।০ ১৯/০৪/২০১৭
-
জয় নারায়ণ ভট্টাচার্য্য ২৮/০২/২০১৭গল্পের ধারাবায়িকতায় মুগ্ধ।
-
সুরজিৎ দাস ২৫/০২/২০১৭ধন্যবাদ
-
ডঃ সুজিতকুমার বিশ্বাস ২৪/০২/২০১৭সুন্দর। শুভেচ্ছা।
-
জয়শ্রী রায় মৈত্র ২১/০২/২০১৭খুব ভালো লিখেছেন ।
-
মোনালিসা ২১/০২/২০১৭বেশ হয়েছে
-
সুরজিৎ দাস ২০/০২/২০১৭হ্যা আমাদের সমাজজীবনের এক কঠিন সত্য | ধন্যবাদ সকলকে আপনাদের মন্তব্য ,আমায় নতুন করে ভাবতে সাহস জোগাবে |ধন্যবাদ
-
পরশ ১৯/০২/২০১৭অসাধারন
-
দ্বীপ সরকার ১৯/০২/২০১৭ভালো লিখেছেন।
-
জয়শ্রী রায় মৈত্র ১৮/০২/২০১৭গল্প কিন্তু বাস্তব । বাস্তব অথচ গল্প । সুন্দর । শুভেচ্ছা রইল ।
সুস্থ থাকুন সর্বদা ।। শুভ কামনা নিরন্তর...