উপায় নেই তাই মাফ করে দিয়েছি
৭বছর বয়স থেকে আপুরা যে মেয়েটিকে ১১ বছর লালন পালন করে পড়ালেন সেই রুবির বিয়ে উপলক্ষে আপুর সাথে গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ যাচ্ছি।
সোনার বাংলা পরিবহন।
আমাদের সিট পড়লো B2-B3
১০ মিনিটের মধ্যে যাত্রী ভরে গেলো মাত্র ২টো সিংগেল সিট খালি ১জন করে বসা যাবে,
এমন সময় একটা মেয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে প্রায় ছুটে এসে বাসে উঠতেই বাস ছেড়ে দিলো।
আমি হেডফোন গুঁজে গান শুনছি দেশের গান সাথে চলছে স্ট্রেট ফাইট গেম,
আপু আমার কাঁধে হেলান দিয়ে ঝিমুচ্ছে;
মাথা উচু করে মেয়েটিকে দেখে নিলাম একবার তখনও দাড়িয়ে গম্ভীর মুখে কন্ট্রাকটারের সাথে কি যেন বলছে, কানে হেডফোন তাই গানেই শুনছি তার কথা নয় কেবল ঠোঁট নড়ছে এটা বুঝতেছি।
অপূর্ব সুন্দরী!
উচ্চতা আমার থেকে চার ইঞ্চি কম হবে,
অর্থ্যৎ ৫ ফিট ২ ইঞ্চি;
গোল গাল মুখ নাকটা একটু থেবড়া একটা নাক চাবি ঝুলছে দুই কানে রিং।
ফর্সা চেহারায় সস্তা সাঁজগোজ বড় জোর মুখে ফেয়ার এন্ড লাভলী ঘষেছে,
ব্লু রংয়ের জামা স্যালোয়ারের সাথে হলুদ ওড়নায় মাথা পিঠ ঢাকার পরেও বেনী করা চুলের আগায় জড়ানো রাবার দেখা যাচ্ছে সন্দেহ নেই চুল অনেক লম্বা।
মুগ্ধ হয়ে মনে মনে উচ্চারন করলাম নাইস।
মেয়েটি আশে-পাশের সীট গুলো দেখেছে সম্ভবত বসার সুবিধা খুঁজছে,
এবার গাঞ্জাখোর টাইপের কন্ট্রাকটর এগিয়ে এলো আমাদের দিকে;
আমাকে উদ্দশ্যে করে ফ্যাস ফ্যাসে গলায় কন্ট্রাকটর বললো, ‘ভাইজান আপনে যদি পাশের সীটে বইতেন আপারে এইহানে বসাইতাম’
দুই আপায় একলগে বইতো সমস্যা নাই ঐডাও ভালো সীট’
সীট ভালো আমিও জানি একজন মধ্য বয়স্ক পুরুষের পাশে মেয়েটির বসতে প্রবলেম থাকলেও আমার মত তরুনের বসতে কোনো প্রবলেম নেই,
কথা হলো নারী প্রীতি দেখিয়ে নিজের সীট ছাড়ার আগে আমার নারীবাদী বোনের অনুমতি দরকার।
ততক্ষনে আপুর ঝিমুনি কমে গেছে-
অলরেডী কন্ট্রাকটার সব কথা শুনেছেও;
কিছু বলতে হলো না আমাকে, আপু নিজে থেকেই আমাকে বললো ‘যা ভাই ওই সীটে যা, ওকে বসতে দে’
আপুর আবার মানুষের প্রতি দরদ বেশী; নারী হলেতো আরো বেশী।
কন্ট্রাকটর বা আপু কারোর কোনো কথার জবাব দিলাম না।
আমাদের কাপড় ভর্তি ট্রাভেল ব্যাগ বক্সে,
আমার কোলে হাজার চল্লিশেক টাকা আর কনের কিছু গহনায় ও কসমেটিকসে ভরা জিপার ব্যাগ।
সীট ত্যাগ করতে কষ্ট করতে হলো না একহাতে ব্যাগ উঁচিয়ে দু’পা বাড়িয়ে পাশের সীটে গিয়ে বসলাম,
তরুনী দখল করে নিলো আমার সীট পাশে আপু।
বাস চলছে,
আমি সামনে তাকিয়ে আছি;
জীবন বাঁজি রেখে মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে।
জায়গায় জায়গায় বর্জ্যের স্তুপ থেকে ভেসে আসা উৎকট গন্ধ ছুটন্ত বাসেও ভরে যাচ্ছে,
নিয়মহীন চলছে লোকালবাস যাত্রীর উঠানামা ট্রাকের বেপরোয়া প্রতিযোগীতা;
দেশের নিত্য চিরচেনা দৃশ্যপট।
আপু বসেছে জানালার পাশে মেয়েটির জন্য আপুকে ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছিনা, যতটুকু দেখা যায় আপু ঝিমুচ্ছে-
বার বার তাকানো যায়না মেয়েটি হয়তো ভাববে আমি তাকে দেখার জন্য তাকাচ্ছি।
মেয়েটি সুন্দরী বটে,
কিন্তু আমি আকর্ষিত নই।
আমার বেস্ট ফিলিংস অনলি দিলরুবা তার কাছে সব অর্থহীন বিশ্ব সুন্দরীর রুপও তার শ্যামলা গড়নের কাছে ম্লান!
মেয়েটি তো জানেনা আমার গার্লফ্রেন্ড আছে আমরা পরস্পর ওয়াদাবদ্ধ,
আমার চাহনিতে তার ডিফারেন্ট চিন্তা হতেই পারে স্বাভাবিক।
তাই তাকাচ্ছি না।
এবার চোখ বন্ধ করে আছি একটু তন্দ্রার ভাব এসেছে কতক্ষন এভাবে আছি জানিনা, যখন চোখ খুললাম দেখি-
আপু মেয়েটির জায়গায় মেয়েটি আপুর জায়গায়!
আমার নারীবাদী দয়ালু বোন টিস্যু নাকে চেপে নাজেহাল তার দিকে তাকাতেই আমাকে সে ইশারায় মেয়েটিকে দেখালো।
দেখি রুপের সাথে তার গুনের কোন মিল নাই জানালা দিয়ে মাথা বাকিয়ে বমি করে ভাসাচ্ছে!
ওয়াক থু….
খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসা চলেনা আপু ক্ষেপে যেতে পারে,
আপু মেয়েটির দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো-
আমরা গন্তব্যে পৌছে গেছি আপু মেয়েটির থেকে বিদায় নিলে আমরা বাস থেকে নেমে গেলাম।
একটা রিকশা নিয়ে বিয়ে বাড়ির দিকে রওনা করলাম আপুর সাথে মেয়েটির অবস্হা নিয়ে হাসাহাসি করছি মাঝে মাঝে রিকশাওয়ালা আমাদের কথা শুনে হাসিতে যোগ দিচ্ছে,
হঠাৎ আপু তার ভ্যানিটি ব্যাগ দেখে আৎকে উঠলো,
সেলুকাস!
আমার ব্যাগ?
ব্যাগে মেয়েটির ২ কপি ছবি কিছু পেসক্রিপশন,
একটা নক কাটার আর শ’পাঁচেক টাকা একটা টিপ বিস্কুট ও কিছু আঁচার;
‘ভাগ্যিস, আমার ফোনটা হাতে ছিলো’
বুঝতে বাকী রইলো না এটি মেয়েটির ভ্যানিটি ব্যাগ আপু ভুলে তারটা রেখে এসেছে;
আপু আবার বললো ‘ব্যাগে আমার অফিসিয়াল আইডি কার্ড আর একুশ হাজার টাকা ছিলো’
আপু ঘাবড়ালো না-
রিকশা চলছে আপু আঁচার খাচ্ছে আমি খাচ্ছি টিপ বিস্কুট,
রিকশাওয়ালা আফসোস করছে বাবাগো বাবা ২১ হাজার টাকা……!!
আপু চুপচাপ সে ধৈর্যশীল আমি জানি,
১১ বছর আগে ক্যান্সারে স্বামীকে হারিয়েছে, ৭ বছর আগে স্ট্রোকে মারা গেল বড় ছেলে একমাত্র ছোট ছেলে বাবার ব্যবসা ধরে আছে টাকা পয়সার অভাব নেই তার কাছে ২১ হাজার টাকার শোক কোনো চাপ নয়।
যথারীতি সুষ্ঠভাবে রুবির বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে আমরা গাজীপুরে ফিরে এলাম,
কাজের ব্যস্ততা আর রুটিন মাফিক চলাফেরায় ভাইবোন উভয়ে প্রায় ভুলে গেলাম হারানো ২১ হাজার টাকা আর ভাগ্যবতী মেয়েটির সাথে ভ্যানিটি ব্যাগের বদলের কথা।বছর দেড়েক পর….
আপুর বিরাট ক্ষোভ একমাত্র ছেলে আদনান মাকে কোন কিছু না বলে বিয়ে করে ফেলেছে;
আপু জানেনা মেয়ে কি করে, বংশ পরিচয় কি তাও অজানা ফলে বিয়ে মানতে নারাজ।
ভাগিনা ফোন করে কান্নাকাটি জুড়ে দিলো ‘মামা কিছু একটা করো, ভাড়া বাসায় মাকে ছাড়া ভাল্লাগেনা তোমার বৌমা খুব ভালো মা দেখলে আপত্তি করবেনা, শুধু মাকে রাজী করাও যেন আমাকে বাড়ী যেতে বলে একবার তার পুত্রবধুকে দেখে হ্যান-ত্যান’
ভাগিনার কথা আপুকে বলতেই আপু রেগে যায় কান্নাকাটি তাই কিছু বলার সাহস হয়নি।
ভাগিনা কোথায় থাকে সেটাও ভাগিনা বলেনা শর্ত বেঁধে দিয়েছে তার মাকে সঙ্গে আনলে দেখা করবে নয়তো নয়, ভুলেও দেখা হয়না সেও দেখা করেনা চলছে লুকোচুরি একে অপরকে দোষারোপ মান-অভিমান।
ফ্রাইডে ওয়ার্কিং স্টপ,
কখনো ফ্লোরে গড়াগড়ি করে ঘুমাচ্ছি কখনো বা বিছানায় কাইত/উবু/চিৎ নানা কায়দায় ঘুমাচ্ছি।
ফোনের ভাইব্রেশনের কাঁপাকাপিতে ঘুমটা ভেঙ্গে যেতেই টের পেয়ে দেখি দিলরুবা ও আপুর সংমিশ্রিত নম্বারের ১৮ অক্ষম কল!
‘হ্যালো’
আপু কাঁন্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো
-ও ভাইরে আদনান নাইরে…
এবার দিলরুবা কন্ঠ ভেসে এলো, আদনান সিটি মেডিকেলে আছে বাইকে একসিডেন্ট করছে;
সে আপুর সাথে আসতেছে আমাকে বাইরে বের হতে বললো রাস্তা থেকে তুলে নিবে।
কথা বলতে বলতে লুঙ্গী ছেড়ে থ্রী কোয়াটার আর স্যান্ডু গেঞ্চির উপরে শার্ট জড়িয়েই এক দৌড়ে রাস্তায়,
এরি মধ্যে তারাও এসে গেছে আমি আপুকে শান্তনা দিলেও, ভাবছি মরেনি তো….
যে আপু আদনানের কথা শুনলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতো আজ তার রাগ নেই আজ পুরোটা অস্হিরতায় মাতৃত্ব ফুটে উঠেছে পরম মমতায়- এরিই নাম মা।
হসপিটালে পৌছে দেখি আদনান একটা চেয়ারে বসে আমাদের দেখে দেখে হাসছে।
যাক মরেনি, মরা মানুষ চেয়ারে বসে হাসতে পারেনা।
‘বাইনচোৎ চালাকি করে আমাদের ডেকে এনেছে’ দিলরুবা বিড়বিড় করে বললো।
আশ্চার্য!
বাসে দেখা সেই মেয়েটি আমাদের মিসেস আদনান!!
আপুর কান্না থেমে গেছে বিস্ময়ে মেয়েটিও ‘থ’
আপু আমাকে বললো কি করবো?
আমি ফিসফিসিয়ে বললাম ২১ হাজার টাকা পেতে হলে বৌমাকে বাড়ী নিয়ে চলো….
সোনার বাংলা পরিবহন।
আমাদের সিট পড়লো B2-B3
১০ মিনিটের মধ্যে যাত্রী ভরে গেলো মাত্র ২টো সিংগেল সিট খালি ১জন করে বসা যাবে,
এমন সময় একটা মেয়ে হাঁফাতে হাঁফাতে প্রায় ছুটে এসে বাসে উঠতেই বাস ছেড়ে দিলো।
আমি হেডফোন গুঁজে গান শুনছি দেশের গান সাথে চলছে স্ট্রেট ফাইট গেম,
আপু আমার কাঁধে হেলান দিয়ে ঝিমুচ্ছে;
মাথা উচু করে মেয়েটিকে দেখে নিলাম একবার তখনও দাড়িয়ে গম্ভীর মুখে কন্ট্রাকটারের সাথে কি যেন বলছে, কানে হেডফোন তাই গানেই শুনছি তার কথা নয় কেবল ঠোঁট নড়ছে এটা বুঝতেছি।
অপূর্ব সুন্দরী!
উচ্চতা আমার থেকে চার ইঞ্চি কম হবে,
অর্থ্যৎ ৫ ফিট ২ ইঞ্চি;
গোল গাল মুখ নাকটা একটু থেবড়া একটা নাক চাবি ঝুলছে দুই কানে রিং।
ফর্সা চেহারায় সস্তা সাঁজগোজ বড় জোর মুখে ফেয়ার এন্ড লাভলী ঘষেছে,
ব্লু রংয়ের জামা স্যালোয়ারের সাথে হলুদ ওড়নায় মাথা পিঠ ঢাকার পরেও বেনী করা চুলের আগায় জড়ানো রাবার দেখা যাচ্ছে সন্দেহ নেই চুল অনেক লম্বা।
মুগ্ধ হয়ে মনে মনে উচ্চারন করলাম নাইস।
মেয়েটি আশে-পাশের সীট গুলো দেখেছে সম্ভবত বসার সুবিধা খুঁজছে,
এবার গাঞ্জাখোর টাইপের কন্ট্রাকটর এগিয়ে এলো আমাদের দিকে;
আমাকে উদ্দশ্যে করে ফ্যাস ফ্যাসে গলায় কন্ট্রাকটর বললো, ‘ভাইজান আপনে যদি পাশের সীটে বইতেন আপারে এইহানে বসাইতাম’
দুই আপায় একলগে বইতো সমস্যা নাই ঐডাও ভালো সীট’
সীট ভালো আমিও জানি একজন মধ্য বয়স্ক পুরুষের পাশে মেয়েটির বসতে প্রবলেম থাকলেও আমার মত তরুনের বসতে কোনো প্রবলেম নেই,
কথা হলো নারী প্রীতি দেখিয়ে নিজের সীট ছাড়ার আগে আমার নারীবাদী বোনের অনুমতি দরকার।
ততক্ষনে আপুর ঝিমুনি কমে গেছে-
অলরেডী কন্ট্রাকটার সব কথা শুনেছেও;
কিছু বলতে হলো না আমাকে, আপু নিজে থেকেই আমাকে বললো ‘যা ভাই ওই সীটে যা, ওকে বসতে দে’
আপুর আবার মানুষের প্রতি দরদ বেশী; নারী হলেতো আরো বেশী।
কন্ট্রাকটর বা আপু কারোর কোনো কথার জবাব দিলাম না।
আমাদের কাপড় ভর্তি ট্রাভেল ব্যাগ বক্সে,
আমার কোলে হাজার চল্লিশেক টাকা আর কনের কিছু গহনায় ও কসমেটিকসে ভরা জিপার ব্যাগ।
সীট ত্যাগ করতে কষ্ট করতে হলো না একহাতে ব্যাগ উঁচিয়ে দু’পা বাড়িয়ে পাশের সীটে গিয়ে বসলাম,
তরুনী দখল করে নিলো আমার সীট পাশে আপু।
বাস চলছে,
আমি সামনে তাকিয়ে আছি;
জীবন বাঁজি রেখে মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে।
জায়গায় জায়গায় বর্জ্যের স্তুপ থেকে ভেসে আসা উৎকট গন্ধ ছুটন্ত বাসেও ভরে যাচ্ছে,
নিয়মহীন চলছে লোকালবাস যাত্রীর উঠানামা ট্রাকের বেপরোয়া প্রতিযোগীতা;
দেশের নিত্য চিরচেনা দৃশ্যপট।
আপু বসেছে জানালার পাশে মেয়েটির জন্য আপুকে ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছিনা, যতটুকু দেখা যায় আপু ঝিমুচ্ছে-
বার বার তাকানো যায়না মেয়েটি হয়তো ভাববে আমি তাকে দেখার জন্য তাকাচ্ছি।
মেয়েটি সুন্দরী বটে,
কিন্তু আমি আকর্ষিত নই।
আমার বেস্ট ফিলিংস অনলি দিলরুবা তার কাছে সব অর্থহীন বিশ্ব সুন্দরীর রুপও তার শ্যামলা গড়নের কাছে ম্লান!
মেয়েটি তো জানেনা আমার গার্লফ্রেন্ড আছে আমরা পরস্পর ওয়াদাবদ্ধ,
আমার চাহনিতে তার ডিফারেন্ট চিন্তা হতেই পারে স্বাভাবিক।
তাই তাকাচ্ছি না।
এবার চোখ বন্ধ করে আছি একটু তন্দ্রার ভাব এসেছে কতক্ষন এভাবে আছি জানিনা, যখন চোখ খুললাম দেখি-
আপু মেয়েটির জায়গায় মেয়েটি আপুর জায়গায়!
আমার নারীবাদী দয়ালু বোন টিস্যু নাকে চেপে নাজেহাল তার দিকে তাকাতেই আমাকে সে ইশারায় মেয়েটিকে দেখালো।
দেখি রুপের সাথে তার গুনের কোন মিল নাই জানালা দিয়ে মাথা বাকিয়ে বমি করে ভাসাচ্ছে!
ওয়াক থু….
খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু হাসা চলেনা আপু ক্ষেপে যেতে পারে,
আপু মেয়েটির দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো-
আমরা গন্তব্যে পৌছে গেছি আপু মেয়েটির থেকে বিদায় নিলে আমরা বাস থেকে নেমে গেলাম।
একটা রিকশা নিয়ে বিয়ে বাড়ির দিকে রওনা করলাম আপুর সাথে মেয়েটির অবস্হা নিয়ে হাসাহাসি করছি মাঝে মাঝে রিকশাওয়ালা আমাদের কথা শুনে হাসিতে যোগ দিচ্ছে,
হঠাৎ আপু তার ভ্যানিটি ব্যাগ দেখে আৎকে উঠলো,
সেলুকাস!
আমার ব্যাগ?
ব্যাগে মেয়েটির ২ কপি ছবি কিছু পেসক্রিপশন,
একটা নক কাটার আর শ’পাঁচেক টাকা একটা টিপ বিস্কুট ও কিছু আঁচার;
‘ভাগ্যিস, আমার ফোনটা হাতে ছিলো’
বুঝতে বাকী রইলো না এটি মেয়েটির ভ্যানিটি ব্যাগ আপু ভুলে তারটা রেখে এসেছে;
আপু আবার বললো ‘ব্যাগে আমার অফিসিয়াল আইডি কার্ড আর একুশ হাজার টাকা ছিলো’
আপু ঘাবড়ালো না-
রিকশা চলছে আপু আঁচার খাচ্ছে আমি খাচ্ছি টিপ বিস্কুট,
রিকশাওয়ালা আফসোস করছে বাবাগো বাবা ২১ হাজার টাকা……!!
আপু চুপচাপ সে ধৈর্যশীল আমি জানি,
১১ বছর আগে ক্যান্সারে স্বামীকে হারিয়েছে, ৭ বছর আগে স্ট্রোকে মারা গেল বড় ছেলে একমাত্র ছোট ছেলে বাবার ব্যবসা ধরে আছে টাকা পয়সার অভাব নেই তার কাছে ২১ হাজার টাকার শোক কোনো চাপ নয়।
যথারীতি সুষ্ঠভাবে রুবির বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ করে আমরা গাজীপুরে ফিরে এলাম,
কাজের ব্যস্ততা আর রুটিন মাফিক চলাফেরায় ভাইবোন উভয়ে প্রায় ভুলে গেলাম হারানো ২১ হাজার টাকা আর ভাগ্যবতী মেয়েটির সাথে ভ্যানিটি ব্যাগের বদলের কথা।বছর দেড়েক পর….
আপুর বিরাট ক্ষোভ একমাত্র ছেলে আদনান মাকে কোন কিছু না বলে বিয়ে করে ফেলেছে;
আপু জানেনা মেয়ে কি করে, বংশ পরিচয় কি তাও অজানা ফলে বিয়ে মানতে নারাজ।
ভাগিনা ফোন করে কান্নাকাটি জুড়ে দিলো ‘মামা কিছু একটা করো, ভাড়া বাসায় মাকে ছাড়া ভাল্লাগেনা তোমার বৌমা খুব ভালো মা দেখলে আপত্তি করবেনা, শুধু মাকে রাজী করাও যেন আমাকে বাড়ী যেতে বলে একবার তার পুত্রবধুকে দেখে হ্যান-ত্যান’
ভাগিনার কথা আপুকে বলতেই আপু রেগে যায় কান্নাকাটি তাই কিছু বলার সাহস হয়নি।
ভাগিনা কোথায় থাকে সেটাও ভাগিনা বলেনা শর্ত বেঁধে দিয়েছে তার মাকে সঙ্গে আনলে দেখা করবে নয়তো নয়, ভুলেও দেখা হয়না সেও দেখা করেনা চলছে লুকোচুরি একে অপরকে দোষারোপ মান-অভিমান।
ফ্রাইডে ওয়ার্কিং স্টপ,
কখনো ফ্লোরে গড়াগড়ি করে ঘুমাচ্ছি কখনো বা বিছানায় কাইত/উবু/চিৎ নানা কায়দায় ঘুমাচ্ছি।
ফোনের ভাইব্রেশনের কাঁপাকাপিতে ঘুমটা ভেঙ্গে যেতেই টের পেয়ে দেখি দিলরুবা ও আপুর সংমিশ্রিত নম্বারের ১৮ অক্ষম কল!
‘হ্যালো’
আপু কাঁন্না জড়িত কন্ঠে বলে উঠলো
-ও ভাইরে আদনান নাইরে…
এবার দিলরুবা কন্ঠ ভেসে এলো, আদনান সিটি মেডিকেলে আছে বাইকে একসিডেন্ট করছে;
সে আপুর সাথে আসতেছে আমাকে বাইরে বের হতে বললো রাস্তা থেকে তুলে নিবে।
কথা বলতে বলতে লুঙ্গী ছেড়ে থ্রী কোয়াটার আর স্যান্ডু গেঞ্চির উপরে শার্ট জড়িয়েই এক দৌড়ে রাস্তায়,
এরি মধ্যে তারাও এসে গেছে আমি আপুকে শান্তনা দিলেও, ভাবছি মরেনি তো….
যে আপু আদনানের কথা শুনলে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠতো আজ তার রাগ নেই আজ পুরোটা অস্হিরতায় মাতৃত্ব ফুটে উঠেছে পরম মমতায়- এরিই নাম মা।
হসপিটালে পৌছে দেখি আদনান একটা চেয়ারে বসে আমাদের দেখে দেখে হাসছে।
যাক মরেনি, মরা মানুষ চেয়ারে বসে হাসতে পারেনা।
‘বাইনচোৎ চালাকি করে আমাদের ডেকে এনেছে’ দিলরুবা বিড়বিড় করে বললো।
আশ্চার্য!
বাসে দেখা সেই মেয়েটি আমাদের মিসেস আদনান!!
আপুর কান্না থেমে গেছে বিস্ময়ে মেয়েটিও ‘থ’
আপু আমাকে বললো কি করবো?
আমি ফিসফিসিয়ে বললাম ২১ হাজার টাকা পেতে হলে বৌমাকে বাড়ী নিয়ে চলো….
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোহন দাস (বিষাক্ত কবি) ২৩/০১/২০২০সুন্দর
-
নুর হোসেন ০৬/০১/২০২০ধন্যবাদ।
-
মাসুমি ২৬/১২/২০১৯খুব ভালো, শুভেচ্ছা।
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২০/১২/২০১৯বাঃ
-
মেহেদি হাসান আবিদ ১৯/১২/২০১৯অসাধারন