একজন রফিক ও তার হলুদ চাদর
১
রফিক যে মাটির কাঁচা রাস্তা দিয়ে হাটছে তার দু-পাশের সব জমি রফিকদের। স্পষ্ট করে বললে, রফিকের বড় ভাই মোবারক আলী মৃধার। শীতের প্রথম সময়। রফিকের গায়ে একটা হলুদ চাঁদর। হালকা কুয়াশা না থাকলে জোসনা রাতই বলা যেত। রফিক বাজার থেকে ফিরছে। একা। রফিকের বয়স পয়ত্রিশের মত। অবিবাহিত। নিজে বুঝতে পারে যে বিয়ের বয়স হয়েছে। কিন্তু চক্ষু লজ্জার কারনে মোবারক আলীকে বলতে পারে না। দুই নাম্বার ওয়ার্ডের মালেক মোল্লার মেঝ মেয়েকে রফিকের বেশ লাগে। নাম পরী।
রফিক এখন বাশ বাগানে। এটা পেরোলেই বাড়ি। রাতের খাবার খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দেবে। হয়তো পরীকে নিয়ে একটা স্বপ্নও দেখবে। উঠবে সকাল দশটায়।
হঠাৎ পিছন থেকে শুকন পাতা মাড়ানোর শব্দ শুনতে পায় রফিক। ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাঁকায়। কেউ একজন দাড়িয়ে। মুখটা মাফলার দিয়ে ঢাকা। শুধু চোখ দুটো বেড়িয়ে আছে। ভয় পেয়ে গেল রফিক। এমন সময় আরো দু’জন লোক ওকে দুপাশ থেকে দু হাত শক্ত করে ধরল। রফিক চিৎকার করার আগেই আরো কেউ একজন ওর মুখ চেপে ধরল। প্রথম লোকটা একতা নয় ইঞ্চি ফলার ছুরি বের করে ওর পেটে ঢুকিয়ে দিল। যন্ত্রনায় চিৎকার দিল রফিক। কিন্তু একটা মৃদু গোঁ গোঁ আওয়াজ ছাড়া কিছুই বেরোল না। পর পর তিনবার ঢুকাল ছুরিটা। অজ্ঞান হয়ে গেল রফিক।নদীর পাড়ে নিয়ে আসা হয়েছে রফিকের দেহটা। শুইয়ে রাখা হয়েছে বালির উপর। পেটটা চিড়ে দেয়া হয়েছে। এখনো রক্ত পড়ছে। বেঁচে আছে রফিক। লোকটা মাফলার খুলে ফেলেছে। ছুড়িটা এবার রফিকের গলায় চালালো লোকটা।
প্রথম লোকটা রফিকের দিকে তাঁকিয়ে বলল, “খুব্ব খারাপ লাগল কাজটা করতে।” পরদিন সকালের বাসে সে তার তিন সহকারি সহ ঢাকা চলে গেল। তারা এসেছিল সন্ধ্যায়।
সাতদিন পর রফিকের বড় ভাই মোবারক আলী মৃধা রফিক নিঁখোজ সম্পর্কে থানায় একটা জিডি করলেন।
২
২৬ দিন পর।
সকাল। মানে অনেক সকাল। চসকাল ছ’টা। উঠোন জুড়ে ঘন কুয়াসা। মোবারক আলী মৃধা তার দোচালা টিনের ঘরের বারান্দায় উবু হয়ে বসে গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করছেন। এমন সময় তিনি উঠানের কোনে হলুদ রঙের কিছু দেখতে পেলেন। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। অনেকতা কাছে আসার পর মুখটা স্পষ্ট হলো। মোবারক আলি মৃঢা প্রাণপন চেষ্টা করেও পারলেন না। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন।
মৃধা সাহেব বিছানায় শুয়ে আছেন। অনেকক্ষন আগে তার জ্ঞান ফিরেছে। রফিক দাড়িয়ে। হলুদ চাঁদর তার গায়ে জরানো।
-“ভাইজান ভাল আছেন?”
মোবারক আলী কোন জবাব দিলেন না। ইশারায় রফিককে বের হয়ে যেতে বললেন। রফিক বেরিয়ে গেল। তিনি বালিশের নিচে হাত দিয়ে মোবাইল বের করলেন। পরিচিত একটা নাম্বারে ডায়াল করলেন। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করলে তিনি বললেন,
-“গ্রামে আস। জরুরী। রফিক ফিরা আসছে।”
ঠিক যেন টেলিগ্রাম পাঠালেন। বলেই কেটে দিলেন ফোনটা।
৩
মোবারক সাহেব বাজার থেকে ফিরছেন। একা। একটা সালিশী ছিল আজ। সালিশী শুরু হতেই সন্ধ্যা হয়ে যায়। শেষ হয়েছে রাত দশটায়। শেষ করেই সোজা বাড়ির পথে চলে এসেছেন। কেউ কেউ এগিয়ে দিতে চেয়েছিল। তিনি না করে দিয়েছেন।
আজ শীতটা বেশ জাকিয়ে পড়েছে। গায়ের চাঁদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিলেন। একটু পরেই বাঁশ বাগানে ঢুকে পড়লেন। হঠাৎ পিছনে পায়ের শব্দ পেলেন। থেমে গেলেন তিনি। পিছন ফিরলেন। কুয়াশা আর অন্ধকারে দেখতে পেলেন হলুদ কিছু একটা এগিয়ে আসছে। “রফিক নাতো?” চমকে মনে হল কথাটা।
-“কে রে?” ভয় পেলেও তার প্রকাশ নেই মোবারক সাহেবের গলায়।
-“ভাইজান আমি। রফিক।”
-“কই থিকা আসছোস?”
-“বাজার থিকা। চলেন আগাই।”
দুজনে হাটতে শুরু করলেন আবার।
বাড়ি পৌছে রফিক তার ঘরে ঢুকে গেল। রাতে খেতে এলো না রফিক।
হঠাৎই মোবারক সাহেবের ঘুম ভেঙে গেছে। বুঝতে পারছেন না কেন ঘুম ভাঙলো। আজ তিনি স্ত্রির সাথে ঘুমাননি। তবুও মনে হল পাশে কেউ আছে। তিনি হারিকেনের আলো বাড়ালেন। খাটের কোনায় রফিক বসে আছে। গায়ে হলুদ চাঁদর। রফিকের চোখ দুটি জ্বল জ্বল করছে।
-“তুই!” মোবারক সাহেবের গলায় ভয় স্পষ্ট।
রফিক জবাব না দিয়ে হাসলো। ভক করে প্রচন্ড দুর্গন্ধ বেরিয়ে এল। মোবারক আলী বিছানায় শুয়েও সেই দুর্গন্ধ পেলেন।
-“ভাইজান ভালো আছেন? হেই সুমা জিগাইছিলাম। জবাব দেন নাই।”
বলেই হাসলো রফিক। মোবারক সাহেব চোখ বন্ধ করে ফেললেন।
কয়েক মিনিট পর চোখ খুললেন মোবারক আলী মৃধা। কেউ নেই ঘরে। তিনি একা। তার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। একবার দরজার দিকে তাকালেন। শোওয়ার সময় যেভাবে লাগিয়ে রেখেছিলেন সেভাবেই আছে। উঠে বিছানা থেকে নামলেন। স্ত্রীর ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
মোবাব্রক সাহেবের স্ত্রীর ঘুম অনেক হালকা। তিনি স্ত্রীর লেপের নিচে ঢুকতেই স্ত্রী জেগে গেলেন। স্ত্রী ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলেলেন,
-“চইলা আইলেন যে?”
মোবারক সাহেব কোন জবাব দিলেন না। স্ত্রীর বুকের দিকে হাত বাড়ালেন। টের পেলেন এখনো হাত কাঁপছে।
৪
সকাল বেলা বাড়িতে একজন লোক এসেছে। ঢাকা থেকে এসেছে লোকটা। বারান্দায় বসে আছে সে। এমন সময় রফিক তার ঘর থেকে বেরোল। গায়ে হলুদ চাঁদর। রফিককে দেখে লোকটা চমকে গেল। রফিক লোকটার দিকে এগিয়ে গেল।
-“ভাইজান ভালো আছেন?”
লোকটা কোন জবাব দিতে পারলো না।
-“আমারে চিনছেন? আমি রফিক। আপনের নাম আকবর। আমি মোবারক মৃধার ছোট ভাই। আপনের লগে আমার বাঁশ বাগানে দেখা হইছিল। এখন চিনছেন?”
আকবর এবারও জবাব দিলনা। রফিক আবার বলল, “বুঝছি চিনেন নাই। থাউক চিন্না কাম নাই। আমি বাজারে যাই। আইসেন চা খামুনে একলগে। দুপারে কিন্তুক খাইয়া যাইবেন।”
রফিক চলে গেল।
আকবর আর মোবারক আলী মুখোমুখি বসে আছে। আকবর ঘামছে।
-“টাহা গুলাই তোমারে ক্যান দিছিলাম?”
লোকটা জবাব দিলনা।
-“একটা মানুষরে তিনজন মিল্লা খেলতে পারলানা? এইবার আবার খেলবা। যা টাহা পয়সা লাগে আমি দিমু।”
এবার লোকটা জবাব দিল,
-“আকবর এককাজে দুইবার টাজা নেয় না। এবার আমি একাই খেলুম।”
উঠে বেরিয়ে গেল লোকটা।
রাত দশটা। বাশ বাগান। আকবর দাড়িয়ে আছে। হাতে সেই ন’ইঞ্চি ফলার ছুরি। তাঁকিয়্এ আছে রাস্তার দিকে। ঘন কুয়াশা। হঠাৎ হলুদ কিছু একটা দেখা গেল। এগিয়ে আসছে।
সকাল বেলা বাঁশ বাগানে আকবরের লাশ পাওয়া গেল। ঘাড়টা মটকানো। পাশে একটা ন’ইঞ্চি ফলার ছুরি।
পুলিশ বেওয়ারিশ লাস হিসেবে উঠিয়ে নিয়ে গেল লাশটা।
৫
থানা। মোবারক আলী মৃধা ওসির সামনে বসে আছেন। ওসি চুপচাপ তার কথা শুনছেন। মোবারক আলী থামার পর কিছুক্ষন চুপ করে রইলেন ওসি সাহেব। তারপর বললেন,
-“তারমানে আপনি বলতে চাচ্ছেন, কাল যে লাশটা আমরা পেয়েছি আপনি তাকে দিয়ে প্রায় একমাস আগে আপনার ছোট ভাই রফিককে খুন করিয়েছিলেন। অথচ রফিক ফিরে এসেছে। তাহলে তখন কে খুন হয়েছিল?”
-“যেইহানে লাশ পুঁতছিল সেই যায়গা আমি চিনি। চলেন খুঁড়ে দেখি।”
-“রফিক এখন কোথায়?”
-“বাড়িতে।”
ওসি সাহেব দুজন হাবিলদারকে পাঠালেন রফিককে নিয়া আসতে। তারা কিছুক্ষন পরেই রফককে নিয়ে ফিরে এলো। ওসি সাহেব তিনজন হাবিলদার সহ মোবারক আলী ও রফিককে নিয়ে বাঁশ বাগানের দিকে চললেন। রফিকের মুখ হাসি হাসি।
যায়গাতা বাঁশ বাগানের ভিতরে। তিনজন হাবিলদার নির্দিষ্ট যায়গাটা খুঁড়ছে। অনেক লোকজন এসে জড়ো হয়েছে। দুজন হাবিলদার তাদের দূরে সরিয়ে রাখছে। হঠাৎই একটা হলুদ চাঁদরের অংশ দেখা গেল। এবার সাবধানে খুঁড়তে বলা হলো। এক সময় পুরো দেহটা বেরিয়ে এলো। একটা বিশ্রী গন্ধ সবার নাকে ধাক্কা মারলো। সবাই নাকে হাত চাঁপা দিল। লাশটা তোলা হলো। প৬চে গলে গেছে। মাথায় এখনো কিছু চুল লেগে আছে। গায়ে হলুদ রঙের চাঁদর জড়ানো।
এবার জীবিত রফিককে ডাকা হলো। কিন্তু তাকে আশে পাশে পাওয়া গেল না।
রফিককে আর কোনদিন তার হলুদ চাঁদর পড়ে হাটতে দেখা যায়নি।
-১৮/১০/২০১২
পাদটীকাঃ ক্লাস টেনে লেখা গল্প। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং আশীর্বাদ করবেন যেন এই অখাদ্য চির দিন সাপ্লাই/ডেলিভারি দিতে পারি।
-তরীকুল ইসলাম।
রফিক যে মাটির কাঁচা রাস্তা দিয়ে হাটছে তার দু-পাশের সব জমি রফিকদের। স্পষ্ট করে বললে, রফিকের বড় ভাই মোবারক আলী মৃধার। শীতের প্রথম সময়। রফিকের গায়ে একটা হলুদ চাঁদর। হালকা কুয়াশা না থাকলে জোসনা রাতই বলা যেত। রফিক বাজার থেকে ফিরছে। একা। রফিকের বয়স পয়ত্রিশের মত। অবিবাহিত। নিজে বুঝতে পারে যে বিয়ের বয়স হয়েছে। কিন্তু চক্ষু লজ্জার কারনে মোবারক আলীকে বলতে পারে না। দুই নাম্বার ওয়ার্ডের মালেক মোল্লার মেঝ মেয়েকে রফিকের বেশ লাগে। নাম পরী।
রফিক এখন বাশ বাগানে। এটা পেরোলেই বাড়ি। রাতের খাবার খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দেবে। হয়তো পরীকে নিয়ে একটা স্বপ্নও দেখবে। উঠবে সকাল দশটায়।
হঠাৎ পিছন থেকে শুকন পাতা মাড়ানোর শব্দ শুনতে পায় রফিক। ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনে তাঁকায়। কেউ একজন দাড়িয়ে। মুখটা মাফলার দিয়ে ঢাকা। শুধু চোখ দুটো বেড়িয়ে আছে। ভয় পেয়ে গেল রফিক। এমন সময় আরো দু’জন লোক ওকে দুপাশ থেকে দু হাত শক্ত করে ধরল। রফিক চিৎকার করার আগেই আরো কেউ একজন ওর মুখ চেপে ধরল। প্রথম লোকটা একতা নয় ইঞ্চি ফলার ছুরি বের করে ওর পেটে ঢুকিয়ে দিল। যন্ত্রনায় চিৎকার দিল রফিক। কিন্তু একটা মৃদু গোঁ গোঁ আওয়াজ ছাড়া কিছুই বেরোল না। পর পর তিনবার ঢুকাল ছুরিটা। অজ্ঞান হয়ে গেল রফিক।নদীর পাড়ে নিয়ে আসা হয়েছে রফিকের দেহটা। শুইয়ে রাখা হয়েছে বালির উপর। পেটটা চিড়ে দেয়া হয়েছে। এখনো রক্ত পড়ছে। বেঁচে আছে রফিক। লোকটা মাফলার খুলে ফেলেছে। ছুড়িটা এবার রফিকের গলায় চালালো লোকটা।
প্রথম লোকটা রফিকের দিকে তাঁকিয়ে বলল, “খুব্ব খারাপ লাগল কাজটা করতে।” পরদিন সকালের বাসে সে তার তিন সহকারি সহ ঢাকা চলে গেল। তারা এসেছিল সন্ধ্যায়।
সাতদিন পর রফিকের বড় ভাই মোবারক আলী মৃধা রফিক নিঁখোজ সম্পর্কে থানায় একটা জিডি করলেন।
২
২৬ দিন পর।
সকাল। মানে অনেক সকাল। চসকাল ছ’টা। উঠোন জুড়ে ঘন কুয়াসা। মোবারক আলী মৃধা তার দোচালা টিনের ঘরের বারান্দায় উবু হয়ে বসে গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করছেন। এমন সময় তিনি উঠানের কোনে হলুদ রঙের কিছু দেখতে পেলেন। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। অনেকতা কাছে আসার পর মুখটা স্পষ্ট হলো। মোবারক আলি মৃঢা প্রাণপন চেষ্টা করেও পারলেন না। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন।
মৃধা সাহেব বিছানায় শুয়ে আছেন। অনেকক্ষন আগে তার জ্ঞান ফিরেছে। রফিক দাড়িয়ে। হলুদ চাঁদর তার গায়ে জরানো।
-“ভাইজান ভাল আছেন?”
মোবারক আলী কোন জবাব দিলেন না। ইশারায় রফিককে বের হয়ে যেতে বললেন। রফিক বেরিয়ে গেল। তিনি বালিশের নিচে হাত দিয়ে মোবাইল বের করলেন। পরিচিত একটা নাম্বারে ডায়াল করলেন। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করলে তিনি বললেন,
-“গ্রামে আস। জরুরী। রফিক ফিরা আসছে।”
ঠিক যেন টেলিগ্রাম পাঠালেন। বলেই কেটে দিলেন ফোনটা।
৩
মোবারক সাহেব বাজার থেকে ফিরছেন। একা। একটা সালিশী ছিল আজ। সালিশী শুরু হতেই সন্ধ্যা হয়ে যায়। শেষ হয়েছে রাত দশটায়। শেষ করেই সোজা বাড়ির পথে চলে এসেছেন। কেউ কেউ এগিয়ে দিতে চেয়েছিল। তিনি না করে দিয়েছেন।
আজ শীতটা বেশ জাকিয়ে পড়েছে। গায়ের চাঁদরটা ভালো করে জড়িয়ে নিলেন। একটু পরেই বাঁশ বাগানে ঢুকে পড়লেন। হঠাৎ পিছনে পায়ের শব্দ পেলেন। থেমে গেলেন তিনি। পিছন ফিরলেন। কুয়াশা আর অন্ধকারে দেখতে পেলেন হলুদ কিছু একটা এগিয়ে আসছে। “রফিক নাতো?” চমকে মনে হল কথাটা।
-“কে রে?” ভয় পেলেও তার প্রকাশ নেই মোবারক সাহেবের গলায়।
-“ভাইজান আমি। রফিক।”
-“কই থিকা আসছোস?”
-“বাজার থিকা। চলেন আগাই।”
দুজনে হাটতে শুরু করলেন আবার।
বাড়ি পৌছে রফিক তার ঘরে ঢুকে গেল। রাতে খেতে এলো না রফিক।
হঠাৎই মোবারক সাহেবের ঘুম ভেঙে গেছে। বুঝতে পারছেন না কেন ঘুম ভাঙলো। আজ তিনি স্ত্রির সাথে ঘুমাননি। তবুও মনে হল পাশে কেউ আছে। তিনি হারিকেনের আলো বাড়ালেন। খাটের কোনায় রফিক বসে আছে। গায়ে হলুদ চাঁদর। রফিকের চোখ দুটি জ্বল জ্বল করছে।
-“তুই!” মোবারক সাহেবের গলায় ভয় স্পষ্ট।
রফিক জবাব না দিয়ে হাসলো। ভক করে প্রচন্ড দুর্গন্ধ বেরিয়ে এল। মোবারক আলী বিছানায় শুয়েও সেই দুর্গন্ধ পেলেন।
-“ভাইজান ভালো আছেন? হেই সুমা জিগাইছিলাম। জবাব দেন নাই।”
বলেই হাসলো রফিক। মোবারক সাহেব চোখ বন্ধ করে ফেললেন।
কয়েক মিনিট পর চোখ খুললেন মোবারক আলী মৃধা। কেউ নেই ঘরে। তিনি একা। তার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। একবার দরজার দিকে তাকালেন। শোওয়ার সময় যেভাবে লাগিয়ে রেখেছিলেন সেভাবেই আছে। উঠে বিছানা থেকে নামলেন। স্ত্রীর ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
মোবাব্রক সাহেবের স্ত্রীর ঘুম অনেক হালকা। তিনি স্ত্রীর লেপের নিচে ঢুকতেই স্ত্রী জেগে গেলেন। স্ত্রী ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলেলেন,
-“চইলা আইলেন যে?”
মোবারক সাহেব কোন জবাব দিলেন না। স্ত্রীর বুকের দিকে হাত বাড়ালেন। টের পেলেন এখনো হাত কাঁপছে।
৪
সকাল বেলা বাড়িতে একজন লোক এসেছে। ঢাকা থেকে এসেছে লোকটা। বারান্দায় বসে আছে সে। এমন সময় রফিক তার ঘর থেকে বেরোল। গায়ে হলুদ চাঁদর। রফিককে দেখে লোকটা চমকে গেল। রফিক লোকটার দিকে এগিয়ে গেল।
-“ভাইজান ভালো আছেন?”
লোকটা কোন জবাব দিতে পারলো না।
-“আমারে চিনছেন? আমি রফিক। আপনের নাম আকবর। আমি মোবারক মৃধার ছোট ভাই। আপনের লগে আমার বাঁশ বাগানে দেখা হইছিল। এখন চিনছেন?”
আকবর এবারও জবাব দিলনা। রফিক আবার বলল, “বুঝছি চিনেন নাই। থাউক চিন্না কাম নাই। আমি বাজারে যাই। আইসেন চা খামুনে একলগে। দুপারে কিন্তুক খাইয়া যাইবেন।”
রফিক চলে গেল।
আকবর আর মোবারক আলী মুখোমুখি বসে আছে। আকবর ঘামছে।
-“টাহা গুলাই তোমারে ক্যান দিছিলাম?”
লোকটা জবাব দিলনা।
-“একটা মানুষরে তিনজন মিল্লা খেলতে পারলানা? এইবার আবার খেলবা। যা টাহা পয়সা লাগে আমি দিমু।”
এবার লোকটা জবাব দিল,
-“আকবর এককাজে দুইবার টাজা নেয় না। এবার আমি একাই খেলুম।”
উঠে বেরিয়ে গেল লোকটা।
রাত দশটা। বাশ বাগান। আকবর দাড়িয়ে আছে। হাতে সেই ন’ইঞ্চি ফলার ছুরি। তাঁকিয়্এ আছে রাস্তার দিকে। ঘন কুয়াশা। হঠাৎ হলুদ কিছু একটা দেখা গেল। এগিয়ে আসছে।
সকাল বেলা বাঁশ বাগানে আকবরের লাশ পাওয়া গেল। ঘাড়টা মটকানো। পাশে একটা ন’ইঞ্চি ফলার ছুরি।
পুলিশ বেওয়ারিশ লাস হিসেবে উঠিয়ে নিয়ে গেল লাশটা।
৫
থানা। মোবারক আলী মৃধা ওসির সামনে বসে আছেন। ওসি চুপচাপ তার কথা শুনছেন। মোবারক আলী থামার পর কিছুক্ষন চুপ করে রইলেন ওসি সাহেব। তারপর বললেন,
-“তারমানে আপনি বলতে চাচ্ছেন, কাল যে লাশটা আমরা পেয়েছি আপনি তাকে দিয়ে প্রায় একমাস আগে আপনার ছোট ভাই রফিককে খুন করিয়েছিলেন। অথচ রফিক ফিরে এসেছে। তাহলে তখন কে খুন হয়েছিল?”
-“যেইহানে লাশ পুঁতছিল সেই যায়গা আমি চিনি। চলেন খুঁড়ে দেখি।”
-“রফিক এখন কোথায়?”
-“বাড়িতে।”
ওসি সাহেব দুজন হাবিলদারকে পাঠালেন রফিককে নিয়া আসতে। তারা কিছুক্ষন পরেই রফককে নিয়ে ফিরে এলো। ওসি সাহেব তিনজন হাবিলদার সহ মোবারক আলী ও রফিককে নিয়ে বাঁশ বাগানের দিকে চললেন। রফিকের মুখ হাসি হাসি।
যায়গাতা বাঁশ বাগানের ভিতরে। তিনজন হাবিলদার নির্দিষ্ট যায়গাটা খুঁড়ছে। অনেক লোকজন এসে জড়ো হয়েছে। দুজন হাবিলদার তাদের দূরে সরিয়ে রাখছে। হঠাৎই একটা হলুদ চাঁদরের অংশ দেখা গেল। এবার সাবধানে খুঁড়তে বলা হলো। এক সময় পুরো দেহটা বেরিয়ে এলো। একটা বিশ্রী গন্ধ সবার নাকে ধাক্কা মারলো। সবাই নাকে হাত চাঁপা দিল। লাশটা তোলা হলো। প৬চে গলে গেছে। মাথায় এখনো কিছু চুল লেগে আছে। গায়ে হলুদ রঙের চাঁদর জড়ানো।
এবার জীবিত রফিককে ডাকা হলো। কিন্তু তাকে আশে পাশে পাওয়া গেল না।
রফিককে আর কোনদিন তার হলুদ চাঁদর পড়ে হাটতে দেখা যায়নি।
-১৮/১০/২০১২
পাদটীকাঃ ক্লাস টেনে লেখা গল্প। ভুল-ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং আশীর্বাদ করবেন যেন এই অখাদ্য চির দিন সাপ্লাই/ডেলিভারি দিতে পারি।
-তরীকুল ইসলাম।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
প্রদীপ চৌধুরী ১৮/০১/২০১৬খুবই ভালো লাগলো
-
রায়হান রাজিব ১৮/০১/২০১৬হুম কিছু শিখে নিলাম ..ভালো লেগলো
-
ধ্রুব রাসেল ১৭/০১/২০১৬অনেক ভালো লিখেছেন।