www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

জ্যোৎস্না নিমন্ত্রন

মবিনউদ্দিন পাশের গ্রামে কলেজের ইংরেজী সাহিত্যের শিক্ষক। এযুগে ইংরেজী সাহিত্যের ছেলেরা গ্রামে থাকেনা। আসেও না। তারা তাদের বড় স্বপ্ন পূরনের আশায় শহরে ঘুরে বেড়ায়। জুতোর তলা ক্ষয় করে। আবার ভাগ্য ভালো হলে সিড়িটা অতিদ্রুত পেয়ে যায়।

ভার্সিটিতে মবিনের নাম ছিল শুধু মবিন। অনেকে ‘মুবিন’ বলে ডাকতো। মবিন প্রতিবারই শুধরে দিত, “আমার নাম মুবিন নয়, মবিন।“ মবিনের নাম যদি মবিন না হয়ে বিনয় হতো তাহলে নাম আর চরিত্রের মিল পাওয়া যায়না এই প্রবাদটার বিপক্ষে একটা উদাহরণ দেখানো যেত।

মবিনের রেজাল্ট খুব উচ্চ পর্যায়ের ছিল না। আবার যা ছিল সেটাও ফেলে দেয়ার মত না। তাই এই কলেজে ইন্টারভিউ দিতে এসে, সে এই কলেজে থাকবে কিনা সেই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। যেহেতু মবিন এখানে আবেদন করেছিল ঝোকের মাথায় তাই তার ইচ্ছে ছিল মাস ছয়েক চাকরি করে ঢাকায় ফিরে যাবে। বাস্তবে তার চাকরীর বয়স তিন বছর সাড়ে চার মাস প্রায়।

মবিন আসলে গ্রাম বা কলেজ কোনটারই প্রেমে পড়েনি। সে প্রেমে পড়েছে এই গ্রামের জ্যোৎস্নার। জ্যোৎস্না রাতে এই গ্রামের রূপ অদ্ভুত ভাবে বদলে যায়। এক স্নীগ্ধ মায়াময় পরিবেশ ঘিরে থাকে চারপাশে। মবিন নিজেও জানে না সে কি করে সেই জ্যোৎস্নার প্রেমে পড়ে গেল।

মবিন জ্যোৎস্না দেখে নদীর পাড়ে। সেখানে একটা বাঁধানো বটগাছ আছে। কেউ একজন খুব সুন্দর করে বাঁধিয়ে ছিলেন বটগাছটা। মবিন সেখানে গুটিশুটি মেরে বসে জ্যোৎস্না দেখে। রাত বাড়ার সাথে সাথে জ্যোৎস্নার রূপ বদলায়। কেমন একটা মাদকতাময় পরিবেশে ঘোরলাগা ভাব সৃষ্টি হয়।

সন্ধ্যার একটু পর পর মবিন নদীর পাড়ে বসে ছিল। কাল পূর্নিমা গেছে। আজ ফাটাফাটি একটা কিছু হবে। হঠাৎ শুনতে পেল একটা মেয়ে কন্ঠ বলছে,
-এইযে মিস্টার বট, আপনি কোথা থেকে এসেছেন?
মবিন ভয় পেয়ে গেল। চুপ করে বসে রইলো।
মেয়েটা আবার বলছে,
-এটা আপনার হাত নাকি পা?
মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে। একটা বটের ঝুড়ি ধরে দাঁড়িয়ে। মেয়েটাকে চিনতে পেরেছে মবিন। সে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বড়লোকের মেয়েদের কত অদ্ভুত স্বভাবই না থাকে। হঠাৎ মেয়েটা চুপ হয়ে গেল। মেয়েটা সম্ভবত নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পেয়েছে। কয়েক মুহূর্ত পর মেয়েটা ভয়ার্ত কন্ঠে বলল,
-কে? কে ওখানে?
মবিন নিস্পৃহ স্বরে জবাব দিলো,
-আমি!
মেয়েটা একই কন্ঠে বলল,
-সামনে আসুন।
মবিন উঠে মেয়েটার সামনে গেল। চাঁদ উঠেছে। মেয়েটা হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে আছে। কেমন যেন গাছ গাছ লাগছে। মবিনকে দেখে মেয়েটা ভয় পেল কিন বোঝা গেল না। বলল,
-কে আপনি?
-আমি মবিনউদ্দিন।
-কি করেন আপনি?
-শিক্ষক। ইংরেজি পড়াই।
-হাই স্কুলে?
-না।কলেজে।
-এখানে কোন কলেজ নাই। আপনি মিথ্যা বলছেন কেন?
-কলেজটা পাশের গ্রামে। নদীর ওপারেই। মতিবানু কলেজ। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত।
-এখানে একা একা কি করছিলেন?
-জ্যোৎস্না দেখছিলাম।
-সারা রাত দেখেন?
-হ্যা। জ্যোৎস্না হল নারীর মত। নারি যেমন প্রথমে কারো মেয়ে তারপর কার প্রেমিকা তারপর কারো স্ত্রী তারপর কার মা তারপর মৃত্যু। জ্যোৎস্নাও তেমনি। রাত বাড়ার সাথে সাথে রূপ বদলায়।
মেয়েটা বলল,
-আপনি অনেক বেশি কথা বলেন। আমি কে জানেন?
-জ্বী, জানি। মন্ত্রী সাহেবের মেয়ে। ডাকবাংলোয় উঠেছেন। বিকেলবেলা আপনি একা একা ঘোরাঘুরি করেন। এটা ছোট গ্রাম। এখানে বাতাসের আগে আশ্চর্য খবর ছড়ায়। আপনি প্রথমত মন্ত্রীর মেয়ে। দ্বিতীয়ত একা একা ঘুরেন। যা এখানে আশ্চর্যতো বটেই চমকপ্রদও।
-আপনি আমার নাম জানেন?
-জ্বী, জানি। নবনী। আপনাকে নিয়ে আমাদের কলেজের টীচার্স রুমেও আলোচনা হয়।
-আপনি কি আমাকে বাংলো পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসবেন? আমার ভয় লাগছে।
মবিন রাজী হলো।

নবনীর ভয় লাগছিলো না। লোকটির কথায় সে প্রভাবিত হয়েছে। এবং সেটা নবনী ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। প্রভাবিত হওয়ার মত কোন কথা মবিনউদ্দিন বলেনি। কিন্তু তার কথা বয়াল্র ভঙ্গি অন্যরকম। যেতে লোকটার সাথে কথা বলার লোভে সে এগিয়ে দিতে অনুরোধ করেছে।

বাস্তবে তাদের মধ্যে কোন কথাই হলো না। এবং এক সময় বাংলোর গেটে চলে এলো। নবনী জআনে ভেতরে গেলেই সে তার বন ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রী বাবার কাছে বকা খাবে। নবনী মবিনকে বলল,
-ধন্যবাদ।
মবিন হাসলো। নবনী বলল,
-আপনি কি প্রায়ই জ্যোৎস্না দেখেন?
-জ্বী।
-একাই দেখেন?
-জ্বী, হ্যা। তবে আজ আপনাকে নিমন্ত্রন করতে চাই।
নবনী শক্ত হয়ে গেল। কিছু বলল না। মবিন বলল,
-কাল পূর্নিমা ছিল। আজকের জ্যোৎস্না হবে অদ্ভুত এবং অসাধারন। যাবেন আপনি?
নবনী কঠিন স্বরে বলল,
-আপনি জানেন আপনি কাকে এই অদ্ভুত নিমন্ত্রন জাঞ্চছেন? যাকে তাকে এই নিমন্ত্রন জানানো যায় না। আপনাকে এইটুকুই বলার আছে আপনি বেয়াদবি করেছেন।
মবিন চুপ করে রইলো নবনী বলল,
-তবে আপনার সাথে আমি যাবো। চলুন দেখে আসি আপনার জ্যোৎস্না।

মবিন নির্বিকার ভঙ্গিতে এগোচ্ছে। শুরু থেকেই তারলাছে স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে। মবিনের অনেক দিন স্বপ্ন অসম্ভব রূপবতী কাউকে নিয়ে সে জ্যোৎস্না দেখবে। মন্ত্রী সাহেবের মেয়ে অসম্ভব রূপবতী।

যাওয়ার পথেও তাদের মধ্যে কোন কথা হলো না। নদীর পাড়ে৩ পৌছানোর পর নবনী বলল,
-আপনি বসুন। আমি বাংলোতে যাবো আর আসবো। এসে আপনার জ্যোৎস্না দেখবো।
মবিন বলল,
-আচ্ছা।

নবনি ফিরে যাচ্ছে। মবিন তাঁকিয়ে আছে সেদিকে। এক অন্ধকারে মিলিয়ে গেল নবনী। মবিন বটতলায় বসল।
রাত বাড়ছে। জ্যোৎস্না ধীরে ধীরে তার রূপ বদলাচ্ছে। মবিন অবাক চোখে তাঁকিয়ে আছে শূন্যে। সে অপেক্ষায়। তার জ্যোৎস্না অতিথির অপেক্ষা।

রাত ৩টা ৬ মিনিট।
১৫ নভেম্বর, ২০১৫।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১১৩৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/১১/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বেশ সুন্দর ও গোছানো লেখা ।
  • পরশ ২১/১১/২০১৫
    অনেক ভাল লিখেছেন
  • হাসান কাবীর ২১/১১/২০১৫
    বেশ ভালো।
  • চমৎকার আপনার লেখনী কবি
 
Quantcast