নগ্ন বাল্ব
মাথার উপর একটা এক'শ পাওয়ারের বাল্ব জ্বলছে।
নগ্ন বাল্ব।
পুরো ঘরটা অন্ধকার। শুধু মাত্র আমি আর আমার সামনের টেবিলটা আলোকিত। কিন্তু আমার বিপরীতে বসে থাকা দারোগা সাহেব বলতে গেলে প্রায় অন্ধকারেই আছেন। তিনি আসলেই অন্ধকারে আছেন। আমিও।
এখনো প্রশ্নবাণ শুরু হয়নি। ক্লিন শেভকরা দারোগা বাবু আমার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছেন। আমি আড় চোখে পুরো ঘরটা দেখার চেষ্টা করছি। আর কিবা করার আছে আমার? উনি প্রশ্ন করলে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা যেত।
দারোগা বাবু টেবিলে হাত রেখে, মাথা সামনের দিকে এগিয়ে তার প্রথম প্রশ্ন করলেন। সাধারন প্রশ্ন। তবে অন্য ভাবে।
-আমি আনিসুর রহমান। আপনি?
আলোতে আসার পর খেয়াল করলাম আনিস সাহেব সুদর্শন ব্যক্তি। আমি তাকে দশ এর ভিতর ৯ দেব। পৃথিবীর কেউই নিখুঁত না। আনিস সাহেবেরও নিশ্চয় কোন খুঁত আছে যা আমার চোখে পড়ছে না। তাই এক কম দিলাম।
-আপনার নামটা?
একজন দারোগা এতো সুন্দর ভাবে করা কোন প্রশ্নের উত্তর না দিলে তাকে অপমান করা হয়। তাই নাম বললাম।
- ইফতেখার।
-শুধুই ইফতেখার?
- জ্বি স্যার। শুধু ইফতেখার।
- কি করেন?
- চাকরী। সরকারী।
- কোন ডিপার্টমেন্ট?
আমি দারোগা আনিস সাহেবের দিকে না তাকিয়েই বললাম,
- বলব না।
দারোগা সাহেব মনে হল বিশাল ধাক্কা খেয়েছেন। কিন্তু বেশ ভালই সামলে নিলেন।
- কেন বলবেন না?
- প্রথমত এটা আমার ইচ্ছা। দ্বিতীয়ত উপর তলার নিষেধ আছে।
বলেই একটা থাবড়া খেলাম। রাম থাবড়া। মাথা ঘোরা শুরু হয়ে গেছে। আনিস সাহেবকে দেখে মনে হয়নি এত দ্রুত খেপে যাবেন। আরো সময় নিবেন ভেবেছিলাম। মাথা ঘোরা থামতেই চুল ধরে এক টান খেলাম। পেছন থেকে। আনিস সাহেব যে কখন পেছনে চলে গেছেন টেরই পাইনি।
-কই চাকরী করিস বল। তোর উপর তলার লোক কারা বল।
প্রশ্নের পরই চুলের টান একটু কমলো। আমি বললাম,
- আপনার হাতের জোর কিন্তু বেশ ভালো। কোথায় শিখলেন এই 'থাপ্পড় বিদ্যা? সারদা পুলিশ একাডেমি তে? ট্রেইনার কে ছিল? মুমিনুল সাহেব?
আনিসুর সাহেব এবার আরো বড় ধাক্কা খেলেন। আমার চুল আলগা হয়ে গেল। তিনি আবার সামনে এসে বসলেন।
-কে আপনি??
আনিসুর সাহেব আপনি থেকে তুইতে নেমে গিয়ে ছিলেন। আবার সরাসরি আপনিতে উঠে এলেন। এখন তিনি ঘামছেন।
- দারোগা বাবু, আপনিও ওই পুড়তে থাকা বাসের সামনে এসে দারিয়ে ছিলেন, আমিও। আপনি শার্ট, প্যান্ট পড়া, আমিও। যদিও রংটা আলাদা। আপনি আমাকে সহ আরো কিছু লোক ধরে আনলেন। শক্ত করে মার দিয়ে কথা বের করার জন্য। আপনারা আমার সব সার্চ করলেন। কিন্তু বুক পকেটা বাদ দিলেন। আর ওখানেই আমার আইডি কার্ড ছিল। আমিও চুপচাপ আপনাদের কাজ দেখতে লাগলাম। যারা আমার মত সত্যিই জানে না যে কারা বাসটাতে আগুন দিয়েছে তারা আমার মত মার খাবে। কিন্তু কিছুই বলতে পারবে না। আচ্ছা, সত্যি করে বলুন তো, আপনার কি মনে হয় যারা বাসটাতে আগুন দিয়েছে তারা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল?এই কারনেই এদেশের মানুষ তাদের সবচে বড় বন্ধু পুলিশের উপর ভরসা করে না।
আনিসুর সাহেব আমার দিকে তাকিয়েই হাসলেন। আমি তাকে সঙ্গে সঙ্গে দশে দশ দিয়ে দিলাম। এরকম একটা পরিবেশে হাসতে পারার জন্য তাকে ওই এক নম্বর দিলাম।
১১ ডিসেম্বর, ২০১৩
নগ্ন বাল্ব।
পুরো ঘরটা অন্ধকার। শুধু মাত্র আমি আর আমার সামনের টেবিলটা আলোকিত। কিন্তু আমার বিপরীতে বসে থাকা দারোগা সাহেব বলতে গেলে প্রায় অন্ধকারেই আছেন। তিনি আসলেই অন্ধকারে আছেন। আমিও।
এখনো প্রশ্নবাণ শুরু হয়নি। ক্লিন শেভকরা দারোগা বাবু আমার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছেন। আমি আড় চোখে পুরো ঘরটা দেখার চেষ্টা করছি। আর কিবা করার আছে আমার? উনি প্রশ্ন করলে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করা যেত।
দারোগা বাবু টেবিলে হাত রেখে, মাথা সামনের দিকে এগিয়ে তার প্রথম প্রশ্ন করলেন। সাধারন প্রশ্ন। তবে অন্য ভাবে।
-আমি আনিসুর রহমান। আপনি?
আলোতে আসার পর খেয়াল করলাম আনিস সাহেব সুদর্শন ব্যক্তি। আমি তাকে দশ এর ভিতর ৯ দেব। পৃথিবীর কেউই নিখুঁত না। আনিস সাহেবেরও নিশ্চয় কোন খুঁত আছে যা আমার চোখে পড়ছে না। তাই এক কম দিলাম।
-আপনার নামটা?
একজন দারোগা এতো সুন্দর ভাবে করা কোন প্রশ্নের উত্তর না দিলে তাকে অপমান করা হয়। তাই নাম বললাম।
- ইফতেখার।
-শুধুই ইফতেখার?
- জ্বি স্যার। শুধু ইফতেখার।
- কি করেন?
- চাকরী। সরকারী।
- কোন ডিপার্টমেন্ট?
আমি দারোগা আনিস সাহেবের দিকে না তাকিয়েই বললাম,
- বলব না।
দারোগা সাহেব মনে হল বিশাল ধাক্কা খেয়েছেন। কিন্তু বেশ ভালই সামলে নিলেন।
- কেন বলবেন না?
- প্রথমত এটা আমার ইচ্ছা। দ্বিতীয়ত উপর তলার নিষেধ আছে।
বলেই একটা থাবড়া খেলাম। রাম থাবড়া। মাথা ঘোরা শুরু হয়ে গেছে। আনিস সাহেবকে দেখে মনে হয়নি এত দ্রুত খেপে যাবেন। আরো সময় নিবেন ভেবেছিলাম। মাথা ঘোরা থামতেই চুল ধরে এক টান খেলাম। পেছন থেকে। আনিস সাহেব যে কখন পেছনে চলে গেছেন টেরই পাইনি।
-কই চাকরী করিস বল। তোর উপর তলার লোক কারা বল।
প্রশ্নের পরই চুলের টান একটু কমলো। আমি বললাম,
- আপনার হাতের জোর কিন্তু বেশ ভালো। কোথায় শিখলেন এই 'থাপ্পড় বিদ্যা? সারদা পুলিশ একাডেমি তে? ট্রেইনার কে ছিল? মুমিনুল সাহেব?
আনিসুর সাহেব এবার আরো বড় ধাক্কা খেলেন। আমার চুল আলগা হয়ে গেল। তিনি আবার সামনে এসে বসলেন।
-কে আপনি??
আনিসুর সাহেব আপনি থেকে তুইতে নেমে গিয়ে ছিলেন। আবার সরাসরি আপনিতে উঠে এলেন। এখন তিনি ঘামছেন।
- দারোগা বাবু, আপনিও ওই পুড়তে থাকা বাসের সামনে এসে দারিয়ে ছিলেন, আমিও। আপনি শার্ট, প্যান্ট পড়া, আমিও। যদিও রংটা আলাদা। আপনি আমাকে সহ আরো কিছু লোক ধরে আনলেন। শক্ত করে মার দিয়ে কথা বের করার জন্য। আপনারা আমার সব সার্চ করলেন। কিন্তু বুক পকেটা বাদ দিলেন। আর ওখানেই আমার আইডি কার্ড ছিল। আমিও চুপচাপ আপনাদের কাজ দেখতে লাগলাম। যারা আমার মত সত্যিই জানে না যে কারা বাসটাতে আগুন দিয়েছে তারা আমার মত মার খাবে। কিন্তু কিছুই বলতে পারবে না। আচ্ছা, সত্যি করে বলুন তো, আপনার কি মনে হয় যারা বাসটাতে আগুন দিয়েছে তারা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল?এই কারনেই এদেশের মানুষ তাদের সবচে বড় বন্ধু পুলিশের উপর ভরসা করে না।
আনিসুর সাহেব আমার দিকে তাকিয়েই হাসলেন। আমি তাকে সঙ্গে সঙ্গে দশে দশ দিয়ে দিলাম। এরকম একটা পরিবেশে হাসতে পারার জন্য তাকে ওই এক নম্বর দিলাম।
১১ ডিসেম্বর, ২০১৩
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
T s J ১৩/০৬/২০১৫গল্পটায় আপনি কি ছিলেন জানলাম না
-
সবুজ আহমেদ কক্স ২১/০৪/২০১৫ভেরি নাইস তো
-
তরীকুল ইসলাম সৈকত ১৬/০৪/২০১৫ধন্যবাদ...
-
সবুজ আহমেদ কক্স ১৬/০৪/২০১৫বেশ ভাল