চার রাস্তার মোড়
রাত হলে এলাকার মোড়ে মোড়ে লেগুনা নিয়ে টহল পুলিশ ঘুরাঘুরি করে। এসব লেগুনার ড্রাইভাররাও হয় পুলিশ। সেই টহল পুলিশের খপ্পরে পড়েছি। ব্যাপারটা মোটেই শুভ নয়। বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী খুব ভয়াবহ। তারা সব সময় খুব সহজ প্রশ্ন করে, যার উত্তরগুলো হয় বরফের চেয়ে কঠিন। দেখা গেলো হাই স্পিডে চালানোর কারনে কাওকে কেস দিলো অথচ সিগারেট পেয়ে ধর্ষণের আসামিকে ছেড়ে দিলো। তাই পুলিশ ভাইদের সম্পর্কে প্রেডিক্ট করা মুশকিল। আমার ব্যাক্তিগত সমীক্ষা বলে, বাংলাদেশের এস.আই আর কন্সটেবল লেভেলের কোন পুলিশ সোজা হয়ে দাড়াতে পারে না। মনে হয় কোন এক অজানা শক্তি তাদেরকে কোমর বরাবর সামনের দিকে ধাক্কা দিচ্ছে। তাছাড়াও পুলিশ ভাইদের যেই হারে মুডসুইং হয়, বয়ঃসন্ধিকালীন একটি মেয়েরও সম্ভবত এত বেশী মুডসুইং হয় না।
'এই ভাই দাড়ান' বলে দুজন পুলিশ আমার দিকে এগিয়ে এলেন। রাস্তার প্রায় নষ্ট বাতির আলোতে তাদের ইউনিফর্ম দেখছিলাম। মনে হয় ২ মাস যাবত ধোয়া হয় না। এ বাহিনীতে পরিষ্কার ইউনিফর্ম কেবল আইজি, এআইজি, ডিআইজি আর কমিশনাররাই পড়েন ।
'কে আপনি?' একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন।
'জ্বি, আসসালামুয়ালাইকুম।'
'নাম জিগাইসি। সালাম দিতে কই নাই। কি করেন?'
'আসলে বাসাতেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু, পকেটে চাবিটা খুজে পাচ্ছি না। হয়তো কোথাও হারিয়ে ফেলেছি।'
'এহন কি করবেন ?'
'রাস্তাতেই থাকতে হবে বোধ হয়।'
'জাকগা। সেইটা আপনের ব্যাপার। পকেটে যা আসে বাইর করেন।'
আমি পকেটে যা ছিলো তা বের করতেই এক ভাই পেনড্রাইভের দিকে আঙ্গুল দিয়ে বলল, 'এইডা কি?'
'পেনড্রাইভ।'
'কি ড্রাইভ?'
'আপনি পেনড্রাইভ চিনেন না?'
'পুলিশরে প্রশ্ন করবেন না । ঝামেলায় পরবেন । এই জিনিসের কাজ কি ?'
'ফাইল সংরক্ষণ।'
'আপনার এইডাতে কি আছে?'
'অনেক কিছুইতো আছে।'
'আপনার কথা বার্তা সন্দেহজনক' বলে তারা লেগুনার দিকে তাকিয়ে 'স্যার…' বলে একজন কে ডাকলেন, সম্ভবত উনাদের বড় স্যার।
এই বড় স্যারের ইউনিফর্ম আরো বেশী ময়লা। চেহারায় খুব হাসিখুশী ভাব যেন এইমাত্র জাতির জন্যে একুশে পদক জয় করে নিয়ে এসেছেন।
'স্যার, উনার কাছে কি যেনো একটা আছে। তাতে অনেক কিছুই নাকি সংরক্ষণ করা যায়।' 'ভেরী সাসপিশিয়াস,স্যার' আরেকজন বললেন।
বড় স্যার বললেন 'আর কিসু পাওয়া যায় নাই?'
'স্যার মোবাইল আর একটা কাগজ।'
'সিগারেট পাস নাই?'
'না স্যার।'
একথা শুনার সাথে সাথে বড় স্যারের চেহারা থেকে একুশে পদক পাবার আনন্দ পুরোপুরি নেমে গেলো।
'কি নাম আপনার ? আপনি স্মোক করেন না?' এমনভাবে বললেন যেনো স্মোক না করাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
'না স্যার।'
'গার্লফ্রেন্ড আছে?'
'না স্যার।'
'কি বলেন ভাই? আপনার বয়সের একজন মানুষের প্রেমিকা নাই, সিগারেট খান না। আনবিলিভেবল ! তবে মজার ব্যাপার কি জানেন? এ ধরনের লোকগুলাই বড় মাপের টেরোরিস্ট হয়।'
'স্যার, আপনার কাছে একটা কলম হবে?'
'কলম ?'
'হ্যা, স্যার।'
'কেনো?'
'আমার মামাকে একটি চিঠি লিখবো। ক্ষমাপ্রার্থনা করে চিঠি।'
'সাহেব, আপনার মামাকে চিঠি লেখার জন্যে আমি আপনাকে কলম দিবো ? আপনি জানেন আমি কে?'
'আপনার নেইমপ্লেটে জাহাংগীর (O+ve ) এর বেশী কিছু দেখা যাচ্ছে না।'
'শাট আপ। আপনার মামা কে? আপনাকে এখন আমরা নিয়ে যাচ্ছি। চলেন, হাজতে যেয়ে রাতের আহার সারবেন। মামা কে চিঠিতে লিখে জানান, মুচলেকা দিয়ে আপনাকে নিয়ে যেতে হবে। লেখুন আপনার মামাকে।' বলে জাহাংগীর (O+ve) একটি রেডলিফ পেন আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।
'এজন্যে তো আমার দরকার হবে না স্যার। চাইলে আপনিই আমার হয়ে এই ম্যাসেজ টা মামাকে দিয়ে দিতে পারেন।'
'হোয়াট ডু ইউ মিন?'
'জ্বি, আমার মামাকে আপনিও চিনেন।'
'কে?'
'তিনি অত্যন্ত উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। চাইলে শুরুতেই আমি উনার পরিচয়টা দিতে পারতাম। কিন্তু দেই নি কেনো জানেন? পালোয়ান সিগারেট খোর পুলিশদের ঘাবড়ে দিতে আমার অত্যন্ত ভালো লাগে।'
'আপনি কিন্তু নামটা এখনো বলছেন না ?'
'উনার নাম তোরাব আলী জোয়ার্দার।'
'এই নামে আমি বাংলাদেশে শুধু একজন কেই চিনি। আর তিনি হচ্ছেন আইজি স্যার।'
'হ্যা, উনিই আমার মামা।'
'ফাতরামী করেন মিস্টার? বিপদে পরলে সবাই আইজি স্যারের ভাগিনা হইয়া যায়। স্যারের ভাগিনা ইউএসএ থাকে। কিছুদিন আগেই এক মিটিং এর সময় স্যারের কাছে ফোন আসছিলো।'
'আপনি ১০০ % রাইট। আমি গত সপ্তাহে দেশে এসেছি। মামার শরীর খারাপ শুনে আর দেরি করি নি। চলুন আপনার লেগুনা দিয়েই যাই। তাহলে আমার জন্যে সুবিধাই হবে।'
মুহুর্তেই পুলিশ স্যারের অবস্থা চড়ুই পাখির মত হয়ে গেলো। চড়ুই পাখি যেমন সব সময় আতংকে থাকে, এই বুঝি কেউ ধরে ফেললো, এই বুঝি কেউ পানি ঢাললো। তাই তারা এক জায়গায় বেশিক্ষণ স্থির থাকতে পারে না। বড় স্যারও পারছেন না। তাই চক্রাকারে ঘুরছেন।
অন্য ২ পুলিশ ভাইকে ডেকে বললেন, 'ইউ ননসেন্স ! কাকে ধরো ? হুশ থাকেনা, রাস্কেল ?' তারপর, উনি আমার সামনে আসলেন।
আমি আবার বললাম, 'স্যার কলম হবে?' উনি উনার পকেট থেকে আবার কলমটি বের করে সরি বলে এমন ভাবে লেগুনায় গিয়ে উঠলেন, যেনো উনার ডায়রিয়া হয়েছে। আর লেগুনা হচ্ছে উনার বাথরুম।
আমার মাথায় কেবল একটি বিষয়ই ঘুরছে।
যে দেশের পুলিশ পেনড্রাইভ চিনে না, সে দেশে থাকার কোন মানেই হয় না....!!!
'এই ভাই দাড়ান' বলে দুজন পুলিশ আমার দিকে এগিয়ে এলেন। রাস্তার প্রায় নষ্ট বাতির আলোতে তাদের ইউনিফর্ম দেখছিলাম। মনে হয় ২ মাস যাবত ধোয়া হয় না। এ বাহিনীতে পরিষ্কার ইউনিফর্ম কেবল আইজি, এআইজি, ডিআইজি আর কমিশনাররাই পড়েন ।
'কে আপনি?' একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলেন।
'জ্বি, আসসালামুয়ালাইকুম।'
'নাম জিগাইসি। সালাম দিতে কই নাই। কি করেন?'
'আসলে বাসাতেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু, পকেটে চাবিটা খুজে পাচ্ছি না। হয়তো কোথাও হারিয়ে ফেলেছি।'
'এহন কি করবেন ?'
'রাস্তাতেই থাকতে হবে বোধ হয়।'
'জাকগা। সেইটা আপনের ব্যাপার। পকেটে যা আসে বাইর করেন।'
আমি পকেটে যা ছিলো তা বের করতেই এক ভাই পেনড্রাইভের দিকে আঙ্গুল দিয়ে বলল, 'এইডা কি?'
'পেনড্রাইভ।'
'কি ড্রাইভ?'
'আপনি পেনড্রাইভ চিনেন না?'
'পুলিশরে প্রশ্ন করবেন না । ঝামেলায় পরবেন । এই জিনিসের কাজ কি ?'
'ফাইল সংরক্ষণ।'
'আপনার এইডাতে কি আছে?'
'অনেক কিছুইতো আছে।'
'আপনার কথা বার্তা সন্দেহজনক' বলে তারা লেগুনার দিকে তাকিয়ে 'স্যার…' বলে একজন কে ডাকলেন, সম্ভবত উনাদের বড় স্যার।
এই বড় স্যারের ইউনিফর্ম আরো বেশী ময়লা। চেহারায় খুব হাসিখুশী ভাব যেন এইমাত্র জাতির জন্যে একুশে পদক জয় করে নিয়ে এসেছেন।
'স্যার, উনার কাছে কি যেনো একটা আছে। তাতে অনেক কিছুই নাকি সংরক্ষণ করা যায়।' 'ভেরী সাসপিশিয়াস,স্যার' আরেকজন বললেন।
বড় স্যার বললেন 'আর কিসু পাওয়া যায় নাই?'
'স্যার মোবাইল আর একটা কাগজ।'
'সিগারেট পাস নাই?'
'না স্যার।'
একথা শুনার সাথে সাথে বড় স্যারের চেহারা থেকে একুশে পদক পাবার আনন্দ পুরোপুরি নেমে গেলো।
'কি নাম আপনার ? আপনি স্মোক করেন না?' এমনভাবে বললেন যেনো স্মোক না করাটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
'না স্যার।'
'গার্লফ্রেন্ড আছে?'
'না স্যার।'
'কি বলেন ভাই? আপনার বয়সের একজন মানুষের প্রেমিকা নাই, সিগারেট খান না। আনবিলিভেবল ! তবে মজার ব্যাপার কি জানেন? এ ধরনের লোকগুলাই বড় মাপের টেরোরিস্ট হয়।'
'স্যার, আপনার কাছে একটা কলম হবে?'
'কলম ?'
'হ্যা, স্যার।'
'কেনো?'
'আমার মামাকে একটি চিঠি লিখবো। ক্ষমাপ্রার্থনা করে চিঠি।'
'সাহেব, আপনার মামাকে চিঠি লেখার জন্যে আমি আপনাকে কলম দিবো ? আপনি জানেন আমি কে?'
'আপনার নেইমপ্লেটে জাহাংগীর (O+ve ) এর বেশী কিছু দেখা যাচ্ছে না।'
'শাট আপ। আপনার মামা কে? আপনাকে এখন আমরা নিয়ে যাচ্ছি। চলেন, হাজতে যেয়ে রাতের আহার সারবেন। মামা কে চিঠিতে লিখে জানান, মুচলেকা দিয়ে আপনাকে নিয়ে যেতে হবে। লেখুন আপনার মামাকে।' বলে জাহাংগীর (O+ve) একটি রেডলিফ পেন আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।
'এজন্যে তো আমার দরকার হবে না স্যার। চাইলে আপনিই আমার হয়ে এই ম্যাসেজ টা মামাকে দিয়ে দিতে পারেন।'
'হোয়াট ডু ইউ মিন?'
'জ্বি, আমার মামাকে আপনিও চিনেন।'
'কে?'
'তিনি অত্যন্ত উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তা। চাইলে শুরুতেই আমি উনার পরিচয়টা দিতে পারতাম। কিন্তু দেই নি কেনো জানেন? পালোয়ান সিগারেট খোর পুলিশদের ঘাবড়ে দিতে আমার অত্যন্ত ভালো লাগে।'
'আপনি কিন্তু নামটা এখনো বলছেন না ?'
'উনার নাম তোরাব আলী জোয়ার্দার।'
'এই নামে আমি বাংলাদেশে শুধু একজন কেই চিনি। আর তিনি হচ্ছেন আইজি স্যার।'
'হ্যা, উনিই আমার মামা।'
'ফাতরামী করেন মিস্টার? বিপদে পরলে সবাই আইজি স্যারের ভাগিনা হইয়া যায়। স্যারের ভাগিনা ইউএসএ থাকে। কিছুদিন আগেই এক মিটিং এর সময় স্যারের কাছে ফোন আসছিলো।'
'আপনি ১০০ % রাইট। আমি গত সপ্তাহে দেশে এসেছি। মামার শরীর খারাপ শুনে আর দেরি করি নি। চলুন আপনার লেগুনা দিয়েই যাই। তাহলে আমার জন্যে সুবিধাই হবে।'
মুহুর্তেই পুলিশ স্যারের অবস্থা চড়ুই পাখির মত হয়ে গেলো। চড়ুই পাখি যেমন সব সময় আতংকে থাকে, এই বুঝি কেউ ধরে ফেললো, এই বুঝি কেউ পানি ঢাললো। তাই তারা এক জায়গায় বেশিক্ষণ স্থির থাকতে পারে না। বড় স্যারও পারছেন না। তাই চক্রাকারে ঘুরছেন।
অন্য ২ পুলিশ ভাইকে ডেকে বললেন, 'ইউ ননসেন্স ! কাকে ধরো ? হুশ থাকেনা, রাস্কেল ?' তারপর, উনি আমার সামনে আসলেন।
আমি আবার বললাম, 'স্যার কলম হবে?' উনি উনার পকেট থেকে আবার কলমটি বের করে সরি বলে এমন ভাবে লেগুনায় গিয়ে উঠলেন, যেনো উনার ডায়রিয়া হয়েছে। আর লেগুনা হচ্ছে উনার বাথরুম।
আমার মাথায় কেবল একটি বিষয়ই ঘুরছে।
যে দেশের পুলিশ পেনড্রাইভ চিনে না, সে দেশে থাকার কোন মানেই হয় না....!!!
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অাব্দুল হাদী তুহিন ১৯/০৩/২০১৮ঘটনা কি সত্য ?
-
কাজী জুবেরী মোস্তাক ১৮/০৩/২০১৮ভালো ভাবনার লেখা
-
কামরুজ্জামান সাদ ১৮/০৩/২০১৮পেনড্রাইভ চেনা দেশে চলে যান।