জীবনের অসম্পূর্ণ গল্প (পার্ট-০১)
হঠাৎ একটা ঘটনা মনে পড়ল,,,,
তখন ৮ম শ্রেণীতে পড়ি।আমার চাচা একজন প্রফেসর ছিলেন, উনার কাছে মাঝে মাঝে পড়তে যেতাম।যদিও আমার চাচা-বাবারা এক সাথে থাকার কথা ছিল।যে কোন কারনে তা আর সম্ভব হয়নি।সবাই যার যার মতো,শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি।হঠাৎ একদিন চাচা তাদের বাসায় নতুন কম্পিউটার আনছে।মাঝে মাঝে তাদের বাসায় গেলে,দেখতাম সবাই মিলে কম্পিউটারে “ঠাকুরমার ঝুলি”দেখতেছে ।কার্টুনের মধ্যে আমার “ঠাকুরমার ঝুলি” খুব প্রিয় ছিলো।আমিও সময় পেলে বসে বসে দেখতাম।তখনি বাড়ির কর্তার,মানে আমার চাচা হুশিঁয়ার দিতো,আর বলতো“কেউ কম্পিউটারের কছে যাবে না,দূর থেকে দেখো।”খুব উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন তো,একটু আরেকটু ভাবতো থাকতই,তবুও বাসায় নতুন কম্পিউটার এনেছে,মাটিতে পা ফেলানোর অবস্থায় নেই তিনি।জানিনা,যখনি উনাদের বাসায় যেতাম ,তখনি বলতেন “কম্পিউটার ধরবে না।” কথাটা কি আমাদের শুনিয়ে বলতো,জানিনা। শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গেছিলো।তার মেয়ের বয়স ছিলো ৫ বছর।ছোট মেয়ে কম্পিউটার ধরলেও কিছু বলতেন না।আর আমরা তার মেয়ের থেকে বয়সে বড়,তবুও এমন কথা শুনতে হতো।কোন এক দিন কোন কারনে চাচার বাসায় বেড়াতে গেলাম।মানে,সারাদিন ওনাদের বাসায় থাকব,আমি আর আমার বোন।বাসায় চাচা বা চাচী কেও ছিলেন না।শুধু মাত্র ফুফাতো বোন ওনাদের বাসায় একা ছিলো।তাই আমাদের ডেকে নিয়ে আসছে,বোনের সাথে থাকার জন্যে।ফুফাতো বোন তখন এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিবে।আমাদের থেকে অনেক বড়।আমার জীবনে খুব শখ ছিল কম্পিউটারের কাজ শিক্ষা।কেননা আমি ঐ বয়সে কম্পিউটার চলাতে পারতাম না,তাই কম্পিউটারের প্রতি আমার আকর্ষণটা একটু বেশিই ছিলো।কিভাবে ওপেন করে ,কিভাবে বন্ধ করে,সব মিলিয়েই শুধু আকর্ষণ কাজ করছিলো।ভয়ও হতো,যদি চাচা কিছু বলে।অন্যের কোন জিনিস ধরা আমার অভ্যাস নেই,তবুও তিনি সবধান করে দিলেন আমরা যেন তার কম্পিউটার ওপেন করা তো দূরের কথা,যেনো একটুও না ছুঁই।আমার ফুফাতো বোন কম্পিউটার সম্পর্কে ভালেই ধারনা ছিলো।সে নিজের ইচ্ছেই আমাদের কম্পিউটারের কাছে নিয়ে বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দিচ্ছিলো।একবার ওপেন করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে আমাদের নাম লিখে দেখাচ্ছিলো।কিন্তু ঐ মুহূর্তে চাচা ফোন করে হুঁশিয়ার দিলেন,কম্পিউটার ওপেন করতে না করে দিলেন।ফুফাতো বোন তাড়াতাড়ি করে কম্পিউটার বন্ধ করে দিলেন।আমরা কম্পিউটার ধরলে নাকি নষ্ট হয়ে যাবে।খুব কড়া নির্দেশ,কম্পিউটারের ধারের কাছেও যেনো না যাওয়া হয়।অন্য রুমে নিয়ে বসাতে বলছিলেন।তিনি যদি সাবধান নাও করতেন তবুও আমি ধরতাম না।এর পর থেকে কোনদিন ছোঁয়াতো দূরের কথা কাছেও যায়নি।
সেই দিন এই কথাগুলো আর ব্যবহার আমার হৃদয়ে বড় ধরনের আঘাত করে।।খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।আর মনে মনে ডিসিশন নিলাম SSC পরীক্ষার পরে কম্পিউটারের কোর্স করে উনাকে দেখিয়ে দিবো,আমিও পাড়ি।কিন্তু এস.এস.সি পরীক্ষার পরে তাও সম্ভব হয়নি।আম্মুর ইচ্ছে সেলাই কাজ শেখানো।আমার ইচ্ছে কম্পিউটারের কাজ শিখা।তবুও মা রাজি হয়নি।মনে খুব রাগ নিয়ে সেলাই কাজটা শিখলাম।আমার স্বপ্নটা স্বপ্ন রয়ে গেলো।পরেও স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি।
ইন্টারে উঠলাম ICT নামক একটা সাবজেক্ট ছিল।।শুধু থিউরী পড়তাম,বোঝতাম।বলতে গেলে মুখস্থ বিদ্যা।যাদের বাসায় কম্পিউটার ছিলো তারা বেশী বোঝতো আর পাড়তো ।
মুটামুটি তাদের থেকে কমই বোঝতাম।যদিও কম্পিউটারের ব্যবহারিক ছিল, ক্লাসটা খুব কমই হতো।একদিন তো ব্যবহারিক ক্লাসে মাউসটা ধরতেই খুব ভয় হচ্ছিল।।কি জানি কি উল্টা পাল্টা হয়।।তবুও স্যারের সাহায্যে সাহস করে মাউস দ্বারা কি ভাবে কাজ করে তা শিখলাম।।
ইন্টার শেষ।মনস্থির করলাম এখনই সুযোগ আমার স্বপ্ন পূরণ করার।হুম তখনই ছিল আমার স্বপ্নপূরণ করার সময়।।
সবচেয়ে অবাক কান্ড আমার মধ্যে শুধু মাত্র সাধারন কোর্স করার যে স্বপ্ন ছিল,কিন্তু সেই সাধারন ইচ্ছে থেকে আজ আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছি।
(আলহামদুলিল্লাহ্)
কি জানি সেদিন হয়তো মহান সৃষ্টিকর্তা আমার কষ্টটা বোঝেছিলেন।তাই আমাকে সুযোগ করে দিলেন।
আজ আমি কম্পিউটারের অনেক কিছু না পাড়লেও স্বপ্নের ইচ্ছে থেকে অনেক বেশী কিছু পাড়ি।
চাচা কিছু দিন আগে যখন আমাদের বাসায় এসেছিলেন, জিঙ্গাসা করলেন কিসে পড়ি।তখন বাবা বলেছিলন “কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ি” ।তিনি মুখ ভেংচি কেটে বললেন “কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং এ পড়লে কি হবে?চাকুরী পাবে তো??”যদিও তার মুখে এই কথাটা শোভা পায়নি,কেননা তিনি শিক্ষিত সমাজের ভদ্র লোক ছিলেন।বাবার মনটা অনেক ছোট হয়ে গেল।কয়েকবার আমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তে না করছিলো।তবুও জোড় করে পড়ছি।কিন্তু চাচার কথাগুলো আমার মনে আজও দাগ কেটে আছে।।জানিনা আমার স্বপ্নটা কতটুকু সত্যি হবে সব আল্লাহর ইচ্ছে।।তিনিই এখন আমার একমাত্র ভরসা।আল্লাহ্ প্রতি বিশ্বাস রেখে বলছি,এই স্বপ্নটাও পূর্ণ করব ইনশাল্লাহ্,শুধু সময়ের অপেক্ষায়।।
Tanju H
তখন ৮ম শ্রেণীতে পড়ি।আমার চাচা একজন প্রফেসর ছিলেন, উনার কাছে মাঝে মাঝে পড়তে যেতাম।যদিও আমার চাচা-বাবারা এক সাথে থাকার কথা ছিল।যে কোন কারনে তা আর সম্ভব হয়নি।সবাই যার যার মতো,শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকি।হঠাৎ একদিন চাচা তাদের বাসায় নতুন কম্পিউটার আনছে।মাঝে মাঝে তাদের বাসায় গেলে,দেখতাম সবাই মিলে কম্পিউটারে “ঠাকুরমার ঝুলি”দেখতেছে ।কার্টুনের মধ্যে আমার “ঠাকুরমার ঝুলি” খুব প্রিয় ছিলো।আমিও সময় পেলে বসে বসে দেখতাম।তখনি বাড়ির কর্তার,মানে আমার চাচা হুশিঁয়ার দিতো,আর বলতো“কেউ কম্পিউটারের কছে যাবে না,দূর থেকে দেখো।”খুব উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন তো,একটু আরেকটু ভাবতো থাকতই,তবুও বাসায় নতুন কম্পিউটার এনেছে,মাটিতে পা ফেলানোর অবস্থায় নেই তিনি।জানিনা,যখনি উনাদের বাসায় যেতাম ,তখনি বলতেন “কম্পিউটার ধরবে না।” কথাটা কি আমাদের শুনিয়ে বলতো,জানিনা। শুনতে শুনতে অভ্যাস হয়ে গেছিলো।তার মেয়ের বয়স ছিলো ৫ বছর।ছোট মেয়ে কম্পিউটার ধরলেও কিছু বলতেন না।আর আমরা তার মেয়ের থেকে বয়সে বড়,তবুও এমন কথা শুনতে হতো।কোন এক দিন কোন কারনে চাচার বাসায় বেড়াতে গেলাম।মানে,সারাদিন ওনাদের বাসায় থাকব,আমি আর আমার বোন।বাসায় চাচা বা চাচী কেও ছিলেন না।শুধু মাত্র ফুফাতো বোন ওনাদের বাসায় একা ছিলো।তাই আমাদের ডেকে নিয়ে আসছে,বোনের সাথে থাকার জন্যে।ফুফাতো বোন তখন এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিবে।আমাদের থেকে অনেক বড়।আমার জীবনে খুব শখ ছিল কম্পিউটারের কাজ শিক্ষা।কেননা আমি ঐ বয়সে কম্পিউটার চলাতে পারতাম না,তাই কম্পিউটারের প্রতি আমার আকর্ষণটা একটু বেশিই ছিলো।কিভাবে ওপেন করে ,কিভাবে বন্ধ করে,সব মিলিয়েই শুধু আকর্ষণ কাজ করছিলো।ভয়ও হতো,যদি চাচা কিছু বলে।অন্যের কোন জিনিস ধরা আমার অভ্যাস নেই,তবুও তিনি সবধান করে দিলেন আমরা যেন তার কম্পিউটার ওপেন করা তো দূরের কথা,যেনো একটুও না ছুঁই।আমার ফুফাতো বোন কম্পিউটার সম্পর্কে ভালেই ধারনা ছিলো।সে নিজের ইচ্ছেই আমাদের কম্পিউটারের কাছে নিয়ে বিভিন্ন অংশের বর্ণনা দিচ্ছিলো।একবার ওপেন করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে আমাদের নাম লিখে দেখাচ্ছিলো।কিন্তু ঐ মুহূর্তে চাচা ফোন করে হুঁশিয়ার দিলেন,কম্পিউটার ওপেন করতে না করে দিলেন।ফুফাতো বোন তাড়াতাড়ি করে কম্পিউটার বন্ধ করে দিলেন।আমরা কম্পিউটার ধরলে নাকি নষ্ট হয়ে যাবে।খুব কড়া নির্দেশ,কম্পিউটারের ধারের কাছেও যেনো না যাওয়া হয়।অন্য রুমে নিয়ে বসাতে বলছিলেন।তিনি যদি সাবধান নাও করতেন তবুও আমি ধরতাম না।এর পর থেকে কোনদিন ছোঁয়াতো দূরের কথা কাছেও যায়নি।
সেই দিন এই কথাগুলো আর ব্যবহার আমার হৃদয়ে বড় ধরনের আঘাত করে।।খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।আর মনে মনে ডিসিশন নিলাম SSC পরীক্ষার পরে কম্পিউটারের কোর্স করে উনাকে দেখিয়ে দিবো,আমিও পাড়ি।কিন্তু এস.এস.সি পরীক্ষার পরে তাও সম্ভব হয়নি।আম্মুর ইচ্ছে সেলাই কাজ শেখানো।আমার ইচ্ছে কম্পিউটারের কাজ শিখা।তবুও মা রাজি হয়নি।মনে খুব রাগ নিয়ে সেলাই কাজটা শিখলাম।আমার স্বপ্নটা স্বপ্ন রয়ে গেলো।পরেও স্বপ্ন পূর্ণ হয়নি।
ইন্টারে উঠলাম ICT নামক একটা সাবজেক্ট ছিল।।শুধু থিউরী পড়তাম,বোঝতাম।বলতে গেলে মুখস্থ বিদ্যা।যাদের বাসায় কম্পিউটার ছিলো তারা বেশী বোঝতো আর পাড়তো ।
মুটামুটি তাদের থেকে কমই বোঝতাম।যদিও কম্পিউটারের ব্যবহারিক ছিল, ক্লাসটা খুব কমই হতো।একদিন তো ব্যবহারিক ক্লাসে মাউসটা ধরতেই খুব ভয় হচ্ছিল।।কি জানি কি উল্টা পাল্টা হয়।।তবুও স্যারের সাহায্যে সাহস করে মাউস দ্বারা কি ভাবে কাজ করে তা শিখলাম।।
ইন্টার শেষ।মনস্থির করলাম এখনই সুযোগ আমার স্বপ্ন পূরণ করার।হুম তখনই ছিল আমার স্বপ্নপূরণ করার সময়।।
সবচেয়ে অবাক কান্ড আমার মধ্যে শুধু মাত্র সাধারন কোর্স করার যে স্বপ্ন ছিল,কিন্তু সেই সাধারন ইচ্ছে থেকে আজ আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছি।
(আলহামদুলিল্লাহ্)
কি জানি সেদিন হয়তো মহান সৃষ্টিকর্তা আমার কষ্টটা বোঝেছিলেন।তাই আমাকে সুযোগ করে দিলেন।
আজ আমি কম্পিউটারের অনেক কিছু না পাড়লেও স্বপ্নের ইচ্ছে থেকে অনেক বেশী কিছু পাড়ি।
চাচা কিছু দিন আগে যখন আমাদের বাসায় এসেছিলেন, জিঙ্গাসা করলেন কিসে পড়ি।তখন বাবা বলেছিলন “কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ি” ।তিনি মুখ ভেংচি কেটে বললেন “কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং এ পড়লে কি হবে?চাকুরী পাবে তো??”যদিও তার মুখে এই কথাটা শোভা পায়নি,কেননা তিনি শিক্ষিত সমাজের ভদ্র লোক ছিলেন।বাবার মনটা অনেক ছোট হয়ে গেল।কয়েকবার আমাকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তে না করছিলো।তবুও জোড় করে পড়ছি।কিন্তু চাচার কথাগুলো আমার মনে আজও দাগ কেটে আছে।।জানিনা আমার স্বপ্নটা কতটুকু সত্যি হবে সব আল্লাহর ইচ্ছে।।তিনিই এখন আমার একমাত্র ভরসা।আল্লাহ্ প্রতি বিশ্বাস রেখে বলছি,এই স্বপ্নটাও পূর্ণ করব ইনশাল্লাহ্,শুধু সময়ের অপেক্ষায়।।
Tanju H
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Rabia Onti ২২/০৩/২০১৮গল্পটা পড়ে খুব ভাল লাগলো ।
-
আনাস খান ০৩/০৩/২০১৮Very Nice
Peace be upon you. -
মোঃআরাফাত হোসাইন ২৮/০২/২০১৮wow
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২৬/০২/২০১৮বেশ তো!
-
মোঃআরাফাত হোসাইন ২৬/০২/২০১৮hmmmmm
-
শামিম ইশতিয়াক ২৫/০২/২০১৮ভালো লাগলো