হিয়া দাহ্যে প্রিয় ১৩
#হিয়ার_দাহ্যে_প্রিয়
#তাবেরী ইসলাম
#পর্ব ১৩
পেট ব্যাথায় গুটিয়ে আছি সিয়ামের বুকে।
চিন্তিত হয়ে উঠলেন আমার কথা শুনে।হাতে ফোন নিয়ে কল করলেন কাকে। এই রাতে হস্পিটালের নিয়ে এসেছেন।
মনে হচ্ছে চোখ বন্ধ করলেই আমি আর তাকে দেখতে পাব না। হাতটা খামচে ধরে আছি। ডাক্তার ট্রেস্টের পরে কেবিনে দিলে সিয়াম নিজেই হাতে সেলাইনের সুই গেতে দিলেন। আমার চোখ ঝাপসা লাগছে আর অশ্রু ঝরছে।
আমার অস্থিরতায় হাত মোট করে ধরে রেখেছেন আর মাথায় ঠোঁটের স্পর্শ দিলেন।
সিয়াম চেয়ে রিমুর দিকে কখনো ভাবে নি এমন কিছু হবে ওদের সাথে। কয়েক মুহূর্তে পাল্টে গেল অনেক কিছু। রাত্রে এক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করতে হলো।
পিয়াস সিয়ামের কাঁধে হাত রেখে জানতে চাইল,কিভাবে এসব হল?? সন্ধ্যায় একটা এক্সিডেন্টে ধাক্কায় পড়ে গিয়েছিলাম আমরা। ও আসলে বুঝতে পারে নি ও প্রেগন্যান্ট।
আমি নিজে রিমুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়েছি সাথে বাচ্চাটাও চলে গেল। ও শুনলে কেমন রিয়েক্ট করবে ভাবতে পারছি না,বলে সিয়াম দুই হাতে আঁখি মুছলো।পিয়াস নিরব রইলো শান্তনা দেবার ভাষা নেই। পিয়াসকে বিদায় নিয়ে কেবিনে এসে রিমুর সিহরে বসে রইলো সারা রাত।
ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে সিয়ামের কাছে দেখলাম শরীর দূর্বল লাগছে।হাত নাড়াতেই সিয়াম জেগে গেলেন।
---ফলমূল খেটে সাজিয়ে নিয়ে এসেছেন। আমার মুখের সামনে ধরে বললেন হা করো তো। বললাম সকাল সকাল এসব কেন??
উনি মুখে একটুকরো পুরে বললেন তুমি খুব দুর্বল তাই।কিন্তু আপনার মুখ এত মলিন কেন??বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললেন কিছু না এমনি।
--মাথা উঁচু করে তাকাতেই অশ্রু পূর্ণ আঁখি নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। মন খারাপ আপনার কি হয়েছে বলুন? রিপোর্টে কি এসেছে??
চোখ মুছে চটজলদি ফলমূল খাওয়াচ্ছেন আর আমি বিরক্তি প্রকাশ করছি। কিছু ঔষুধ ও খাইয়ে দিলেন। আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর তিনি দিলেন না। শুয়ে দিয়ে বাহিরে বেরিয়ে গেলেন।
উনার নিরব কান্না আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে কিন্তু মন মস্তিষ্কে পারছে না চাপ নিতে।রিমুর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সিয়াম।
তার রিমঝিম যদি জানে সে মিসকেরেজ করেছে, তাহলে কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দেবে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। আর সবটা যে আমার জন্য হলো,সে যে ঠিক আছে এটাই আমার কাছে অনেক।
আমার ঘুম ভাঙ্গতেই, দেখি অলস ভঙ্গিতে সিয়াম ও বসে আছেন সোফায়।
আমাকে ডাকেন নি কেন??ভাবি খাবার নিয়ে এসেছেন। লাবিব মুনাও এসেছে। আমার পিচ্ছি আম্মুটা বসে আছে আমার পাশে।
ভাবি জিজ্ঞেস করলেন কেমন লাগছে এখন। ভালো লাগছে কিছুটা। খাবার প্লেটে নিয়ে মুখে তুলে দিলেন ভাবি আমায়। সিয়াম গম্ভীর হয়ে আছেন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
ভাবি খাইয়ে দিচ্ছেন আমি চেয়ে আছি রক্তের সম্পর্ক ছাড়া মানুষ এত আপন হয় জানা ছিল না।আমাদের বড় পরিবারেও ভাই বোন কখনো কাউকে আদর করে খাইয়ে দেওয়া হয় নি।
তবে স্মৃতি খুব মধুর। ভাবি পানি হাতে দিয়ে ওষুধ খেতে বললেন। সিয়ামকেও তাড়া দিলেন খেতে।
এই উটকো পরিবেশ আমার ভালো লাগছে না।কিছুক্ষণ গল্প করে সবকিছু নিয়ে ভাবি চলে যেতে উদ্যত হলেন। আরেকটু থাক না ভাবি। রিমু সাবধানে থেক,বাসা খালি আম্মু যদি তোমায় দেখতে আসেন। তাহলে রাগ করবেন।
তুমি শুয়ে থাক, আমি এগিয়ে দিয়ে আসি বলে সিয়াম চলে গেলেন।বোর হচ্ছি অনেকক্ষণ ধরে উনার আসার কোনো নাম নেই।
ফোন ও নেই সারাক্ষণ কি শুয়ে বসে থাকা যায়। একটু ফোন নিয়ে এলেন সিয়াম আমার শাশুড়ি আম্মু কল করে আমাকে দেখতে চেয়েছেন।
আম্মু তো দুজনকেই বকে যাচ্ছেন। কিভাবে এসব হলো। আমি কেন ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করি না। আর ভালো মন্দ কথা বলে রেখে দিলেন। রাতেই আসছেন আম্মু আব্বু। আমি আসলেই ভয়ে আছি কি হবে এবার??
বিকেল হতেই ভেজিট্রেবল সুপ নিয়ে এসেছেন সিয়াম। তাড়াতাড়ি খাও তো ঠান্ডা হয়ে যাবে। হা করো তো দু চামচ খাওয়ার পর ওয়াক এ গুলো কেউ খায়। খাবে না মানে তোমার মতো বুড়ি গুলো এগুলো খায় দেখ। বলে উনি এক চামচ মুখে নিলেন।
--- তার মানে আপনি বুড়া হা হা হা..........
হুম সমস্যা কি তুমি বুড়ি আমি তার বুড়া।
শুনেন আজকেই বাসায় যেতে চাই আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না প্লিজ। আজকে না কাল নিয়ে যাব আর কোনো কথা শুনতে চাই না।
মনে হতেই আবার জিজ্ঞেস করলাম রিপোর্টে কি এলো বললেন না তো? কিছু না শুধু পেঠে একটু ইনপেকশন হয়েছে তোমার।
--অহ!
হুম মাই মিসেস প্রিন্সেস।
আমার আম্মা আব্বা আপু ভাইয়া সবাই এক এক করে কল করে খুঁজ নিয়েছেন কেমন আছি। সন্ধ্যায় শশুড় শাশুড়ি হাজির হলেন। আম্মু রাতের খাবার রেধে নিয়ে এসেছেন।
আমার নিজের কাছে খারাপ লাগছে সবাইকে কষ্ট দিচ্ছি শুধু শুধু । নিয়াজ ভাইয়াও দেখে গেছেন। আব্বু মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন আমার মা-টা একটু দেখে শুনে চলবে রাস্তায়। আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম। আম্মু তো সিয়ামকে ঝাড়ি দিচ্ছেন কি করে এমন হলো?
দুজন চুপচাপ আছি। আব্বু আম্মুকে বললেন আহ! নিয়াজের মা এসব এখন বন্ধ করো তো তোমার। দেখতে পাচ্ছ মেয়েটা অসুস্থ তার মধ্যে এতো বকছো কেন তুমি।
আম্মু চোখ গরম করে তাকিয়ে বাহিরে গেলেন পিছনে আব্বু ও গেলেন। নিয়াজ ভাইয়া আব্বু আম্মুদের নিয়ে বাসায় চলে গেলেন। বারবার বলে গেলেন সাবধানে থাকতে কিছু প্রয়োজন হলে নার্সকে বলতে সিয়াম তো আছেন।
--চলবে
#তাবেরী ইসলাম
#পর্ব ১৩
পেট ব্যাথায় গুটিয়ে আছি সিয়ামের বুকে।
চিন্তিত হয়ে উঠলেন আমার কথা শুনে।হাতে ফোন নিয়ে কল করলেন কাকে। এই রাতে হস্পিটালের নিয়ে এসেছেন।
মনে হচ্ছে চোখ বন্ধ করলেই আমি আর তাকে দেখতে পাব না। হাতটা খামচে ধরে আছি। ডাক্তার ট্রেস্টের পরে কেবিনে দিলে সিয়াম নিজেই হাতে সেলাইনের সুই গেতে দিলেন। আমার চোখ ঝাপসা লাগছে আর অশ্রু ঝরছে।
আমার অস্থিরতায় হাত মোট করে ধরে রেখেছেন আর মাথায় ঠোঁটের স্পর্শ দিলেন।
সিয়াম চেয়ে রিমুর দিকে কখনো ভাবে নি এমন কিছু হবে ওদের সাথে। কয়েক মুহূর্তে পাল্টে গেল অনেক কিছু। রাত্রে এক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করতে হলো।
পিয়াস সিয়ামের কাঁধে হাত রেখে জানতে চাইল,কিভাবে এসব হল?? সন্ধ্যায় একটা এক্সিডেন্টে ধাক্কায় পড়ে গিয়েছিলাম আমরা। ও আসলে বুঝতে পারে নি ও প্রেগন্যান্ট।
আমি নিজে রিমুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়েছি সাথে বাচ্চাটাও চলে গেল। ও শুনলে কেমন রিয়েক্ট করবে ভাবতে পারছি না,বলে সিয়াম দুই হাতে আঁখি মুছলো।পিয়াস নিরব রইলো শান্তনা দেবার ভাষা নেই। পিয়াসকে বিদায় নিয়ে কেবিনে এসে রিমুর সিহরে বসে রইলো সারা রাত।
ঘুম ভাঙ্গতেই নিজেকে সিয়ামের কাছে দেখলাম শরীর দূর্বল লাগছে।হাত নাড়াতেই সিয়াম জেগে গেলেন।
---ফলমূল খেটে সাজিয়ে নিয়ে এসেছেন। আমার মুখের সামনে ধরে বললেন হা করো তো। বললাম সকাল সকাল এসব কেন??
উনি মুখে একটুকরো পুরে বললেন তুমি খুব দুর্বল তাই।কিন্তু আপনার মুখ এত মলিন কেন??বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বললেন কিছু না এমনি।
--মাথা উঁচু করে তাকাতেই অশ্রু পূর্ণ আঁখি নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। মন খারাপ আপনার কি হয়েছে বলুন? রিপোর্টে কি এসেছে??
চোখ মুছে চটজলদি ফলমূল খাওয়াচ্ছেন আর আমি বিরক্তি প্রকাশ করছি। কিছু ঔষুধ ও খাইয়ে দিলেন। আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর তিনি দিলেন না। শুয়ে দিয়ে বাহিরে বেরিয়ে গেলেন।
উনার নিরব কান্না আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে কিন্তু মন মস্তিষ্কে পারছে না চাপ নিতে।রিমুর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সিয়াম।
তার রিমঝিম যদি জানে সে মিসকেরেজ করেছে, তাহলে কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দেবে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে। আর সবটা যে আমার জন্য হলো,সে যে ঠিক আছে এটাই আমার কাছে অনেক।
আমার ঘুম ভাঙ্গতেই, দেখি অলস ভঙ্গিতে সিয়াম ও বসে আছেন সোফায়।
আমাকে ডাকেন নি কেন??ভাবি খাবার নিয়ে এসেছেন। লাবিব মুনাও এসেছে। আমার পিচ্ছি আম্মুটা বসে আছে আমার পাশে।
ভাবি জিজ্ঞেস করলেন কেমন লাগছে এখন। ভালো লাগছে কিছুটা। খাবার প্লেটে নিয়ে মুখে তুলে দিলেন ভাবি আমায়। সিয়াম গম্ভীর হয়ে আছেন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
ভাবি খাইয়ে দিচ্ছেন আমি চেয়ে আছি রক্তের সম্পর্ক ছাড়া মানুষ এত আপন হয় জানা ছিল না।আমাদের বড় পরিবারেও ভাই বোন কখনো কাউকে আদর করে খাইয়ে দেওয়া হয় নি।
তবে স্মৃতি খুব মধুর। ভাবি পানি হাতে দিয়ে ওষুধ খেতে বললেন। সিয়ামকেও তাড়া দিলেন খেতে।
এই উটকো পরিবেশ আমার ভালো লাগছে না।কিছুক্ষণ গল্প করে সবকিছু নিয়ে ভাবি চলে যেতে উদ্যত হলেন। আরেকটু থাক না ভাবি। রিমু সাবধানে থেক,বাসা খালি আম্মু যদি তোমায় দেখতে আসেন। তাহলে রাগ করবেন।
তুমি শুয়ে থাক, আমি এগিয়ে দিয়ে আসি বলে সিয়াম চলে গেলেন।বোর হচ্ছি অনেকক্ষণ ধরে উনার আসার কোনো নাম নেই।
ফোন ও নেই সারাক্ষণ কি শুয়ে বসে থাকা যায়। একটু ফোন নিয়ে এলেন সিয়াম আমার শাশুড়ি আম্মু কল করে আমাকে দেখতে চেয়েছেন।
আম্মু তো দুজনকেই বকে যাচ্ছেন। কিভাবে এসব হলো। আমি কেন ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করি না। আর ভালো মন্দ কথা বলে রেখে দিলেন। রাতেই আসছেন আম্মু আব্বু। আমি আসলেই ভয়ে আছি কি হবে এবার??
বিকেল হতেই ভেজিট্রেবল সুপ নিয়ে এসেছেন সিয়াম। তাড়াতাড়ি খাও তো ঠান্ডা হয়ে যাবে। হা করো তো দু চামচ খাওয়ার পর ওয়াক এ গুলো কেউ খায়। খাবে না মানে তোমার মতো বুড়ি গুলো এগুলো খায় দেখ। বলে উনি এক চামচ মুখে নিলেন।
--- তার মানে আপনি বুড়া হা হা হা..........
হুম সমস্যা কি তুমি বুড়ি আমি তার বুড়া।
শুনেন আজকেই বাসায় যেতে চাই আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না প্লিজ। আজকে না কাল নিয়ে যাব আর কোনো কথা শুনতে চাই না।
মনে হতেই আবার জিজ্ঞেস করলাম রিপোর্টে কি এলো বললেন না তো? কিছু না শুধু পেঠে একটু ইনপেকশন হয়েছে তোমার।
--অহ!
হুম মাই মিসেস প্রিন্সেস।
আমার আম্মা আব্বা আপু ভাইয়া সবাই এক এক করে কল করে খুঁজ নিয়েছেন কেমন আছি। সন্ধ্যায় শশুড় শাশুড়ি হাজির হলেন। আম্মু রাতের খাবার রেধে নিয়ে এসেছেন।
আমার নিজের কাছে খারাপ লাগছে সবাইকে কষ্ট দিচ্ছি শুধু শুধু । নিয়াজ ভাইয়াও দেখে গেছেন। আব্বু মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন আমার মা-টা একটু দেখে শুনে চলবে রাস্তায়। আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বুঝালাম। আম্মু তো সিয়ামকে ঝাড়ি দিচ্ছেন কি করে এমন হলো?
দুজন চুপচাপ আছি। আব্বু আম্মুকে বললেন আহ! নিয়াজের মা এসব এখন বন্ধ করো তো তোমার। দেখতে পাচ্ছ মেয়েটা অসুস্থ তার মধ্যে এতো বকছো কেন তুমি।
আম্মু চোখ গরম করে তাকিয়ে বাহিরে গেলেন পিছনে আব্বু ও গেলেন। নিয়াজ ভাইয়া আব্বু আম্মুদের নিয়ে বাসায় চলে গেলেন। বারবার বলে গেলেন সাবধানে থাকতে কিছু প্রয়োজন হলে নার্সকে বলতে সিয়াম তো আছেন।
--চলবে
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শুভজিৎ বিশ্বাস ২৮/১২/২০২২চমৎকার
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ২৫/১২/২০২২অনেক সুন্দর!
-
ফয়জুল মহী ২৪/১২/২০২২বেশ চমৎকার