আমার একদিন ২য় শেষপর্ব
এই যে এখানে এসে নিজের সংসার সাজিয়ে নিয়েছ,শশুড় শাশুড়ি নিয়ে।ননদরা নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত।
নতুন জায়গায় নতুন মানুষদের সাথে মিলেমিশে চলছে দিন, বাড়িতে মাঝে মধ্যে কথা হয়। সবাই এখন আমার খুঁজ করেন।
আমার ভার তো এখন কাউকে বহন করতে হবে না। আমাদের ছোট সংসারে সারাদিন মুহিবের জন্য অপেক্ষা করে কেটে যায়। নিজ হাতে উনার প্রিয় জিনিস রান্না করি।
সন্ধ্যায় দুজনে ধোয়া উঠা কফি সাথে গল্প করি।ভাবছি ছোট খাট একটা কাপড়ের ব্যবসার চেষ্টা করব। অনলাইন শপিং এর জন্য তাতের বা সুতার কাজের শাড়ি আমাদের ওখানে সবাই অনেক পছন্দ করে।
দেখতে দেখতে সময়ের সাথে আমাদের পাঁচ বছর হয়ে গেছে এখানে। গ্রামের বাড়িতে সুন্দর একটা বাড়ি করেছেন। আমার দেবরাও আলাদা ঘর তৈরি করেছেন।দুই দেবরই বিদেশ থাকেন পরিবারের সাথে।
আমার শাশুড়ি ও খাবারে লবণ কম হলে কথা শুনাতেন আগে। কিন্তু মায়া ছিলো অনেক আমার জন্য। মুহিব প্রায় বলতেন মন খারাপ করো না আম্মু এমনই। এই বছর গুলোতে উনি প্রায় অসুস্থ থাকেন তাতে কি মা তো মা'ই হয়।শশুড় না ফেরার দেশে পাড়িয়ে জমিয়েছেন বছর হলো।
আমাদের কোল এখনো শূণ্য হয়ে আছে। মুহিব চাঁদনী রাত্রে আমার দু'হাত ধরে বসে আছেন। আমি অঝোরে অশ্রু ঝরাচ্ছি। দেখ অষ্টাদশী তুমি এভাবে হাল ছাড়লে হবে। দুষ্টু গোয়ালের চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।
গাড়ি বাড়ি সবি আছে আমাদের সুখী থাকার জন্য।তোমারকে এক গুচ্ছ ফুল দিতে পারব রোজ,বিকেলে সন্ধ্যার আলোয় হাত ধরে হেটে বেড়াব আমরা নির ভেজাল। আর কি চাই বল??
দু'জন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা একটা বাচ্চা দত্তক নেব। মুহিব আম্মুকে ম্যানেজ করে নিয়েছেন।
আজ শুক্রবার বিশেষ দিন,এক বছরে বাচ্চা মেয়ে নিয়ে আমি আর মুহিব বাসায় আসলাম।আম্মু মন খারাপ করলেও কিছুদিন পর মেনে নেন।
মেয়েটা আমায় আম্মু ডাকতে পারে, মুহিব মেয়ে বলতেই পাগল। অফিস শেষে বাবা মেয়ের সব দুষ্টুমি শুরু হয়।
মেয়ের নাম রেখেছি হৃদিতা জান্নাত। উনি এখন আমাকে হৃদির আম্মু বলেই ডাকেন আমিও আমার দোকানের কাজ গুলো সামলে নেই মেয়েকে সাথে নিয়ে।এখন দুটো দোকান আমাদের তাতের কাপড় আর শাল শীতের সময় এগুলোর চাহিদা অনেক বেশি হয়।
৭বছর পর বাড়ি যাচ্ছি মুহিব আর মেয়ে বেজায় খুশি। অনেক রকম খাবার টিপিন বক্সে ভরে দিয়েছেন আমার শাশুড়ি আম্মু।ভাবির জন্য শাড়ি আর শাল নিয়েছি। বাবুর জন্য জামা আর আম্মুর জন্য দামি শাড়ি।
অর্থবিত্ত যেদিকে আমার মায়ের মন সেদিকে সামান্য সুতি শাড়িতে মন হয়তো ভরবে না। তাই দামি স্টোনের শাড়ি নিয়েছি।
আমি বরাবর থ্রীপিচ পড়তে ভালোবাসি। আর বোরকা তো আছেই। ট্রেন জার্নি করে এসেছি অনেক মজা করেছি মা মেয়ে।
বাড়ি অনেক বদলে গেছে অনেকটা নিরব হয়ে আছে। আম্মু আর ভাবি অনেক আপ্যায়ন করলেন। উনি খুশি থাকলেই হলো।
ভাবিও আম্মুর সাথে কেমন করে থাকেন। আগের কথা গুলো ভাবলেই এখন হাসি পায়। তার পরও বউ শাশুড়ি এক। হঠাৎ আম্মুর ঘর থেকে শুনি এই মেয়ের হাতের জিনিস আমার নাতিরে খাবাবে না। ভালো কাজে এমন মানুষ থেকে দূর থাকবে।
আমার চোখে কান্না দেখে মুহিব এগিয়ে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে অষ্টাদশী?? বললাম অনেক দিন পর সবাইকে খুব বেশি মনে হচ্ছে তাই।
এই দু'দিনে আমি আর ভাইপুর কাছেই যাই নি। আমার মেয়ে আছে সেই অনেক। এই দু'দিন শুধু মুহিবকে খুশি করার জন্যই থাকা।
আসার সময় আম্মুকে বলে আসলাম আমার সন্তান নাই তাতে কি এই যে মেয়ে আছে একটা। আল্লাহ চাইলে আমার একদিন আসবে।তোমার নাতির নজর লাগবে না আমার দেখায়।
হাতে গুজে দিলাম নিজের আয় করা দু'হাজার টাকা। তুমি কিছু খেও দেখে শুনে। ভালো থেক।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। ট্রেন ভ্রমণ অনেক প্রিয় আমার। আমি,হৃদি আর মুহিব চাঁদনী রাত্রে ভ্রমণ করছি সাথে চানাচুর ভাজা দারুণ ট্রেস্টি লাগছে।
সারি সারি গাছ ঘর বাড়ি ছুটে চলছে অবিরাম আমাদের গন্তব্যে। নতুন সকালের আশায় একটি স্বপ্নের বাসায়।
সমাপ্ত----
১৩.১০.২০২২
নতুন জায়গায় নতুন মানুষদের সাথে মিলেমিশে চলছে দিন, বাড়িতে মাঝে মধ্যে কথা হয়। সবাই এখন আমার খুঁজ করেন।
আমার ভার তো এখন কাউকে বহন করতে হবে না। আমাদের ছোট সংসারে সারাদিন মুহিবের জন্য অপেক্ষা করে কেটে যায়। নিজ হাতে উনার প্রিয় জিনিস রান্না করি।
সন্ধ্যায় দুজনে ধোয়া উঠা কফি সাথে গল্প করি।ভাবছি ছোট খাট একটা কাপড়ের ব্যবসার চেষ্টা করব। অনলাইন শপিং এর জন্য তাতের বা সুতার কাজের শাড়ি আমাদের ওখানে সবাই অনেক পছন্দ করে।
দেখতে দেখতে সময়ের সাথে আমাদের পাঁচ বছর হয়ে গেছে এখানে। গ্রামের বাড়িতে সুন্দর একটা বাড়ি করেছেন। আমার দেবরাও আলাদা ঘর তৈরি করেছেন।দুই দেবরই বিদেশ থাকেন পরিবারের সাথে।
আমার শাশুড়ি ও খাবারে লবণ কম হলে কথা শুনাতেন আগে। কিন্তু মায়া ছিলো অনেক আমার জন্য। মুহিব প্রায় বলতেন মন খারাপ করো না আম্মু এমনই। এই বছর গুলোতে উনি প্রায় অসুস্থ থাকেন তাতে কি মা তো মা'ই হয়।শশুড় না ফেরার দেশে পাড়িয়ে জমিয়েছেন বছর হলো।
আমাদের কোল এখনো শূণ্য হয়ে আছে। মুহিব চাঁদনী রাত্রে আমার দু'হাত ধরে বসে আছেন। আমি অঝোরে অশ্রু ঝরাচ্ছি। দেখ অষ্টাদশী তুমি এভাবে হাল ছাড়লে হবে। দুষ্টু গোয়ালের চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো।
গাড়ি বাড়ি সবি আছে আমাদের সুখী থাকার জন্য।তোমারকে এক গুচ্ছ ফুল দিতে পারব রোজ,বিকেলে সন্ধ্যার আলোয় হাত ধরে হেটে বেড়াব আমরা নির ভেজাল। আর কি চাই বল??
দু'জন মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা একটা বাচ্চা দত্তক নেব। মুহিব আম্মুকে ম্যানেজ করে নিয়েছেন।
আজ শুক্রবার বিশেষ দিন,এক বছরে বাচ্চা মেয়ে নিয়ে আমি আর মুহিব বাসায় আসলাম।আম্মু মন খারাপ করলেও কিছুদিন পর মেনে নেন।
মেয়েটা আমায় আম্মু ডাকতে পারে, মুহিব মেয়ে বলতেই পাগল। অফিস শেষে বাবা মেয়ের সব দুষ্টুমি শুরু হয়।
মেয়ের নাম রেখেছি হৃদিতা জান্নাত। উনি এখন আমাকে হৃদির আম্মু বলেই ডাকেন আমিও আমার দোকানের কাজ গুলো সামলে নেই মেয়েকে সাথে নিয়ে।এখন দুটো দোকান আমাদের তাতের কাপড় আর শাল শীতের সময় এগুলোর চাহিদা অনেক বেশি হয়।
৭বছর পর বাড়ি যাচ্ছি মুহিব আর মেয়ে বেজায় খুশি। অনেক রকম খাবার টিপিন বক্সে ভরে দিয়েছেন আমার শাশুড়ি আম্মু।ভাবির জন্য শাড়ি আর শাল নিয়েছি। বাবুর জন্য জামা আর আম্মুর জন্য দামি শাড়ি।
অর্থবিত্ত যেদিকে আমার মায়ের মন সেদিকে সামান্য সুতি শাড়িতে মন হয়তো ভরবে না। তাই দামি স্টোনের শাড়ি নিয়েছি।
আমি বরাবর থ্রীপিচ পড়তে ভালোবাসি। আর বোরকা তো আছেই। ট্রেন জার্নি করে এসেছি অনেক মজা করেছি মা মেয়ে।
বাড়ি অনেক বদলে গেছে অনেকটা নিরব হয়ে আছে। আম্মু আর ভাবি অনেক আপ্যায়ন করলেন। উনি খুশি থাকলেই হলো।
ভাবিও আম্মুর সাথে কেমন করে থাকেন। আগের কথা গুলো ভাবলেই এখন হাসি পায়। তার পরও বউ শাশুড়ি এক। হঠাৎ আম্মুর ঘর থেকে শুনি এই মেয়ের হাতের জিনিস আমার নাতিরে খাবাবে না। ভালো কাজে এমন মানুষ থেকে দূর থাকবে।
আমার চোখে কান্না দেখে মুহিব এগিয়ে জিজ্ঞেস করলেন কি হয়েছে অষ্টাদশী?? বললাম অনেক দিন পর সবাইকে খুব বেশি মনে হচ্ছে তাই।
এই দু'দিনে আমি আর ভাইপুর কাছেই যাই নি। আমার মেয়ে আছে সেই অনেক। এই দু'দিন শুধু মুহিবকে খুশি করার জন্যই থাকা।
আসার সময় আম্মুকে বলে আসলাম আমার সন্তান নাই তাতে কি এই যে মেয়ে আছে একটা। আল্লাহ চাইলে আমার একদিন আসবে।তোমার নাতির নজর লাগবে না আমার দেখায়।
হাতে গুজে দিলাম নিজের আয় করা দু'হাজার টাকা। তুমি কিছু খেও দেখে শুনে। ভালো থেক।
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। ট্রেন ভ্রমণ অনেক প্রিয় আমার। আমি,হৃদি আর মুহিব চাঁদনী রাত্রে ভ্রমণ করছি সাথে চানাচুর ভাজা দারুণ ট্রেস্টি লাগছে।
সারি সারি গাছ ঘর বাড়ি ছুটে চলছে অবিরাম আমাদের গন্তব্যে। নতুন সকালের আশায় একটি স্বপ্নের বাসায়।
সমাপ্ত----
১৩.১০.২০২২
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শুভজিৎ বিশ্বাস ২২/১২/২০২২বাস্তবধর্মী ও চরম সত্য
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ২০/১২/২০২২মুগ্ধকর!
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৮/১২/২০২২বেশ!
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ১৮/১২/২০২২ভাল লেখা
-
ফয়জুল মহী ১৭/১২/২০২২অনুপম প্রকাশ।
বেশ ভালো লাগলো