হিয়ার দাহ্যে প্রিয় ৬
#হিয়ার_দাহ্যে_প্রিয়
#তাবেরী ইসলাম
#পর্ব ৬
পাখির কিচিরমিচির ধ্বনিতে মুখর সন্ধ্যা বাতায়ণ। নিজেকে কিছু হালকা মনে হচ্ছে।
---যাক অন্তত চোখের সামনে থেকে নুহা চলে যাচ্ছে।মাঝে মধ্যে কষ্ট প্রখর রোদের মত পুড়ায়। যে কেউ শুনলেই বলবে কেমন মেয়ে তুমি নিজের স্বামী ধরে রাখতে পার না।
নুহাকে বিদায় দিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরে সিয়াম ইজি চেয়ারে বসে আছেন। কফির মগ এগিয়ে দিলাম।তার চোখ আবার ভিজে উঠেছে। দু'হাত মুঠোয় পুরে বলে উঠলেন রিমু মন কেন হারানোর ভয় জাগছে??
সিয়ামের বিদ্ধস্ত চোখ জোড়ায় জল ঝরছে। আমি আর তাকাতে পারব না তাই মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। স্মিত স্বাভাবিক হয়েই বললাম এসব মনের ভুল।
রাত্রে সেই শাড়ি পড়েছি তন্নি ভাবি তো আমার দিকে হা তাকিয়ে আছেন। বললেন রিমু আজকে চাঁদ কোন দিক দিয়ে উঠলো। আমি উনার কথায় হেসে দিলাম।
ভাবি বললেন রিমু কি ব্যপার আজ??চোখে মুখে কৌতুহলে পূর্ণ। মুনা আর লাবিবের সাথে আমার হইচইতে মূহুর্ত গুলো কাটে।
মুনা সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো ছোট আম্মুকে আজকে বউয়ের মত লাগছে।
ইদানিং কালে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। হয়তো সম্পর্ক কেবল দ্বায়িত্বের বলয়ে আছে বলে।প্রবাহমান ধারায় কেটে গেছে কয়েক মাস।
আমার শাশুড়ি আম্মু এসেছেন বাসায় তাই কলেজ থেকে তারাতাড়ি ছুটি নিয়ে এসেছি।
বাহিরে আমি আর সিয়াম আট দশটা স্বামী স্ত্রীর মত স্বাভাবিক ভাবেই আছি।কেউ বুঝবে না যে আমাদের মাঝে এতখানি দূরত্ব আছে।
দ্বায়িত্বের খাতিরে জীবনে অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে হয়। বাসায় এসে ভাবির সাথে রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
সাথে আমার ছোট ননদিনীও এসেছে। আমার শশুড় নিরব প্রকৃতির মানুষ সহজেই আপন করে নিয়েছেন আমায়।তবে আমার শাশুড়ি গম্ভীর আর স্পষ্টভাষী। প্রায় কাজ তিনি নিজেই করে নেন।
অহনাকে আজকে লাজুক লাগছে খুব। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর আড্ডায় চলে যায় বিকেল। সিয়াম এখনো বাসায় ফিরে আসেন নি।
ট্রেস্ক করে দিয়েছিলাম তারাতাড়ি ফিরতে। সন্ধ্যার নামাজ পরে এক পেয়ালা লেবুর চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর বারান্দার ফুল গুলো দেখছি।
মাঝে মধ্যে মনে হয় এই এক পেয়ালা লেবুর চা আমার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে আজীবন থেকে যাক। সে কভু এর স্বাদ বুঝুক আর নাই বুঝুক।
সময়ের গতিতে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে প্রবাহিত হচ্ছে সময়।নির্জন রাত্রের প্রহরে আজ পরিবারের অধেক সদস্য এক সাথে খেতে বসেছি।
আব্বু বলে উঠলেন তোমাদের বড় ফুফির ছেলে মারুফ দেশে আসছে আগামী সপ্তাহে। অহনাকে পরশু দেখতে আসবে পাকাপোক্ত ভাবে। সবাইকে নিজ দ্বায়িত্বে সাজিয়ে গুছিয়ে নিবে। শাশুড়ি আম্মু বললেন আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি না হয়।
উনার গম্ভীর কথন গ্রহণ হতেই ভাবি আমার দিকে তাকালেন। নিচুস্বরে জ্বী আম্মু বলে উঠলেন।
পিন পিন নিরবতা অহনা লজ্জায় লাল হয়ে রুমে চলে এসেছে।খাওয়ার পর ভাবি আর আমি সব কিছু গুছিয়ে নেই।
কফির ধোয়া উঠা মগটা বাড়িয়ে দিলাম উনার দিকে, সিয়াম ততক্ষণে কথা বলায় ব্যস্ত কারো সাথে। রাত্রের শহর অন্য রকম লাগছে কিন্তু এই বাসাটা একটু ভেতরে যার জন্য কোলাহল টা কমই লাগছে
চোখের আঁখিতে স্বপ্ন যুগল বদ্ধ দারে খুঁজিতেছে আশা,অমানিশা দূর করে প্রভাতের কিরণ মাখা ভালোবাসা।
কি দেখ ওমন করে? উনার স্বগতোক্তিক কথায় ধ্যান ভাঙ্গে আমার। পাশাপাশি বসে মাথাটা একটু উনার কাদে রেখে দিলেন।
হাতের ভাজে আঙ্গুল গুজে বলে উঠলেন এত ভাবছ কেন টুনির মা?? কাঁদ থেকে আপনাআপনি মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম কে টুনির মা??
সিয়াম হেয়ালি ভরা কন্ঠে বললেন ওই যে আমার পাশের বাট্টি মেয়ে আছে না সে।আমি রেগে উনার হাতে চিমটি খেটে দিলাম।
আহ! কি করলে এটা হুম।বলেই চোখে ক্রুর হাসি ফুটিয়ে তুললেন। নত মস্তকে লজ্জা গুলো যেন আজ উছ্বলে উঠেছে বুকের গহীনে।
বউ হবে আমার টোনাটুনির মা উনার এই কথা গুলোয় সময় যেন থমকে গেছে ।আমার অবাক চাউনি উনার এলোমেলো চোখের পাতা ভরে উঠেছে অনুসুচনায়।
নুহা আমায় ছেড়ে অন্য কাউকে বেচে নিয়েছে। আমি ফিরতে চাই তোমার পানে দ্বায়িত্বে নয় ভালোবাসায়। ঈষৎক্ষণের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে এলো আমার ভাবনা গুলো, আমিও তো এমনই চেয়েছি, তা কি আদৌ সুখ আসবে ??
দু'ফোটা অশ্রু সিক্ত হয়ে উঠলো, আঁখি বুজে আটকে রাখার তীব্র প্রয়াস সিয়ামের। নাক টেনে বললেন চুপ করে আছো কেন তুমি??
---- চলবে
#তাবেরী ইসলাম
#পর্ব ৬
পাখির কিচিরমিচির ধ্বনিতে মুখর সন্ধ্যা বাতায়ণ। নিজেকে কিছু হালকা মনে হচ্ছে।
---যাক অন্তত চোখের সামনে থেকে নুহা চলে যাচ্ছে।মাঝে মধ্যে কষ্ট প্রখর রোদের মত পুড়ায়। যে কেউ শুনলেই বলবে কেমন মেয়ে তুমি নিজের স্বামী ধরে রাখতে পার না।
নুহাকে বিদায় দিয়ে বিকেলে বাসায় ফিরে সিয়াম ইজি চেয়ারে বসে আছেন। কফির মগ এগিয়ে দিলাম।তার চোখ আবার ভিজে উঠেছে। দু'হাত মুঠোয় পুরে বলে উঠলেন রিমু মন কেন হারানোর ভয় জাগছে??
সিয়ামের বিদ্ধস্ত চোখ জোড়ায় জল ঝরছে। আমি আর তাকাতে পারব না তাই মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। স্মিত স্বাভাবিক হয়েই বললাম এসব মনের ভুল।
রাত্রে সেই শাড়ি পড়েছি তন্নি ভাবি তো আমার দিকে হা তাকিয়ে আছেন। বললেন রিমু আজকে চাঁদ কোন দিক দিয়ে উঠলো। আমি উনার কথায় হেসে দিলাম।
ভাবি বললেন রিমু কি ব্যপার আজ??চোখে মুখে কৌতুহলে পূর্ণ। মুনা আর লাবিবের সাথে আমার হইচইতে মূহুর্ত গুলো কাটে।
মুনা সিয়ামকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো ছোট আম্মুকে আজকে বউয়ের মত লাগছে।
ইদানিং কালে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। হয়তো সম্পর্ক কেবল দ্বায়িত্বের বলয়ে আছে বলে।প্রবাহমান ধারায় কেটে গেছে কয়েক মাস।
আমার শাশুড়ি আম্মু এসেছেন বাসায় তাই কলেজ থেকে তারাতাড়ি ছুটি নিয়ে এসেছি।
বাহিরে আমি আর সিয়াম আট দশটা স্বামী স্ত্রীর মত স্বাভাবিক ভাবেই আছি।কেউ বুঝবে না যে আমাদের মাঝে এতখানি দূরত্ব আছে।
দ্বায়িত্বের খাতিরে জীবনে অনেক কিছুই মানিয়ে নিতে হয়। বাসায় এসে ভাবির সাথে রান্নার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।
সাথে আমার ছোট ননদিনীও এসেছে। আমার শশুড় নিরব প্রকৃতির মানুষ সহজেই আপন করে নিয়েছেন আমায়।তবে আমার শাশুড়ি গম্ভীর আর স্পষ্টভাষী। প্রায় কাজ তিনি নিজেই করে নেন।
অহনাকে আজকে লাজুক লাগছে খুব। দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর আড্ডায় চলে যায় বিকেল। সিয়াম এখনো বাসায় ফিরে আসেন নি।
ট্রেস্ক করে দিয়েছিলাম তারাতাড়ি ফিরতে। সন্ধ্যার নামাজ পরে এক পেয়ালা লেবুর চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর বারান্দার ফুল গুলো দেখছি।
মাঝে মধ্যে মনে হয় এই এক পেয়ালা লেবুর চা আমার নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে আজীবন থেকে যাক। সে কভু এর স্বাদ বুঝুক আর নাই বুঝুক।
সময়ের গতিতে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে প্রবাহিত হচ্ছে সময়।নির্জন রাত্রের প্রহরে আজ পরিবারের অধেক সদস্য এক সাথে খেতে বসেছি।
আব্বু বলে উঠলেন তোমাদের বড় ফুফির ছেলে মারুফ দেশে আসছে আগামী সপ্তাহে। অহনাকে পরশু দেখতে আসবে পাকাপোক্ত ভাবে। সবাইকে নিজ দ্বায়িত্বে সাজিয়ে গুছিয়ে নিবে। শাশুড়ি আম্মু বললেন আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি না হয়।
উনার গম্ভীর কথন গ্রহণ হতেই ভাবি আমার দিকে তাকালেন। নিচুস্বরে জ্বী আম্মু বলে উঠলেন।
পিন পিন নিরবতা অহনা লজ্জায় লাল হয়ে রুমে চলে এসেছে।খাওয়ার পর ভাবি আর আমি সব কিছু গুছিয়ে নেই।
কফির ধোয়া উঠা মগটা বাড়িয়ে দিলাম উনার দিকে, সিয়াম ততক্ষণে কথা বলায় ব্যস্ত কারো সাথে। রাত্রের শহর অন্য রকম লাগছে কিন্তু এই বাসাটা একটু ভেতরে যার জন্য কোলাহল টা কমই লাগছে
চোখের আঁখিতে স্বপ্ন যুগল বদ্ধ দারে খুঁজিতেছে আশা,অমানিশা দূর করে প্রভাতের কিরণ মাখা ভালোবাসা।
কি দেখ ওমন করে? উনার স্বগতোক্তিক কথায় ধ্যান ভাঙ্গে আমার। পাশাপাশি বসে মাথাটা একটু উনার কাদে রেখে দিলেন।
হাতের ভাজে আঙ্গুল গুজে বলে উঠলেন এত ভাবছ কেন টুনির মা?? কাঁদ থেকে আপনাআপনি মাথা তুলে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম কে টুনির মা??
সিয়াম হেয়ালি ভরা কন্ঠে বললেন ওই যে আমার পাশের বাট্টি মেয়ে আছে না সে।আমি রেগে উনার হাতে চিমটি খেটে দিলাম।
আহ! কি করলে এটা হুম।বলেই চোখে ক্রুর হাসি ফুটিয়ে তুললেন। নত মস্তকে লজ্জা গুলো যেন আজ উছ্বলে উঠেছে বুকের গহীনে।
বউ হবে আমার টোনাটুনির মা উনার এই কথা গুলোয় সময় যেন থমকে গেছে ।আমার অবাক চাউনি উনার এলোমেলো চোখের পাতা ভরে উঠেছে অনুসুচনায়।
নুহা আমায় ছেড়ে অন্য কাউকে বেচে নিয়েছে। আমি ফিরতে চাই তোমার পানে দ্বায়িত্বে নয় ভালোবাসায়। ঈষৎক্ষণের মধ্যে স্তব্ধ হয়ে এলো আমার ভাবনা গুলো, আমিও তো এমনই চেয়েছি, তা কি আদৌ সুখ আসবে ??
দু'ফোটা অশ্রু সিক্ত হয়ে উঠলো, আঁখি বুজে আটকে রাখার তীব্র প্রয়াস সিয়ামের। নাক টেনে বললেন চুপ করে আছো কেন তুমি??
---- চলবে
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২০/০৬/২০২৪অনন্যা
-
মোঃ আমিনুল ইসলাম মিঠু ০৬/০১/২০২২ভাল ছিল।
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৪/০১/২০২২টুকরো কথামালা।
-
শুভজিৎ বিশ্বাস ০৪/০১/২০২২খুব সুন্দর
-
ফয়জুল মহী ০৩/০১/২০২২অসাধারণ ।
সতত শুভেচ্ছা । -
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ০৩/০১/২০২২জমেছে বেশ।