হিয়ার দাহ্যে প্রিয় ১ ও ২ পর্ব
হিয়ার_দাহ্যে_প্রিয়
তাবেরী ইসলাম
পর্ব ১ম
রুমের বারান্দায় বসে আছি একটা বই হাতে গুজে। এই সোফার মত চৌকিতে মানুষ কি করে বসে? আল্লাহ মালুম। কোমড় আমার বেকে গেছে এতক্ষণে।
সিয়াম লোককে যতটা বোকা ভেবেছিলাম লোক ততটা বোকা না।যতেষ্ট বুদ্ধিমান বটে অনেক খানি। বিয়ের পর আমার ননদিনী আমাকে একটা টেব গ্রীপ্ট করেছিলো। বেশ এখন অবসরে এটা দিয়ে কথা বলা যায়।
আমার বোরকা পড়া তার পছন্দ নয়। ঘেউ হয়ে হাটি আমি এটা কি মানা যায়? বাসায় এসেছি দুদিন হলো কিন্তু লোকটা সকালের মধ্যেই হাওয়া।
যাই হোক এই অপমানের শুধ রিমু নিয়ে ছাড়বে।এর মধ্যে তন্নি ভাবি হাজির কফি নিয়ে। এমন সঠান হয়ে কি পড়ছ? আমি হেসেই বললাম একটা উপন্যাস পড়ছি ভাবি।
এত মনোযোগ দিয়ে! আমি বললাম হ্যাঁ ভাষাটা অনেক কঠিন মনে হয় দাত ভেঙে যাবে। তাহলে ওইটা আর পড় না আমার দেবর আবার তোমার শোকে কাতর হয়ে যাবে হি হি।
তা একা একা ভালো লাগছে তো।আমি ভাবির কথায় মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালাম।ভাবি কিছু সময় গল্প করে চলে গেলেন।
আমি ঘুমের দেশে যাচ্ছি একটা শান্তির ঘুম। হঠাৎ দরজার ভ্রু কুচকে এলো আমার। কাত হয়ে থাকিয়ে দেখলাম উনি কার্বাড থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে যাচ্ছেন।
বিরক্ত প্রকাশ করে আবার শুয়ে পড়লাম। বেরিয়ে বলছেন কি এখনে ঘুমাতে আসছেন আপনি??
উঠে যাও গিয়ে আমার খাবার রেডি কর। চুপচাপ কথা শুনে খাবার দিলাম উনাকে। উনি খাচ্ছেন আমি চলে এলাম রুমে একবার বলেন নি তুমি খেয়েছ কিনা।
টেবিলের বুক সেলফের বই গুলো দেখছি। বিষণ্ণ হয়ে আছে মন। আমার পড়াটা শেষ হয়েও হলো না। মাঝে মধ্যে এই পড়ার জন্য সবাই আমাকে কাজে ভুল হলে মাথা মোটা বলে বকে দিতেন।
উনি বই নাড়ছি দেখেই বলে উঠলেন আর্টসের ইস্টুডেন্ট সাইন্সের কি বুঝবে? বই গুলো রেখে দাও ওখানে। আর এই ঘেউ ঘেউ ভাব ছাড় ভালো লাগে না তোমার এসব।
আপনি এতটা চেইঞ্জ হলেন কিভাবে অবাক হয়ে বললাম। বাড়িতে তো এমন ছিলেন না। দু দিনেই এই অবস্থা। আর আমি আর্টসের ইস্টুডেন্ট হলেও ভালো ছাত্রী আছি হুহ।
সোজাসুজি বলে দিলাম আমি এক্সাম টা দিয়ে পড়াটা শেষ করতে চাই।রেগে কটমট করে বলে উঠলেন আর ওই আল খাল্লা পড়ে ঘুরে বেড়াও তাই না। হচ্চে না এসব এখানে।উনি আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন হয়তো টায়াড।
কেমন এই সিয়াম যে আমার অনেক কেয়ার করলেন বাড়িতে। বাসায় আসতেই তার মনের বদল।আম্মু মানে আমার শাশুড়ির সাথে ফোনে কথা বলে নিলাম।
সন্ধ্যায় আজ ভাবি আর আমি মিলে পায়েস আর আলুর চপ বানিয়েছি।আমার ভাসুর মানে বড় নিয়াজ ভাইয়া খুব প্রসংসা করলেন। আর উনি নিরামিষের মত খেয়ে নিজের স্টাডি রুমে চলে গেলেন। কফির কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি দরজায়।
এটা দেখেই বলে উঠলেন নিমন্ত্রণ দিয়ে নিয়ে আসতে হবে না কি?? কপাল কুচকে তাকাতে হবে না।। রুমটা কুটিয়ে কুটিয়ে দেখছি হঠাৎ হাতটা গিয়ে ঠেকল কংকালের হাতে। যেন আমার হাত চিপকে ধরে আছে। উহুম বলে চিৎকার কি করে দিব আমার আত্না শুকিয়ে আসছে।
আমার কাপাকাপি দেখে উনি এসে জিজ্ঞেস কি হয়েছে?? আমি ইশারায় পিছনে তাকাতে বললাম তাতে উনার মেজাজ যেন বিগড়ে গেল। এত দ্রুত আমার বাহু শক্ত করে চেপে ধরেছেন যে আমার হাত ছুটে আসলো কিভাবে বুঝি নি। আহ লাগছে তো।!
এত ভয় পাও তো গিয়েছ কেন ওখানে বলেই দমকে দিলেন আমাকে।আমি মন খারাপ করে চলে এলাম। মুনা আর লাবিবের সাথে ওদের পড়া গুলো দেখিয়ে দিচ্ছি।
ভাবি বললেন রিমু এভাবে খাবার নাড়ছ খাচ্ছ না কেন??আমি বললাম খেতে ইচ্ছে করছে না ভাবি। উনি বললেন আমাকে কি খাইয়ে দিতে হবে?? আমি অবাক হয়ে তাকালাম উনার দিকে আর ভাবি ভাইয়া মুনা হাসছে।
চাচ্চু ছোট আম্মুকে আর আমাকে এক সাথে খাইয়ে দিবে কেমন হি হি হি বলে হাসছে। আমার মনে হচ্ছে এখান থেকে পালাতে পারলে হতো।
--------------------------------------------------------------
#পর্ব ২
বিকেলে এক রেস্টুরেন্টে বসে আছি উনার সাথে।উনার বন্ধুবান্ধব আসবে এখানে। চার পাচটা মেয়ে আর দুজন ছেলে আসলো।
একটা মেরুন কালার ড্রেস পরনে এসেই চিপকে বসলো সিয়ামের পাশে। চোখে চশমা খোলা চুল দেখেই যে কেউ ক্রাশ খাবে মনে হয় যে কেউ।
আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি মেয়েটার কান্ড। উনি পরিচয় করিয়ে দিলেন আমাকে ওদের সাথে। পিয়াস আর মাহির ভাইয়া তাদের পরিচয় দিলেন।
পিয়াস ভাইয়া অনেক মজা করে কথা বলতে পারেন।খাওয়ার সময় ওই মেয়েটা কেমন করে তাকাচ্ছিল আমার দিকে। মাহির ভাইয়া একটু বেশিই মিশুক স্বভাবের।
ভাবি দরজা খুলে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হাসলেন। রুমে এসে টায়াড লাগছে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।উনি ফ্রেশ হয়ে আসলেন। আমি গিয়েও ফ্রেশ হয়ে আসলাম।
আমি শুয়ে বই পড়ছি আর ল্যাপটপে তাকিয়ে বলে উঠলেন। আমি নুহাকে পছন্দ করি।
অহ!তাহলে আগে বলেন নি কেন?? বলি নি সময় হয় নি। নুহা আমার জুনিয়র ওর এখনো দু'বছর বাকি আছে। আর ওকেই বিয়ে করব তুমি মানও আর না মানও।
মনে ঝড়ো হাওয়া বইছে কিসের শাস্তি হচ্ছে আমার?? বলেই ফেললাম আমি কি হই আপনার??
দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললেন আম্মু তোমায় পছন্দ করে এনেছেন। আমি বিয়ে করতে চাই নি। এখন এ দ্বায়িত্ব কর্তব্য পালন করে যাব।
স্থবির হয়ে গেল সব চোখে না চাইতেও অশ্রু নামল।
আবারও বললেন তুমি চাইলে ডিবোর্স নিয়ে পছন্দের কাউকে বিয়ে করতে পারো। আমি সব কিছু মেনেজ করে নিব।
স্টপ বলে চেচিয়ে উঠলাম। কি ভাবেন নিজেকে আপনি? উনি আমার বাহু চেপে বললেন চুপ চেচামেচি না আমি তো বলছি না তুমি এখন কিছু কর।
সময় এখনো আছে দেখা যাবে কি হয় না হয়।চলে গেলেন রুম থেকে। আমি নিচে বসে পড়লাম চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে।
পার না আমি এসব কিছুই সবাই কেন আমায় এত ঠকায়। যাকে ছাড়া আমার চলবে না তাকে কি করে হারাবো।
নামাযের জাগায় বসে কেদে যাচ্ছি আমি যা চেয়েছি পেয়েছি তবে আজ কেন সব এমন হচ্ছে।
আমি সকালে উনাকে বলে দিলাম আমার একটা চাকরির প্রয়োজন। আমি নিজেকে গড়ে তুলতে চাই। সিয়াম অপকটে বললেন গুড এতে আমাদের দু'জনেরি ভালো।
তবে এই কথা গুলো বাহিরে না যায় এটাই আশা করি। অবশ্যই স্ত্রী হিসেবে আমার দ্বায়িত্ব গুলো আমি পূর্ণ করব আপনার চিন্তা করবেন না।
নাস্তা করে চলে গেলেন উনি। ভাবি মুনা আর লাবিব কে রেডি করে ভাইয়ার সাথে স্কুলে দিয়ে দিলেন।
রান্না ঘর গুছিয়ে নিয়েছি আমি। দুপুরে ভাবি বললেন চল রিমু আমার সাথে বেড়ানোও হয়ে যাবে আর মুনা লাবিবকে নিয়ে আসব।
বাহিরে যা রোদ মুনা ভাবির হাত ধরে আর লাবিব আমার হাত ধরে হাটছে। বাচ্চাদের মত ভাবিকে বললাম দাড়াও ভাবি আইচক্রিম খাব।
মুনা আর লাবিব খুশিতে লাফাচ্ছে ভাবি দিলেন এক দমক আমার চুপসে গেলাম। আসো বলে আইচক্রিমের দোকানে হাটা দিলেন।
আমার হাটছি আর খাচ্ছি। লাবিব খুশিতে বললো ছোট আম্মু তুমি অনেক ভালো। আম্মু তো খেতে দেয় না এসব। ভাবি বললেন লাবিব ও নিরব হয়ে গেল। আমি বললাম ভাবি প্লিজ বকবেন না একদিন তো। ভাবি হেসে দিলেন।
একটা কার এসে আমাদের সামনে জোরে ব্রেক কষলো। ভয়ে আমি লাবিবকে জড়িয়ে ধরেছি। হাতের আইচক্রিম পড়ে গেল ধ্যাৎ।
সিয়াম এসেই মারলেন এক দমক।সাথে নুহাও বেরিয়ে আসলো। আজও তার চেহারা নজর কাড়া। ইডিয়ট রাস্তা দেখে পার হতে পার না। ভাবি কাছে এসে বললেন সিয়ান কি করছ ও তোমার বউ হয়।
বউ তাই আজকে ছাড় দিলাম অন্যদিন যেন এমন ভুল না হয়। নুহার হাত ধরে উনি চলে গেলেন।
ভাবি হয়তো কিছু বুঝতে পেরেছেন নয়তো না।দু'মাস পেরিয়ে গেল উনি শুধু আমায় দ্বায়িতত্বের বলয়ে বেধে রাখছেন। আমি এখন একটা জব করছি সপ্তাহ খানেক হবে ।
রাত্রে উনি এসে নিয়াজ ভাইয়াকে বলছেন চিটাগাং যাবেন ট্রেনিং এর জন্য। ভাইয়া বলে দিলেন যাচ্ছ যখন রিমুকে সাথে নিয়ে যাও।বেড়িয়ে আসুক তোমার সাথে।
আমি বললাম ভাইয়া আমি সবে মাত্র জব পেয়েছি এখন ছুটতে দিবে না। নিয়াজ ভাইয়া বললেন আমার এত হ্যান্ডসাম ভাই থাকতে তোমার চলে তেমন কিছুই হবে না।লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম আর উনি মুচকি মুচকি হাসছেন।
ঘুমিয়ে আছি সিয়াম আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন। ভারি নিঃশ্বাসে ঘুম চলে গেল। মাঝে মধ্যে হুট হাট উনি আমার এত কাছে চলে আসেন কেন??
চোখ আবার লেগে গেলো। ভোর বেলাতে উনি আমাকে নামাযের জন্য ডাকছেন। এতে কিছুটা হলেও অবাক হয়েছি। নামাজ পড়েই বললেন কাপড় গুছাতে।
গাড়ি করে এসেছি যেহেতু অনেক ট্রায়াড লাগছে না খেয়েই শুয়ে পড়লাম।উনি আমাকে ডেকে খেতে বললেন তাতেও আমার হয় নি।
উনি টান দিয়ে বসিয়ে দিলেন আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম এভাবে কেউ টেনে তুলে বুঝি??তো খাবার কে খাবে শুনি? উনার পাল্টা প্রশ্ন।
খেয়ে আবারও শুয়ে আছি। মধ্যে রাত্রে যখন ঘুম দেখি সিয়াম নেই বিছানায়। বারান্দায় আলো আসছে যেতে দেখলাম উনি হেসে হেসে প্রিয় বলে কাউকে কিছু বলছেন।
চলে এসেছি রুমে বালিশ খামচে ধরে নিঃশব্দে কাঁদছি।ফজরের আযানের সময় উনি ঘরে এলেন। আমি ওযু করে নামাজ পড়ে নিলাম।।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরের সুন্দর্য্য দেখছি ভোরের আলো একটু একটু করে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
চলবে----
তাবেরী ইসলাম
পর্ব ১ম
রুমের বারান্দায় বসে আছি একটা বই হাতে গুজে। এই সোফার মত চৌকিতে মানুষ কি করে বসে? আল্লাহ মালুম। কোমড় আমার বেকে গেছে এতক্ষণে।
সিয়াম লোককে যতটা বোকা ভেবেছিলাম লোক ততটা বোকা না।যতেষ্ট বুদ্ধিমান বটে অনেক খানি। বিয়ের পর আমার ননদিনী আমাকে একটা টেব গ্রীপ্ট করেছিলো। বেশ এখন অবসরে এটা দিয়ে কথা বলা যায়।
আমার বোরকা পড়া তার পছন্দ নয়। ঘেউ হয়ে হাটি আমি এটা কি মানা যায়? বাসায় এসেছি দুদিন হলো কিন্তু লোকটা সকালের মধ্যেই হাওয়া।
যাই হোক এই অপমানের শুধ রিমু নিয়ে ছাড়বে।এর মধ্যে তন্নি ভাবি হাজির কফি নিয়ে। এমন সঠান হয়ে কি পড়ছ? আমি হেসেই বললাম একটা উপন্যাস পড়ছি ভাবি।
এত মনোযোগ দিয়ে! আমি বললাম হ্যাঁ ভাষাটা অনেক কঠিন মনে হয় দাত ভেঙে যাবে। তাহলে ওইটা আর পড় না আমার দেবর আবার তোমার শোকে কাতর হয়ে যাবে হি হি।
তা একা একা ভালো লাগছে তো।আমি ভাবির কথায় মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালাম।ভাবি কিছু সময় গল্প করে চলে গেলেন।
আমি ঘুমের দেশে যাচ্ছি একটা শান্তির ঘুম। হঠাৎ দরজার ভ্রু কুচকে এলো আমার। কাত হয়ে থাকিয়ে দেখলাম উনি কার্বাড থেকে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে যাচ্ছেন।
বিরক্ত প্রকাশ করে আবার শুয়ে পড়লাম। বেরিয়ে বলছেন কি এখনে ঘুমাতে আসছেন আপনি??
উঠে যাও গিয়ে আমার খাবার রেডি কর। চুপচাপ কথা শুনে খাবার দিলাম উনাকে। উনি খাচ্ছেন আমি চলে এলাম রুমে একবার বলেন নি তুমি খেয়েছ কিনা।
টেবিলের বুক সেলফের বই গুলো দেখছি। বিষণ্ণ হয়ে আছে মন। আমার পড়াটা শেষ হয়েও হলো না। মাঝে মধ্যে এই পড়ার জন্য সবাই আমাকে কাজে ভুল হলে মাথা মোটা বলে বকে দিতেন।
উনি বই নাড়ছি দেখেই বলে উঠলেন আর্টসের ইস্টুডেন্ট সাইন্সের কি বুঝবে? বই গুলো রেখে দাও ওখানে। আর এই ঘেউ ঘেউ ভাব ছাড় ভালো লাগে না তোমার এসব।
আপনি এতটা চেইঞ্জ হলেন কিভাবে অবাক হয়ে বললাম। বাড়িতে তো এমন ছিলেন না। দু দিনেই এই অবস্থা। আর আমি আর্টসের ইস্টুডেন্ট হলেও ভালো ছাত্রী আছি হুহ।
সোজাসুজি বলে দিলাম আমি এক্সাম টা দিয়ে পড়াটা শেষ করতে চাই।রেগে কটমট করে বলে উঠলেন আর ওই আল খাল্লা পড়ে ঘুরে বেড়াও তাই না। হচ্চে না এসব এখানে।উনি আবার বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন হয়তো টায়াড।
কেমন এই সিয়াম যে আমার অনেক কেয়ার করলেন বাড়িতে। বাসায় আসতেই তার মনের বদল।আম্মু মানে আমার শাশুড়ির সাথে ফোনে কথা বলে নিলাম।
সন্ধ্যায় আজ ভাবি আর আমি মিলে পায়েস আর আলুর চপ বানিয়েছি।আমার ভাসুর মানে বড় নিয়াজ ভাইয়া খুব প্রসংসা করলেন। আর উনি নিরামিষের মত খেয়ে নিজের স্টাডি রুমে চলে গেলেন। কফির কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি দরজায়।
এটা দেখেই বলে উঠলেন নিমন্ত্রণ দিয়ে নিয়ে আসতে হবে না কি?? কপাল কুচকে তাকাতে হবে না।। রুমটা কুটিয়ে কুটিয়ে দেখছি হঠাৎ হাতটা গিয়ে ঠেকল কংকালের হাতে। যেন আমার হাত চিপকে ধরে আছে। উহুম বলে চিৎকার কি করে দিব আমার আত্না শুকিয়ে আসছে।
আমার কাপাকাপি দেখে উনি এসে জিজ্ঞেস কি হয়েছে?? আমি ইশারায় পিছনে তাকাতে বললাম তাতে উনার মেজাজ যেন বিগড়ে গেল। এত দ্রুত আমার বাহু শক্ত করে চেপে ধরেছেন যে আমার হাত ছুটে আসলো কিভাবে বুঝি নি। আহ লাগছে তো।!
এত ভয় পাও তো গিয়েছ কেন ওখানে বলেই দমকে দিলেন আমাকে।আমি মন খারাপ করে চলে এলাম। মুনা আর লাবিবের সাথে ওদের পড়া গুলো দেখিয়ে দিচ্ছি।
ভাবি বললেন রিমু এভাবে খাবার নাড়ছ খাচ্ছ না কেন??আমি বললাম খেতে ইচ্ছে করছে না ভাবি। উনি বললেন আমাকে কি খাইয়ে দিতে হবে?? আমি অবাক হয়ে তাকালাম উনার দিকে আর ভাবি ভাইয়া মুনা হাসছে।
চাচ্চু ছোট আম্মুকে আর আমাকে এক সাথে খাইয়ে দিবে কেমন হি হি হি বলে হাসছে। আমার মনে হচ্ছে এখান থেকে পালাতে পারলে হতো।
--------------------------------------------------------------
#পর্ব ২
বিকেলে এক রেস্টুরেন্টে বসে আছি উনার সাথে।উনার বন্ধুবান্ধব আসবে এখানে। চার পাচটা মেয়ে আর দুজন ছেলে আসলো।
একটা মেরুন কালার ড্রেস পরনে এসেই চিপকে বসলো সিয়ামের পাশে। চোখে চশমা খোলা চুল দেখেই যে কেউ ক্রাশ খাবে মনে হয় যে কেউ।
আমি চেয়ে চেয়ে দেখছি মেয়েটার কান্ড। উনি পরিচয় করিয়ে দিলেন আমাকে ওদের সাথে। পিয়াস আর মাহির ভাইয়া তাদের পরিচয় দিলেন।
পিয়াস ভাইয়া অনেক মজা করে কথা বলতে পারেন।খাওয়ার সময় ওই মেয়েটা কেমন করে তাকাচ্ছিল আমার দিকে। মাহির ভাইয়া একটু বেশিই মিশুক স্বভাবের।
ভাবি দরজা খুলে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হাসলেন। রুমে এসে টায়াড লাগছে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।উনি ফ্রেশ হয়ে আসলেন। আমি গিয়েও ফ্রেশ হয়ে আসলাম।
আমি শুয়ে বই পড়ছি আর ল্যাপটপে তাকিয়ে বলে উঠলেন। আমি নুহাকে পছন্দ করি।
অহ!তাহলে আগে বলেন নি কেন?? বলি নি সময় হয় নি। নুহা আমার জুনিয়র ওর এখনো দু'বছর বাকি আছে। আর ওকেই বিয়ে করব তুমি মানও আর না মানও।
মনে ঝড়ো হাওয়া বইছে কিসের শাস্তি হচ্ছে আমার?? বলেই ফেললাম আমি কি হই আপনার??
দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললেন আম্মু তোমায় পছন্দ করে এনেছেন। আমি বিয়ে করতে চাই নি। এখন এ দ্বায়িত্ব কর্তব্য পালন করে যাব।
স্থবির হয়ে গেল সব চোখে না চাইতেও অশ্রু নামল।
আবারও বললেন তুমি চাইলে ডিবোর্স নিয়ে পছন্দের কাউকে বিয়ে করতে পারো। আমি সব কিছু মেনেজ করে নিব।
স্টপ বলে চেচিয়ে উঠলাম। কি ভাবেন নিজেকে আপনি? উনি আমার বাহু চেপে বললেন চুপ চেচামেচি না আমি তো বলছি না তুমি এখন কিছু কর।
সময় এখনো আছে দেখা যাবে কি হয় না হয়।চলে গেলেন রুম থেকে। আমি নিচে বসে পড়লাম চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে।
পার না আমি এসব কিছুই সবাই কেন আমায় এত ঠকায়। যাকে ছাড়া আমার চলবে না তাকে কি করে হারাবো।
নামাযের জাগায় বসে কেদে যাচ্ছি আমি যা চেয়েছি পেয়েছি তবে আজ কেন সব এমন হচ্ছে।
আমি সকালে উনাকে বলে দিলাম আমার একটা চাকরির প্রয়োজন। আমি নিজেকে গড়ে তুলতে চাই। সিয়াম অপকটে বললেন গুড এতে আমাদের দু'জনেরি ভালো।
তবে এই কথা গুলো বাহিরে না যায় এটাই আশা করি। অবশ্যই স্ত্রী হিসেবে আমার দ্বায়িত্ব গুলো আমি পূর্ণ করব আপনার চিন্তা করবেন না।
নাস্তা করে চলে গেলেন উনি। ভাবি মুনা আর লাবিব কে রেডি করে ভাইয়ার সাথে স্কুলে দিয়ে দিলেন।
রান্না ঘর গুছিয়ে নিয়েছি আমি। দুপুরে ভাবি বললেন চল রিমু আমার সাথে বেড়ানোও হয়ে যাবে আর মুনা লাবিবকে নিয়ে আসব।
বাহিরে যা রোদ মুনা ভাবির হাত ধরে আর লাবিব আমার হাত ধরে হাটছে। বাচ্চাদের মত ভাবিকে বললাম দাড়াও ভাবি আইচক্রিম খাব।
মুনা আর লাবিব খুশিতে লাফাচ্ছে ভাবি দিলেন এক দমক আমার চুপসে গেলাম। আসো বলে আইচক্রিমের দোকানে হাটা দিলেন।
আমার হাটছি আর খাচ্ছি। লাবিব খুশিতে বললো ছোট আম্মু তুমি অনেক ভালো। আম্মু তো খেতে দেয় না এসব। ভাবি বললেন লাবিব ও নিরব হয়ে গেল। আমি বললাম ভাবি প্লিজ বকবেন না একদিন তো। ভাবি হেসে দিলেন।
একটা কার এসে আমাদের সামনে জোরে ব্রেক কষলো। ভয়ে আমি লাবিবকে জড়িয়ে ধরেছি। হাতের আইচক্রিম পড়ে গেল ধ্যাৎ।
সিয়াম এসেই মারলেন এক দমক।সাথে নুহাও বেরিয়ে আসলো। আজও তার চেহারা নজর কাড়া। ইডিয়ট রাস্তা দেখে পার হতে পার না। ভাবি কাছে এসে বললেন সিয়ান কি করছ ও তোমার বউ হয়।
বউ তাই আজকে ছাড় দিলাম অন্যদিন যেন এমন ভুল না হয়। নুহার হাত ধরে উনি চলে গেলেন।
ভাবি হয়তো কিছু বুঝতে পেরেছেন নয়তো না।দু'মাস পেরিয়ে গেল উনি শুধু আমায় দ্বায়িতত্বের বলয়ে বেধে রাখছেন। আমি এখন একটা জব করছি সপ্তাহ খানেক হবে ।
রাত্রে উনি এসে নিয়াজ ভাইয়াকে বলছেন চিটাগাং যাবেন ট্রেনিং এর জন্য। ভাইয়া বলে দিলেন যাচ্ছ যখন রিমুকে সাথে নিয়ে যাও।বেড়িয়ে আসুক তোমার সাথে।
আমি বললাম ভাইয়া আমি সবে মাত্র জব পেয়েছি এখন ছুটতে দিবে না। নিয়াজ ভাইয়া বললেন আমার এত হ্যান্ডসাম ভাই থাকতে তোমার চলে তেমন কিছুই হবে না।লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম আর উনি মুচকি মুচকি হাসছেন।
ঘুমিয়ে আছি সিয়াম আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন। ভারি নিঃশ্বাসে ঘুম চলে গেল। মাঝে মধ্যে হুট হাট উনি আমার এত কাছে চলে আসেন কেন??
চোখ আবার লেগে গেলো। ভোর বেলাতে উনি আমাকে নামাযের জন্য ডাকছেন। এতে কিছুটা হলেও অবাক হয়েছি। নামাজ পড়েই বললেন কাপড় গুছাতে।
গাড়ি করে এসেছি যেহেতু অনেক ট্রায়াড লাগছে না খেয়েই শুয়ে পড়লাম।উনি আমাকে ডেকে খেতে বললেন তাতেও আমার হয় নি।
উনি টান দিয়ে বসিয়ে দিলেন আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম এভাবে কেউ টেনে তুলে বুঝি??তো খাবার কে খাবে শুনি? উনার পাল্টা প্রশ্ন।
খেয়ে আবারও শুয়ে আছি। মধ্যে রাত্রে যখন ঘুম দেখি সিয়াম নেই বিছানায়। বারান্দায় আলো আসছে যেতে দেখলাম উনি হেসে হেসে প্রিয় বলে কাউকে কিছু বলছেন।
চলে এসেছি রুমে বালিশ খামচে ধরে নিঃশব্দে কাঁদছি।ফজরের আযানের সময় উনি ঘরে এলেন। আমি ওযু করে নামাজ পড়ে নিলাম।।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরের সুন্দর্য্য দেখছি ভোরের আলো একটু একটু করে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
চলবে----
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
জামাল উদ্দিন জীবন ০৯/০৯/২০২১সুন্দর।
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ০৪/০৯/২০২১Awesome, Thanks
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৪/০৯/২০২১বাঃ