এক মুঠো ভালোবাসার রোদ্দুর পর্ব ২১
#এক মুঠো ভালোবাসার রোদ্দুর
#পর্ব ২১
#তাবেরী ইসলাম
কাজহীনা প্রবাস জীবন বড়ই কঠিন। প্রতিটি দিন যাচ্ছে গড়িয়ে সময়ের স্রোতে।কোনো রকম একটা জব করছি।
জোহানের অজস্র মানা সত্ত্বেও করছি। ব্যস্ত রাখতে চাই নিজেকে। সে আমাকে প্রতিদিনই নিয়ে আসে কাজ থেকে। কোনো কমতি নেই তার ভালোবাসার যতনে।
আমি যে তৃষ্ণার্ত মরুভূমির মতো হয়ে আছি। কবে আসবে কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে বাচ্চা।আমার মন খারাপ শত অভিযোগ ওর চেহারায় রাগ ফুটাতে ব্যর্থ।
জোহান ঘরে আসতেই বললাম এতক্ষণ কোথায় ছিলে। ও কিছু বলে নি। দিন দিন আমার রাগের মাত্রা গুলো বেড়েই চলেছে। আমি রাগে গজগজ করে চলে এলাম বারান্দায়।
চোখে জলের বহর নেমেছে নিজেকে বিষন্ন মন হয়। জোহান এসে আমায় জড়িয়ে ধরে বললেন কেন এমন করছ?? আমাদের তো একটা মেয়ে আছে আর যে আসার সে আল্লাহ সঠিক সময়েই দান করবেন।
কেন কষ্ট দিচ্ছ নিজেকে আর আমাকে। দু'হাত গালে ধরে জল মুছতে মুছতে বললেন আমার সহ্য হয় না। তোমার উদাসী চাউনি লাল চোখ নিরবে পুড়ায় আমাকে।
কিন্তু কি করব?? আমি নিজের মনকে বুঝাতে ব্যর্থ হই বারবার।সেদিন রাগে আমি জোহানের সাথে মিস বিহেভ করছি।। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন তুমি আমায় কখনো ভুল বুঝ না রিমা।
তোমার মা হওয়ার ইচ্ছেটা আমি চেষ্টা করব পূরণ করতে। চেষ্টা করব মানে কি??চেচিয়ে বলে উঠলাম।
শান্ত স্বরে আবার বলে উঠলেন এত বুঝ কেন তুমি??আমি এখন কোথা থেকে বাচ্চা আনব? প্রশ্নের মত লাগছে আপনার সব কিছু আমার কাছে। বলেই হাত ঝাড়ি মেরে দিলাম।
তো দেশে যাবে?? উনার কথাটা শুনেই চমকে গেলাম। পিছনে ফিরে এগিয়ে এলাম উনার কাছে সত্তিই যাবেন তো না মজা করছেন আমার সাথে।
উনি বললেন হুম সত্যিই যাচ্ছি আমরা। শুধু তোমার জন্য দেশের ভালো ডাক্তার দেখিয়ে আসবে। তবু তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই আমার এই ছোট সংসারে। আমি কেঁদে দিয়েছি আবারও উনি বললেন এই পিচ্ছি এত কাঁদবে না।
মানহা দৌড়ে আসছে আম্মু বলে কোলে নিয়ে হেসে উঠলাম।মানহা জিজ্ঞেস করছে আম্মু আমরা কোথায় যাব?? উনি বললেন আম্মু আমরা দেশে যাব বেড়াতে।
ওর খুশি যেন আমার চেয়েও বেশি। কার্বাডের কাপড় চোপড়া সব এলোমেলো করে রেখেছে।আমিও কাজ থেকে ১মাসের ছুটি নিয়েছি। কিছু শপিং করেছি মা মেয়ে মিলে।
রাতে যখন খেয়ে মানহাকে ঘুম পাড়াচ্ছিলাম তখনই জোহানের ফোনে একটা কল। ভেবেছিলাম আম্মু মানে আমার শাশুড়ি কল দিয়েছেন। কিন্তু স্কিনের নাম্বারটা দেখে আমার মনে ভয় জেগে উঠলো।
হ্যালো বলতেই এক নারী কন্ঠ আমায় এক গাদা কথা শুনিয়ে দিল।কান্নায় আমার কন্ঠ আড়োস্ট হয়ে এলো। জোহান আমার থেকে ফোনটা নিয়ে নিলেন।
কেউ কিছু বললো আর তুমি শুনে গেলে কেন কিছু বলো নি?আমার দু বাহু ঝাকিয়ে বললেন। ঠিকি তো বলেছে অন্যের মেয়েকে দিয়ে মা হওয়া যায় না জোহান। অন্যের মেয়ে কি? ও আমাদের মেয়ে তুমি এটা জানও। কিন্তু আমার কি আছে বলতে পারবেন।
উনার রাগান্বিত হয়ে বললেন দিব একটা চড় সব উল্টা পাল্টা কথা মাথা থেকে চলে যাবে। আর এসব যেন বলতে না শুনি তোমাকে।
চলে এলাম রুমে, কিছু না বলেই ঘুমিয়ে গেলাম।জোহান ও শুয়ে পড়লেন ।সব গুছিয়ে নিয়েছি ফ্লাইট এর অপেক্ষায় আছি।
------- -------------- ----------- -------
ভোর বেলাতে দেশের মাটিতে পা রাখলাম অন্য রকম লাগছে। আব্বু এসেছেন আমাদের নিয়ে যেতে।
আম্মু ঠিক আগের মতোই আমার ঘর সব কিছুই ঘুছিয়ে রেখেছেন। আম্মুকে দেখে আমার কান্না থামছেই না।
আম্মু বলে উঠলেন ভেবেছিলাম আরেক নাতি নাতনির মুখ দেখব। আমার মুখটা মলিন হয়ে গেল। জোহান বলে উঠলেন আম্মু এসব বলারও দেখি তোমার সময় নেই নাকি?
এখানে এসে কিছু দিন পরই জানতে পারলাম জীনা চাচ্ছে মানহাকে নিয়ে যেতে। আমি বসে আছি বারান্দায় জোহান আসতেই বললাম আপনি আমাদের দেশে নিয়ে এসেছেন শুধুই জীনার জন্য।
ডাক্তার দেখানো একটা বাহানা মাত্র৷ যতই যাই হোক একটা কথা মনে রাখবেন। আমি মানহাকে দিব না।
জোহান আমার হাত শক্ত করে ধরে আছেন। আমি কি বলছি দিয়ে দিব?উনি প্রশ্ন সূচক চাউনিতে তাকালেন। আব্বু আম্মুকেও দেখে এসেছি। আমার বিষান্নতা আম্মু বুঝতে পারেন সান্ত্বনা ছাড়া আমার জন্য আর কি বা আছে।
থাকি নি বাবার বাড়িতে বিকেলেই চলে এসেছি। নিয়ে এসেছি ছোট ভাইকে দুদিন থাকবে। এতে অনন্ত মন কিছুটা হলেও ভালো থাকবে।
ডাক্তারের কাছে গিয়ে অনেক গুলো ট্রেস্ট করে এসেছি। আমি আর পারছি না এত ট্রেস নিতে। সবকিছু মিটমাটের জন্য বিকেলে একটা বৈঠক হবে। মানহার বিষয়ে জীনার আত্নীয় স্বজন কয়েকজন এসেছেন কথা বলতে।
সব কিছুই এলোমেলো লাগছে আমি মানহাকে নিয়ে আম্মুর পাশে বসে আছি। ওরা কি নিয়ে যাবে মানহাকে? চিন্তায় আমার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ দিচ্ছে।
চলবে---
#পর্ব ২১
#তাবেরী ইসলাম
কাজহীনা প্রবাস জীবন বড়ই কঠিন। প্রতিটি দিন যাচ্ছে গড়িয়ে সময়ের স্রোতে।কোনো রকম একটা জব করছি।
জোহানের অজস্র মানা সত্ত্বেও করছি। ব্যস্ত রাখতে চাই নিজেকে। সে আমাকে প্রতিদিনই নিয়ে আসে কাজ থেকে। কোনো কমতি নেই তার ভালোবাসার যতনে।
আমি যে তৃষ্ণার্ত মরুভূমির মতো হয়ে আছি। কবে আসবে কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে বাচ্চা।আমার মন খারাপ শত অভিযোগ ওর চেহারায় রাগ ফুটাতে ব্যর্থ।
জোহান ঘরে আসতেই বললাম এতক্ষণ কোথায় ছিলে। ও কিছু বলে নি। দিন দিন আমার রাগের মাত্রা গুলো বেড়েই চলেছে। আমি রাগে গজগজ করে চলে এলাম বারান্দায়।
চোখে জলের বহর নেমেছে নিজেকে বিষন্ন মন হয়। জোহান এসে আমায় জড়িয়ে ধরে বললেন কেন এমন করছ?? আমাদের তো একটা মেয়ে আছে আর যে আসার সে আল্লাহ সঠিক সময়েই দান করবেন।
কেন কষ্ট দিচ্ছ নিজেকে আর আমাকে। দু'হাত গালে ধরে জল মুছতে মুছতে বললেন আমার সহ্য হয় না। তোমার উদাসী চাউনি লাল চোখ নিরবে পুড়ায় আমাকে।
কিন্তু কি করব?? আমি নিজের মনকে বুঝাতে ব্যর্থ হই বারবার।সেদিন রাগে আমি জোহানের সাথে মিস বিহেভ করছি।। কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন তুমি আমায় কখনো ভুল বুঝ না রিমা।
তোমার মা হওয়ার ইচ্ছেটা আমি চেষ্টা করব পূরণ করতে। চেষ্টা করব মানে কি??চেচিয়ে বলে উঠলাম।
শান্ত স্বরে আবার বলে উঠলেন এত বুঝ কেন তুমি??আমি এখন কোথা থেকে বাচ্চা আনব? প্রশ্নের মত লাগছে আপনার সব কিছু আমার কাছে। বলেই হাত ঝাড়ি মেরে দিলাম।
তো দেশে যাবে?? উনার কথাটা শুনেই চমকে গেলাম। পিছনে ফিরে এগিয়ে এলাম উনার কাছে সত্তিই যাবেন তো না মজা করছেন আমার সাথে।
উনি বললেন হুম সত্যিই যাচ্ছি আমরা। শুধু তোমার জন্য দেশের ভালো ডাক্তার দেখিয়ে আসবে। তবু তোমার মুখে হাসি দেখতে চাই আমার এই ছোট সংসারে। আমি কেঁদে দিয়েছি আবারও উনি বললেন এই পিচ্ছি এত কাঁদবে না।
মানহা দৌড়ে আসছে আম্মু বলে কোলে নিয়ে হেসে উঠলাম।মানহা জিজ্ঞেস করছে আম্মু আমরা কোথায় যাব?? উনি বললেন আম্মু আমরা দেশে যাব বেড়াতে।
ওর খুশি যেন আমার চেয়েও বেশি। কার্বাডের কাপড় চোপড়া সব এলোমেলো করে রেখেছে।আমিও কাজ থেকে ১মাসের ছুটি নিয়েছি। কিছু শপিং করেছি মা মেয়ে মিলে।
রাতে যখন খেয়ে মানহাকে ঘুম পাড়াচ্ছিলাম তখনই জোহানের ফোনে একটা কল। ভেবেছিলাম আম্মু মানে আমার শাশুড়ি কল দিয়েছেন। কিন্তু স্কিনের নাম্বারটা দেখে আমার মনে ভয় জেগে উঠলো।
হ্যালো বলতেই এক নারী কন্ঠ আমায় এক গাদা কথা শুনিয়ে দিল।কান্নায় আমার কন্ঠ আড়োস্ট হয়ে এলো। জোহান আমার থেকে ফোনটা নিয়ে নিলেন।
কেউ কিছু বললো আর তুমি শুনে গেলে কেন কিছু বলো নি?আমার দু বাহু ঝাকিয়ে বললেন। ঠিকি তো বলেছে অন্যের মেয়েকে দিয়ে মা হওয়া যায় না জোহান। অন্যের মেয়ে কি? ও আমাদের মেয়ে তুমি এটা জানও। কিন্তু আমার কি আছে বলতে পারবেন।
উনার রাগান্বিত হয়ে বললেন দিব একটা চড় সব উল্টা পাল্টা কথা মাথা থেকে চলে যাবে। আর এসব যেন বলতে না শুনি তোমাকে।
চলে এলাম রুমে, কিছু না বলেই ঘুমিয়ে গেলাম।জোহান ও শুয়ে পড়লেন ।সব গুছিয়ে নিয়েছি ফ্লাইট এর অপেক্ষায় আছি।
------- -------------- ----------- -------
ভোর বেলাতে দেশের মাটিতে পা রাখলাম অন্য রকম লাগছে। আব্বু এসেছেন আমাদের নিয়ে যেতে।
আম্মু ঠিক আগের মতোই আমার ঘর সব কিছুই ঘুছিয়ে রেখেছেন। আম্মুকে দেখে আমার কান্না থামছেই না।
আম্মু বলে উঠলেন ভেবেছিলাম আরেক নাতি নাতনির মুখ দেখব। আমার মুখটা মলিন হয়ে গেল। জোহান বলে উঠলেন আম্মু এসব বলারও দেখি তোমার সময় নেই নাকি?
এখানে এসে কিছু দিন পরই জানতে পারলাম জীনা চাচ্ছে মানহাকে নিয়ে যেতে। আমি বসে আছি বারান্দায় জোহান আসতেই বললাম আপনি আমাদের দেশে নিয়ে এসেছেন শুধুই জীনার জন্য।
ডাক্তার দেখানো একটা বাহানা মাত্র৷ যতই যাই হোক একটা কথা মনে রাখবেন। আমি মানহাকে দিব না।
জোহান আমার হাত শক্ত করে ধরে আছেন। আমি কি বলছি দিয়ে দিব?উনি প্রশ্ন সূচক চাউনিতে তাকালেন। আব্বু আম্মুকেও দেখে এসেছি। আমার বিষান্নতা আম্মু বুঝতে পারেন সান্ত্বনা ছাড়া আমার জন্য আর কি বা আছে।
থাকি নি বাবার বাড়িতে বিকেলেই চলে এসেছি। নিয়ে এসেছি ছোট ভাইকে দুদিন থাকবে। এতে অনন্ত মন কিছুটা হলেও ভালো থাকবে।
ডাক্তারের কাছে গিয়ে অনেক গুলো ট্রেস্ট করে এসেছি। আমি আর পারছি না এত ট্রেস নিতে। সবকিছু মিটমাটের জন্য বিকেলে একটা বৈঠক হবে। মানহার বিষয়ে জীনার আত্নীয় স্বজন কয়েকজন এসেছেন কথা বলতে।
সব কিছুই এলোমেলো লাগছে আমি মানহাকে নিয়ে আম্মুর পাশে বসে আছি। ওরা কি নিয়ে যাবে মানহাকে? চিন্তায় আমার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ দিচ্ছে।
চলবে---
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৮/০৩/২০২২সুন্দর অনুপম
-
ন্যান্সি দেওয়ান ০২/০৯/২০২১Very Good
-
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ২১/০৮/২০২১It is very nice.
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২১/০৮/২০২১সামাজিক জীবনচিত্র।
-
ফয়জুল মহী ২১/০৮/২০২১বাহ । চমৎকার