এক মুঠো ভালোবাসার রোদ্দুর পর্ব ১৭ ও ১৮
#এক মুঠো ভালোবাসার রোদ্দুর
#পর্ব ১৭
#তাবেরী ইসলাম
এভাবেই আমদের খুনশুটি চলে গেল দিন।হ্যা এ ঘর আমার এখনো ভালোবাসি বলা হয় নি। তবে জড়িয়ে গেছি ভালোবাসার বাধনে।
উনি বলে গেলেন সন্ধ্যায় তৈরি থাকতে একটা সারপ্রাইজ আছে।মলয়ে শীত শীত ভাব বাতাসে ঠান্ডা বায়ু বইছে। একটা কালো সোনালি পাড়ের শাড়ি পড়েছি। চুল কোপা করে হিজাবটা বেধে নিয়েছি।
উনি এসে বললেন রিমা একটু নাতাশার রুমে গিয়ে বসো আমি আসছি।সেই কখন থেকে বসে আছি।
জোহনের মনে উতাল পাতাল ডেউ দুলে যাচ্ছে। কদিন বাদেই দুরত্বের জানালায় হবে বাস। পাশে ঘুর ঘুর করে কেউ চাইবে না মনোযোগ। ব্যস্ত সময়ের প্রান্তে হয়ে যাবে সাংসারিক।
উনি আসতেই বললাম এতক্ষণ লাগে আপনার আসতে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। হাত ধরে বললেন এসো। রুমের সামনে যেতেই বললেন চোখ বন্ধ কর।
রুমে দাড় করিয়ে বললেন চোখ খোল রিমা। রঙ্গিন মোম বাতির আলোয় ভরে উঠেছে ঘর।প্রশ্ন সূচক চাউনিতে তাকালাম উনার দিকে। উনি মাথায় হাত দিয়ে হিজাবটা খুলে দিলেন।
কোপাটা খুলে চুল গুলো এলোমেলো করে দিলেন। অবাধ্য চুলে হাত ডুবিয়ে বলে উঠলেন থাকতে পারবে আমায় ছাড়া। চোখ ছলছল করে উঠলো, নামিয়ে নিলাম চোখ।
কপালে ঠোঁট চুয়ে বললেন মৌন্যতা পুড়ায় খুব বুঝ না কেন?চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল উনার হাতের উপর। খামচে ধরেছি উনার শার্ট মাথা এলিয়ে দিয়ে নিরবে ঝরছে চোখের জল।
আরে পাগলি এভাবেই কি পুড়াবে নাকি কিছু মুখ ফুটে বলবে?ব্যকুলতা ঘিরে রেখেছে মন।কাঁদবে না একদম বলে রাগি ভাবে আমার মাথা তুলে তাকালেন।
আমার হাতটা উনার বুকে রেখে বলে উঠলেন দেখেছ বুকের অস্থিরতা তোমার কান্নায় কতটা বেড়ে যায়। আজ কিছু বলতে চাই শুনতে চাই। চোখের কাজল লেপ্টে গেছে বোকা মেয়ে।
কাজল লেপ্টে যাওয়া টুকু মুচে দিয়ে দুহাত ধরে বলে উঠলেন ভালোবাসি রিমা। ছোট ছোট চুল গুলো টায়রা দিয়ে আটকে দিয়ে বললেন পিচ্ছি এভাবে সামনের চুল কাটবে না আর বলে দিলাম।
আমি ক্ষনেই বলে উঠলাম আবার আমাকে পিচ্ছি বলছেন আপনি । হুম বলবই তো তাতে তোমার কি? ভালোবাসি তাকে। এই হৃদয়ের গহীনে সে যে তার জায়গা করে নিয়েছে। দেখো কত কিউট লাগছে তার মুখ খানা। লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম।
উনি হেসেই বললেন তোমার জন্য ফুচকা আর চকলেট এনেছি।আমি খাচ্ছি আর চোখে পানি চলে এসেছে। উনি এসব দেখে বলে উঠলেন এসব না খেয়ে কি হয়?
ভ্রু জোড়া কুচকে গেল আমার । আমি বললাম খাবেন এক চামুচ। মাথা নাড়িয়ে না বুঝালেন।
হাত থেকে ফুচকার বাটি রেখে জড়িয়ে ধরে বললেন কিছু শুনতে চাইছি বলছ না কেন?দুরে যখন থাকব খুঁজবে না আমায়।যখন ঘুমের ঘোরে পাবে না পাশে,এলোমেলো হবে না তোমার চুল খুঁজবে না আমায় তুমি বলো।
শীতের রাত্রে জড়িয়ে রেখেছেন আমায় নিজের মাঝে।আমি বলে উঠলাম সবি কি বলে বুঝাতে হবে? উনি বললেন তবুও শুনতে চাই। আমি মুখ কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে দিলাম ভালোবাসি।আবার বলো। ভালোবাসি আপনাকে।টুপ করে গাল ছুয়ে দিলেন।
------- ------- ------- ------- -------
ব্যস্ততায় সময় চলে যাচ্ছে উনার সব কিছু আস্তে আস্তে গুছিয়ে রাখছি দুদিন পরেই চলে যাবেন।
উনি বিদেশ চলে গেলে আমি কোথায় থাকব বলতেই, উনি রাগে আমার বাহু চেপে ধরলেন। দাঁতে দাঁতে চেপে বললেন এবাড়িতে কি জায়গা নেই নাকি?বাবার বাড়ি থাকতে গিয়েছ শুনি তো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।
আমি বললাম রেগে যাওয়ার কি হলো ভালো ভাবেই বললেই হয়।উনি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললেন তোমার যা দরকার সব গিয়ে নিয়ে আসবে একদিন। যদি বেশি থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে দুদিনের বেশি থাকবে না মনে থাকে যেন কথা গুলো।
আমি আর কথা বাড়াই নি।আমি ভালো করেই জানি সবাই কেমন।উনি বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। বিয়ের আগে সবাই আমাকে কথা বলত। কাজ পারি না, সংসার হবে কি না আমার অনেক কথা তাদের। আজকে অনেক খুশি হলাম উনার কথায়, যতই যাই হোক আমি এখানেই থাকব।
বিকেলে একটা চিৎকার ভেসে এলো কানে। শাশুড়ি আম্মু বাতাবি নেবু গাছের নিচে পিচ্ছিল মাটিতে পড়ে গোঙাচ্ছেন।আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। আমি হতবাক হয়ে আম্মুর মাথা কোলে নিয়ে কেঁদে দিলাম।
------------- ----------- --------------
#পর্ব ১৮
হসপিটালের করিডোর আমি জোহানের বাহুতে মাথা নিচু করে নিরবে বসে আছি।সে আগলে রেখেছে তবুও ভয় কমে নি আমার। চোখ দুটো জ্বলছে। চিন্তায় বার বার পানির পিপাসা পাচ্ছে।
উনি মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন আম্মুর কিচ্ছু হবে না তুমি চোখটা কিছুক্ষণ বন্ধ করে রাখ প্লিজ, রাত অনেক হয়েছে। এই শীতের মধ্যেও আরো শীত শীত ভাব লাগছে, পা তুলে জড়োসড়ো হয়ে বসলাম।
কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ থাকায় কখন ঘুমিয়েছি বুঝতে পারি নি। জোহান অপলক চেয়ে আছে রিমার মুখের দিকে।কিছুক্ষণ আগে এই মেয়ে কেঁদে কেমন অস্থির হয়েছিলো আম্মু জন্য।মায়ায় বেধে নিয়েছে নিজের সাথে সবাইকে বলেই কপালে ঠোঁট ছোয়াল।মনে কোন ভরে উঠেছে অজানা খুশিতে।
ঘুম ভেঙ্গে মাথাটা কারো কোলে আবিষ্কার করলাম। উনি বসে আছেন বিছানার এক পাশে হেলান দিয়ে শুয়ে। আম্মু গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। উনার পা ভেঙ্গে গেছে ভেবেই মন খারাপ হয়ে গেল।
ওয়ারুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে এসেছি।এই কেবিনে একটা ছোট ব্যলকুনিও আছে। দরজা খুলে দিতেই আলোয় উপচে পড়লো ঘরে। ফ্লাস্ক থেকে এক কাপ চা নিয়ে দরজা টা ভিড়িয়ে দাড়ালাম ব্যলকুনিতে।
কর্ম মুখর চারদিকে এই শহরের যান্ত্রিকতায় পূর্ণ। শুরু হয়ে গেছে গাড়ির হর্ণের শব্দ। ১০টা বেজে গেছে দুপুরে ডাক্তার চেকাপ করে গেলেই বুঝা যাবে আম্মুকে নি কবে বাড়িতে আসা হবে।
দুপুরে কোনো রকমে খেয়েছি। আব্বু বললেন তোমরা বাড়িতে যাও আজকে আমিই থাকি।
গাড়িতে বসে উনি বললেন রিমা কিছু কেনাকাটা কবে কি তুমি?আমি কপাল কুচকে উনার দিকে তাকালাম, বললাম এই সময়ে আপনার কেনাকাটার মুড আছে। র্নিলিপ্তভাবে বললেন আমি তো পরশু চলে যাব তাই বলেছি?
আমি বললাম লাগবে না কিছুই। বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে নিলাম। ফাঁকা ফাঁকা লাগছে এভাবে কেটে গেল রাত্র টা।
সকালেই নাস্তা করে উনি চলে গেলেন আম্মুকে নিয়ে আসতে।আমি আর খালা মিলে রান্নার কাজটা সেরে নিয়েছি। নাতাশা নিজের সব কিছু গুছাতে ব্যস্ত। আমি মানহাকে নিয়ে রুমে আসলেন এলাম।
মানহা আমাকে দেখলে কোলে ঝাপিয়ে পড়ে। আম্মুও বলে মাঝে মধ্যে। এর মধ্যে গাড়ির শব্দে বাহিরে বের হলাম।
উনি এসে পড়েছেন আম্মুকে হুইলচেয়ারে করে নিয়ে এলেন ঘরে। বিছানায় বসিয়ে আম্মুকে। আমি মানহাকে উনার কাছে দিয়ে আম্মুর জন্য সুপ গরম করে নিয়ে এলাম। আম্মু বললেন একটুপর খাব কেমন। জিরিয়ে নেই একটু আমি মাথা নাড়িয়ে চলে এলাম।ঘরে পিন পিন বিরবতা।
উনি মানহাকে পাশে বসিয়ে মাথার উপর হাত দিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে আছেন। লেবুর শরবতের গ্লাসটা বাড়িয়ে দিলাম উনার দিকে। এক ডুকে খেয়ে নিলেন।আমি উনার কপাল স্পর্শ করে বললাম কি হয়েছে?উনি বললেন কিছু হয় নি এমনি।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বারান্দায় বসে আছি। উনি বললেন কথা বলছ না কেন কি হয়েছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনার মোবাইল যেন কোথায়? উনি বললেন এইতো কেন? আমি নিয়ে ফোনটা হাত থেকে ছেড়ে দিলাম উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। এটা কি হলো? আমি বললাম ভালোই হয়েছে তাই না।
আপনাকে কতগুলো কল করেছি সেদিন মনে আছে?।আম্মু অসুস্থ তা না হলো ফোনটা আছাড় মেরে গুরো করে দিতাম। উনি জড়িয়ে ধরলেন আমায় বললেন ব্যস্ত ছিলাম বুঝতে পারি এমন হবে।তাই বলে কলটাও রিসিভ করবেন না। আমাদের চেয়েও কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল? বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। উনি কান ধরে বললেন সরি তো বউ আর জীবনেও এমন হবে না, প্রমিজ।
কালই চলে যাব তুমি এভাবে মুখ ঘুরিয় না প্লিজ।আম্মু আপনার জন্য বাতাবি লেবু আনতে গিয়েছিলেন। আমি উনাকে কি করে মানা করি বলুন তো?
হয়েছে আর কোনো কৈফিয়ত কোনো প্রশ্ন শুনতে চাই না। চোখের জল গড়াল উনার। আমি চেয়ে আছি উনার দিকে। আমার ওরনা দিয়ে চোখ মুচে কপট বলে উঠলেন তোমার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস এনে রেখেছি কার্বাডে। কিছু প্রয়োজন পড়লে আব্বু আম্মু আছেন বলবে তাদের সংকোচ করবে না । বেশি কিছু প্রয়োজন হলে তোমার ভাইকে বলো ও এনে দিবে। আমি ওকে বলে দিয়েছি। হাতের আঙ্গুলে আঙ্গুল গুজে কোলের উপরে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লেন।
আবারও বলে উঠলেন নিজের খেয়াল রাখবে। কিছুতেই এইতো অস্থির হবে না। মাথা একটু টিপে দাও তো বলে চোখ ভুজে নিলেন।
চলবে---
#পর্ব ১৭
#তাবেরী ইসলাম
এভাবেই আমদের খুনশুটি চলে গেল দিন।হ্যা এ ঘর আমার এখনো ভালোবাসি বলা হয় নি। তবে জড়িয়ে গেছি ভালোবাসার বাধনে।
উনি বলে গেলেন সন্ধ্যায় তৈরি থাকতে একটা সারপ্রাইজ আছে।মলয়ে শীত শীত ভাব বাতাসে ঠান্ডা বায়ু বইছে। একটা কালো সোনালি পাড়ের শাড়ি পড়েছি। চুল কোপা করে হিজাবটা বেধে নিয়েছি।
উনি এসে বললেন রিমা একটু নাতাশার রুমে গিয়ে বসো আমি আসছি।সেই কখন থেকে বসে আছি।
জোহনের মনে উতাল পাতাল ডেউ দুলে যাচ্ছে। কদিন বাদেই দুরত্বের জানালায় হবে বাস। পাশে ঘুর ঘুর করে কেউ চাইবে না মনোযোগ। ব্যস্ত সময়ের প্রান্তে হয়ে যাবে সাংসারিক।
উনি আসতেই বললাম এতক্ষণ লাগে আপনার আসতে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। হাত ধরে বললেন এসো। রুমের সামনে যেতেই বললেন চোখ বন্ধ কর।
রুমে দাড় করিয়ে বললেন চোখ খোল রিমা। রঙ্গিন মোম বাতির আলোয় ভরে উঠেছে ঘর।প্রশ্ন সূচক চাউনিতে তাকালাম উনার দিকে। উনি মাথায় হাত দিয়ে হিজাবটা খুলে দিলেন।
কোপাটা খুলে চুল গুলো এলোমেলো করে দিলেন। অবাধ্য চুলে হাত ডুবিয়ে বলে উঠলেন থাকতে পারবে আমায় ছাড়া। চোখ ছলছল করে উঠলো, নামিয়ে নিলাম চোখ।
কপালে ঠোঁট চুয়ে বললেন মৌন্যতা পুড়ায় খুব বুঝ না কেন?চোখ থেকে টুপ করে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল উনার হাতের উপর। খামচে ধরেছি উনার শার্ট মাথা এলিয়ে দিয়ে নিরবে ঝরছে চোখের জল।
আরে পাগলি এভাবেই কি পুড়াবে নাকি কিছু মুখ ফুটে বলবে?ব্যকুলতা ঘিরে রেখেছে মন।কাঁদবে না একদম বলে রাগি ভাবে আমার মাথা তুলে তাকালেন।
আমার হাতটা উনার বুকে রেখে বলে উঠলেন দেখেছ বুকের অস্থিরতা তোমার কান্নায় কতটা বেড়ে যায়। আজ কিছু বলতে চাই শুনতে চাই। চোখের কাজল লেপ্টে গেছে বোকা মেয়ে।
কাজল লেপ্টে যাওয়া টুকু মুচে দিয়ে দুহাত ধরে বলে উঠলেন ভালোবাসি রিমা। ছোট ছোট চুল গুলো টায়রা দিয়ে আটকে দিয়ে বললেন পিচ্ছি এভাবে সামনের চুল কাটবে না আর বলে দিলাম।
আমি ক্ষনেই বলে উঠলাম আবার আমাকে পিচ্ছি বলছেন আপনি । হুম বলবই তো তাতে তোমার কি? ভালোবাসি তাকে। এই হৃদয়ের গহীনে সে যে তার জায়গা করে নিয়েছে। দেখো কত কিউট লাগছে তার মুখ খানা। লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম।
উনি হেসেই বললেন তোমার জন্য ফুচকা আর চকলেট এনেছি।আমি খাচ্ছি আর চোখে পানি চলে এসেছে। উনি এসব দেখে বলে উঠলেন এসব না খেয়ে কি হয়?
ভ্রু জোড়া কুচকে গেল আমার । আমি বললাম খাবেন এক চামুচ। মাথা নাড়িয়ে না বুঝালেন।
হাত থেকে ফুচকার বাটি রেখে জড়িয়ে ধরে বললেন কিছু শুনতে চাইছি বলছ না কেন?দুরে যখন থাকব খুঁজবে না আমায়।যখন ঘুমের ঘোরে পাবে না পাশে,এলোমেলো হবে না তোমার চুল খুঁজবে না আমায় তুমি বলো।
শীতের রাত্রে জড়িয়ে রেখেছেন আমায় নিজের মাঝে।আমি বলে উঠলাম সবি কি বলে বুঝাতে হবে? উনি বললেন তবুও শুনতে চাই। আমি মুখ কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে দিলাম ভালোবাসি।আবার বলো। ভালোবাসি আপনাকে।টুপ করে গাল ছুয়ে দিলেন।
------- ------- ------- ------- -------
ব্যস্ততায় সময় চলে যাচ্ছে উনার সব কিছু আস্তে আস্তে গুছিয়ে রাখছি দুদিন পরেই চলে যাবেন।
উনি বিদেশ চলে গেলে আমি কোথায় থাকব বলতেই, উনি রাগে আমার বাহু চেপে ধরলেন। দাঁতে দাঁতে চেপে বললেন এবাড়িতে কি জায়গা নেই নাকি?বাবার বাড়ি থাকতে গিয়েছ শুনি তো আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।
আমি বললাম রেগে যাওয়ার কি হলো ভালো ভাবেই বললেই হয়।উনি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললেন তোমার যা দরকার সব গিয়ে নিয়ে আসবে একদিন। যদি বেশি থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে দুদিনের বেশি থাকবে না মনে থাকে যেন কথা গুলো।
আমি আর কথা বাড়াই নি।আমি ভালো করেই জানি সবাই কেমন।উনি বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। বিয়ের আগে সবাই আমাকে কথা বলত। কাজ পারি না, সংসার হবে কি না আমার অনেক কথা তাদের। আজকে অনেক খুশি হলাম উনার কথায়, যতই যাই হোক আমি এখানেই থাকব।
বিকেলে একটা চিৎকার ভেসে এলো কানে। শাশুড়ি আম্মু বাতাবি নেবু গাছের নিচে পিচ্ছিল মাটিতে পড়ে গোঙাচ্ছেন।আমি ভীষণ ভয় পেয়ে যাই। আমি হতবাক হয়ে আম্মুর মাথা কোলে নিয়ে কেঁদে দিলাম।
------------- ----------- --------------
#পর্ব ১৮
হসপিটালের করিডোর আমি জোহানের বাহুতে মাথা নিচু করে নিরবে বসে আছি।সে আগলে রেখেছে তবুও ভয় কমে নি আমার। চোখ দুটো জ্বলছে। চিন্তায় বার বার পানির পিপাসা পাচ্ছে।
উনি মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরে বললেন আম্মুর কিচ্ছু হবে না তুমি চোখটা কিছুক্ষণ বন্ধ করে রাখ প্লিজ, রাত অনেক হয়েছে। এই শীতের মধ্যেও আরো শীত শীত ভাব লাগছে, পা তুলে জড়োসড়ো হয়ে বসলাম।
কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ থাকায় কখন ঘুমিয়েছি বুঝতে পারি নি। জোহান অপলক চেয়ে আছে রিমার মুখের দিকে।কিছুক্ষণ আগে এই মেয়ে কেঁদে কেমন অস্থির হয়েছিলো আম্মু জন্য।মায়ায় বেধে নিয়েছে নিজের সাথে সবাইকে বলেই কপালে ঠোঁট ছোয়াল।মনে কোন ভরে উঠেছে অজানা খুশিতে।
ঘুম ভেঙ্গে মাথাটা কারো কোলে আবিষ্কার করলাম। উনি বসে আছেন বিছানার এক পাশে হেলান দিয়ে শুয়ে। আম্মু গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। উনার পা ভেঙ্গে গেছে ভেবেই মন খারাপ হয়ে গেল।
ওয়ারুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে এসেছি।এই কেবিনে একটা ছোট ব্যলকুনিও আছে। দরজা খুলে দিতেই আলোয় উপচে পড়লো ঘরে। ফ্লাস্ক থেকে এক কাপ চা নিয়ে দরজা টা ভিড়িয়ে দাড়ালাম ব্যলকুনিতে।
কর্ম মুখর চারদিকে এই শহরের যান্ত্রিকতায় পূর্ণ। শুরু হয়ে গেছে গাড়ির হর্ণের শব্দ। ১০টা বেজে গেছে দুপুরে ডাক্তার চেকাপ করে গেলেই বুঝা যাবে আম্মুকে নি কবে বাড়িতে আসা হবে।
দুপুরে কোনো রকমে খেয়েছি। আব্বু বললেন তোমরা বাড়িতে যাও আজকে আমিই থাকি।
গাড়িতে বসে উনি বললেন রিমা কিছু কেনাকাটা কবে কি তুমি?আমি কপাল কুচকে উনার দিকে তাকালাম, বললাম এই সময়ে আপনার কেনাকাটার মুড আছে। র্নিলিপ্তভাবে বললেন আমি তো পরশু চলে যাব তাই বলেছি?
আমি বললাম লাগবে না কিছুই। বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে নিলাম। ফাঁকা ফাঁকা লাগছে এভাবে কেটে গেল রাত্র টা।
সকালেই নাস্তা করে উনি চলে গেলেন আম্মুকে নিয়ে আসতে।আমি আর খালা মিলে রান্নার কাজটা সেরে নিয়েছি। নাতাশা নিজের সব কিছু গুছাতে ব্যস্ত। আমি মানহাকে নিয়ে রুমে আসলেন এলাম।
মানহা আমাকে দেখলে কোলে ঝাপিয়ে পড়ে। আম্মুও বলে মাঝে মধ্যে। এর মধ্যে গাড়ির শব্দে বাহিরে বের হলাম।
উনি এসে পড়েছেন আম্মুকে হুইলচেয়ারে করে নিয়ে এলেন ঘরে। বিছানায় বসিয়ে আম্মুকে। আমি মানহাকে উনার কাছে দিয়ে আম্মুর জন্য সুপ গরম করে নিয়ে এলাম। আম্মু বললেন একটুপর খাব কেমন। জিরিয়ে নেই একটু আমি মাথা নাড়িয়ে চলে এলাম।ঘরে পিন পিন বিরবতা।
উনি মানহাকে পাশে বসিয়ে মাথার উপর হাত দিয়ে বিছানায় হেলান দিয়ে আছেন। লেবুর শরবতের গ্লাসটা বাড়িয়ে দিলাম উনার দিকে। এক ডুকে খেয়ে নিলেন।আমি উনার কপাল স্পর্শ করে বললাম কি হয়েছে?উনি বললেন কিছু হয় নি এমনি।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে বারান্দায় বসে আছি। উনি বললেন কথা বলছ না কেন কি হয়েছে? আমি জিজ্ঞেস করলাম আপনার মোবাইল যেন কোথায়? উনি বললেন এইতো কেন? আমি নিয়ে ফোনটা হাত থেকে ছেড়ে দিলাম উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন। এটা কি হলো? আমি বললাম ভালোই হয়েছে তাই না।
আপনাকে কতগুলো কল করেছি সেদিন মনে আছে?।আম্মু অসুস্থ তা না হলো ফোনটা আছাড় মেরে গুরো করে দিতাম। উনি জড়িয়ে ধরলেন আমায় বললেন ব্যস্ত ছিলাম বুঝতে পারি এমন হবে।তাই বলে কলটাও রিসিভ করবেন না। আমাদের চেয়েও কাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল? বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। উনি কান ধরে বললেন সরি তো বউ আর জীবনেও এমন হবে না, প্রমিজ।
কালই চলে যাব তুমি এভাবে মুখ ঘুরিয় না প্লিজ।আম্মু আপনার জন্য বাতাবি লেবু আনতে গিয়েছিলেন। আমি উনাকে কি করে মানা করি বলুন তো?
হয়েছে আর কোনো কৈফিয়ত কোনো প্রশ্ন শুনতে চাই না। চোখের জল গড়াল উনার। আমি চেয়ে আছি উনার দিকে। আমার ওরনা দিয়ে চোখ মুচে কপট বলে উঠলেন তোমার কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস এনে রেখেছি কার্বাডে। কিছু প্রয়োজন পড়লে আব্বু আম্মু আছেন বলবে তাদের সংকোচ করবে না । বেশি কিছু প্রয়োজন হলে তোমার ভাইকে বলো ও এনে দিবে। আমি ওকে বলে দিয়েছি। হাতের আঙ্গুলে আঙ্গুল গুজে কোলের উপরে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লেন।
আবারও বলে উঠলেন নিজের খেয়াল রাখবে। কিছুতেই এইতো অস্থির হবে না। মাথা একটু টিপে দাও তো বলে চোখ ভুজে নিলেন।
চলবে---
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
এ বি এস তুষার ১৬/০৮/২০২১সুন্দর
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১৫/০৮/২০২১বেশ জমছে!