এক মুঠো ভালোবাসার রোদ্দুর পর্ব ১৪ ১৫ ও ১৬
#এক মুঠো ভালোবাসার রোদ্দুর
#পর্ব ১৪,১৫ও১৬
#তাবেরী ইসলাম
গাড়ি চলছে তার নিজেস্ব গতিতেই চুপচাপ বসে আছি উনার পাশে। মনে অস্থিরতা উঁকি দিচ্ছে। সূর্যের তীর্যক আলোয় ভরে উঠেছে চারপাশে।
কাংখিত স্থানে পৌছে গেছি সময়ে। লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বড্ড ক্লান্তই মনে হচ্ছে।কপালের তীক্ষ্ণ ভাজ পড়েছে আমি চেয়ে আছি উনার দিকে। পিপাসায় জড়োসড়ো। উনি বাড়িয়ে দিলেন পানির বোটল টা, এক ডুক খেয়ে নিলাম ।
ছবি তুলে বেরিয়েই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম। একটা শপিংমলে নিয়ে এসেছেন কিছু কেনাকাটা আর জুয়েলারি কিনে নিলাম।
রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছেন খাওয়ার জন্য। তবে মন নেই আমার খাওয়াতে। চামুচ নাড়িয়ে যাচ্ছি উনি বললেন কি হলো রিমা খাচ্ছ না কেন?
ঠিক আছ তো তুমি?মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।
খেতে গিয়েও খেতে পারি নি তেমন, উনি এটা খেয়াল করেছেন। ব্যথা যেন ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
গাড়িতে উঠে বসেছি মনে হচ্ছে আমি আর একটুও নড়তে পারবো না। মাথাও ভারি লাগছে। চোখ খিছে খামচে ধরেছি উনার হাত।
উৎকন্ঠায় ব্যকুল হয়ে উঠছেন উনি রিমা কি হয়েছে তোমার?? নিভু নিভু চোখে তাকালাম উনার দিকে।
খারাপ লাগছে কিছু তো একটা বলো রিমা?জড়িয়ে রেখেছেন নিজের সাথে।
ব্যথা করছে বলতেই উনি বললেন পেঠে ব্যথা কি?আমি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বুঝালাম। কিচ্ছু হয়নি ঠিক হয়ে যাবে?
বিকেলের রোদ কাচঁ বেধ করে এসে মুখে পড়ছে।উনি হাত দিয়ে আগলে রেখেছেন। হন্তদন্ত হয়ে নিয়ে গেলেন একজন মহিলা ডাক্তারের কাছে।
পেঠ ব্যথা শুনেই একটা ওষুধ বলে দিলেন উনাকে। উনি ওষুধ টা এনে আমাকে খাইয়ে দিলেন।
উনি কিছু ট্রেস্ট লিখে সাথে প্রেস্ক্রিপশন ধরিয়ে দিলেন। খানিকক্ষণ জিরিয়ে ট্রেস্ট গুলো করিয়ে নিলাম। ট্রেস্ট রিপোর্ট দেখে ডাক্তার মহিলা হেসে বলে উঠলেন এমন কিছু নয়? এটা স্বাভাবিক।
আর ব্যথা হলে ব্যথার ওষুধ খেয়ে নিবেন। একটু রেস্ট আর খাওয়া দাওয়া ঘুম ঠিক মত করবেন।
সূর্য ঢলে পড়েছে অনেক আগেই। গাড়ি চলছে। চোখের পাতা বুজে নিয়েছি। উনার বুকে আগলে রেখেছেন আমায়।
রাত্র প্রায় নয়টা বাজতে চলেছে। আব্বু আম্মু দু'বার ফোন করেছেন। চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছেন।গাড়ি ব্রেক করায় ঘুম চলে গেল।
ক্লান্তি ভর করেছে উনার চেহারায়। রুমে এসে ফ্রেস হয়ে নিলাম।আম্মু ডেকেছেন খেতে আমার ইচ্ছে নেই তবুও উনি খাইয়ে দিলেন।
ওষুধ টা রুমে এসে খেয়ে নিলাম। বারান্দায় উনি বসে আছেন।আমি আসতেই বললেন কেমন লাগছে এখন রিমা??
আমি বললাম ভালো। উনি কপাল কুঁচকে বললেন এমন ব্যথা কি তোমার আগেও হতো?
হ্যাঁ হতো তবে এত বেশি না। তাহলে আগে কেন বলো নি?আমি মাথা নিচু করে মৌন্যতা প্রকাশ করলাম। উনার রাগে চোখ লাল হয়ে আছে। কিছু জিজ্ঞেস করেছি রিমা উত্তর দাও।
আমি আসলে ভাবি নি ব্যথা এত বেশি হবে।কেমন ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তুমি শান্ত স্বরে উনি বলে উঠলেন।
আমার দিকে তাকিয়ে দু'হাতে গাল ছুয়ে বলে উঠলেন এত ভয় সংকোচ কেন রিমা??আমি তো তোমায় আগলে রাখতে চাই। এই মনে ঝড়ো হাওয়া বহে যায় বুঝ তুমি।
শুয়ে পড় রাতে অনেক হয়েছে ঘুমানোর চেস্টা কর।উনি লাইট নিভিয়ে দিলেন। হাতটা ধরে আছি উনার ঘুমানোর প্রশান্তিতে।
সকালের এক ঝাক আলোর জটা এসে পড়লো মুখে। ঘুম ঘোরে কুচকে উঠলো মুখ এলোমেলো চুল । কাথাটা জড়িয়ে ধরলাম। কেউ যেন উঁকি যুকি দিচ্ছে আমার মুখ পানে।
স্নিগ্ধ কোমল মুখে বিরক্তির চাপ জোহান চেয়ে আছে সেদিকে পুলকিত চিত্তে।
-----------------------------------------------------
#পর্ব ১৫
চোখ মেলে তাকাতেই উনার চোখে চোখ পড়ল। চট করে সরে দাঁড়ালেন। আমি আমার চুলে হাত দিয়ে বললাম আমার চুল তো বাধা ছিলো। খুলে গেল কি করে?
উনি ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর ভাবে বললেন সেটা কি আমি জানি? তো এখন যে আমার চুলে ঝট লেগে গেলো আমার চুল গুলো ছিড়ে যাবে তো ইনোসেন্ট ফেস করে বললাম।
এটা নিশ্চয়ই বলতেই উনি বললেন তুমি চুল না বেধে দোষ আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছ কেন বলো তো রিমা?? আমি কাউকে দোষ দেই নি শুধু বলেছি মাত্র। আপনি নিজেই বলে দিলেন।
আমি ও বললাম আজকে যদি আমার চুল ছিড়ে একটা তাহলে আপনার মাথায়ও চুল থাকবে না।উনি আমার কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।তাকিয়ে আছেন কেন? কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন সাহস আছে এই নাও মাথা নিচু করে দিয়েছি।
কি বলব এখন ভেবে পাচ্ছি না?? কি হলো? মুখে বেশ পটর পটর করতে পার।যা নিজের তা দেখতে কাউকে বলতে হয় না মিসেস জোহান।এবার ছাড়ুন ওয়াশরুমে যাব।উল্টো আরো লজ্জায় পরে গেলাম কথা বলে। আম্মু নাস্তার জন্য বসে আছেন খাবার নিয়ে। সিদ্ধ ডিম, ফল,জুস খিচুড়ি এত সব আমি কি করে খাব। আম্মু বলছেন এগুলো বেশি করে খাবে তো ব্যথা করবে না।উনি আম্মুকে বলছেন বলো খেয়ে নিতে ভালোয় ভালোয় বলে চলে গেলেন।
খাইয়ে দিয়েছেন আম্মু আমাকে পেঠ পুরে।বাহিরে গিয়েছেন এখনো আসেন নি।
দুপুরে ফোন করে বলে দিলেন আসতে দেরি হবে উনার। বিকেলে উনার চাচাতো ভাই বোন বেড়াতে এসেছে। আমি খালার সাথে মিলে চা নাস্তা বানিয়েছি।আম্মু আর চাচি শাশুড়ি মিলে গল্প করছেন।
বাসার পিছনের বসার জায়গায় ওরা বসে আছে।আমি নাস্তা দিয়ে ওদের সাথে কথা বলছি আর হাসছি। উনি ঘরে এসেছেন খেয়াল করি নি সেটা। উনি সোজা আমার ধরে নিয়ে এলেন রুমে। তুমি ওখানে গিয়েছ কেন?
আমি বললাম ওরা তো আপনার চাচাতো ভাই বোন অন্য কেউ নয় তো।উনার হঠাৎ রাগ দেখে ভয় জাগলো মনে।কি এমন ভুল হলো? উনি দরজায় শব্দ করে লাগিয়ে দেওয়ায় আমি কেঁপে উঠলাম। নিয়াজের কথা বলতে যেন না দেখি। কে কিভাবে তাকায় সেটাও কি তুমি বুঝ না? না বুঝাতে হবে।
আমি আসলেই ওর দিকে খেয়াল করে দেখি নি।বেরিয়ে এলাম রুম থেকে উনার জন্য চা নিয়ে রুমে গিয়ে দেখি উনি বারান্দার সোফায় হেলান দিয়ে চোখ ভুজে আছেন।
রুম থেকে বাহির হতেই উনার চাচাতো বোন এসে বলল কি হয়েছে ভাবি? আমি হাসি দিয়ে বললাম তেমন কিছু না উনার প্রয়োজনীয় এটা জিনিস খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাই।
গল্প গুজব শেষে ওরা চলে গেল।আমি ভয়ে আছি এখন কোন ঝড় বহে যাবে না জানি।
রুমে যেতেই দেখলাম উনি রুমে নেই।বারান্দায় চোখ বুলাতেই উনি বলে উঠলেন এত উঁকি যুকি কিসের? এ দিকে এসো। কাচূমুচু হয়ে বসে আছি উনার সামনে। এই মিসেস এখনো কি আপনার বুঝ শক্তি কম না বুদ্ধি কম?রাগি ভাবেই বললেন।
তাকাও আমার দিকে রিমা??ভেতর ধক করে উঠলো।
--------------------------------------------------------
#পর্ব ১৬
তো প্রেম টেম করেছিলে কখনো? উনার প্রশ্ন শুনে তাকালাম উনার দিকে। উনি এখনো সেই আগের মতই চেয়ে আছেন।
উনি আবার বলে উঠলেন মনে একজন আর বাহিরে আরেকজন এভাবে তো জীবন চলে না।আমি এবার বলেই ফেললাম এ কেমন প্রশ্ন করছেন?উনি বললেন তুমি অনেক পড়াশোনা করেছে ভালো কাউকে বাসতেই পার তাই না।উনার কথা গুলোর মাঝে স্পষ্ট অভিমানের চাপ আছে।
আমি বললাম কোনটা বলব সত্য না মিথ্যা। উনি বললেন দুটোই বলতে পার। আমি উনার চোখের তাকিয়ে বলতে পারব না।তাই উঠে গ্রিল ধরে বাহিরে তাকালাম। যদি মিথ্যে হয় তাহলে এক কথায় না।আর যদি সত্য হয় তবে হ্যা।
উনি বললেন তবে কি এখনো তুমি মনের গহীনে অন্য কাউকে লালন কর?ভ্রু জোড়া আমার কুঁচকে এলো বিস্মিত হয়ে আছি।
কি মনে হয় আপনার? যে হারিয়ে গেছে তার জন্য আমি এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আপনার কাছে এসেছি। একপক্ষ ভালোবাসা ভীষণ কষ্টের হয়।আর উচু নিচু শ্রেণি বিত্তের বেড়া জালে দেয়াল তৈরি করে।
আমি কখনোই নিজেকে সম্পর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ করি নি।আমি শুধুই ভালোবেসেছিলাম। তা সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে।সে কখনোই আমাকে ভালোবাসে নি। আমিও তা মেনে নিয়েছি। আমি আর পিছনে তাকাতে চাই না।
উনি কিছুটা অবাক হয়ে বললেন তাহলে কি ভুলে গেছ? আর ডায়েরির পাতায় এত অনুভূতি কার জন্য লিখা?
আমি স্মিত হেসে বললাম এই বুঝি আসল বেপার।অভিমান জমে মেঘ জমেছিলো আপনার মনে?ওটা আমার অনুভূতি আমার স্বপ্নের প্রিয় মানুষের জন্য।
এই শেহজাদির শেহজাদের জন্য।
উনি বুকে হাত গুজে গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন আমার দিকে। উনি বললেন তো শেহজাদের দেখা পেয়েছ।
হুম সেটা কেন আপনাকে বলব? আমি তো পুরু রাজ্যসহ একটা পুচকি শেহজাদি ও পেয়েছি বোনাস হিসেবে বলে আমি সোফায় বসে পড়লাম। উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন আমি কিন্তু পড়েছি তোমার লেখা গুলো।
তো কি হয়েছে? এখন ঢোল পিটিয়ে বলতে হবে না কি?উনি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন যদি বলে দেই। আমি চট করে উঠে উনার মুখে আঙ্গুল দিয়ে বললাম প্লিজ কাউকে বলবেন না।
উনি আমার গালে দুহাত দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন। অতীতে যাই হোক না কেন এখন তুমি আমার। কাছে আসার এই কম্পন ধুকপুক শব্দ গুলো যেন আমার জন্য হয়।আমিই শুধু এ মনের কোণে বাস করতে চাই। নাইলে বুঝই তো এই মিস্টার তোমার কি করবে?বলে উনি একটা লাভ বাইট বসিয়ে দিলেন কাদে।
আহ বলেই উনার দিকে ফিরে দিলাম ধাক্কা এটা কি করলেন? আবার হাসছেন কেন??আমি বললাম কামড় দেয় কোন প্রাণী জানেন? উনি বললেন দেখো এখন যদি এসব বলো তাহলে ভালোবাসা চিহ্ন যেখানে দিব তার জন্য রুমের বাহিরে আজকে যেতে পারবে না।
আমি অবাক হচ্ছি কি বলেন উনি একটু আগে তো ঝড় আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়ে ছিলো। হাত বাড়িয়ে আমার চুলের বাধন খুলে দিলেন। এটা কি করলেন? আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম।
চুল গুলো খোলা রাখ আমি দেখি। চুলের ঘ্রাণ এলোমেলো করে দেয় আমাকে। কি আছে এমন? আমি বললাম নারিকেল তেল আছে দিব আপনার মাথায় একটু লাগিয়ে। উনি নাক ছিটকে বললেন এতে পিপড়ার ঘ্রাণ আছে আর তুমি ওটাই মাথায় দাও ওয়াক।
আমি বললাম কি? কই কিছু না তো। আপনি কি বললেন এগুলো আগে বলেই উনার পিঠে একটা কিল মেরে বসলাম। এখন কি হবে?এখন যদি রেগে যান তাহলে কি হবে?
উনি তীর্যক ভাবে তাকিয়ে আমার হাত ধরে বললেন এই শক্তি দিয়ে কটা মারতে পারবে। আমি কটমট করে তাকালাম উনার দিকে। এই পিচ্ছি কিভাবে আমার মেয়েকে সামলাবে উনি বলে উঠলেন।
আপনি মজা নিচ্ছেন আমার সাথে বলেই হাত ঝাড়ি মেরে ছাড়িয়ে নিলাম।মন খারাপ হয়ে গেল। আম্মু ডাকছেন বলে চলে এসেছি।
আম্মু,খালার সাথে আমিও রান্না করছি। আব্বুকে চা দিয়ে উনার জন্য চায়ে কাপটা টেবিলে রেখে চলে এলাম। আজকে আর কথাই বলব না।
নাতাশার সাথে কথা বলছি উনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে। উনি শুনেই চো মেরে আমার ফোনটা নিয়ে নিলেন। তোমরা কথা বলবে আর আমার আম্মুটাকে আমি দেখাবো না তা কি হয়?
পিচ্ছির মেয়ে দেখতে কে বলেছে আপনাকে?দিন আমার ফোন আমি কথা বলব।ফোন ধরতে গেলে উনি হাত উচু করে বললেন এবার নাও দেখি।
আর নাতাশাকে বলছেন তোর ভাবি আজকে রেগে আছে কেমন দেখ।টমেটো না ট্রবেরি লাগছে বল তো নাতাশা। নাতাশা হাসছে আর বলছে তুমি কেন একা পেয়ে ভাবিকে ক্ষেপাচ্ছ?
কথা বলেই চলছেন আমি আম্মুর কাছে চলে এসেছি।রাগে ফোস ফোস করছে মেজাজ কিন্তু মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।
চলবে----
#পর্ব ১৪,১৫ও১৬
#তাবেরী ইসলাম
গাড়ি চলছে তার নিজেস্ব গতিতেই চুপচাপ বসে আছি উনার পাশে। মনে অস্থিরতা উঁকি দিচ্ছে। সূর্যের তীর্যক আলোয় ভরে উঠেছে চারপাশে।
কাংখিত স্থানে পৌছে গেছি সময়ে। লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বড্ড ক্লান্তই মনে হচ্ছে।কপালের তীক্ষ্ণ ভাজ পড়েছে আমি চেয়ে আছি উনার দিকে। পিপাসায় জড়োসড়ো। উনি বাড়িয়ে দিলেন পানির বোটল টা, এক ডুক খেয়ে নিলাম ।
ছবি তুলে বেরিয়েই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম। একটা শপিংমলে নিয়ে এসেছেন কিছু কেনাকাটা আর জুয়েলারি কিনে নিলাম।
রেস্টুরেন্টে নিয়ে এসেছেন খাওয়ার জন্য। তবে মন নেই আমার খাওয়াতে। চামুচ নাড়িয়ে যাচ্ছি উনি বললেন কি হলো রিমা খাচ্ছ না কেন?
ঠিক আছ তো তুমি?মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললাম।
খেতে গিয়েও খেতে পারি নি তেমন, উনি এটা খেয়াল করেছেন। ব্যথা যেন ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
গাড়িতে উঠে বসেছি মনে হচ্ছে আমি আর একটুও নড়তে পারবো না। মাথাও ভারি লাগছে। চোখ খিছে খামচে ধরেছি উনার হাত।
উৎকন্ঠায় ব্যকুল হয়ে উঠছেন উনি রিমা কি হয়েছে তোমার?? নিভু নিভু চোখে তাকালাম উনার দিকে।
খারাপ লাগছে কিছু তো একটা বলো রিমা?জড়িয়ে রেখেছেন নিজের সাথে।
ব্যথা করছে বলতেই উনি বললেন পেঠে ব্যথা কি?আমি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বুঝালাম। কিচ্ছু হয়নি ঠিক হয়ে যাবে?
বিকেলের রোদ কাচঁ বেধ করে এসে মুখে পড়ছে।উনি হাত দিয়ে আগলে রেখেছেন। হন্তদন্ত হয়ে নিয়ে গেলেন একজন মহিলা ডাক্তারের কাছে।
পেঠ ব্যথা শুনেই একটা ওষুধ বলে দিলেন উনাকে। উনি ওষুধ টা এনে আমাকে খাইয়ে দিলেন।
উনি কিছু ট্রেস্ট লিখে সাথে প্রেস্ক্রিপশন ধরিয়ে দিলেন। খানিকক্ষণ জিরিয়ে ট্রেস্ট গুলো করিয়ে নিলাম। ট্রেস্ট রিপোর্ট দেখে ডাক্তার মহিলা হেসে বলে উঠলেন এমন কিছু নয়? এটা স্বাভাবিক।
আর ব্যথা হলে ব্যথার ওষুধ খেয়ে নিবেন। একটু রেস্ট আর খাওয়া দাওয়া ঘুম ঠিক মত করবেন।
সূর্য ঢলে পড়েছে অনেক আগেই। গাড়ি চলছে। চোখের পাতা বুজে নিয়েছি। উনার বুকে আগলে রেখেছেন আমায়।
রাত্র প্রায় নয়টা বাজতে চলেছে। আব্বু আম্মু দু'বার ফোন করেছেন। চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছেন।গাড়ি ব্রেক করায় ঘুম চলে গেল।
ক্লান্তি ভর করেছে উনার চেহারায়। রুমে এসে ফ্রেস হয়ে নিলাম।আম্মু ডেকেছেন খেতে আমার ইচ্ছে নেই তবুও উনি খাইয়ে দিলেন।
ওষুধ টা রুমে এসে খেয়ে নিলাম। বারান্দায় উনি বসে আছেন।আমি আসতেই বললেন কেমন লাগছে এখন রিমা??
আমি বললাম ভালো। উনি কপাল কুঁচকে বললেন এমন ব্যথা কি তোমার আগেও হতো?
হ্যাঁ হতো তবে এত বেশি না। তাহলে আগে কেন বলো নি?আমি মাথা নিচু করে মৌন্যতা প্রকাশ করলাম। উনার রাগে চোখ লাল হয়ে আছে। কিছু জিজ্ঞেস করেছি রিমা উত্তর দাও।
আমি আসলে ভাবি নি ব্যথা এত বেশি হবে।কেমন ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তুমি শান্ত স্বরে উনি বলে উঠলেন।
আমার দিকে তাকিয়ে দু'হাতে গাল ছুয়ে বলে উঠলেন এত ভয় সংকোচ কেন রিমা??আমি তো তোমায় আগলে রাখতে চাই। এই মনে ঝড়ো হাওয়া বহে যায় বুঝ তুমি।
শুয়ে পড় রাতে অনেক হয়েছে ঘুমানোর চেস্টা কর।উনি লাইট নিভিয়ে দিলেন। হাতটা ধরে আছি উনার ঘুমানোর প্রশান্তিতে।
সকালের এক ঝাক আলোর জটা এসে পড়লো মুখে। ঘুম ঘোরে কুচকে উঠলো মুখ এলোমেলো চুল । কাথাটা জড়িয়ে ধরলাম। কেউ যেন উঁকি যুকি দিচ্ছে আমার মুখ পানে।
স্নিগ্ধ কোমল মুখে বিরক্তির চাপ জোহান চেয়ে আছে সেদিকে পুলকিত চিত্তে।
-----------------------------------------------------
#পর্ব ১৫
চোখ মেলে তাকাতেই উনার চোখে চোখ পড়ল। চট করে সরে দাঁড়ালেন। আমি আমার চুলে হাত দিয়ে বললাম আমার চুল তো বাধা ছিলো। খুলে গেল কি করে?
উনি ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর ভাবে বললেন সেটা কি আমি জানি? তো এখন যে আমার চুলে ঝট লেগে গেলো আমার চুল গুলো ছিড়ে যাবে তো ইনোসেন্ট ফেস করে বললাম।
এটা নিশ্চয়ই বলতেই উনি বললেন তুমি চুল না বেধে দোষ আমার ঘাড়ে চাপাচ্ছ কেন বলো তো রিমা?? আমি কাউকে দোষ দেই নি শুধু বলেছি মাত্র। আপনি নিজেই বলে দিলেন।
আমি ও বললাম আজকে যদি আমার চুল ছিড়ে একটা তাহলে আপনার মাথায়ও চুল থাকবে না।উনি আমার কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন।তাকিয়ে আছেন কেন? কোমড় জড়িয়ে ধরে বললেন সাহস আছে এই নাও মাথা নিচু করে দিয়েছি।
কি বলব এখন ভেবে পাচ্ছি না?? কি হলো? মুখে বেশ পটর পটর করতে পার।যা নিজের তা দেখতে কাউকে বলতে হয় না মিসেস জোহান।এবার ছাড়ুন ওয়াশরুমে যাব।উল্টো আরো লজ্জায় পরে গেলাম কথা বলে। আম্মু নাস্তার জন্য বসে আছেন খাবার নিয়ে। সিদ্ধ ডিম, ফল,জুস খিচুড়ি এত সব আমি কি করে খাব। আম্মু বলছেন এগুলো বেশি করে খাবে তো ব্যথা করবে না।উনি আম্মুকে বলছেন বলো খেয়ে নিতে ভালোয় ভালোয় বলে চলে গেলেন।
খাইয়ে দিয়েছেন আম্মু আমাকে পেঠ পুরে।বাহিরে গিয়েছেন এখনো আসেন নি।
দুপুরে ফোন করে বলে দিলেন আসতে দেরি হবে উনার। বিকেলে উনার চাচাতো ভাই বোন বেড়াতে এসেছে। আমি খালার সাথে মিলে চা নাস্তা বানিয়েছি।আম্মু আর চাচি শাশুড়ি মিলে গল্প করছেন।
বাসার পিছনের বসার জায়গায় ওরা বসে আছে।আমি নাস্তা দিয়ে ওদের সাথে কথা বলছি আর হাসছি। উনি ঘরে এসেছেন খেয়াল করি নি সেটা। উনি সোজা আমার ধরে নিয়ে এলেন রুমে। তুমি ওখানে গিয়েছ কেন?
আমি বললাম ওরা তো আপনার চাচাতো ভাই বোন অন্য কেউ নয় তো।উনার হঠাৎ রাগ দেখে ভয় জাগলো মনে।কি এমন ভুল হলো? উনি দরজায় শব্দ করে লাগিয়ে দেওয়ায় আমি কেঁপে উঠলাম। নিয়াজের কথা বলতে যেন না দেখি। কে কিভাবে তাকায় সেটাও কি তুমি বুঝ না? না বুঝাতে হবে।
আমি আসলেই ওর দিকে খেয়াল করে দেখি নি।বেরিয়ে এলাম রুম থেকে উনার জন্য চা নিয়ে রুমে গিয়ে দেখি উনি বারান্দার সোফায় হেলান দিয়ে চোখ ভুজে আছেন।
রুম থেকে বাহির হতেই উনার চাচাতো বোন এসে বলল কি হয়েছে ভাবি? আমি হাসি দিয়ে বললাম তেমন কিছু না উনার প্রয়োজনীয় এটা জিনিস খুঁজে পাচ্ছিলেন না তাই।
গল্প গুজব শেষে ওরা চলে গেল।আমি ভয়ে আছি এখন কোন ঝড় বহে যাবে না জানি।
রুমে যেতেই দেখলাম উনি রুমে নেই।বারান্দায় চোখ বুলাতেই উনি বলে উঠলেন এত উঁকি যুকি কিসের? এ দিকে এসো। কাচূমুচু হয়ে বসে আছি উনার সামনে। এই মিসেস এখনো কি আপনার বুঝ শক্তি কম না বুদ্ধি কম?রাগি ভাবেই বললেন।
তাকাও আমার দিকে রিমা??ভেতর ধক করে উঠলো।
--------------------------------------------------------
#পর্ব ১৬
তো প্রেম টেম করেছিলে কখনো? উনার প্রশ্ন শুনে তাকালাম উনার দিকে। উনি এখনো সেই আগের মতই চেয়ে আছেন।
উনি আবার বলে উঠলেন মনে একজন আর বাহিরে আরেকজন এভাবে তো জীবন চলে না।আমি এবার বলেই ফেললাম এ কেমন প্রশ্ন করছেন?উনি বললেন তুমি অনেক পড়াশোনা করেছে ভালো কাউকে বাসতেই পার তাই না।উনার কথা গুলোর মাঝে স্পষ্ট অভিমানের চাপ আছে।
আমি বললাম কোনটা বলব সত্য না মিথ্যা। উনি বললেন দুটোই বলতে পার। আমি উনার চোখের তাকিয়ে বলতে পারব না।তাই উঠে গ্রিল ধরে বাহিরে তাকালাম। যদি মিথ্যে হয় তাহলে এক কথায় না।আর যদি সত্য হয় তবে হ্যা।
উনি বললেন তবে কি এখনো তুমি মনের গহীনে অন্য কাউকে লালন কর?ভ্রু জোড়া আমার কুঁচকে এলো বিস্মিত হয়ে আছি।
কি মনে হয় আপনার? যে হারিয়ে গেছে তার জন্য আমি এতটা পথ পাড়ি দিয়ে আপনার কাছে এসেছি। একপক্ষ ভালোবাসা ভীষণ কষ্টের হয়।আর উচু নিচু শ্রেণি বিত্তের বেড়া জালে দেয়াল তৈরি করে।
আমি কখনোই নিজেকে সম্পর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ করি নি।আমি শুধুই ভালোবেসেছিলাম। তা সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে।সে কখনোই আমাকে ভালোবাসে নি। আমিও তা মেনে নিয়েছি। আমি আর পিছনে তাকাতে চাই না।
উনি কিছুটা অবাক হয়ে বললেন তাহলে কি ভুলে গেছ? আর ডায়েরির পাতায় এত অনুভূতি কার জন্য লিখা?
আমি স্মিত হেসে বললাম এই বুঝি আসল বেপার।অভিমান জমে মেঘ জমেছিলো আপনার মনে?ওটা আমার অনুভূতি আমার স্বপ্নের প্রিয় মানুষের জন্য।
এই শেহজাদির শেহজাদের জন্য।
উনি বুকে হাত গুজে গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়ালেন আমার দিকে। উনি বললেন তো শেহজাদের দেখা পেয়েছ।
হুম সেটা কেন আপনাকে বলব? আমি তো পুরু রাজ্যসহ একটা পুচকি শেহজাদি ও পেয়েছি বোনাস হিসেবে বলে আমি সোফায় বসে পড়লাম। উনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন আমি কিন্তু পড়েছি তোমার লেখা গুলো।
তো কি হয়েছে? এখন ঢোল পিটিয়ে বলতে হবে না কি?উনি দুষ্টু হাসি দিয়ে বললেন যদি বলে দেই। আমি চট করে উঠে উনার মুখে আঙ্গুল দিয়ে বললাম প্লিজ কাউকে বলবেন না।
উনি আমার গালে দুহাত দিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে বললেন। অতীতে যাই হোক না কেন এখন তুমি আমার। কাছে আসার এই কম্পন ধুকপুক শব্দ গুলো যেন আমার জন্য হয়।আমিই শুধু এ মনের কোণে বাস করতে চাই। নাইলে বুঝই তো এই মিস্টার তোমার কি করবে?বলে উনি একটা লাভ বাইট বসিয়ে দিলেন কাদে।
আহ বলেই উনার দিকে ফিরে দিলাম ধাক্কা এটা কি করলেন? আবার হাসছেন কেন??আমি বললাম কামড় দেয় কোন প্রাণী জানেন? উনি বললেন দেখো এখন যদি এসব বলো তাহলে ভালোবাসা চিহ্ন যেখানে দিব তার জন্য রুমের বাহিরে আজকে যেতে পারবে না।
আমি অবাক হচ্ছি কি বলেন উনি একটু আগে তো ঝড় আসার সম্ভাবনা দেখা দিয়ে ছিলো। হাত বাড়িয়ে আমার চুলের বাধন খুলে দিলেন। এটা কি করলেন? আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম।
চুল গুলো খোলা রাখ আমি দেখি। চুলের ঘ্রাণ এলোমেলো করে দেয় আমাকে। কি আছে এমন? আমি বললাম নারিকেল তেল আছে দিব আপনার মাথায় একটু লাগিয়ে। উনি নাক ছিটকে বললেন এতে পিপড়ার ঘ্রাণ আছে আর তুমি ওটাই মাথায় দাও ওয়াক।
আমি বললাম কি? কই কিছু না তো। আপনি কি বললেন এগুলো আগে বলেই উনার পিঠে একটা কিল মেরে বসলাম। এখন কি হবে?এখন যদি রেগে যান তাহলে কি হবে?
উনি তীর্যক ভাবে তাকিয়ে আমার হাত ধরে বললেন এই শক্তি দিয়ে কটা মারতে পারবে। আমি কটমট করে তাকালাম উনার দিকে। এই পিচ্ছি কিভাবে আমার মেয়েকে সামলাবে উনি বলে উঠলেন।
আপনি মজা নিচ্ছেন আমার সাথে বলেই হাত ঝাড়ি মেরে ছাড়িয়ে নিলাম।মন খারাপ হয়ে গেল। আম্মু ডাকছেন বলে চলে এসেছি।
আম্মু,খালার সাথে আমিও রান্না করছি। আব্বুকে চা দিয়ে উনার জন্য চায়ে কাপটা টেবিলে রেখে চলে এলাম। আজকে আর কথাই বলব না।
নাতাশার সাথে কথা বলছি উনাকে শুনিয়ে শুনিয়ে। উনি শুনেই চো মেরে আমার ফোনটা নিয়ে নিলেন। তোমরা কথা বলবে আর আমার আম্মুটাকে আমি দেখাবো না তা কি হয়?
পিচ্ছির মেয়ে দেখতে কে বলেছে আপনাকে?দিন আমার ফোন আমি কথা বলব।ফোন ধরতে গেলে উনি হাত উচু করে বললেন এবার নাও দেখি।
আর নাতাশাকে বলছেন তোর ভাবি আজকে রেগে আছে কেমন দেখ।টমেটো না ট্রবেরি লাগছে বল তো নাতাশা। নাতাশা হাসছে আর বলছে তুমি কেন একা পেয়ে ভাবিকে ক্ষেপাচ্ছ?
কথা বলেই চলছেন আমি আম্মুর কাছে চলে এসেছি।রাগে ফোস ফোস করছে মেজাজ কিন্তু মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।
চলবে----
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ১১/০৮/২০২১জীবনের কথামালা।
-
কবি অন্তর চন্দ্র ১১/০৮/২০২১সুন্দর।
-
এ বি এস তুষার ১১/০৮/২০২১sundor