এক মুঠো ভালোবাসার রোদ্দুর পর্ব ৮
#এক মুঠো ভালোবাসার রোদ্দুর
#পর্ব ৮
#তাবেরী ইসলাম
জীনাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম তুমি আব্বু আম্মুর খুঁজ নেও না কেন?এটা কিন্তু খুব খারাপ।
ও বলত আমি সারাদিন কোচিং এ থেকে এসে সময় হয় না।
আমি বললাম তারপরও তুমি বাড়ির বড় বউ খুঁজ নেওয়া দেখে আসা তোমার উচিত।
তবুও জীনা আমার কথা মাঝে মধ্যে সময় শুনত না।ওর ভালোবাসার কাছে এগুলো বিলীন হয়ে যেত।
আমি বিদেশ থাকার সময় ও ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে। আব্বু আম্মুর সাথে ওর সম্পর্কের দূরত্ব ততদিনে বেড়ে যায়।এর মধ্যে দেশে এসে আমি ওকে নিয়ে যাই সেখানে।
কিছুদিন পর ও কনসিভ করে আমি খুশিতে সব কিছু মানিয়ে নিতে যাচ্ছিলাম।
ওর ব্যবহার দিন দিন সবার প্রতি খারাপ হতে থাকে। প্রথমে ভেবেছিলাম ওর মোড সুয়িং হয়েছে।
কিন্তু না ওর মোবাইলে যা দেখলাম তাতে আমার প্রচুর রাগ হলো কষিয়ে একটা চড় মারি ওর গালে।
এসব কি জানতে চাইলে বলে এসব ওর ব্যক্তিগত বিষয়। বিয়ের পর স্বামী ছাড়াও ব্যক্তিগত কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।
যদি কোনো কিছু থেকেও থাকে তো লুকানোর কি আছে। তারপরও দিন যাচ্ছিলো এভাবেই আমার বাচ্চাটা জন্য ওকে কিছুই বলি নি।
শুধু বলেছি ফিরে আস জীনা আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিও না। তার সাথে কথায় কথায় ঝগড়া মন বিষিয়ে তোলত।
কে শুনে কার কথা, বাচ্চা হবার কয়েক মাস পর জীনা চলে যায় ওর আত্নীয়ের কাছে বাচ্চাকে ফেলে।
আমার মেয়েটা সারাদিন কান্না করে ওর মন গলে নি।
আবার নিয়ে আসি ওকে কিছুদিন পর আবারও ঝগড়া হয় কথা কাটাকাটি হয়ে ও চলে যায়।
আমার ভালোবাসায় কি এত কমতি ছিল ভেবে পাই না? ও শাড়ি পড়তে পছন্দ করত কিন্তু আমার একদম ভালো লাগত না। সারা বাড়ি জুড়ে জীনা দুষ্টু মিতে মেতে থাকত।ধীরে ধীরে আমি ওর অভ্যাসে জড়িয়ে গেলাম।
সেদিন ও চলে যাবার পর অনেক কেঁদেছি মেয়েকে কোলে নিয়ে। এর পর সিদ্ধান্ত নেই ডির্বোস দিব। এত দিন ধরে আমার বোন,মানহাকে আদর যতনে নিজের কাছে রাখছে।
প্লিজ রিমা আমি জানি আমি তোমাকে মিথ্যে বলেছি, লুকিয়েছি নিজের সত্যটা, তোমাকে ঠকিয়েছি।
তবু্ও তুমি এমন কিছু কর না প্লিজ।
হ্যাঁ তোমাকে প্রথমেই কিছু বলতে চেয়ে ছিলাম।কিন্তু তুমি শুনতে চাও নি।আর আম্মু আমায় পুরাই নিষেধ করলেন এসব কাউকে না জানাতে।
তোমাকে দেখার পর আমার মনে হয়ে ছিলো তুমিই হয়তো পারবে। তোমার সাথে কথা বলার জন্য একটা টান অনুভব হতো। ভাবতাম আমার সত্য জানলে হয়তো মানা করে দিবে তুমি বা তোমার পরিবার।আমি খুব ভয়ে থাকতাম তোমাকে নিয়ে।
তুমি কি আমার মানহা কে মেনে নিবে রিমা?প্লিজ আমার মেয়েটাকে একটু ভালোবাসা দিও। নিজের মেয়ের মত করে প্লিজ রিমা আমি তোমার কাছে আমার এইটুকু চাওয়া রইলো।
আমি শুধু শুনে যাচ্ছি আর উনি আমার হাত ধরে কাঁদছেন।আমি ঠিক কি বলব ভেবে পাচ্ছি এই মূহুর্তে? চেষ্টা করব এটাই শুধু বললাম।
মন ভারে উতলা হয়ে আছে।এই মূহুর্তে আর কিছুই শুনতে চাই না। চলে এলাম রুমে।
খাওয়া দাওয়া শেষে নাতাশা আসলো রুমে মানহা কে নিয়ে। আমরা দুজন অনেক গল্প গুজব হলো।
আমি উনাকে এড়িয়ে চলছি। আসলে মানহাকে এর পর থেকে দেখলে কেমন যেন অনুভব হতো। মেয়েটা বয়স ১বছর হবে।এই তিন'মাসে আমি ওকে অনেকটা আপন করে নিয়েছি।
আপু কল দিলে আমি সব বলে দেই আপুকে। আপু অনেকটা ভেবেই বলেন।
দেখো রিমা জীবনে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়।তোমার বিয়ে হয়েছে এখনো ছ'মাস ও হয় নি।তোমাকে আমি আলাদা হতে কখনই বলব না।
এখন থেকে চলে গেলে তুমি কার কাছে থাকবে। আমরা এত গুলো ভাই বোন কেউ তখন তোমায় ভালো চোখে দেখবে না। আব্বু আম্মুর পর কার কাছে যাবে। সমাজ, পরিবার বারবার তোমার দিকে আঙ্গুল তুলে থাকাবে।
এর চেয়ে ভালো নিজের ঘরে কষ্ট করে সম্মানের সহিত থাকা।আর এখানে তো তুমি নিজের মতোই আছ।জোহান বয়স্ক ও না ইয়াং ছেলে। আব্বু তোমাকে বুড়ি মোটা বয়স্ক লোকের সাথে বিয়ে দেন নি। নিজেকে মানিয়ে নাও রিমা।
আর তুমি তো বল লাকি যে জোহানের মেয়ে। ভালোবেসে দেখ ও তোমাকে ভালোবাসবে, বড় হয়ে দেখা শুনা করবে, কাজে সাহায্য করবে।
মেয়ে ঘরের নিয়ামত হয়ে আসে রিমা। কাজেই চিন্তা কর না বেশি।আমি শুধু শুনেই গেলাম।
বললাম বাড়িতে জানলে কি হবে?? আপু বলেই দিলেন বলার দরকার নেই শুধু শুধু জামেলা সষ্টি হবে।নিজেকে নিয়ে কিভাবে বাঁচতে হয় সেটা শিখো রিমা।
দিন দিন কি তোর আখল জ্ঞান চলে যাচ্ছে?আপু রেগেই বললেন।এসব যেন আর কারো কাছে বলিস না।
আমি ব্যস্ত আছি পরে কথা বলব তোই এবং তোমরা ভালো থেক।আল্লাহ হাফিজ বলে রেখে দিলেন।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। মলয়ের আবিরে হলদে আভায় মৌন্যতা ঘেরা। পত্র পল্লবের হিমেল হাওয়ায় জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।
আমার উদাসী ভাবনার মাঝে চোখ থেকে জল গড়াল।
বাসার ছাদের এক কোণে অনেক গুলো ফুলের গাছ।হলদে,লাল,নীলে ভরে উঠেছে।
ছাদ থেকে নামছি এমন সময়, উনি নিচ থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন রিমা এদিকে আসো তো!
চলবে ---
#পর্ব ৮
#তাবেরী ইসলাম
জীনাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম তুমি আব্বু আম্মুর খুঁজ নেও না কেন?এটা কিন্তু খুব খারাপ।
ও বলত আমি সারাদিন কোচিং এ থেকে এসে সময় হয় না।
আমি বললাম তারপরও তুমি বাড়ির বড় বউ খুঁজ নেওয়া দেখে আসা তোমার উচিত।
তবুও জীনা আমার কথা মাঝে মধ্যে সময় শুনত না।ওর ভালোবাসার কাছে এগুলো বিলীন হয়ে যেত।
আমি বিদেশ থাকার সময় ও ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে। আব্বু আম্মুর সাথে ওর সম্পর্কের দূরত্ব ততদিনে বেড়ে যায়।এর মধ্যে দেশে এসে আমি ওকে নিয়ে যাই সেখানে।
কিছুদিন পর ও কনসিভ করে আমি খুশিতে সব কিছু মানিয়ে নিতে যাচ্ছিলাম।
ওর ব্যবহার দিন দিন সবার প্রতি খারাপ হতে থাকে। প্রথমে ভেবেছিলাম ওর মোড সুয়িং হয়েছে।
কিন্তু না ওর মোবাইলে যা দেখলাম তাতে আমার প্রচুর রাগ হলো কষিয়ে একটা চড় মারি ওর গালে।
এসব কি জানতে চাইলে বলে এসব ওর ব্যক্তিগত বিষয়। বিয়ের পর স্বামী ছাড়াও ব্যক্তিগত কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।
যদি কোনো কিছু থেকেও থাকে তো লুকানোর কি আছে। তারপরও দিন যাচ্ছিলো এভাবেই আমার বাচ্চাটা জন্য ওকে কিছুই বলি নি।
শুধু বলেছি ফিরে আস জীনা আমার সন্তানের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিও না। তার সাথে কথায় কথায় ঝগড়া মন বিষিয়ে তোলত।
কে শুনে কার কথা, বাচ্চা হবার কয়েক মাস পর জীনা চলে যায় ওর আত্নীয়ের কাছে বাচ্চাকে ফেলে।
আমার মেয়েটা সারাদিন কান্না করে ওর মন গলে নি।
আবার নিয়ে আসি ওকে কিছুদিন পর আবারও ঝগড়া হয় কথা কাটাকাটি হয়ে ও চলে যায়।
আমার ভালোবাসায় কি এত কমতি ছিল ভেবে পাই না? ও শাড়ি পড়তে পছন্দ করত কিন্তু আমার একদম ভালো লাগত না। সারা বাড়ি জুড়ে জীনা দুষ্টু মিতে মেতে থাকত।ধীরে ধীরে আমি ওর অভ্যাসে জড়িয়ে গেলাম।
সেদিন ও চলে যাবার পর অনেক কেঁদেছি মেয়েকে কোলে নিয়ে। এর পর সিদ্ধান্ত নেই ডির্বোস দিব। এত দিন ধরে আমার বোন,মানহাকে আদর যতনে নিজের কাছে রাখছে।
প্লিজ রিমা আমি জানি আমি তোমাকে মিথ্যে বলেছি, লুকিয়েছি নিজের সত্যটা, তোমাকে ঠকিয়েছি।
তবু্ও তুমি এমন কিছু কর না প্লিজ।
হ্যাঁ তোমাকে প্রথমেই কিছু বলতে চেয়ে ছিলাম।কিন্তু তুমি শুনতে চাও নি।আর আম্মু আমায় পুরাই নিষেধ করলেন এসব কাউকে না জানাতে।
তোমাকে দেখার পর আমার মনে হয়ে ছিলো তুমিই হয়তো পারবে। তোমার সাথে কথা বলার জন্য একটা টান অনুভব হতো। ভাবতাম আমার সত্য জানলে হয়তো মানা করে দিবে তুমি বা তোমার পরিবার।আমি খুব ভয়ে থাকতাম তোমাকে নিয়ে।
তুমি কি আমার মানহা কে মেনে নিবে রিমা?প্লিজ আমার মেয়েটাকে একটু ভালোবাসা দিও। নিজের মেয়ের মত করে প্লিজ রিমা আমি তোমার কাছে আমার এইটুকু চাওয়া রইলো।
আমি শুধু শুনে যাচ্ছি আর উনি আমার হাত ধরে কাঁদছেন।আমি ঠিক কি বলব ভেবে পাচ্ছি এই মূহুর্তে? চেষ্টা করব এটাই শুধু বললাম।
মন ভারে উতলা হয়ে আছে।এই মূহুর্তে আর কিছুই শুনতে চাই না। চলে এলাম রুমে।
খাওয়া দাওয়া শেষে নাতাশা আসলো রুমে মানহা কে নিয়ে। আমরা দুজন অনেক গল্প গুজব হলো।
আমি উনাকে এড়িয়ে চলছি। আসলে মানহাকে এর পর থেকে দেখলে কেমন যেন অনুভব হতো। মেয়েটা বয়স ১বছর হবে।এই তিন'মাসে আমি ওকে অনেকটা আপন করে নিয়েছি।
আপু কল দিলে আমি সব বলে দেই আপুকে। আপু অনেকটা ভেবেই বলেন।
দেখো রিমা জীবনে অনেক কিছুই মেনে নিতে হয়।তোমার বিয়ে হয়েছে এখনো ছ'মাস ও হয় নি।তোমাকে আমি আলাদা হতে কখনই বলব না।
এখন থেকে চলে গেলে তুমি কার কাছে থাকবে। আমরা এত গুলো ভাই বোন কেউ তখন তোমায় ভালো চোখে দেখবে না। আব্বু আম্মুর পর কার কাছে যাবে। সমাজ, পরিবার বারবার তোমার দিকে আঙ্গুল তুলে থাকাবে।
এর চেয়ে ভালো নিজের ঘরে কষ্ট করে সম্মানের সহিত থাকা।আর এখানে তো তুমি নিজের মতোই আছ।জোহান বয়স্ক ও না ইয়াং ছেলে। আব্বু তোমাকে বুড়ি মোটা বয়স্ক লোকের সাথে বিয়ে দেন নি। নিজেকে মানিয়ে নাও রিমা।
আর তুমি তো বল লাকি যে জোহানের মেয়ে। ভালোবেসে দেখ ও তোমাকে ভালোবাসবে, বড় হয়ে দেখা শুনা করবে, কাজে সাহায্য করবে।
মেয়ে ঘরের নিয়ামত হয়ে আসে রিমা। কাজেই চিন্তা কর না বেশি।আমি শুধু শুনেই গেলাম।
বললাম বাড়িতে জানলে কি হবে?? আপু বলেই দিলেন বলার দরকার নেই শুধু শুধু জামেলা সষ্টি হবে।নিজেকে নিয়ে কিভাবে বাঁচতে হয় সেটা শিখো রিমা।
দিন দিন কি তোর আখল জ্ঞান চলে যাচ্ছে?আপু রেগেই বললেন।এসব যেন আর কারো কাছে বলিস না।
আমি ব্যস্ত আছি পরে কথা বলব তোই এবং তোমরা ভালো থেক।আল্লাহ হাফিজ বলে রেখে দিলেন।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। মলয়ের আবিরে হলদে আভায় মৌন্যতা ঘেরা। পত্র পল্লবের হিমেল হাওয়ায় জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।
আমার উদাসী ভাবনার মাঝে চোখ থেকে জল গড়াল।
বাসার ছাদের এক কোণে অনেক গুলো ফুলের গাছ।হলদে,লাল,নীলে ভরে উঠেছে।
ছাদ থেকে নামছি এমন সময়, উনি নিচ থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠলেন রিমা এদিকে আসো তো!
চলবে ---
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কবি অন্তর চন্দ্র ২৯/০৭/২০২১চমৎকার।
-
ভাস্কর অনির্বাণ ২৯/০৭/২০২১ভালো লাগল কবি
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ২৯/০৭/২০২১পড়তে থাকি।
-
জামাল উদ্দিন জীবন ২৯/০৭/২০২১সুন্দর।
-
আলমগীর সরকার লিটন ২৯/০৭/২০২১সুন্দর
-
ফয়জুল মহী ২৯/০৭/২০২১অনিন্দ্য সুন্দর l