ধর্ম আমাদের কী শেখাচ্ছে
ধর্ম আমাদের কী শেখাচ্ছে?
সাইয়িদ রফিকুল হক
মাত্র কয়েকদিন আগে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে প্রাণ গেল তিন পুলিশের। খবরটি নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক। পুলিশ আমাদের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আরক্ষা-বাহিনী। তারা দেশসেবায় নিয়োজিত (এখানে, প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করে রাখি, ভালো-মন্দ সকল ডিপার্টমেন্টেই রয়েছে। সে-সব এখন মদীয় আলোচ্য বিষয় নয়)।
এই খবরটি বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে। একটি অনলাইনভিত্তিক পত্রিকায় খবরটি পড়ে এর কমেন্ট-অপশনে “আলহামদুলিল্লাহ” লিখেছে একটা অমানুষ। আর ঘটনার সূত্রপাত সেখানেই।
সেই অভিযুক্ত অমানুষ-ব্যক্তিটির নাম মো. আব্দুল্লাহ। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া। সে কওমি-হেফাজতপন্থী একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ও স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম!
তার এই “আলহামদুলিল্লাহ” লেখার পর আরও কিছুসংখ্যক অমানুষও একইভাবে “আলহামদুলিল্লাহ” লিখতে থাকে। তার সঙ্গে সংহতিপ্রকাশ করে! দেশে তো অমানুষের কোনো অভাব নেই। এখানে, বহু জাতের বহু রঙের অমানুষ রয়েছে। এরা উক্ত তিন পুলিশের মৃত্যুর সংবাদ শুনে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করতে থাকে। তখন কয়েকটি অমানুষসহ উক্ত প্রধান অভিযুক্ত মো. আব্দুল্লাহকে সিআইডি’র সাইবার ইন্টিলিজেন্স টিম-এর সদস্যরা সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে (প্রধান অভিযুক্তের ছবি দেওয়া আছে)। মানুষের মৃত্যুতে পৈশাচিকভাবে উল্লসিত হয়ে “আলহামদুলিল্লাহ” লেখার দায়ে আরও কিছু দুর্বৃত্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এসব মদীয় লেখার উদ্দেশ্য নয়।
প্রধান অভিযুক্ত ও তার সঙ্গে সুরমেলানো-তালমেলানো আরও কিছুসংখ্যক অমানুষও ‘নামধারী মুসলমান’! এরা ইসলামধর্ম থেকে কী শিক্ষা গ্রহণ করেছে? ধর্ম কি শুধু লেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে? নাকি ধর্মকে জীবনে ধারণ করে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে?
মানুষের মৃত্যুতে যারা উল্লসিত হয় বা পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করেতারা আর যাই হোক কোনোভাবেই মানুষ নয়। উল্লিখিত তিন পুলিশের সঙ্গে আমাদের কারও কোনো শত্রুতা নেই। এমনকি বেফাঁস তথা ভয়ানক আপত্তিকর মন্তব্যকারী মোল্লা আব্দুল্লাহরও কোনো শত্রুতা ছিল বলে আমার জানা নেই। তবু সে উল্লসিত হয়েছে আর এমন জঘন্য, নোংরা ও বাজে মন্তব্য করেছে। তার দেখাদেখি একশ্রেণির অমানুষ এতে উল্লসিত ও উৎসাহিত হয়ে মহান আল্লাহর নামের অপব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করেনি। মহান আল্লাহ কখনোই মানুষের মৃত্যুতে খুশি হন না। তিনি অনেক ভালোবেসে এই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের রক্ত, মানুষের জীবন তাঁর কাছে কোনো হেলাফেলার বিষয় নয়। কিন্তু এই শ্রেণির অমানুষেরা অবলীলাক্রমে নিজেদের পৈশাচিক আনন্দকে মহান আল্লাহর নামে চালিয়ে দিচ্ছে!
আমাদের ধর্মে আছে কোথায়-কখন “আলহামদুলিল্লাহ”, “সোবহানাল্লাহ” “মা’শাআল্লাহ” ইত্যাদি বলতে হবে আর কখন-কোথায় “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” পড়তে হবে। যারা এটা জানে না কিংবা জেনেও অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও শয়তানি উদ্দেশ্যে এর অপব্যবহার করবে তারা কীভাবে ধার্মিক হবে?
এখন একটু লেবাসধারী হলেই সে বিরাট একটা ধার্মিক! আর মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি ও গায়ে আতর মাখলেই নিজেকে বিরাট একটা ধার্মিক মনে হয়! নইলে, একটা কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম হয়েও উক্ত ব্যক্তি কীভাবে তিন পুলিশের মৃত্যুতে উল্লসিত হয়ে “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”-এর পরিবর্তে “আলহামদুলিল্লাহ” বলতে ও লিখতে পারে! আসলে, ধর্ম আমাদের কী শেখাচ্ছে?
[বি.দ্র. ধর্ম আমাদের কখনোই সন্ত্রাসী কিংবা হিংস্র হতে বলে না। একশ্রেণির অমানুষ স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ধর্মের ছদ্মাবরণে হয়ে ওঠে হিংস্র ও সন্ত্রাসী। তখন এদের আর ধর্ম থাকে না।]
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
০৪-০৯-২০২৩
সাইয়িদ রফিকুল হক
মাত্র কয়েকদিন আগে চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে প্রাণ গেল তিন পুলিশের। খবরটি নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক। পুলিশ আমাদের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আরক্ষা-বাহিনী। তারা দেশসেবায় নিয়োজিত (এখানে, প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করে রাখি, ভালো-মন্দ সকল ডিপার্টমেন্টেই রয়েছে। সে-সব এখন মদীয় আলোচ্য বিষয় নয়)।
এই খবরটি বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে। একটি অনলাইনভিত্তিক পত্রিকায় খবরটি পড়ে এর কমেন্ট-অপশনে “আলহামদুলিল্লাহ” লিখেছে একটা অমানুষ। আর ঘটনার সূত্রপাত সেখানেই।
সেই অভিযুক্ত অমানুষ-ব্যক্তিটির নাম মো. আব্দুল্লাহ। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া। সে কওমি-হেফাজতপন্থী একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ও স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম!
তার এই “আলহামদুলিল্লাহ” লেখার পর আরও কিছুসংখ্যক অমানুষও একইভাবে “আলহামদুলিল্লাহ” লিখতে থাকে। তার সঙ্গে সংহতিপ্রকাশ করে! দেশে তো অমানুষের কোনো অভাব নেই। এখানে, বহু জাতের বহু রঙের অমানুষ রয়েছে। এরা উক্ত তিন পুলিশের মৃত্যুর সংবাদ শুনে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করতে থাকে। তখন কয়েকটি অমানুষসহ উক্ত প্রধান অভিযুক্ত মো. আব্দুল্লাহকে সিআইডি’র সাইবার ইন্টিলিজেন্স টিম-এর সদস্যরা সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে (প্রধান অভিযুক্তের ছবি দেওয়া আছে)। মানুষের মৃত্যুতে পৈশাচিকভাবে উল্লসিত হয়ে “আলহামদুলিল্লাহ” লেখার দায়ে আরও কিছু দুর্বৃত্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এসব মদীয় লেখার উদ্দেশ্য নয়।
প্রধান অভিযুক্ত ও তার সঙ্গে সুরমেলানো-তালমেলানো আরও কিছুসংখ্যক অমানুষও ‘নামধারী মুসলমান’! এরা ইসলামধর্ম থেকে কী শিক্ষা গ্রহণ করেছে? ধর্ম কি শুধু লেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে? নাকি ধর্মকে জীবনে ধারণ করে মানুষের মতো মানুষ হতে হবে?
মানুষের মৃত্যুতে যারা উল্লসিত হয় বা পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করেতারা আর যাই হোক কোনোভাবেই মানুষ নয়। উল্লিখিত তিন পুলিশের সঙ্গে আমাদের কারও কোনো শত্রুতা নেই। এমনকি বেফাঁস তথা ভয়ানক আপত্তিকর মন্তব্যকারী মোল্লা আব্দুল্লাহরও কোনো শত্রুতা ছিল বলে আমার জানা নেই। তবু সে উল্লসিত হয়েছে আর এমন জঘন্য, নোংরা ও বাজে মন্তব্য করেছে। তার দেখাদেখি একশ্রেণির অমানুষ এতে উল্লসিত ও উৎসাহিত হয়ে মহান আল্লাহর নামের অপব্যবহার করতে দ্বিধাবোধ করেনি। মহান আল্লাহ কখনোই মানুষের মৃত্যুতে খুশি হন না। তিনি অনেক ভালোবেসে এই মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। মানুষের রক্ত, মানুষের জীবন তাঁর কাছে কোনো হেলাফেলার বিষয় নয়। কিন্তু এই শ্রেণির অমানুষেরা অবলীলাক্রমে নিজেদের পৈশাচিক আনন্দকে মহান আল্লাহর নামে চালিয়ে দিচ্ছে!
আমাদের ধর্মে আছে কোথায়-কখন “আলহামদুলিল্লাহ”, “সোবহানাল্লাহ” “মা’শাআল্লাহ” ইত্যাদি বলতে হবে আর কখন-কোথায় “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” পড়তে হবে। যারা এটা জানে না কিংবা জেনেও অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও শয়তানি উদ্দেশ্যে এর অপব্যবহার করবে তারা কীভাবে ধার্মিক হবে?
এখন একটু লেবাসধারী হলেই সে বিরাট একটা ধার্মিক! আর মুখে দাড়ি, মাথায় টুপি ও গায়ে আতর মাখলেই নিজেকে বিরাট একটা ধার্মিক মনে হয়! নইলে, একটা কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম হয়েও উক্ত ব্যক্তি কীভাবে তিন পুলিশের মৃত্যুতে উল্লসিত হয়ে “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”-এর পরিবর্তে “আলহামদুলিল্লাহ” বলতে ও লিখতে পারে! আসলে, ধর্ম আমাদের কী শেখাচ্ছে?
[বি.দ্র. ধর্ম আমাদের কখনোই সন্ত্রাসী কিংবা হিংস্র হতে বলে না। একশ্রেণির অমানুষ স্বীয় স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ধর্মের ছদ্মাবরণে হয়ে ওঠে হিংস্র ও সন্ত্রাসী। তখন এদের আর ধর্ম থাকে না।]
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
০৪-০৯-২০২৩
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
suman ১২/০৭/২০২৪তিনি অবশ্যই ভুল করেছেন, এর পেছনে কোনো পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আছে কিনা খতিয়ে দ্দখা উচিত সমাজবিজ্ঞানী ও মমনোবিজ্ঞানীদের, আমাদের এই বাহিনীর কিছু মানুষের ভূমিকা নিয়ে অরশ্ন আছে, আমি কারণ ছাড়াই প্রতিপক্ষের ঘুষের বিনিময়ে গ্রেফতার হই, বের হয়ে আসতে আমাকে অকারণে সতপথে অর্জিত, রক্তঘামানো অনেকগুলো টাকা জজলাঞ্জলী দিতে হয়েছিলো, তারও থেকে বেশি মানহানীর গ্লাণি ...
-
মোঃ বুলবুল হোসেন ০১/০২/২০২৪অপূর্ব
-
সেলিম রেজা সাগর ০৫/০১/২০২৪দারুণ
-
কামরুজ্জামান সাদ ২৮/১১/২০২৩মৃত্যু যাদের উৎসব এনে দেয় তারা কেমন মানুষ? অথচ আশেপাশে ভরে আছে এসবেই...
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ০৬/০৯/২০২৩বেশ বলেছেন!
-
শ.ম.ওয়াহিদুজ্জামান ০৫/০৯/২০২৩সুন্দর আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।
-
ফয়জুল মহী ০৪/০৯/২০২৩দারুণ লেখা
অনবদ্য।
খুব ভালো লাগল । -
আব্দুর রহমান আনসারী ০৪/০৯/২০২৩দারুন ভাব ও ভাবনার অনুপম প্রকাশ