নেকড়ের ছায়া
গল্প:
নেকড়ের ছায়া
সাইয়িদ রফিকুল হক
অফিস-শেষে পারমিতা তাদের মফস্বল-শহরের সবচেয়ে বড় শপিংমলে পুজোর কেনাকাটা করতে এসেছে। সঙ্গী হিসাবে আর কাউকে না পেয়ে তাকে একাই আসতে হলো।
কেনাকাটা-শেষে সে বেরিয়ে এলো খুব তাড়াতাড়ি। বাসায় কাজের মেয়েটির কাছে রয়েছে তার ছেলেমেয়ে দুটো। একটার বয়স সাত। আরেকটির চার। এদের রেখে সে বাইরে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। চাকরিটা তার দরকার বলে সে করছে। নইলে কবে ছেড়ে দিতো।
আজও সে শাড়ি পরেছে। সে খুব সুন্দর করে শাড়ি পরতে পারে। শাড়িতে তাকে মানায়ও খুব।
সে রিকশার জন্য বারবার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলো। কিন্তু এই অফিস-ছুটির পরে রিকশা পাওয়াটা খুব কষ্টকর। তবুও সে চেষ্টা করতে থাকে। হঠাৎ সে দেখলো, প্রায় পনেরো ফুট দূরে তিনটি যুবক একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তাদের হাবভাবে ভয়ানক হ্যাংলামি!
তার বুকের ভিতরটা অজানা এক আশঙ্কায় কেমন যেন করতে থাকে। সে এখন একটা রিকশার জন্য একেবারে মরিয়া হয়ে ওঠে।
সে ভগবানের সাহায্য-প্রার্থনা করতে থাকে। ওদের চালচলন ও চোখের দৃষ্টি ভয়ংকর লোভাতুর! সে বুঝতে পারে, এদের উদ্দেশ্য একেবারে খারাপ!
সপ্তাহখানেক আগে এই ছোট্ট শহরে একজন স্কুল-টিচার গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এরপর থেকে তার ভিতরে আতঙ্ক যেন আরও বেড়ে গেছে। সে কোনোরকমে বাঁচার জন্য একটা রিকশা খুঁজতে থাকে।
অবশেষে সে একটা রিকশা পেল। কিন্তু কোনো ভাড়াটাড়া না-মিটিয়ে সে তাতে উঠে পড়লো। তারপর বললো, “নতুন কলোনিতে চলেন ভাই। আর একটু জোরে চালান। আমার একটু তাড়া আছে।”
লোকটি তার কথামতো জোরে চালাতে লাগলো। এখনও সন্ধ্যা হয়নি। রাস্তায় কিছু লোকজন রয়েছে। তবুও তার ভয়ভাবটা কমে না। সে যেন নেকড়ের তাড়া-খাওয়া মানুষ!
সে নিজেদের বাসার কাছাকাছি চলে আসে। তবুও সে নিশ্চিন্ত হতে পারে না যে, সে এবার বেঁচে যাবে! সে রিকশার পিছনের ফাঁকা জায়গা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পায়। ছেলেগুলো সেখানে আর নাই! তার বদলে দুটো মোটর-সাইকেলে চারজন তার পিছু নিয়েছে! এতে সে আরও ঘাবড়ে যায়।
আজকে আবার রাস্তাটাও একেবারে ফাঁকা-ফাঁকা! চারিদিকে মানুষের সংখ্যা যেন কমে গেছে। কিছুক্ষণ আগে এখানে একপশলা বৃষ্টি হয়েছে। তাইতে এই দুরবস্থা। পারমিতার এখন মনে হয়: রাস্তায় লোকজন থাকলে, ভিড় হলে তবুও ভালো। এই নেকড়েগুলো তাদের পথ আগলে দাঁড়াতে পারবে না।
সে কলোনির গেইট অতিক্রম করে ভিতরে ঢোকার পরও শান্ত হতে পারে না। রিকশাওয়ালাকে কোনোরকমে পঞ্চাশ টাকা ভাড়া দিয়ে দ্রুত সিঁড়ি মাড়িয়ে নিজের বাসার একদম কাছে এসে পড়ে। তবুও তার মনে হয়: কয়েকটা নেকড়ের ছায়া যেন তার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে!
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১২/১০/২০২০
নেকড়ের ছায়া
সাইয়িদ রফিকুল হক
অফিস-শেষে পারমিতা তাদের মফস্বল-শহরের সবচেয়ে বড় শপিংমলে পুজোর কেনাকাটা করতে এসেছে। সঙ্গী হিসাবে আর কাউকে না পেয়ে তাকে একাই আসতে হলো।
কেনাকাটা-শেষে সে বেরিয়ে এলো খুব তাড়াতাড়ি। বাসায় কাজের মেয়েটির কাছে রয়েছে তার ছেলেমেয়ে দুটো। একটার বয়স সাত। আরেকটির চার। এদের রেখে সে বাইরে বেশিক্ষণ থাকতে পারে না। চাকরিটা তার দরকার বলে সে করছে। নইলে কবে ছেড়ে দিতো।
আজও সে শাড়ি পরেছে। সে খুব সুন্দর করে শাড়ি পরতে পারে। শাড়িতে তাকে মানায়ও খুব।
সে রিকশার জন্য বারবার এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলো। কিন্তু এই অফিস-ছুটির পরে রিকশা পাওয়াটা খুব কষ্টকর। তবুও সে চেষ্টা করতে থাকে। হঠাৎ সে দেখলো, প্রায় পনেরো ফুট দূরে তিনটি যুবক একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তাদের হাবভাবে ভয়ানক হ্যাংলামি!
তার বুকের ভিতরটা অজানা এক আশঙ্কায় কেমন যেন করতে থাকে। সে এখন একটা রিকশার জন্য একেবারে মরিয়া হয়ে ওঠে।
সে ভগবানের সাহায্য-প্রার্থনা করতে থাকে। ওদের চালচলন ও চোখের দৃষ্টি ভয়ংকর লোভাতুর! সে বুঝতে পারে, এদের উদ্দেশ্য একেবারে খারাপ!
সপ্তাহখানেক আগে এই ছোট্ট শহরে একজন স্কুল-টিচার গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এরপর থেকে তার ভিতরে আতঙ্ক যেন আরও বেড়ে গেছে। সে কোনোরকমে বাঁচার জন্য একটা রিকশা খুঁজতে থাকে।
অবশেষে সে একটা রিকশা পেল। কিন্তু কোনো ভাড়াটাড়া না-মিটিয়ে সে তাতে উঠে পড়লো। তারপর বললো, “নতুন কলোনিতে চলেন ভাই। আর একটু জোরে চালান। আমার একটু তাড়া আছে।”
লোকটি তার কথামতো জোরে চালাতে লাগলো। এখনও সন্ধ্যা হয়নি। রাস্তায় কিছু লোকজন রয়েছে। তবুও তার ভয়ভাবটা কমে না। সে যেন নেকড়ের তাড়া-খাওয়া মানুষ!
সে নিজেদের বাসার কাছাকাছি চলে আসে। তবুও সে নিশ্চিন্ত হতে পারে না যে, সে এবার বেঁচে যাবে! সে রিকশার পিছনের ফাঁকা জায়গা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পায়। ছেলেগুলো সেখানে আর নাই! তার বদলে দুটো মোটর-সাইকেলে চারজন তার পিছু নিয়েছে! এতে সে আরও ঘাবড়ে যায়।
আজকে আবার রাস্তাটাও একেবারে ফাঁকা-ফাঁকা! চারিদিকে মানুষের সংখ্যা যেন কমে গেছে। কিছুক্ষণ আগে এখানে একপশলা বৃষ্টি হয়েছে। তাইতে এই দুরবস্থা। পারমিতার এখন মনে হয়: রাস্তায় লোকজন থাকলে, ভিড় হলে তবুও ভালো। এই নেকড়েগুলো তাদের পথ আগলে দাঁড়াতে পারবে না।
সে কলোনির গেইট অতিক্রম করে ভিতরে ঢোকার পরও শান্ত হতে পারে না। রিকশাওয়ালাকে কোনোরকমে পঞ্চাশ টাকা ভাড়া দিয়ে দ্রুত সিঁড়ি মাড়িয়ে নিজের বাসার একদম কাছে এসে পড়ে। তবুও তার মনে হয়: কয়েকটা নেকড়ের ছায়া যেন তার আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে!
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
১২/১০/২০২০
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
Biswanath Banerjee ২৫/১২/২০২০গঅদ
-
বোরহানুল ইসলাম লিটন ২৪/১২/২০২০লোলুপ দৃষ্টি নেকড়ের চেয়েও ভয়ংকর প্রিয় কবি।
যা অন্তগহীণের ভিতে অনায়াসে ধাক্কা দেয়। -
স্বপন রোজারিও (মাইকেল) ২৩/১২/২০২০সুন্দর লেখা।
-
ফয়জুল মহী ২২/১২/২০২০চমৎকার অনুভূতি মনোমুগ্ধকর উপস্থাপন কবি