www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অসময়ে ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে গেছে

অসময়ে ঈদের আনন্দ শুরু হয়ে গেছে
সাইয়িদ রফিকুল হক

এই বাঙালি কবে যে একটু মানুষ হবে—তা কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি সাধে বলেছিলেন:

সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালী করে, মানুষ করনি।

কবিগুরু ঠিকই বলে গেছেন। এই বাঙালি আজও মানুষ হয়নি।

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিপর্যয়। সারাবিশ্বে আতঙ্ক বাড়ছে বৈ কমছে না। কিন্তু এতোকিছুর পরও বাঙালির বৃহত্তর একটা অংশের মধ্যে কোনোরকম বোধোদয় হচ্ছে না। তারা আইনকানুনের কোনো তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়াল খুশিমতো চলেছে।
বিদেশ থেকে ফিরে কেউ-কেউ স্বেচ্ছায় ‘হোম-কোয়ারেন্টাইনে’র সুযোগ নিয়ে গৃহবন্দি না থেকে ইচ্ছেমতো যত্রতত্র ঘোরাফেরা করছে, আড্ডাবাজি করছে, পিকনিকে যাচ্ছে, ফ্যামিলি ট্যুরে বা গেট টুগেদারে যাচ্ছে, পরকীয়া-প্রেম করছে, বিয়েশাদী করছে, বিয়েশাদী করার জন্য কনে দেখতে যাচ্ছে! কেউ-কেউ আবার বিদেশ থেকে ফিরে ১৪-১৫দিনের বিধিনিষেধ না মেনে ইতোমধ্যে বিয়েও করে ফেলেছে! এরা পৃথিবীতে আর কিছুদিনের মধ্যে নতুন বংশধর আনতে যাচ্ছে! বাঙালির বিরাট একটা অংশ এখনও ভয়ংকরকম স্বার্থপর, অবিবেচক, একগুঁয়ে আর ভণ্ড। এদের মধ্যে আজও সত্যিকারের দেশপ্রেমভাব জাগ্রত হয়নি।

দেশের ভিতরে যারা দীর্ঘকাল বসবাস করছে, বিদেশ থেকে ফেরেনি —তারাও ভয়ংকর অসহিষ্ণু আর অবিবেচক। এরাও বিদেশফেরত আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে দহরম-মহরম-সম্পর্কে জড়িয়ে ঘরে-ঘরে একেবারে ঈদের আনন্দ বইয়ে দিচ্ছে! কারও মধ্যে সামান্য বিবেক জাগছে না! এরা বুঝতে পারছে না এই ভাইরাসের ভয়াবহতা। এটা যে বার্ডফ্লু, সোয়াইনফ্লু, ইবোলা-ভাইরাস ইত্যাদির চেয়ে আরও ভংয়কর—তা বুঝতে বাঙালির আর কতদিন লাগবে?

যাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে তারাও সেখানকার নিয়মকানুন মানতে চাইছে না। তাদের তিনবেলা উন্নতমানের খাবারসরবরাহ করা সত্ত্বেও তারা নানারকম অজুহাতে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার নানারকম ছলচাতুরি করছে। মাত্র ১৪দিনের কোয়ারেন্টাইনে তারা যেন একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছে! তাদের বুঝতে হবে, তাদের যেকোনো ভুলের কারণে দেশবাসী আরও প্রকটভাবে আক্রান্ত হতে পারে! বাঙালির এই বোধশক্তি থাকলে—তারা স্বেচ্ছায় ‘হোম-কোয়ারেন্টাইনে’ যেত এবং ১৪দিন দায়িত্বের সঙ্গে পালন করতো।
বাংলাদেশও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশে এই ভাইরাসে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, এবং আরও ৩৩জন আক্রান্ত। এরই মধ্যে একটি পশুশ্রেণী জনমনে সন্দেহ ও ভয় ঢোকানোর জন্য এই ‘করোনাভাইরাস’ নিয়ে নানারকম গুজবসৃষ্টি করতে বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধ করছে না। এরা মানুষ নয়। এই পশুদের পাশবিকতার ছোবলে জাতি আজও ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। বিপদের সময়ও এদের মধ্যে সামান্যতম মনুষ্যত্ব জাগে না! হায় রে বাঙালি!

আমাদের দেশটাকে কিংবা দেশের প্রধান-প্রধান শহর-বন্দরগুলোকে করোনাভাইরাসের জন্য হয়তো এখনই ‘লকডাউন’ করা হচ্ছে না। তার বদলে সরকার, আগামী ২৬-এ মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সাধারণ ছুটি-ঘোষণা করেছে। এর উদ্দেশ্য—দেশের মানুষজন যেন বিনাপ্রয়োজনে এই কয়দিন ঘর থেকে বাইরে বের নাহয়। কিন্তু গতকাল এই ছুটি-ঘোষণা করার পর থেকেই একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে অসময়ে শুরু হয়েছে ঈদের আমেজ! এরা ছন্নছাড়া-ঘরছাড়া হয়ে ছুটছে বাসস্টপে, রেলস্টেশনে! ভাগ্যিস, লঞ্চ বন্ধ! নইলে, ভোগান্তি আরও বাড়তো। সবাই এখন গ্রামে ছুটছে! কিন্তু কেউ যদি করোনাভাইরাস বহন করে গ্রামে যায়—তাহলে, কী হবে? অনেকে জানলেও নিজের অসুখ গোপন করে গ্রামে যাবে। এই না হলে বাঙালি!

এই অসময়ে জায়গা-পরিবর্তন করাটা সমীচীন নয়। খুব বেশি প্রয়োজন হলে ভিন্নকথা। তবে এর চেয়ে বড় বিপদ এখন জাতির জীবনে আর নাই। এই ভাইরাসের বিস্তাররোধে আমাদের সবাইকে আন্তরিক ও মহানুভব হতে হবে। এবার যারা গ্রামে যাচ্ছেন তাদের উদ্দেশে কয়টি কথা—

১. করোনাভাইরাস নিয়ে কেউ দয়া করে কারও গ্রামে যাবেন না। আপনি নিশ্চিতভাবে সুস্থ না হলে গ্রামে যাবেন না।

২. করোনার সামান্য উপসর্গ দেখা দিলেও নিজের গ্রামে গিয়ে অন্যান্য সুস্থ মানুষের জীবনে জেনেশুনে ভয়ানক বিপদ ডেকে আনবেন না।

৩. যারা বিদেশফেরত হয়ে চুপটি করে এতোদিন ঢাকা-শহরের অলিগলিতে যথেচ্ছা বিচরণ করেছেন—এবার হাওয়া বদল করার জন্য আবার গ্রামেও যাবেন না। দয়া করে সেখানেও ভাইরাস ছড়াবেন না। সরকার-ঘোষিত সাধারণ ছুটিকে নিজের জীবন বাঁচাতে ও অন্যের জীবনরক্ষার্থে বাসায় বা বাড়িতে অবস্থান করে ন্যূনতম দেশপ্রেমিকের পরিচয় দিন।

৪. আপনি সুস্থ মানুষ হয়ে কয়দিনের জন্য গ্রামে গিয়ে অসুস্থ হয়ে (করোনাভাইরাস-বহন করে) ঢাকায় ফিরে মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবেন না।

৫. ঝোঁকের মাথায় গ্রামে যাবেন না। সরকার-ঘোষিত সাধারণ ছুটিকে দেশ ও জাতির জন্য সদ্ব্যবহার করুন।

এতোকিছুর পরও যারা বিবেকবান হবে নাতাদের উদ্দেশ্যে আমাদের কী বলার আর কী করার আছে? যা করার এবার সরকারই করুন। তবুও মনে আসে এই আক্ষেপ: হায় রে বাঙালি, কবে বুঝবে বিপদের মানে?


সাইয়িদ রফিকুল হক
২৪/০৩/২০২০
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৪২২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/০৩/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast