জন্মদিনের রহস্যময় চুরি
#কিশোরদের_থ্রিলার
জন্মদিনের রহস্যময় চুরি
সাইয়িদ রফিকুল হক
হিমেলের আজ জন্মদিন।
আজ ওর এগারো বছর পূর্ণ হলো। হিমেলের এগারোতম জন্মদিনটাকে স্মরণীয় করার জন্য ওর বাবা-মা আজকে ওদের বাড়িতে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এজন্য হিমেল ওর প্রায় সকল ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে আজকের এই জন্মদিনের আয়োজনে দাওয়াত দিয়েছে।
সন্ধ্যার পরে অনুষ্ঠান শুরু হবে। কিন্তু ওর কয়েকজন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু বেশিক্ষণ আনন্দ করার জন্য বিকালে ওদের বাসায় উপস্থিত হয়েছে। এতে হিমেলের আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।
ওদের বাসাটা এখন আনন্দ-জোয়ারে যেন ভাসছে। হিমেলের ছোটবোন নাতাশাও এখন সময় কাটাচ্ছে খুব হাসিখুশিভাবে।
অনেক গল্প ও আড্ডার পর হিমেল সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ওর বন্ধুদের একটা আশ্চর্যজনক জিনিস দেখাতে লাগলো। এটি দামি একটা ক্রিস্টাল। এতে এগারো-রকমের রঙ ও আলোর খেলা চলে। এই ক্রিস্টালটার আরও বিশেষত্ব হলো—বিদ্যুৎ চলে গেলে কিংবা অন্ধকার-রাতে এটি দীর্ঘসময় পর্যন্ত আলো ছড়াতে পারে। আর দেখতেও এটি ভারি সুন্দর!
ওর এগারোতম জন্মদিন বলে ওর বড়মামা কিছুদিন আগে জাপান থেকে ওর জন্য এটি পাঠিয়েছেন।
হিমেলের বন্ধুরা খুব আগ্রহ নিয়ে ক্রিস্টালটা দেখতে লাগলো। আর সবার চোখেমুখেই দারুণ একটা মুগ্ধতা।
ওর বন্ধু রাকেশ, তানভীর, সিয়াম ও আহনাফ একবাক্যে স্বীকার করলো, ক্রিস্টালটা দেখতে খুব সুন্দর! ওরা প্রত্যেকে বারবার এটি হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো।
হিমেলের দিকে তাকিয়ে রাকেশ একসময় বললো, “এটার দাম কত হবে রে?”
হিমেল খুশিখুশিভাব নিয়ে বললো, “আমি সঠিক দাম জানি না। তবে মা সেদিন বাবাকে বলেছিলেন, এটার দাম নাকি কম করে হলেও ত্রিশ-বত্রিশ হাজার টাকা হবে।”
ওর কথা শুনে রাকেশ বললো, “তা হবে রে। জিনিসটাতো খুব সুন্দর! এত সুন্দর ক্রিস্টাল আগে কখনো দেখিনি। ইস্ এরকম যদি আমার একটা থাকতো!”
ওর কথা শুনে বন্ধুরা হেসে ফেললো।
এমন সময় হিমেলের মা ওদের সবার জন্য নাস্তা দিয়ে গেলেন। ওরা খাবার গ্রহণের ফাঁকে-ফাঁকেও ক্রিস্টালটা দেখতে লাগলো।
কেক-কাটার কিছুক্ষণ আগে হিমেল ক্রিস্টালটা সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেখানোর জন্য ওদের সামনের ওয়ারড্রবের ওপর রাখলো। আর সেটি সঙ্গে-সঙ্গে এগারোটি রঙের খেলা দেখাতে লাগলো। ঘরের অতিথিরা এর অভিনবত্বে খুব খুশি হলো।
সন্ধ্যার একটু পরে বড়সড় একটা কেক-কাটার মধ্য দিয়ে হিমেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান শুরু হলো। ওর বন্ধুদের চোখেমুখে এখন বিরাট আনন্দ। সন্ধ্যার পরে ওর আরও কয়েকজন বন্ধু এখানে এসেছে। এর মধ্যে নাঈম, শোয়েব ও আতিকও রয়েছে। ওরা হিমেলকে প্রায় ঘিরে ধরেছে।
কেক-কাটার সময় ওর বন্ধুরা সজোরে হাততালি দিতে লাগলো। এসময় তাদের বাড়ির দারোয়ান, পাশের বাসার কলেজপড়ুয়া তরুণ সফি, এবং আরও কয়েকজন মহিলা হিমেলকে ঘিরে দাঁড়ালো। কেক-কাটার আনন্দে সবাই এখন বিভোর হয়ে রয়েছে। কারও কোনোদিকে খেয়াল নাই।
শাহাদত সাহেব ভালোমানুষ বলে তিনি তার ছেলের জন্মদিনে বাড়ির দারোয়ানকেও দাওয়াত দিয়েছেন। সে বাড়ির মেইন গেইট কিছুসময়ের জন্য বন্ধ করে দিয়ে এই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছে।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। হিমেলদের বাসার ভিতরে নেমে এলো একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
অন্ধকার দেখে হিমেলের বাবা শাহাদত সাহেব হিমেলের উদ্দেশ্যে বললেন, “ক্রিস্টালটা জ্বলছে না কেন? হিমেল, ক্রিস্টালটা কোথায় রেখেছো বাবা? একবার দেখো তো বাবা।”
হিমেল বললো, “ওয়ারড্রবের ওপর। কিন্তু জ্বলছে না কেন?”
ওর কণ্ঠেও বিরাট বিস্ময়।
অনেকদিন এখানে কোনো বিদ্যুৎ যায় না বলে ওদের কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। প্রায় পাঁচমিনিট ওরা এভাবে অন্ধকারেই কাটালো।
কিছুক্ষণ পরে ওর মা ও কাজের মেয়েটা অনেক ছোটাছুটি করে একটা চার্জার খুঁজে পেল। চার্জারটা ওদের কাছে নিয়ে এলো কাজের মেয়ে শাহীনুর। তারপর ওর বাবা শাহাদত সাহেব মোবাইলের টর্চ জ্বালালেন। অন্ধকারে এতক্ষণ তিনি মোবাইলটাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তিনি হিমেলের উদ্দেশ্যে বললেন, “এবার তোমার মামার দেওয়া ক্রিস্টালটা সবাইকে দেখাও। অন্ধকারে এটি দেখতে বেশি ভালো লাগবে।”
হিমেল পিছনফিরে ওয়ারড্রবের উপর হাত দিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে বললো, “এখানেই তো রেখেছিলাম। গেল কোথায়!”
ওর বাবা এগিয়ে এসে বললেন, “কী হয়েছে?”
হিমেল বললো, “বাবা, ক্রিস্টালটাতো এখানেই রেখেছিলাম। কিন্তু এখন আর পাচ্ছি না।”
ওর বাবাও ওর সঙ্গে খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু সেটি কোথাও পাওয়া গেল না।”
ওর বন্ধুরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মুখচাওয়াচাওয়ি করে আফসোস করতে লাগলো। রাকেশ, তানভীর, সিয়ামও ক্রিস্টালটা খুঁজতে লাগলো। কিন্তু সেটি সবার দৃষ্টির বাইরে।
এতে হিমেলের খুব মনখারাপ হয়েছে। ওর বন্ধুদেরও মনখারাপ। তবুও কয়েকজন হিমেলকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো।
ওর বাবা বললেন, “থাক, কিচ্ছু হবে না। তোমাকে নাহয় আমিই ওরকম একটা কিনে দিবো।”
তবুও হিমেলের মন ভালো হয় না। সে ভীষণ মনখারাপ করেছে।
এমন সময় সিয়াম প্রায় চিৎকার করে বললো, “চাচাজান, ক্রিস্টালটা রাকেশ নিয়েছে। এটা ওর খুব পছন্দ হয়েছিল।”
এতে হিমেলসহ ওর বাবা ঘাবড়ে গেলেন। আর তিনি ভাবলেন, সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তার ছেলের সঙ্গে বন্ধুদের মনোমালিন্য হবে—তা ঠিক নয়। এজন্য তিনি বিষয়টি নিয়ে ভাবতে লাগলেন।
আসলে, রাকেশের সঙ্গে সিয়ামের কয়েকদিন আগে ঝগড়া হয়েছিল।
হিমেলের এত মনখারাপ দেখে ওর বাবা শেষমেশ বললেন, “তোমার বন্ধুদের নিয়ে বসো। আমি এখনই ক্রিস্টালটা খুঁজে বের করার ব্যবস্থা করছি।”
কথাটা শেষ করে তিনি কাকে যেন ফোন করলেন। শেষে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমাদের আরেকটু বসতে হবে। আমি বিশ্ববিখ্যাত প্রাইভেট ডিটেকটিভ লালভাইকে খবর দিয়েছি। তিনি এখনই এসে পড়বেন।”
কথাটা শোনামাত্র এত দুঃখের মধ্যেও হিমেলের মনে আনন্দবন্যা বয়ে যেতে লাগলো। ওর বন্ধুরাও যারপরনাই খুশি। এতদিন তারা এই বিখ্যাত গোয়েন্দার কথা বইয়ে পড়েছে। আজ তাঁকে স্বচক্ষে দেখবে। এতে ওদের মনে আনন্দের কোনো সীমা নাই।
মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে গোয়েন্দা লালভাই ওদের বাসায় চলে এলেন। সঙ্গে তাঁর একজন সহকারীও রয়েছেন।
লালভাই দেখতে খুব সুন্দর। আর খুব সতর্ক। প্রথমে তিনি বাসার সবাইকে ওদের ড্রইংরুমে একত্রিত করলেন। তারপর সবার জবানবন্দি রেকর্ড করলেন। পরে দেখলেন, কেক-কাটার সময় কে কোথায় অবস্থান করেছিল। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরে কোথায় ছিল। সবকিছু তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সম্পন্ন করতে লাগলেন।
তিনি ও তাঁর সহকারী সাজিদ সাহেব ড্রইংরুম থেকে শুরু করে এর আশেপাশের সবক’টি রুমে তন্ন-তন্ন করে তল্লাশি চালালেন। কয়েকটি জায়গা থেকে কিছু আলামতও সংগ্রহ করলেন। সবকিছু দেখার মধ্যে তাঁর গভীর মনোযোগ রয়েছে।
বাসার সবাই গোয়েন্দা লালভাইয়ের কাজকর্ম খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। বিশেষ করে হিমেল ও তার বন্ধুরা একেবারে বিস্মিত ও বিমুগ্ধ। ওদের মুখে যেন কোনো কথা নাই। এতবড় গোয়েন্দাকে সামনে থেকে দেখে ওদের মধ্যে আজ এখন দারুণ একটা উত্তেজনা।
সবজায়গায় তল্লাশিশেষে তিনি এই বাসায় অবস্থানরত সবার শরীরের মাপ নিলেন। তারপর তিনি মিনিট দশেকের জন্য একটু বাইরে গেলেন। ফিরে এসে সবশেষে তিনি ওদের ড্রইংরুমের একটা সোফায় বসে বললেন, “আমার কাজ প্রায় শেষ। আপনারা সবাই আরেকটু বসুন। তারপর আপনারা খাওয়াদাওয়া শেষ করে যার যার বাসায় ফিরবেন।”
তিনি ইশারায় শাহাদত সাহেবকে বাসার দরজা আটকিয়ে দিতে বললেন। আসলে, তিনি এইসময় কাউকে বাইরে যেতে দিতে চাচ্ছেন না।
শাহাদত সাহেব তা-ই করলেন।
মিনিটখানেক পরে তিনি এই প্রথম হেসে বললেন, “চোর এই ঘরেই আছে। একটু পরেই তাকে শনাক্ত করা হবে।”
বাসার ভিতরে সবার এখন রুদ্ধশ্বাস অবস্থা। হিমেল ও তার বন্ধুরা দারুণ একটা উত্তেজনায় ছটফট করছে। ওদের কারও মুখে কোনো কথা নাই। সবাই চূড়ান্ত ব্যাপারটার অপেক্ষায় রয়েছে। শুধু সিয়াম ঘন-ঘন রাকেশের দিকে তাকাচ্ছে।
গোয়েন্দা লালভাই চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে খুব আয়েশ করে এবার বলতে লাগলেন, “চোর একটা নয় দুটো। একটা মহিলা অপরটি পুরুষ। এরা মিলেমিশে এই চুরিটা করেছে। এরা আগে থেকে এই ক্রিস্টালটা দেখেছিল। এর মূল্যও জানতো। তাই, তারা এতদিন যাবৎ এটা চুরি করার একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আজ হিমেলের জন্মদিনে তাদের হাতে সেই সুযোগটা আসে। পুরুষ চোরটির বয়স আনুমানিক চুয়াল্লিশ-টুয়াল্লিশ হবে। সে পেশায় একটা গার্ড। তার উচ্চতা পাঁচফুট আট ইঞ্চি। সে নিচে নেমে এই ভবনের মেইন সুইচ অফ করে দিয়েছিল। আর তার মহিলা সঙ্গী এই সুযোগে ক্রিস্টালটা অনায়াসে চুরি করে। আর সে যদি পালিয়ে গিয়ে না থাকে তাহলে ক্রিস্টালটা বাসার ভিতরেই আছে। আমি...।”
কথাগুলো শোনার সঙ্গে-সঙ্গে হিমেলদের বাসার দারোয়ান মোস্তফা পালানোর জন্য বাসার মেইন গেইটের কাছে দৌড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে ধরে ফেললো লালভাইয়ের সহকারী সাজিদ সাহেব, তরুণ সফি ও হিমেলের বন্ধুরা।
সবাই মিলে লোকটাকে বেঁধে মেঝের ওপর শুইয়ে রাখলো।
গোয়েন্দা লালভাই আবার বলতে লাগলেন, “আমি নিচে নেমে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, আজ এই এলাকায় বিদ্যুৎ যায়নি। বাড়ির দারোয়ান সিঁড়ির নিচে সংরক্ষিত মেইন সুইচটা কয়েক মিনিটের জন্য অফ করে দেয়। এইসময় তার সহযোগী মহিলা ওয়ারড্রবের ওপর থেকে একঝটকায় একটা কাপড়ে মুড়ে ক্রিস্টালটা অন্যত্র সরিয়ে ফেলে। আর এই কাজটা করেছে দারোয়ানের স্ত্রী কুলসুম।”
কথাটা শোনামাত্র কুলসুম কাঁদতে লাগলো। সে কিছুক্ষণ আগে চুরি হয়ে যাওয়া ক্রিস্টালটা সোফার টেবিলের ওপর এনে রাখলো। সে এখনও হাউমাউ করে কাঁদছে। কাজের মেয়ে শাহীনুর তার হাত-পা বেঁধে তাকে মেঝের ওপর বসিয়ে রাখলো।
বাসার ভিতরে এতক্ষণ পীনপতন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল। সকল অতিথি মুগ্ধতার সঙ্গে চেয়ে আছে গোয়েন্দা লালভাইয়ের মুখের দিকে। এত সহজে তিনি একটা জটিল কেস সমাধান করে দিলেন! সবার কাছে ঘটনাটা এখনও অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।
সবাইকে আরও অবাক করে দিয়ে গোয়েন্দা লালভাই চুরির ঘটনাটা যেন নিজের চোখে দেখেছেন সেভাবে বর্ণনা করতে লাগলেন:
“কেক-কাটার সময় আপনারা সবাই ছিলেন খুব ব্যস্ত। এইসময় চোর দুটো নিজেদের কাজে নেমে পড়ে। প্রথমে ভিড়ের মধ্যে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসার মেইন গেইট খুলে দারোয়ান নিচে নেমে যায়। আর মেইন সুইচটা অফ করে দেয়। এই স্বল্পসময়ের মধ্যে কুলসুম অন্ধকারে ক্রিস্টালটা চুরি করতে গিয়ে কাজের মেয়ে শাহীনুরের সঙ্গে একবার সামান্য ধাক্কা খায়। কিন্তু শাহীনুর তখন এসবের কিছুই বুঝতে পারেনি। কুলসুম নির্বিঘ্নে কাজটি সম্পন্ন করে। ঘটনাটি আমি জিজ্ঞাসাবাদের সময় শাহীনুরের নিকট থেকে জানতে পেরেছি। এই বাড়ির মেইন সুইচ বন্ধ করার নিয়ম শাহাদত সাহেব ও দারোয়ান মোস্তফা ছাড়া আর কেউ জানতো না। আর এটি বেশ উপরে। একজন লম্বা মানুষের প্রয়োজন। মোস্তফা নিচে গিয়ে অনায়াসে মেইন সুইচটা বন্ধ করে কাজশেষে উপরে উঠে আসে। পুনরায় সে সবার সঙ্গে মিশে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। আজকের এই জন্মদিনে চুরি করার কারণ হলো—এই ভিড়ের মধ্যে আপনারা কে কাকে সন্দেহ করতেন? কিংবা আত্মীয়তা-সম্পর্কের ফাটল ধরার আশঙ্কায় আপনারা ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে দিতেন। আর এই সুযোগটাই ওরা নিতে চেয়েছিল।”
ঘরভর্তি মানুষ করতালি দিয়ে লালভাইকে এবার স্বাগত জানালেন।
আর এত লোকের মাঝেও শাহাদত সাহেব সিয়ামের দিকে সস্নেহে তাকিয়ে বললেন, “বাবা, তুমি রাকেশের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নাও। আর অনুমান করে কখনো কোনো কথা বলবে না। মনে রাখবে: আমাদের মহানবী সা. বলেছেন, ‘অনুমান হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা’।”
সিয়াম নীরবে রাকেশের হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে নিলো।
এরপর হিমেল ও তার বন্ধুরা অটোগ্রাফের জন্য গোয়েন্দা লালভাইকে ঘিরে দাঁড়ালো।
সাইয়িদ রফিকুল হক
০৪/১১/২০১৮
জন্মদিনের রহস্যময় চুরি
সাইয়িদ রফিকুল হক
হিমেলের আজ জন্মদিন।
আজ ওর এগারো বছর পূর্ণ হলো। হিমেলের এগারোতম জন্মদিনটাকে স্মরণীয় করার জন্য ওর বাবা-মা আজকে ওদের বাড়িতে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এজন্য হিমেল ওর প্রায় সকল ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে আজকের এই জন্মদিনের আয়োজনে দাওয়াত দিয়েছে।
সন্ধ্যার পরে অনুষ্ঠান শুরু হবে। কিন্তু ওর কয়েকজন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু বেশিক্ষণ আনন্দ করার জন্য বিকালে ওদের বাসায় উপস্থিত হয়েছে। এতে হিমেলের আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে গেছে।
ওদের বাসাটা এখন আনন্দ-জোয়ারে যেন ভাসছে। হিমেলের ছোটবোন নাতাশাও এখন সময় কাটাচ্ছে খুব হাসিখুশিভাবে।
অনেক গল্প ও আড্ডার পর হিমেল সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ওর বন্ধুদের একটা আশ্চর্যজনক জিনিস দেখাতে লাগলো। এটি দামি একটা ক্রিস্টাল। এতে এগারো-রকমের রঙ ও আলোর খেলা চলে। এই ক্রিস্টালটার আরও বিশেষত্ব হলো—বিদ্যুৎ চলে গেলে কিংবা অন্ধকার-রাতে এটি দীর্ঘসময় পর্যন্ত আলো ছড়াতে পারে। আর দেখতেও এটি ভারি সুন্দর!
ওর এগারোতম জন্মদিন বলে ওর বড়মামা কিছুদিন আগে জাপান থেকে ওর জন্য এটি পাঠিয়েছেন।
হিমেলের বন্ধুরা খুব আগ্রহ নিয়ে ক্রিস্টালটা দেখতে লাগলো। আর সবার চোখেমুখেই দারুণ একটা মুগ্ধতা।
ওর বন্ধু রাকেশ, তানভীর, সিয়াম ও আহনাফ একবাক্যে স্বীকার করলো, ক্রিস্টালটা দেখতে খুব সুন্দর! ওরা প্রত্যেকে বারবার এটি হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো।
হিমেলের দিকে তাকিয়ে রাকেশ একসময় বললো, “এটার দাম কত হবে রে?”
হিমেল খুশিখুশিভাব নিয়ে বললো, “আমি সঠিক দাম জানি না। তবে মা সেদিন বাবাকে বলেছিলেন, এটার দাম নাকি কম করে হলেও ত্রিশ-বত্রিশ হাজার টাকা হবে।”
ওর কথা শুনে রাকেশ বললো, “তা হবে রে। জিনিসটাতো খুব সুন্দর! এত সুন্দর ক্রিস্টাল আগে কখনো দেখিনি। ইস্ এরকম যদি আমার একটা থাকতো!”
ওর কথা শুনে বন্ধুরা হেসে ফেললো।
এমন সময় হিমেলের মা ওদের সবার জন্য নাস্তা দিয়ে গেলেন। ওরা খাবার গ্রহণের ফাঁকে-ফাঁকেও ক্রিস্টালটা দেখতে লাগলো।
কেক-কাটার কিছুক্ষণ আগে হিমেল ক্রিস্টালটা সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে দেখানোর জন্য ওদের সামনের ওয়ারড্রবের ওপর রাখলো। আর সেটি সঙ্গে-সঙ্গে এগারোটি রঙের খেলা দেখাতে লাগলো। ঘরের অতিথিরা এর অভিনবত্বে খুব খুশি হলো।
সন্ধ্যার একটু পরে বড়সড় একটা কেক-কাটার মধ্য দিয়ে হিমেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান শুরু হলো। ওর বন্ধুদের চোখেমুখে এখন বিরাট আনন্দ। সন্ধ্যার পরে ওর আরও কয়েকজন বন্ধু এখানে এসেছে। এর মধ্যে নাঈম, শোয়েব ও আতিকও রয়েছে। ওরা হিমেলকে প্রায় ঘিরে ধরেছে।
কেক-কাটার সময় ওর বন্ধুরা সজোরে হাততালি দিতে লাগলো। এসময় তাদের বাড়ির দারোয়ান, পাশের বাসার কলেজপড়ুয়া তরুণ সফি, এবং আরও কয়েকজন মহিলা হিমেলকে ঘিরে দাঁড়ালো। কেক-কাটার আনন্দে সবাই এখন বিভোর হয়ে রয়েছে। কারও কোনোদিকে খেয়াল নাই।
শাহাদত সাহেব ভালোমানুষ বলে তিনি তার ছেলের জন্মদিনে বাড়ির দারোয়ানকেও দাওয়াত দিয়েছেন। সে বাড়ির মেইন গেইট কিছুসময়ের জন্য বন্ধ করে দিয়ে এই অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছে।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। হিমেলদের বাসার ভিতরে নেমে এলো একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার।
অন্ধকার দেখে হিমেলের বাবা শাহাদত সাহেব হিমেলের উদ্দেশ্যে বললেন, “ক্রিস্টালটা জ্বলছে না কেন? হিমেল, ক্রিস্টালটা কোথায় রেখেছো বাবা? একবার দেখো তো বাবা।”
হিমেল বললো, “ওয়ারড্রবের ওপর। কিন্তু জ্বলছে না কেন?”
ওর কণ্ঠেও বিরাট বিস্ময়।
অনেকদিন এখানে কোনো বিদ্যুৎ যায় না বলে ওদের কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। প্রায় পাঁচমিনিট ওরা এভাবে অন্ধকারেই কাটালো।
কিছুক্ষণ পরে ওর মা ও কাজের মেয়েটা অনেক ছোটাছুটি করে একটা চার্জার খুঁজে পেল। চার্জারটা ওদের কাছে নিয়ে এলো কাজের মেয়ে শাহীনুর। তারপর ওর বাবা শাহাদত সাহেব মোবাইলের টর্চ জ্বালালেন। অন্ধকারে এতক্ষণ তিনি মোবাইলটাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তিনি হিমেলের উদ্দেশ্যে বললেন, “এবার তোমার মামার দেওয়া ক্রিস্টালটা সবাইকে দেখাও। অন্ধকারে এটি দেখতে বেশি ভালো লাগবে।”
হিমেল পিছনফিরে ওয়ারড্রবের উপর হাত দিয়ে বিস্ময়ের সঙ্গে বললো, “এখানেই তো রেখেছিলাম। গেল কোথায়!”
ওর বাবা এগিয়ে এসে বললেন, “কী হয়েছে?”
হিমেল বললো, “বাবা, ক্রিস্টালটাতো এখানেই রেখেছিলাম। কিন্তু এখন আর পাচ্ছি না।”
ওর বাবাও ওর সঙ্গে খুঁজতে লাগলেন। কিন্তু সেটি কোথাও পাওয়া গেল না।”
ওর বন্ধুরা পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মুখচাওয়াচাওয়ি করে আফসোস করতে লাগলো। রাকেশ, তানভীর, সিয়ামও ক্রিস্টালটা খুঁজতে লাগলো। কিন্তু সেটি সবার দৃষ্টির বাইরে।
এতে হিমেলের খুব মনখারাপ হয়েছে। ওর বন্ধুদেরও মনখারাপ। তবুও কয়েকজন হিমেলকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো।
ওর বাবা বললেন, “থাক, কিচ্ছু হবে না। তোমাকে নাহয় আমিই ওরকম একটা কিনে দিবো।”
তবুও হিমেলের মন ভালো হয় না। সে ভীষণ মনখারাপ করেছে।
এমন সময় সিয়াম প্রায় চিৎকার করে বললো, “চাচাজান, ক্রিস্টালটা রাকেশ নিয়েছে। এটা ওর খুব পছন্দ হয়েছিল।”
এতে হিমেলসহ ওর বাবা ঘাবড়ে গেলেন। আর তিনি ভাবলেন, সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তার ছেলের সঙ্গে বন্ধুদের মনোমালিন্য হবে—তা ঠিক নয়। এজন্য তিনি বিষয়টি নিয়ে ভাবতে লাগলেন।
আসলে, রাকেশের সঙ্গে সিয়ামের কয়েকদিন আগে ঝগড়া হয়েছিল।
হিমেলের এত মনখারাপ দেখে ওর বাবা শেষমেশ বললেন, “তোমার বন্ধুদের নিয়ে বসো। আমি এখনই ক্রিস্টালটা খুঁজে বের করার ব্যবস্থা করছি।”
কথাটা শেষ করে তিনি কাকে যেন ফোন করলেন। শেষে সবার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমাদের আরেকটু বসতে হবে। আমি বিশ্ববিখ্যাত প্রাইভেট ডিটেকটিভ লালভাইকে খবর দিয়েছি। তিনি এখনই এসে পড়বেন।”
কথাটা শোনামাত্র এত দুঃখের মধ্যেও হিমেলের মনে আনন্দবন্যা বয়ে যেতে লাগলো। ওর বন্ধুরাও যারপরনাই খুশি। এতদিন তারা এই বিখ্যাত গোয়েন্দার কথা বইয়ে পড়েছে। আজ তাঁকে স্বচক্ষে দেখবে। এতে ওদের মনে আনন্দের কোনো সীমা নাই।
মাত্র আধা ঘণ্টার মধ্যে গোয়েন্দা লালভাই ওদের বাসায় চলে এলেন। সঙ্গে তাঁর একজন সহকারীও রয়েছেন।
লালভাই দেখতে খুব সুন্দর। আর খুব সতর্ক। প্রথমে তিনি বাসার সবাইকে ওদের ড্রইংরুমে একত্রিত করলেন। তারপর সবার জবানবন্দি রেকর্ড করলেন। পরে দেখলেন, কেক-কাটার সময় কে কোথায় অবস্থান করেছিল। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পরে কোথায় ছিল। সবকিছু তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সম্পন্ন করতে লাগলেন।
তিনি ও তাঁর সহকারী সাজিদ সাহেব ড্রইংরুম থেকে শুরু করে এর আশেপাশের সবক’টি রুমে তন্ন-তন্ন করে তল্লাশি চালালেন। কয়েকটি জায়গা থেকে কিছু আলামতও সংগ্রহ করলেন। সবকিছু দেখার মধ্যে তাঁর গভীর মনোযোগ রয়েছে।
বাসার সবাই গোয়েন্দা লালভাইয়ের কাজকর্ম খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। বিশেষ করে হিমেল ও তার বন্ধুরা একেবারে বিস্মিত ও বিমুগ্ধ। ওদের মুখে যেন কোনো কথা নাই। এতবড় গোয়েন্দাকে সামনে থেকে দেখে ওদের মধ্যে আজ এখন দারুণ একটা উত্তেজনা।
সবজায়গায় তল্লাশিশেষে তিনি এই বাসায় অবস্থানরত সবার শরীরের মাপ নিলেন। তারপর তিনি মিনিট দশেকের জন্য একটু বাইরে গেলেন। ফিরে এসে সবশেষে তিনি ওদের ড্রইংরুমের একটা সোফায় বসে বললেন, “আমার কাজ প্রায় শেষ। আপনারা সবাই আরেকটু বসুন। তারপর আপনারা খাওয়াদাওয়া শেষ করে যার যার বাসায় ফিরবেন।”
তিনি ইশারায় শাহাদত সাহেবকে বাসার দরজা আটকিয়ে দিতে বললেন। আসলে, তিনি এইসময় কাউকে বাইরে যেতে দিতে চাচ্ছেন না।
শাহাদত সাহেব তা-ই করলেন।
মিনিটখানেক পরে তিনি এই প্রথম হেসে বললেন, “চোর এই ঘরেই আছে। একটু পরেই তাকে শনাক্ত করা হবে।”
বাসার ভিতরে সবার এখন রুদ্ধশ্বাস অবস্থা। হিমেল ও তার বন্ধুরা দারুণ একটা উত্তেজনায় ছটফট করছে। ওদের কারও মুখে কোনো কথা নাই। সবাই চূড়ান্ত ব্যাপারটার অপেক্ষায় রয়েছে। শুধু সিয়াম ঘন-ঘন রাকেশের দিকে তাকাচ্ছে।
গোয়েন্দা লালভাই চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে খুব আয়েশ করে এবার বলতে লাগলেন, “চোর একটা নয় দুটো। একটা মহিলা অপরটি পুরুষ। এরা মিলেমিশে এই চুরিটা করেছে। এরা আগে থেকে এই ক্রিস্টালটা দেখেছিল। এর মূল্যও জানতো। তাই, তারা এতদিন যাবৎ এটা চুরি করার একটা সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। আজ হিমেলের জন্মদিনে তাদের হাতে সেই সুযোগটা আসে। পুরুষ চোরটির বয়স আনুমানিক চুয়াল্লিশ-টুয়াল্লিশ হবে। সে পেশায় একটা গার্ড। তার উচ্চতা পাঁচফুট আট ইঞ্চি। সে নিচে নেমে এই ভবনের মেইন সুইচ অফ করে দিয়েছিল। আর তার মহিলা সঙ্গী এই সুযোগে ক্রিস্টালটা অনায়াসে চুরি করে। আর সে যদি পালিয়ে গিয়ে না থাকে তাহলে ক্রিস্টালটা বাসার ভিতরেই আছে। আমি...।”
কথাগুলো শোনার সঙ্গে-সঙ্গে হিমেলদের বাসার দারোয়ান মোস্তফা পালানোর জন্য বাসার মেইন গেইটের কাছে দৌড়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে ধরে ফেললো লালভাইয়ের সহকারী সাজিদ সাহেব, তরুণ সফি ও হিমেলের বন্ধুরা।
সবাই মিলে লোকটাকে বেঁধে মেঝের ওপর শুইয়ে রাখলো।
গোয়েন্দা লালভাই আবার বলতে লাগলেন, “আমি নিচে নেমে খোঁজ নিয়ে দেখেছি, আজ এই এলাকায় বিদ্যুৎ যায়নি। বাড়ির দারোয়ান সিঁড়ির নিচে সংরক্ষিত মেইন সুইচটা কয়েক মিনিটের জন্য অফ করে দেয়। এইসময় তার সহযোগী মহিলা ওয়ারড্রবের ওপর থেকে একঝটকায় একটা কাপড়ে মুড়ে ক্রিস্টালটা অন্যত্র সরিয়ে ফেলে। আর এই কাজটা করেছে দারোয়ানের স্ত্রী কুলসুম।”
কথাটা শোনামাত্র কুলসুম কাঁদতে লাগলো। সে কিছুক্ষণ আগে চুরি হয়ে যাওয়া ক্রিস্টালটা সোফার টেবিলের ওপর এনে রাখলো। সে এখনও হাউমাউ করে কাঁদছে। কাজের মেয়ে শাহীনুর তার হাত-পা বেঁধে তাকে মেঝের ওপর বসিয়ে রাখলো।
বাসার ভিতরে এতক্ষণ পীনপতন নিস্তব্ধতা বিরাজ করছিল। সকল অতিথি মুগ্ধতার সঙ্গে চেয়ে আছে গোয়েন্দা লালভাইয়ের মুখের দিকে। এত সহজে তিনি একটা জটিল কেস সমাধান করে দিলেন! সবার কাছে ঘটনাটা এখনও অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে।
সবাইকে আরও অবাক করে দিয়ে গোয়েন্দা লালভাই চুরির ঘটনাটা যেন নিজের চোখে দেখেছেন সেভাবে বর্ণনা করতে লাগলেন:
“কেক-কাটার সময় আপনারা সবাই ছিলেন খুব ব্যস্ত। এইসময় চোর দুটো নিজেদের কাজে নেমে পড়ে। প্রথমে ভিড়ের মধ্যে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসার মেইন গেইট খুলে দারোয়ান নিচে নেমে যায়। আর মেইন সুইচটা অফ করে দেয়। এই স্বল্পসময়ের মধ্যে কুলসুম অন্ধকারে ক্রিস্টালটা চুরি করতে গিয়ে কাজের মেয়ে শাহীনুরের সঙ্গে একবার সামান্য ধাক্কা খায়। কিন্তু শাহীনুর তখন এসবের কিছুই বুঝতে পারেনি। কুলসুম নির্বিঘ্নে কাজটি সম্পন্ন করে। ঘটনাটি আমি জিজ্ঞাসাবাদের সময় শাহীনুরের নিকট থেকে জানতে পেরেছি। এই বাড়ির মেইন সুইচ বন্ধ করার নিয়ম শাহাদত সাহেব ও দারোয়ান মোস্তফা ছাড়া আর কেউ জানতো না। আর এটি বেশ উপরে। একজন লম্বা মানুষের প্রয়োজন। মোস্তফা নিচে গিয়ে অনায়াসে মেইন সুইচটা বন্ধ করে কাজশেষে উপরে উঠে আসে। পুনরায় সে সবার সঙ্গে মিশে একপাশে দাঁড়িয়ে থাকে। আজকের এই জন্মদিনে চুরি করার কারণ হলো—এই ভিড়ের মধ্যে আপনারা কে কাকে সন্দেহ করতেন? কিংবা আত্মীয়তা-সম্পর্কের ফাটল ধরার আশঙ্কায় আপনারা ব্যাপারটা ধামাচাপা দিয়ে দিতেন। আর এই সুযোগটাই ওরা নিতে চেয়েছিল।”
ঘরভর্তি মানুষ করতালি দিয়ে লালভাইকে এবার স্বাগত জানালেন।
আর এত লোকের মাঝেও শাহাদত সাহেব সিয়ামের দিকে সস্নেহে তাকিয়ে বললেন, “বাবা, তুমি রাকেশের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে নাও। আর অনুমান করে কখনো কোনো কথা বলবে না। মনে রাখবে: আমাদের মহানবী সা. বলেছেন, ‘অনুমান হলো সবচেয়ে বড় মিথ্যা’।”
সিয়াম নীরবে রাকেশের হাত ধরে ক্ষমা চেয়ে নিলো।
এরপর হিমেল ও তার বন্ধুরা অটোগ্রাফের জন্য গোয়েন্দা লালভাইকে ঘিরে দাঁড়ালো।
সাইয়িদ রফিকুল হক
০৪/১১/২০১৮
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
নাসরীন আক্তার রুবি ০৬/০৫/২০১৯দারুন লিখেছেন।
-
ইবনে মিজান ০১/০৫/২০১৯nice!
-
সিন্ধু সেঁচে মুক্তা-আব্দুল কাদির মিয়া ২২/০৪/২০১৯valo
-
জসিম বিন ইদ্রিস ২০/০৪/২০১৯অনুমান নির্ভর কথা না বলাই উত্তম। ভালো লাগা অভিরাম।
-
রনোজিত সরকার(বামুনের চাঁদ) ১৮/০৪/২০১৯সত্যি রহস্যময়।