বেকসুরের কসুর
বেকসুরের কসুর
সাইয়িদ রফিকুল হক
ছেলেটি ক্রমাগত হতাশায় ডুবছিল। আর ভুগছিল নীল-যন্ত্রণায়। কতকগুলো কালকেউটে যেন তাকে অবিরত দংশন করছিল! ভয়ংকর বিষের ছোঁয়ায় জীবনটা বুঝি তার সংকটাপন্ন!
ওর মনের ভিতরে-বাইরে তখন কালবৈশাখীর রুদ্র-মাতম। এই মাতম যেন কিছুতেই থামবার নয়। বিশ্বাসভঙ্গের বেদনায় সে এখন শরাহত পাখির মতো শুধুই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
মেয়েটির সঙ্গে ওর সম্পর্ক ছিল সাড়ে-চার-বছরের। লোকে বলতো, অনেক মজবুত সম্পর্ক। কিন্তু সেই মজবুত সম্পর্কই ভেঙে গেল একদিনের ছলনায়। তাদের ভালোবাসায় নাকি খুব জোর ছিল! তাও একদিনে হঠাৎ ভেঙে গেল!
সেই থেকে ছেলেটি খুব হতাশ হয়ে পড়লো। তার জীবনে ঘটতে থাকে ছন্দপতন। যে মানুষ কখনও বিড়ি-সিগারেট খেত না—সেই কিনা শেষমেশ ধরলো একেবারে বাংলা-মদ!
তার বাড়ির লোকেরা এসব দেখেশুনে হৈ-হৈ করে উঠলো। কিন্তু ছেলেটি কারও কথাই শুনলো না। সে ক্রমাগত ডুবছিল। আর ডুবতেই যেন তার ভালো লাগছিল। নাতাশার কথা মনে হলে সে বাংলা-মদের পাশাপাশি হুইস্কিও খেয়ে থাকে। তবুও সে তার জীবন থেকে নাতাশার সমস্ত ভৌতিক ছায়া চিরতরে মুছে ফেলতে চায়। সে মদকে এখন খুব বিশ্বাস করে আর ভালোবাসে। কারণ, সে নাতাশার মতো ছলনাময়ী নয়।
তার বন্ধুরা একদিন বললো, “শোন ফারদিন, এসব ছেড়ে তুই আগের মতো হিরো হয়ে ওঠ তো। তোকে এসবে মানায় না। আর বুঝতেই তো পারিস, আরও কত মেয়ে আছে আমাদের দেশে। ওর জন্য এতটা বেশি-বেশি!”
তবুও সে হেসে বললো, “আমাকে কীসে মানায়—তা আমিই ভালো জানি। আর কারও ছলনার জালে আমি আটকাতে চাই না। তাই, মদকে বন্ধু ভেবে ভালোবেসে আলিঙ্গন করেছি।”
ফারদিনের মুখে এসব শুনে বন্ধুরা হতাশ হয়ে যে-যার বাড়িতে ফিরে যায়। সে কারও কোনো কথাই শুনতে চায় না। শুধু দিনে কয়েকবার মদের আহ্বানে সাড়া দেয়।
আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু একদিন এসে তাকে বললো, “সামান্য একটা মেয়ের জন্য তুই মদ ধরেছিস! এই তোর বিদ্যাবুদ্ধি!”
বন্ধুর কথা শুনে ফারদিন হাসতে-হাসতে বললো, “মেয়েটার জন্য তো মদ ধরিনি। ওর মতো একটা মেয়ের জন্য মদ ধরবো কেন? মদ তো ধরেছি নিজের ওপর রাগ করে। আমি কেন ওরকম একটা সস্তা মেয়েকে ভালোবাসতে গিয়েছিলাম। আসলে, আমি নিজের ওপর রাগ করে মদ খাচ্ছি। আর আমি নিজেকে এখন শাস্তি দিচ্ছি।”
বন্ধুটি বললো, “এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে আর তোমার নিজের জীবনীশক্তি ক্ষয় করে কখনও শাস্তি হয় না। এটা বোকামি। এটা বড় ভুল। এতে যে তোমার নিজেরই ষোলোআনা ক্ষতি!”
ফারদিন আবারও হেসে বলে, “সে তো আমিও জানি। শুধু নিজের স্বভাবটাকে দমন করছি। আর যেন কারও খপ্পরে না পড়ি।”
বন্ধুটি তাকে মদ ছাড়াবার জন্য আবার বলে, “কিন্তু এতে তোমার তো কোনো অপরাধ নাই। তুমি কেন নিজেকে এভাবে শাস্তি দিবে?”
ফারদিন এবার গম্ভীর হয়ে বললো, “তা ঠিক। আমার কোনো অপরাধ নাই। আমি এককথায় বেকসুর। কিন্তু আমি কেন তাকে ভালোবাসতে গিয়েছিলাম—এই অপরাধে আজ নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি। এটা হলো বেকসুরের কসুর।”
সাইয়িদ রফিকুল হক
০৫/১২/২০১৮
সাইয়িদ রফিকুল হক
ছেলেটি ক্রমাগত হতাশায় ডুবছিল। আর ভুগছিল নীল-যন্ত্রণায়। কতকগুলো কালকেউটে যেন তাকে অবিরত দংশন করছিল! ভয়ংকর বিষের ছোঁয়ায় জীবনটা বুঝি তার সংকটাপন্ন!
ওর মনের ভিতরে-বাইরে তখন কালবৈশাখীর রুদ্র-মাতম। এই মাতম যেন কিছুতেই থামবার নয়। বিশ্বাসভঙ্গের বেদনায় সে এখন শরাহত পাখির মতো শুধুই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
মেয়েটির সঙ্গে ওর সম্পর্ক ছিল সাড়ে-চার-বছরের। লোকে বলতো, অনেক মজবুত সম্পর্ক। কিন্তু সেই মজবুত সম্পর্কই ভেঙে গেল একদিনের ছলনায়। তাদের ভালোবাসায় নাকি খুব জোর ছিল! তাও একদিনে হঠাৎ ভেঙে গেল!
সেই থেকে ছেলেটি খুব হতাশ হয়ে পড়লো। তার জীবনে ঘটতে থাকে ছন্দপতন। যে মানুষ কখনও বিড়ি-সিগারেট খেত না—সেই কিনা শেষমেশ ধরলো একেবারে বাংলা-মদ!
তার বাড়ির লোকেরা এসব দেখেশুনে হৈ-হৈ করে উঠলো। কিন্তু ছেলেটি কারও কথাই শুনলো না। সে ক্রমাগত ডুবছিল। আর ডুবতেই যেন তার ভালো লাগছিল। নাতাশার কথা মনে হলে সে বাংলা-মদের পাশাপাশি হুইস্কিও খেয়ে থাকে। তবুও সে তার জীবন থেকে নাতাশার সমস্ত ভৌতিক ছায়া চিরতরে মুছে ফেলতে চায়। সে মদকে এখন খুব বিশ্বাস করে আর ভালোবাসে। কারণ, সে নাতাশার মতো ছলনাময়ী নয়।
তার বন্ধুরা একদিন বললো, “শোন ফারদিন, এসব ছেড়ে তুই আগের মতো হিরো হয়ে ওঠ তো। তোকে এসবে মানায় না। আর বুঝতেই তো পারিস, আরও কত মেয়ে আছে আমাদের দেশে। ওর জন্য এতটা বেশি-বেশি!”
তবুও সে হেসে বললো, “আমাকে কীসে মানায়—তা আমিই ভালো জানি। আর কারও ছলনার জালে আমি আটকাতে চাই না। তাই, মদকে বন্ধু ভেবে ভালোবেসে আলিঙ্গন করেছি।”
ফারদিনের মুখে এসব শুনে বন্ধুরা হতাশ হয়ে যে-যার বাড়িতে ফিরে যায়। সে কারও কোনো কথাই শুনতে চায় না। শুধু দিনে কয়েকবার মদের আহ্বানে সাড়া দেয়।
আরেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু একদিন এসে তাকে বললো, “সামান্য একটা মেয়ের জন্য তুই মদ ধরেছিস! এই তোর বিদ্যাবুদ্ধি!”
বন্ধুর কথা শুনে ফারদিন হাসতে-হাসতে বললো, “মেয়েটার জন্য তো মদ ধরিনি। ওর মতো একটা মেয়ের জন্য মদ ধরবো কেন? মদ তো ধরেছি নিজের ওপর রাগ করে। আমি কেন ওরকম একটা সস্তা মেয়েকে ভালোবাসতে গিয়েছিলাম। আসলে, আমি নিজের ওপর রাগ করে মদ খাচ্ছি। আর আমি নিজেকে এখন শাস্তি দিচ্ছি।”
বন্ধুটি বললো, “এভাবে নিজেকে কষ্ট দিয়ে আর তোমার নিজের জীবনীশক্তি ক্ষয় করে কখনও শাস্তি হয় না। এটা বোকামি। এটা বড় ভুল। এতে যে তোমার নিজেরই ষোলোআনা ক্ষতি!”
ফারদিন আবারও হেসে বলে, “সে তো আমিও জানি। শুধু নিজের স্বভাবটাকে দমন করছি। আর যেন কারও খপ্পরে না পড়ি।”
বন্ধুটি তাকে মদ ছাড়াবার জন্য আবার বলে, “কিন্তু এতে তোমার তো কোনো অপরাধ নাই। তুমি কেন নিজেকে এভাবে শাস্তি দিবে?”
ফারদিন এবার গম্ভীর হয়ে বললো, “তা ঠিক। আমার কোনো অপরাধ নাই। আমি এককথায় বেকসুর। কিন্তু আমি কেন তাকে ভালোবাসতে গিয়েছিলাম—এই অপরাধে আজ নিজেকে শাস্তি দিচ্ছি। এটা হলো বেকসুরের কসুর।”
সাইয়িদ রফিকুল হক
০৫/১২/২০১৮
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
অনিরুদ্ধ বুলবুল ১১/০১/২০১৯
-
মোঃ নূর ইমাম শেখ বাবু ০৬/১২/২০১৮বাঃ
ভাল লাগল বেশ। অভিনন্দন।
আলোর মিছিলে'র সফল অগ্রযাত্রায় এর ৪র্থ সংখ্যাটি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে।
মাতৃভাষা দিবস সংখ্যার জন্য লেখা আহ্বান করা হয়েছে।
https://www.bangla-kobita.com/oniruddho/matryvasa-dibos/
গল্প প্রবন্ধ কবিতা - যে কেউ পাঠাতে পারেন। ধন্যবাদ।