মে-দিবসের শিক্ষা
মে-দিবসের শিক্ষা
সাইয়িদ রফিকুল হক
মে-দিবসপালনের জন্য কোনো ঢাকঢোল পিটানোর প্রয়োজন নাই। আজকের দিনে সবাইকে শুধু শপথ নিতে হবে: আমরা যেন সামাজিক ও রাষ্ট্রিক জীবনে কখনও কোনো শ্রমিক-কর্মচারীকে না ঠকাই—নিজের স্বার্থে তাদের প্রতারিত না করি। আর তাদের সঙ্গে মানুষের মতো ব্যবহার করি। তাহলে, পৃথিবীতে মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ কমে আসবে। আর জয় হবে মানুষের—মানুষজাতির।
মানুষকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে মানুষের মতো হতে হবে। এই পৃথিবীতে এখন নিঃস্বার্থ-ভালোমানুষের বড়ই প্রয়োজন। পৃথিবীতে এখন মানুষের দুইটি পক্ষ—একদিকে মালিকপক্ষ অপরদিকে শ্রমিকপক্ষ। আজ অর্থের জোরে মালিকপক্ষ নিজেদেরই শুধু মানুষ ভাবছে। আর তারা অর্থবলে বলীয়ান হয়ে এখন গায়ের জোরে সর্বস্তরের শ্রমিকদের নির্যাতনের যাঁতাকলে ফেলে নিষ্পেষণ করছে। আর এভাবেই তারা রাষ্ট্রীয় ও সরকারি শক্তি ব্যবহার করে সাধারণ মানুষগুলোকে বারবার নিষ্পেষিত করছে—আর করছেই। এর কোনো প্রতিকার নাই।
শ্রমিকদের পক্ষে লোকদেখানো আর ভোটবৃদ্ধির চাপাবাজি বন্ধ করতে হবে। আর তাদের মানুষ ভেবে তাদের জন্য কাজ করতে হবে। এখন চারপাশে শ্রমিকদের জন্য কত মায়াকান্না! এসবই আমাদের দেশের সস্তা ও নোংরা রাজনীতি। এসব বাদ দিয়ে দেশের কর্তাব্যক্তিদের শুধু মানুষ হয়ে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের জন্য কিছু-একটা করে দেখাতে হবে। আর প্রতিবছর মে-দিবসে লোকদেখানো বাণীপ্রদানের ধাপ্পাবাজিও বন্ধ করে শ্রমিকদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আর শ্রমিকদের পাওনা ও ন্যায্য অধিকারবাস্তবায়ন করতে হবে। আর এগুলো শুধু কাগজে-কলমে নয়—বাস্তবে আর ব্যবহারিকভাবে তা করে দেখাতে হবে। শ্রমিক ব্যতীত পৃথিবীর উন্নতি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সমাজে-রাষ্ট্রে যেকোনো উন্নয়নের পূর্বশর্ত দক্ষশ্রমিকশক্তি। যাদের হাতে গড়ে উঠছে পৃথিবীর তাবৎ সভ্যতা—তাদের সঙ্গে করতে হবে মানবিক ব্যবহার।
এই দেশে এখন শ্রমিকদের ঠকানো নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারস্যাপার। মালিকপক্ষ সবসময় শ্রমিকদের ঠকিয়েছে আর এখনও ঠকাচ্ছে। এই অমানবিক, শয়তানী ও নিষ্ঠুর প্রথার অবসান ঘটাতে হবে। শ্রমিকের ঘামের পূর্ণমর্যাদা দিতে হবে। অর্থলোভী-মালিকদের পৈশাচিক আগ্রাসন মোকাবেলা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। দেশের সর্বস্তরের সাধারণ মেহনতী শ্রমিক-জনতার স্বার্থ দেখতে হবে রাষ্ট্রের। আর যারা এই অবহেলিত গরিব-দুঃখী মানুষকে ঠকাচ্ছে আর নিয়মিত প্রতারিত করছে—তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের সর্বাত্মক আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। রাষ্ট্রকে আজ এইসব মেহনতীমানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। রাষ্ট্রের স্বার্থে কারখানামালিকদের জুলুমনির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। মূলত দেশের স্বার্থে মালিকপক্ষকে হতে হবে সর্ববস্থায় মানবিক—আর শ্রমিকদের হতে হবে দায়িত্বশীল। তবেই দেশের মহাউন্নয়নের রোডম্যাপ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলবে। কিন্তু মনে রাখবেন: শ্রমিকদের ঠকিয়ে কেউ কখনও বড় হতে পারেনি আর পারবেও না।
জয় হোক মানুষের। জয় হোক মেহনতী শ্রমিক-জনতার।
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
পহেলা মে, মহান মে-দিবস
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মধু মঙ্গল সিনহা ০২/০৫/২০১৭সময় উপযোগী লেখা, অনেক ধন্যবাদ।
-
আব্দুল হক ০১/০৫/২০১৭শ্রমিকের অধিকার, হোক মোদের অঙ্গিকার!!