বিশ্বকবিতাদিবসে প্রার্থনা জাতির জীবনে জন্ম নিক কাব্যরসিক ও কবিতাপ্রেমী মানুষ
বিশ্বকবিতাদিবসে প্রার্থনা: জাতির জীবনে জন্ম নিক কাব্যরসিক ও কবিতাপ্রেমী মানুষ
সাইয়িদ রফিকুল হক
আজ বিশ্বকবিতাদিবস। জাতিসংঘের ইউনেস্কো-ঘোষিত অন্যান্য দিবসের মতো এটিও একটি দিবস। ২০০৮ সাল থেকে দিনটি বাংলাদেশে সাদামাটাভাবে পালিত হচ্ছে। তবে তা খুবই স্বল্পপরিসরে। আর এখনও এই দিনটির কথা অনেকে জানে না। আবার অনেকে এই নিয়ে মাথা ঘামাবার মতো সময়ও পায় না।
আমাদের দেশের মানুষের সব কাজে সময় হয়—শুধু সময় হয় না কবিতাপাঠে, কাব্যচর্চায়, আর সাহিত্যপাঠে। মানুষ এখন খুব ব্যস্ত। সকল কাজে তার ব্যস্ততা। আর কারও–কারও কোনো কাজ না থাকলেও সে অকাজে সময় কাটাবে কিংবা আজেবাজে-আলতুফালতু উপকরণের সাহায্যে সময়-অপচয় করবে। কিন্তু একটিবারের জন্যও সে একটি বই পড়বে না, আর সাহিত্যপাঠ করবে না।
এই দেশে এখন প্রায় সবাই জ্ঞানী। এদের কথা শুনলে মনে হয়—এরা কত যেন জানে! আর এরা এমন সব আজগুবি-কথা বলে যে তা শুনলে মনে হবে—এরা কোনো বিজ্ঞানী! আসলে, এইসব অপদার্থের কথার কোনো মাথামুণ্ডু নাই। এরা এমনই গোমূর্খ! কিন্তু ভাব দেখাবে সবজান্তার। অনেকে আবার ‘ইউটিউব’ দেখে-দেখে জ্ঞানী! এখানে, সস্তা কতকগুলো বাঁদরের কথাবার্তা কিংবা সস্তা-লোকের সস্তা-ওয়াজ-নসিহত শুনে এরা এখন সবজান্তা। কিন্তু এই পাষণ্ডগুলো জীবনে একটিবারের জন্যও একটি ভালো-বই কিনবেও না, আর তা পড়বেও না। এদের প্রধান খাদ্য ও আকর্ষণের বিষয় হলো—এদেশীয় কিংবা বিদেশী সস্তা-টিভি-চ্যানেলগুলো। এরা এসবকেই তাদের জীবনের সবকিছু জানার একমাত্র হাতিয়ার, মাধ্যম বা উপকরণ মনে করে থাকে। এগুলো দেখে নানারকম মূর্খের সস্তা-কথাবার্তা শুনে এরা দিন-দিন আরও বেশি মূর্খ হচ্ছে। আরও বেশি জাহেল কিংবা অজ্ঞ হচ্ছে। আর তারা এখানকার জাহেলদের ওয়াজ-নসিহত শুনে কথায়-কথায় মানুষকে বলছে—কাফের, নাস্তিক, মুরতাদ! তবুও এরা মানুষ হওয়ার জন্য জ্ঞানের আধার বইপুস্তক পড়বে না। তবুও এরা কবিতা পড়বে না, গল্প পড়বে না, প্রবন্ধ পড়বে না, আর ভ্রমণকাহিনী পড়বে না। এরা এমনই এক অধম আর নরপশু।
কথা হচ্ছে, কোনো দিবস ঘোষণা করে আমাদের কাব্যপাঠ করতে হবে না। কথাটা সত্য। কিন্তু আমাদের কাব্যপাঠকে এগিয়ে নিতেই আজ ইউনেস্কো এই ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে। যাতে, আমরা আমাদের কাব্য-সাহিত্যকে ভুলে না যাই। কারণ, যেকোনো দেশের কাব্য-সাহিত্য হচ্ছে তাদের চিন্তাভাবনার মূলভিত্তি বা মূলস্তম্ভ। তবুও এই জাতির বোধোদয় হবে না!
পড়ালেখা না-করে আর কোনোকিছু ভালোভাবে না-শিখে কথা বলাটা আমাদের দেশে এখন অনেকের অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। আর এইসব মূর্খের সংখ্যা দিনের-পর-দিন আরও বাড়ছে। ইউটিউবে একবার ঢুকলে বুঝা যায়—এই দেশে মূর্খ কতপ্রকার ও কী-কী! এই দেশের অনেক চিহ্নিত-মূর্খ এখন মাঠে-ঘাটে কতিপয় লোকের সামনে তাদের পরিবেশিত অতিসস্তা ওয়াজ-নসিহতগুলো এদেশের সাধারণ মানুষ ও মূর্খদের জন্য ‘ইউটিউবে’ ছেড়ে দিচ্ছে। আর এদেশের ‘অতিসস্তা-হুজুগে বাঙালি’ তা-ই মনের আনন্দে আর জিহাদীজোশে চেটে-চেটে পেটভরে খাচ্ছে। বস্তুতঃ এদের কোনো জ্ঞান নাই, ধর্ম নাই, চরিত্র নাই, সততা নাই, শিক্ষা নাই, দেশপ্রেম নাই, মানুষ আর মানবতার পক্ষে কোনোপ্রকার অবস্থানও নাই। আজ এরাও একপ্রকার জঙ্গি। এরা ধর্মান্ধ, মাতাল, গোঁড়া, পাঁড়, আর সাম্প্রদায়িক-নরপশু। আজ এরা মানুষকে সরাসরি বলতে শিখেছে: কাফের, নাস্তিক, মুরতাদ, বিধর্মী! এদের তাণ্ডবে দেশের প্রকৃত-শিক্ষিত মানুষ এবং সুধীসমাজ আজ দিশেহারা।
এই দেশে একসময় কবিতাপাঠের বিশেষ রেওয়াজ ছিল। সাহিত্যের মূলশাখাও কবিতা। আর কবিতার প্রতি ছিল শিক্ষিত-বাঙালির বিশেষ অনুরাগ। এই দেশে আমাদের সকল গণআন্দোলনে প্রেরণা জুগিয়েছে বাঙালি-কবিদের কবিতা ও গান। মানুষ ভালোবেসে একসময় কবিতাপাঠ করতো। বইয়ের দোকানে গিয়ে কবিতার বই কিনতো। আর দলবেঁধে কবিতাপাঠ ও কবিতার আলোচনা করতো। সেইসব দিন আমাদের আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের দেশের তরুণদের আবার গ্রন্থপ্রেমিক বানাতে হবে। আর তাদের কবিতামুখী-সাহিত্যমুখী করে গড়ে তুলতে হবে।
বিশ্বকবিতাদিবসে আজ আমাদের এই হোক অঙ্গীকার।
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
২১/০৩/২০১৭
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
রেজওয়ান উল হক জীবন ২২/০৩/২০১৭বাহ্!
-
মধু মঙ্গল সিনহা ২২/০৩/২০১৭অতি বাস্তব বলেছেন।
-
আব্দুল হক ২১/০৩/২০১৭সুন্দর কথা ! ভারী ব্যাথা মনে বন্দু! মনের কথা বলিতে ব্যাকুল!
-
মোঃআব্দুল্লাহ্ আল মামুন ২১/০৩/২০১৭ধন্যবাদ ।।
তথ্যটি সবার কাছে তুলে ধরার জন্য