ধর্ম মানুষের জন্য—শয়তানের জন্য নয়
ধর্ম মানুষের জন্য—শয়তানের জন্য নয়
সাইয়িদ রফিকুল হক
পৃথিবীতে ধর্ম নাজিল হয়েছে শুধু মানুষের জন্য, আর মানুষই ধর্ম আবাদ করবে। ধর্ম মানুষকে সুরুচির অধিকারী করে গড়ে তুলবে। কিন্তু আমাদের ধর্মের ভিতরে ঢুকে গেছে একশ্রেণীর শয়তান। এরা এখন ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ হয়ে মানবজাতির বিরুদ্ধে ধর্মবিষয়ক বিবিধ অপব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে পৃথিবীটাকে কলুষিত করে তুলছে। এদের কেউই ধার্মিক কিংবা মানুষ নয়। এরা শুধু দেখতে মানুষের মতো। আর এদের হাবভাব মানুষের মতো মনে হয়। কিন্তু এরা জন্মজন্মান্তরে একেবারে পশু। এদের মধ্যে সামান্য মানবিক মূল্যবোধ নাই। এই পশুরা ধর্মকে পুঁজি করে অন্য ধর্মের মানুষের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে। এরা মানুষ নয়, এরা মুসলমানও নয়, এরা সরাসরি শয়তান।
সাম্প্রতিককালে হিন্দু-মন্দির ও হিন্দুসম্প্রদায়ের উপর আঘাত ও আক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। আর একটা শ্রেণী এইব্যাপারে ভয়ানকভাবে বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছে। এরা পবিত্র ইসলামধর্মের নামে একদিকে স্বজাতি তথা মুসলমানদের হত্যা করছে। অপরদিকে ইসলামের নাম-ভাঙ্গিয়ে হিন্দুসম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার শুরু করেছে। এগুলো রাষ্ট্রের জন্য শুভ নয়। রাষ্ট্র এদের মতো পশুদের ব্যাপারে কোনোভাবেই নীরব-দর্শকের ভূমিকাপালন করতে পারে না।
অতিসম্প্রতি আমাদের দেশে ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ আরও কয়েকটি স্থানে হিন্দুদের মন্দির-মূর্তি-ভাংচুর করাসহ হিন্দুসম্প্রদায়ের উপর হামলা করেছে। এরা বাংলাদেশের শত্রু। এরা মুসলমান-নামধারী-নরপশু। এদের জন্য আমাদের রাষ্ট্রের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। আর এই পশুরা পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ইস্যুসৃষ্টির মাধ্যমে দেশের সংখ্যালঘু-সম্প্রদায়ের উপর হামলা করে আমাদের রাষ্ট্রের ভিত দুর্বল করে দিতে চাইছে। এদের এখনই শক্তহাতে দমন করা প্রয়োজন।
প্রত্যেকের স্ব-স্ব-ধর্মপালনের অধিকার রয়েছে। আর কারও ধর্মের উপরে বা যেকোনো ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানো মানবতাবিরোধী ও ধর্মবিরোধী অপকর্ম। ভিন্ন-ধর্মাবলম্বীদের উপর বাংলাদেশে আক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে রাষ্ট্রকে এখনই আরও শক্ত হতে হবে।
হিন্দুসম্প্রদায়ের উপর হামলাকারীরা বরাবর একই গোষ্ঠীভুক্ত। আর সবসময় এরা একই জিগির তুলে আর ইসলামের নাম ব্যবহার করে মূর্তি-মন্দির-ভাংচুর করে। আর ইসলামধর্মের নাম ব্যবহার করেই হিন্দুসম্প্রদায়ের উপর হামলা ও নির্যাতন চালায়। হিন্দুদের মূর্তি-ভাংচুরকারী এই গোষ্ঠীটি সেই ১৯৪৭ সাল থেকে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু-নির্যাতনে লিপ্ত। আর ১৯৭১ সালে এই পাপিষ্ঠচক্র পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বী হয়ে নজিরবিহীন হিন্দুনির্যাতনে লিপ্ত হয়েছিলো। সে-সব ইতিহাস দেশবাসীর জানা আছে। সেই পাপিষ্ঠচক্রের উত্তরাধিকারীরাই বর্তমানে নতুন লেবাসে হিন্দুনির্যাতনে শামিল হয়েছে। আর এদের চিরতরে রুখে দেওয়ার দায়িত্ব বাংলাদেশ-রাষ্ট্রের।
যারা হিন্দুসম্প্রদায়সহ দেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করেছে—তারা মুসলমান নয়। তারা লোকদেখানো আর নামধারী মুসলমান। এরা মুসলমানের পরিচয়ে আমাদের ইসলামধর্ম ও রাষ্ট্রকে মানবসমাজে কলংকিত করতে চায়। তাই, আমাদের সমাজ-রাষ্ট্র থেকে এদের বের করে দিতে হবে।
ধর্ম মানুষের জন্য—শয়তানের জন্য নয়। আমাদের পবিত্র ধর্মে শয়তানের কোনো স্থান নাই। আর এই শয়তানগুলো জোরপূর্বক আমাদের ধর্মে ও রাষ্ট্রে ঢুকেছে। তাই, এই শয়তানগুলোকে আমাদের ধর্ম ও রাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে হবে। তবেই আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত সমাজ ও রাষ্ট্র গড়তে পারবো।
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
০৪/১১/২০১৬
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
মোনালিসা ১১/১১/২০১৬ভাল
-
আনিসা নাসরীন ০৫/১১/২০১৬যার যার ধর্ম নিয়ে তাদের শান্তিতে থাকতে দেওয়া উচিত।
-
আব্দুল হক ০৪/১১/২০১৬ভালো