আগস্ট বড় বেদনাদায়ক---অনেক কথা মনে পড়ে যায়
আগস্ট বড় বেদনাদায়ক। অনেক কথা মনে পড়ে যায়!
সাইয়িদ রফিকুল হক
ছোট্ট একটা বাড়ি। আর এই বাড়িটা দখলমুক্ত করতে এর বাসিন্দারা অকাতরচিত্তে জীবন দিয়েছে। মাত্র ৫৬হাজার বর্গমাইলের জন্য জীবন দিয়েছে ৩০লক্ষ মানুষ! আরও জীবন দেওয়ার জন্য তারা প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তার আগেই বাঙালি-জাতির চিরশত্রু পাকিস্তানীনরপশুরা মাথানিচু করে মাফ চেয়ে বদ্বীপ-বাড়িটা ছেড়ে পালিয়েছে।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানীহানাদারবাহিনী নামক পৃথিবীর সর্বকালের সর্বকুখ্যাত নরপশুগং গায়ে পড়ে বাঙালি-জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিলো—তাও একেবারে রাতের আঁধারে—আর চোরের মতো। ঘুমন্ত-মানুষের বিরুদ্ধে পৃথিবীর বুকে এমন শয়তানীআগ্রাসন আর নাই।
এই ৫৬হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট বাড়িটা ধ্বংস করার জন্য পৃথিবীর কুখ্যাত শয়তানরাষ্ট্রগুলো সেদিন একজোট হয়েছিলো। আর পাকিস্তান নামক শয়তানরাষ্ট্রটিকে সবরকমের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলো সেদিনের আমেরিকা-চীন। আর পাকিস্তানকে শত-শত কোটি টাকা দিয়ে সাহায্য করছিলো আরবরাষ্ট্র—সৌদিআরব।
তবুও সেদিন এই বাড়ির লোকেরা মনোবল হারায়নি। তাদের মধ্যে কোনোপ্রকার ভয়ভীতিও দেখা দেয়নি। বিশ্বের পরাশক্তি আমেরিকা-চীন পাশে থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান নামক একটি শয়তানরাষ্ট্র (আমেরিকা-চীনের) সর্বাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়েও বাঙালির সামনে দাঁড়াতে পারেনি। পাকিস্তানীরা আসলে কাপুরুষ—আর সবসময় নির্লজ্জ লম্পট।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ-ত্যাগ করার আগে আর নিজেদের পরাজয় আঁচ করতে পেরে পাকিস্তানীজানোয়াররা বাংলাদেশের ব্রিজ-কালভার্ট থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ, মানুষের ঘরবাড়ি, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ইত্যাদি নির্বিচারে ধ্বংস করতে শুরু করে দেয়। কিন্তু তবুও তাদের পরাজয় ঠেকাতে পারেনি। এতেও বাঙালির মনোবল ভাঙেনি। তারা ছিল দুর্বার আর দুর্দান্ত-দৃঢ়চেতা।
এভাবেই একদিন (১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর) পাকিস্তান নামক শয়তানরাষ্ট্র নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চেয়ে বাংলাদেশরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে যায়। অবশেষে বাড়িটি শত্রুমুক্ত হয়। কিন্তু রয়ে যায় ঘাপটিমেরে থাকা বড়সড় কতকগুলো শয়তান। এরা আবার গোপনে-গোপনে শুরু করে দেয় তাদের শয়তানীষড়যন্ত্র।
একদিন পাকিস্তান নামক শয়তানরাষ্ট্রের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে এলেন বাড়ির কর্তা-পিতা। এমন একজন পিতাকে পেয়ে বাড়ির মানুষজন আনন্দে উদ্বেলিত হলো। তাদের এই আনন্দের মাঝেই ষড়যন্ত্রের জালবিস্তার করতে থাকে মীরজাফরের বংশধররা।
১৯৭১ সালে জাতির পিতা যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই শুধু নাই আর নাই! ব্রিজ নাই, কালভার্ট নাই, খাদ্য নাই, হাসপাতাল নাই, স্কুল-কলেজ ঠিক নাই—এমনকি মাঠে ফসলও নাই। তিনি পায়ে হেঁটে, গাড়িতে চড়ে যেখানে গিয়েছেন, সেখানেই যুদ্ধবিধ্বস্তদেশে শুধু নাই আর নাই। আর চারিদিকে শুধু মানুষের হাহাকার! এর মধ্যেও আছে আবার সেই পরাশক্তি-রাষ্ট্রগুলোর ভয়ানক ষড়যন্ত্র। তবুও এই বাড়ির পিতা ভেঙ্গে পড়েননি—আর একটুও মনোবল হারাননি। একদিকে ষড়যন্ত্র আরেকদিকে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন তিনি। ভিতরে-ভিতরে, ভিতরে-বাইরে আবার সেই কালসাপ! একাত্তরের পরাজিতশত্রুরা সব একজোট হয়েছে! তবুও পিতা এগিয়ে যাচ্ছেন পরম নির্ভাবনায়!
(চলবে)
সাইয়িদ রফিকুল হক
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
০১/০৮/২০১৬
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সোলাইমান ১৫/০৯/২০১৬শুনলাম বেশ তো।
-
শাহানাজ সুলতানা (শাহানাজ) ১৪/০৮/২০১৬ভালো লাগলো
-
অঙ্কুর মজুমদার ১৪/০৮/২০১৬vlo.
-
স্বপ্নময় স্বপন ১৪/০৮/২০১৬ভালো!