www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমার শৈশব ৪

আমার শৈশব – ৪

মাঝে মাঝে আমরা সেই রামকৃষ্ণ রোডের ফ্ল্যাটে কিছু মজার খেলা খেলতাম।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো সবাই মিলে। যে যা পারতাম, গান, আবৃত্তি, নাচ, কৌতুক অভিনয় এসব। সিঁড়ির চাতাল টা হত রঙ্গমঞ্চ আর সিঁড়িগুলো হত গ্যালারী। নিজেরাই অদ্ভুত সাজে সাজতাম। বুড়ো মানুষের অভিনয় করার চেয়ে ওই সাজটার ওপর সবারই ঝোঁকটা বেশি থাকতো। পাট দিয়ে পাকাচুল আর দাড়ি... কচি মুখে... সে এক মজার দৃশ্য! আর মায়েদের শাড়ি নিয়ে , সেটাকে দড়ির ওপর কুঁচি দিয়ে বেঁধে চট জলদি এক একটি ঘাগরা বানিয়ে জিপসি সাজটাও খুব লোভনীয় ছিল। আর রঙ পেন্সিল জলে গুলে মুখের সাজগোজ। সত্যিকারের প্রসাধনী বলতে ছিল একমাত্র ঘরে বানানো কাজল। বৃষ্টির দিন গুলোতে এই খেলা আমাদের খুব প্রিয় ছিল।

আর মাঝে মাঝে আমরা নিজেরাই নিজেদের মধ্যে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করতাম। নিজেদের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে, চাঁদা তুলে প্রাইজের ব্যবস্থা করতাম। ভাবখানা এমন যে, আমরা বড় হয়ে গেছি সুতরাং আমরাও অনেক কিছু করতে পারি বড়দের মত। প্রথম , দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারিদের প্রাইজ হত যথাক্রমে স্কেল, পেন্সিল আর চৌকোণা ইরেজার। না পেলেও দুঃখ হতোনা বরং এই যে নিজেরা নিজেরা সব করছি ভেবে একটা অদ্ভুত আনন্দ হত।

আর ছিল পুতলের জন্মদিন। যার পুতুলের জন্মদিন, তার বাড়িতে সবাই দল বেঁধে যেতাম। জল খাবারের নেমন্তন্ন থাকত। নিজেরাই উপহার বানিয়ে নিয়ে যেতাম পুতুলের জন্য। কখনো কখনো কোনও বড় দিদি পুতুলের জন্য ছোট্ট জামা বানিয়ে দিতেন...। পুতুল তো আর এখনকার বারবি ডল ছিল না... আমরা নিজেরাই বানাতাম। কাপড় ভাঁজ করা পুতুল আর মাটির পুতুল বানিয়ে নিতাম নিজেরাই। আর কেনা পুতুলের মধ্যে ছিল কাঠের পুতুল আর প্লাস্টিকের পুতুল। আর মাঝে-সাঝে কেউ কেউ হয়ত একটা বিদেশী পুতুল উপহার হিসেবে পেয়ে গেলে তো আর কোনও কথাই নেই।

আর একটা খেলাও খুব প্রিয় ছিল। মিছিল মিছিল খেলা। পুরনো খাতার মলাট দিয়ে প্ল্যাকার্ড বানিয়ে তাতে ‘আমাদের দাবী মানতে হবে’ এসব লিখে স্লোগান দিতে দিতে মাঠের চার পাশে ঘুরে বেড়াতাম। ইস তখন কি জানতাম যে, দাবী কখনও পূরণ হয়না!
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ১৩১২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • খুবই নষ্টালজিক।সহজ সরল সাধারণ লেখনীতে অসাধারণ শৈশব ফুটিয়ে তুলেছেন।সত্যিই খুব আনন্দের শৈশব আপনার।
  • সেই দিন কি ভুলে থাকা যায়? যায় না। অতীত বার বার মনে দোলা দিয়ে যায়।
    • স্বাতী বিশ্বাস ২৮/০৯/২০১৩
      আমার জীবন থেকে এক একটা বছর যত কমে আসছে ততই এই সব দিন কাল গুলো ফিরে ফিরে আসছে। তাই লিখে রাখছি। আর তোমরা পড়ছ , সেটাতেই আমার আনন্দ। ভাল থেকো ভাই :)
  • Înšigniã Āvî ২৭/০৯/২০১৩
    খুব ভাল লাগছে পড়তে, শেষের কতগুলো অনবদ্য...

    ছোটবেলার দিনগুলো সত্যি কত রঙিন এখনো ভাবি যদি কোনও উপায়ে ফেরা সম্ভব হতো ।
    • স্বাতী বিশ্বাস ২৮/০৯/২০১৩
      ফিরতে পারবো না জেনেই তো স্মৃতিতে বার বার পাক খেয়ে যাই। কি ভালোই না ছিল সেই সব দিন। :)
    • Înšigniã Āvî ২৭/০৯/২০১৩
      'শেষের কথাগুলো অনবদ্য' লিখতে চেয়েছিলাম,

      Sorry for the typing mistake :(
  • Mihir Bhandary ২৭/০৯/২০১৩
    Bhisan bhisan bhalo laglo.Ami jeno kayek muhuter jonya chhoto belate phire gelam.Thank you so much didi>
    • স্বাতী বিশ্বাস ২৮/০৯/২০১৩
      সবারই একটা ছোটবেলা থাকে। আর সেটা তো জীবনের সেরা সময়। তাই তাঁকে ভোলা যায়না। অনেক ধন্যবাদ লেখা পড়ে উৎসাহিত করার জন্য।
 
Quantcast