একটি কম্পিউটারের আত্মকাহিনী (২৫) ও একটি হাটের আত্মকাহিনী (২৪)
একটি কম্পিউটারের আত্মকাহিনী (২৫)
আমি একটি কম্পিউটার। যাকে বলে ডেস্কটপ কম্পিউটার। আমার জন্ম ১০ বছর আছে। বিভিন্ন দেশের তৈরী পার্টস একত্রে সংগ্রহ করে ১০ বছর আগে আমাকে তৈরী করা হয়েছে। আমার আছে একটি বড় বাস্ক যাকে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (সিপিইউ) বলে। এটা আমি টেবিলের এক পাশে রাখি। রয়েছে একটি মনিটর যা দেখেতে টিভির মত। মনিটর আমি টেবিলের মাঝখানে রেখেছি। আমার রয়েছে একটি পুরানো দিনের কীবোর্ড। খুবই বড় কীবোর্ড। এই কীবোর্ডে ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলা অক্ষর রয়েছে। ফলে সেই কীবোর্ড দিয়ে বাংলা লেখা সহজ।
আমার মালিকের একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ছিলো। সেই সেন্টারে আমাকে ব্যবহার করা হতো। শত শত ছাত্র-ছাত্রী আমাকে ব্যবহার করেছে। আমার মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী এমএস (মাইক্রোসফট) অফিস (ওয়ার্ড, এক্সেল, এক্সেস, পাওয়ার পয়েন্ট)-এর উপর ট্রেনিং নিয়ে এখন চাকরী করছেন। এই অবদানের জন্য আমি গর্বিত। আমার মাধ্যমে একজন বেকার যুবক যখন চাকরী পায় তখন আমার স্বর্গীয় আনন্দ অনুভূত হয়। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রাণভরে দোয়া করি। আমার এখানে অনেক বেকার যুবক আসে বাইও-ডাটা বা কারিকুলাম ভিটা করার জন্য। আমি তাদের জন্য সুন্দর করে এ কাজ করে দেই। এর জন্যও অনেকে ভালো চাকরী পেয়েছেন। তখনও আমার মন আনন্দে ভরে যায়। আমার জন্য যখন একজন মানুষের জীবনে কোন গতি হয় তখন আনন্দে আমার মনটা ভরে যায়।
আমার মালিক বাংলাদেশে ছোট-খাটো একজন লেখক-কবি বলে নিজেকে দাবী করেন। এখন তিনি সারাদিন আমার মাধ্যমে কবিতা লিখেন, উপন্যাস লিখেন। লেখাগুলো কখনো ফেসবুকেও ছেড়ে দেন। কিন্তু দু:খের বিষয়, মানুষের সারা তেমন একটা পান না। তার দু:খ হয়, মানুষ এখন সাহিত্য পছন্দ করেন না। ফেসবুকে একটা ছবি দিলে লাইক-এর বন্যা বয়ে যায়, অথচ কষ্ট করে লেখা একটি সাহিত্যের তেমন একটা কদর নেই বললেই চলে। এতে করে লেখকরা উৎসাহিত বোধ করেন না। যে দেশে লেখকের মূল্য নেই সেই দেশে লেখক জন্মায় না। একটা আমার কথা না, মহামনিষীদের কথা। তো যাই হোক, আমার মালিক কিন্তু ছেড়ে দেয়ার লোক না। উনি সারাদিন লিখেন। কি যে লিখেন একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। গেল একুশে বই মেলায় আমার মালিকের একটি বই প্রকাশিত হয়েছিলো। আমার সি ড্রাইভে বই-এর পান্ডুলিপিটা এখনও আছে। কিন্তু বইটা তেমন সারা জাগাতে পারেনি পাঠক মহলে। তারপরেও তিনি লিখে চলেছেন। আর আমি আছি তার সাথে। একদিন আমার মালিক দেশের বড় লেখক হয়ে গেলে আমার সম্মান অনেক বাড়বে। সেই আশায় শেষ করলাম।
একটি হাটের আত্মকাহিনী (২৪)
আমি একটি হাট। আমার বয়স ১০০ বছর। আমার জন্ম সেই বৃটিশ আমলে। অর্থাৎ এ উপমহাদেশে যখন সাদা সাহেবরা ছিলো তখন। পরে পাকিস্থান আমল গেছে এবং এখন বাংলাদেশ আমল। বছরের পর বছর গেছে এবং আমার গুণগত পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করার মত। আগে কম মানুষ ছিলো, এখন অনেক মানুষ বেড়েছে। আগে ঘর ছিলো না, এখন পাকা দালান হয়েছে ও এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্রেতা বিক্রেতাদের আচার-আচরন।
এই হাটে সবকিছু পাওয়া যায়। শাক-সজবি, মুদি আইটেম থেকে ধরে এমন কোন কিছু নাই যা এই হাটে পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় হাঁস-মুরগী, গরু-বাছুর ও কবুতর। পাওয়া যায় ছাগল-ভেড়া। শুক্রবার ও সোমবার এই হাট বসে। এটা একটা ঐতিহ্যবাহী হাট। হাটের চারিদিক থেকে এই হাটে মানুষ আছে। এই হাটটি একটি নদীর পাড়ে অবস্থিত। নদী দিয়ে নৌকাযোগে অনেক মানুষ আসে তাদের পণ্য নিয়ে।
এই হাটে আছে একটা প্রকান্ড বটগাছ। এই বটগাছে পাখিরা এসে বাঁধা বাধে। ক্লান্ত পথিক এই বটগাছের নীচে বসে তার হৃদয় জুড়ায়। এই বটগাছের নীচে ডিম বিক্রি হয়। পাশে বিক্রি হয় হাঁস-কবুতর। এই বটগাছটা আমার ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে। এই গাছটি আগে যেমন ছিলো এখনও তেমনই আছে। হাটের সব কিছুর পরিবর্তন হলেও এই বটগাছের কোন পরিবর্তন হয় নি। বটগাছটি যতই দেখি ততই বিস্মৃতির তলে আবার তলিয়ে যাই।
এই হাটটি একটি পারিচালনা কমিটির দ্বারা পরিচালিত। কমিটির সদস্যদের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। হাটের সকল সিদ্ধান্ত গনতান্ত্রিকভাবে হয়। এখানে গনতন্ত্রের চর্চা দেখে আমি অভিভূত হয়ে যাই। সারা বাংলাদেশ যদি এভাবে গনতান্ত্রিকভাবে চলতো তবে বাংলাদেশটা একটা স্বর্গে পরিনত হতো, তা বলতেই পারি।
আমি একটি কম্পিউটার। যাকে বলে ডেস্কটপ কম্পিউটার। আমার জন্ম ১০ বছর আছে। বিভিন্ন দেশের তৈরী পার্টস একত্রে সংগ্রহ করে ১০ বছর আগে আমাকে তৈরী করা হয়েছে। আমার আছে একটি বড় বাস্ক যাকে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (সিপিইউ) বলে। এটা আমি টেবিলের এক পাশে রাখি। রয়েছে একটি মনিটর যা দেখেতে টিভির মত। মনিটর আমি টেবিলের মাঝখানে রেখেছি। আমার রয়েছে একটি পুরানো দিনের কীবোর্ড। খুবই বড় কীবোর্ড। এই কীবোর্ডে ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলা অক্ষর রয়েছে। ফলে সেই কীবোর্ড দিয়ে বাংলা লেখা সহজ।
আমার মালিকের একটি কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ছিলো। সেই সেন্টারে আমাকে ব্যবহার করা হতো। শত শত ছাত্র-ছাত্রী আমাকে ব্যবহার করেছে। আমার মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী এমএস (মাইক্রোসফট) অফিস (ওয়ার্ড, এক্সেল, এক্সেস, পাওয়ার পয়েন্ট)-এর উপর ট্রেনিং নিয়ে এখন চাকরী করছেন। এই অবদানের জন্য আমি গর্বিত। আমার মাধ্যমে একজন বেকার যুবক যখন চাকরী পায় তখন আমার স্বর্গীয় আনন্দ অনুভূত হয়। আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রাণভরে দোয়া করি। আমার এখানে অনেক বেকার যুবক আসে বাইও-ডাটা বা কারিকুলাম ভিটা করার জন্য। আমি তাদের জন্য সুন্দর করে এ কাজ করে দেই। এর জন্যও অনেকে ভালো চাকরী পেয়েছেন। তখনও আমার মন আনন্দে ভরে যায়। আমার জন্য যখন একজন মানুষের জীবনে কোন গতি হয় তখন আনন্দে আমার মনটা ভরে যায়।
আমার মালিক বাংলাদেশে ছোট-খাটো একজন লেখক-কবি বলে নিজেকে দাবী করেন। এখন তিনি সারাদিন আমার মাধ্যমে কবিতা লিখেন, উপন্যাস লিখেন। লেখাগুলো কখনো ফেসবুকেও ছেড়ে দেন। কিন্তু দু:খের বিষয়, মানুষের সারা তেমন একটা পান না। তার দু:খ হয়, মানুষ এখন সাহিত্য পছন্দ করেন না। ফেসবুকে একটা ছবি দিলে লাইক-এর বন্যা বয়ে যায়, অথচ কষ্ট করে লেখা একটি সাহিত্যের তেমন একটা কদর নেই বললেই চলে। এতে করে লেখকরা উৎসাহিত বোধ করেন না। যে দেশে লেখকের মূল্য নেই সেই দেশে লেখক জন্মায় না। একটা আমার কথা না, মহামনিষীদের কথা। তো যাই হোক, আমার মালিক কিন্তু ছেড়ে দেয়ার লোক না। উনি সারাদিন লিখেন। কি যে লিখেন একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। গেল একুশে বই মেলায় আমার মালিকের একটি বই প্রকাশিত হয়েছিলো। আমার সি ড্রাইভে বই-এর পান্ডুলিপিটা এখনও আছে। কিন্তু বইটা তেমন সারা জাগাতে পারেনি পাঠক মহলে। তারপরেও তিনি লিখে চলেছেন। আর আমি আছি তার সাথে। একদিন আমার মালিক দেশের বড় লেখক হয়ে গেলে আমার সম্মান অনেক বাড়বে। সেই আশায় শেষ করলাম।
একটি হাটের আত্মকাহিনী (২৪)
আমি একটি হাট। আমার বয়স ১০০ বছর। আমার জন্ম সেই বৃটিশ আমলে। অর্থাৎ এ উপমহাদেশে যখন সাদা সাহেবরা ছিলো তখন। পরে পাকিস্থান আমল গেছে এবং এখন বাংলাদেশ আমল। বছরের পর বছর গেছে এবং আমার গুণগত পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করার মত। আগে কম মানুষ ছিলো, এখন অনেক মানুষ বেড়েছে। আগে ঘর ছিলো না, এখন পাকা দালান হয়েছে ও এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্রেতা বিক্রেতাদের আচার-আচরন।
এই হাটে সবকিছু পাওয়া যায়। শাক-সজবি, মুদি আইটেম থেকে ধরে এমন কোন কিছু নাই যা এই হাটে পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় হাঁস-মুরগী, গরু-বাছুর ও কবুতর। পাওয়া যায় ছাগল-ভেড়া। শুক্রবার ও সোমবার এই হাট বসে। এটা একটা ঐতিহ্যবাহী হাট। হাটের চারিদিক থেকে এই হাটে মানুষ আছে। এই হাটটি একটি নদীর পাড়ে অবস্থিত। নদী দিয়ে নৌকাযোগে অনেক মানুষ আসে তাদের পণ্য নিয়ে।
এই হাটে আছে একটা প্রকান্ড বটগাছ। এই বটগাছে পাখিরা এসে বাঁধা বাধে। ক্লান্ত পথিক এই বটগাছের নীচে বসে তার হৃদয় জুড়ায়। এই বটগাছের নীচে ডিম বিক্রি হয়। পাশে বিক্রি হয় হাঁস-কবুতর। এই বটগাছটা আমার ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে কাজ করেছে। এই গাছটি আগে যেমন ছিলো এখনও তেমনই আছে। হাটের সব কিছুর পরিবর্তন হলেও এই বটগাছের কোন পরিবর্তন হয় নি। বটগাছটি যতই দেখি ততই বিস্মৃতির তলে আবার তলিয়ে যাই।
এই হাটটি একটি পারিচালনা কমিটির দ্বারা পরিচালিত। কমিটির সদস্যদের মধ্যে সুসম্পর্ক রয়েছে। দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। হাটের সকল সিদ্ধান্ত গনতান্ত্রিকভাবে হয়। এখানে গনতন্ত্রের চর্চা দেখে আমি অভিভূত হয়ে যাই। সারা বাংলাদেশ যদি এভাবে গনতান্ত্রিকভাবে চলতো তবে বাংলাদেশটা একটা স্বর্গে পরিনত হতো, তা বলতেই পারি।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ন্যান্সি দেওয়ান ১০/০৭/২০২১Good
-
মো.রিদওয়ান আল হাসান ০৯/০৭/২০২১ভালো লাগলো বেশ।
-
রেদওয়ান আহমেদ বর্ণ ০৯/০৭/২০২১অসাধারণ লিখেছেন প্রিয় কবি
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ০৯/০৭/২০২১নাইস