সমবায় ভাবনা (১৪-২২)
সমবায় ভাবনা (১৪)
পেনশন বেনিফিট স্কীম : ঢাকা ক্রেডিটের একটি যুগান্তকারী সঞ্চয়ী প্রোডাক্ট
-স্বপন রোজারিও
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) ইতোমধ্যে বাংলাদেশের একটি অনুকরণীয় মডেল ক্রেডিট ইউনিয়ন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট ও প্রকল্প নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সদস্যদের পাশে থেকেছে সদা-সর্বদাই। ইদানিং ঢাকা ক্রেডিট নিয়ে এসেছে আরও একটি আকর্ষণীয় ও যুগান্তকারী সঞ্চয়ী প্রোডাক্ট ‘পেনশন বেনিফিট স্কীম’ বা পিবিএস। অবসরকালীন সময়ে কোন ব্যক্তিকে যাতে অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে বরং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন প্রশান্তিময় জীবন যাপন করতে পারেন সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এই স্কীমটি ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে। ক্রেডিট ইউনিয়নের জন্য এটি একেবারেই একটি নতুন ধারনা। ধারনা করি, ঢাকা ক্রেডিট ছাড়া বাংলাদেশের কোন ক্রেডিটই এই ধরনের সঞ্চয়ী প্রোডাক্ট চালু করে নি, এই দিক বিশ্লেষণে ঢাকা ক্রেডিটকে এ বিষয়ে পাইওনিয়ারের মর্যাদাও প্রদান করা যেতেই পারে। এখানে ‘পেনশন বেনিফিট স্কীম’ বা পিবিএস সম্পর্কে কিছু কথা বলার প্রয়াস পাচ্ছি।
এই হিসাবটির দুইটি পর্যায় রয়েছে। একটি জমা পর্যায় এবং একটি সুবিধা পর্যায়। জমা পর্যায়ে হিসাবধারী মাসিক হারে টাকা জমা প্রদান করবেন এবং সুবিধা পর্যায়ে হিসাবধারী মাসিক হারে সুবিধা প্রাপ্য হবেন। এটাও একটি নতুন ধারনা বলে বিবেচিত হচ্ছে। কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাধারণত: কোন সঞ্চয়ী প্রোডাক্টের টাকা আমানতকারীকে একবারে প্রদান করে থাকে। একবারে টাকা পেলে সেই টাকা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এই স্কীমের টাকাটা মাসে মাসে পেলে তা মানুষের জন্য বেশী উপকারী।
এই হিসাবটি খুবই লাভজনক। এখানে ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা এবং হাজারে গুণিতক হারে সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক হারে জমা প্রদান করা যায়। একজন হিসাবধারী ৬ বছর ৫০০ টাকা মাসিক হারে জমা প্রদান করলে পরবর্তীতে ৪ বছর মাসে মাসে ১১৩৮ হারে টাকা প্রাপ্য হবেন. এভাবে একজন হিসাবধারী ৩০ বছর ২৫,০০০ টাকা মাসিক হারে জমা প্রদান করলে পরবর্তীতে ২০ বছর মাসে মাসে ৩,৮২,২৭৫ টাকা হারে প্রাপ্য হবেন।
১৮-৬৫ বছর পর্যন্ত যে কোনো সঞ্চয়ী হিসাবধারী নির্ধারিত আবেদনপত্র পূরণ করে এক বা একাধিক হিসাব খুলতে পারবেন। এই হিসাবে প্রতি মাসে অথবা অগ্রিম হিসাবে টাকা জমা প্রদান করা যাবে। এই হিসাবে কোন মাসে জমা প্রদান না করা হলে জরিমানা দিতে হবে না তবে হিসাবের মেয়াদ পূর্তি ১ মাস পিছিয়ে যাবে। অন্যান্য সঞ্চয়ী হিসাবের মত এই হিসাবের জমাকৃত অর্থ নিজস্ব সাধারণ ঋণ অথবা পরিবারের যে কোনো একজনের ঋণের বিপরীতে জামিন প্রদান করা যায় এবং এ স্কীমের বিপরীতে জমার ৯০% ঋণ গ্রহণ করা যায় এবং ঋণের সুদের হার মাত্র ১২%।
১ বৎসর পর জমা বা সুবিধা চলাকালীন সময় হিসাবটি বন্ধ করা হলে নির্ধারিত হারে সরল সুদ প্রদান করা হবে। এই হিসাবধারীর মৃত্যু হলে নির্ধারিত সুদ প্রদান করা হবে। হিসাবের জমা ২৫% সম্পন্ন হওয়ার পর অথবা সুবিধা চলাকালীন সময়ে হিসাবধারীর মৃত্যু হলে তাঁর উত্তরাধীকারী (নমিনী) নিজ নামে সুদ সমেত হিসাবটি পরিচালনা করতে পারবেন। এটা একটি ব্যতিক্রমধর্মী সুযোগ যা শুধু এই সঞ্চয়ী প্রোডাক্টেই আছে।
সঞ্চয় মানুষের বিপদের দিনের বন্ধু। মানুষের জীবনে যত বেশী সঞ্চয় থাকে, সেই মানুষের জীবন তত বেশী নিরাপদ ও শক্তিশালী হয়। সুতরাং সঞ্চয় মানুষকে করতেই হবে। আর এই সঞ্চয় হোক ঢাকা ক্রেডিটের ‘পেনশন বেনিফিট স্কীম’ বা পিবিএস-এর মাধ্যমেই।
সমবায় ভাবনা (১৫)
সমবায়ের সপ্ত মূলনীতি
সমবায়ের ৭টি মূলনীতি রয়েছে। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের ’রচডেল সোসাইটি অব ইক্যুটেবল পাইওনিয়ারস’ এর ’বন্ধু সমাজ বা সমবায়ী সমাজ’ গঠনের প্রথম সফল ’রসডেল সমবায়ী মূলনীতি’র আলোকে পরিবর্তিত সংস্করণ এই মূলনীতিসমূহ। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট ইউনিয়নের জাতীয় সংগঠন ‘দি ক্রেডিট ইউনিয়ন ন্যাশনাল এসোসিয়েশন (সিইউএনএ)’ সাতটি মূলনীতি প্রকাশ ও ব্যাখ্যা করে। সমবায়ের ৭টি মূলনীতি হল-
(১) স্বেচ্ছা ও উন্মুক্ত সদস্যপদ: সমবায়ের সদস্যপদ নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত এবং সমবায়ে সবার অধিকার সমান। কোন সমবায় সমিতির কর্মএলাকাভূক্ত ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া কোন দরিদ্র মানুষও যদি ঐ সমবায়ের সদস্য হতে চায় তবে তাকে অবশ্যই সদস্যপদ প্রদান করতে হবে, তাকে কোন প্রকার উছিলায়ই সদস্যপদ প্রদান থেকে বিরত করা যাবে না।
(২) গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ: সমবায়ের মালিক এর সদস্যগণ। সমবায়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে গণতন্ত্রের ছোঁয়া থাকা অত্যাবশ্যক। নির্বাচন, বার্ষিক সাধারণ সভা ও অন্যান্য সভাসহ সবকিছুতে থাকতে হবে গণতন্ত্র চর্চা। কোন নারী বা দরিদ্র সদস্যকে কোন প্রকারেই নির্বাচন বা বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা যাবে না। সমবায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্তে থাকতে হবে গণতন্ত্রের সরব উপস্থিতি।
(৩) অর্থনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ: সমবায়ীদের অর্থনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি মাসে টাকা জমা দিতে হবে, তা শেয়ারে ও সঞ্চয়ে হতে পারে। এই টাকা সমিতি বিনিয়োগ করে সদস্যদের লভ্যাংশ প্রদান করবে। এইভাবে অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে। সমাজ ও দেশ হবে সমৃদ্ধ। অর্থনৈতিক লেনদেন ছাড়া সমবায় চলে না।
(৪) স্বাধীন ও পৃথক সত্তা: সমবায়ের একটি পৃথক ও আইনগত সত্তা রয়েছে যা দিয়ে সমবায়কে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা করা যায়। ইহা একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানও বটে। এই প্রতিষ্ঠানের নামে থাকবে সীলমোহর ও অফিস লেটার হেড। এর আইনগত ভিত্তি থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি তার নামে মামলা পরিচালনা করতে পারবে এবং অন্য প্রতিষ্ঠানও সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে।
(৫) শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও তথ্য সরবরাহ: সমবায়ে একটি ধারাবাহিক প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা থাকা আবশ্যক। সমবায়ে থাকবে ধারাবাহিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা। থাকবে তথ্য প্রবাহ। সমবায়ীদের প্রতিনিয়ত শিক্ষা সেমিনারের মাধ্যমে সমবায়ী শিক্ষা প্রদান করতে হবে। সমবায়ের সাথে যুক্ত সবাইকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। সমবায়কে শুধুই লেনদেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে তা বেশীদিন টেকসই হবে না।
(৬) সমবায়ী অংশগ্রহণ: সমবায়ে অংশগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমবায়ে সদস্যরা আর্থিক কর্মকান্ডসহ অন্যান্য কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। একজন ভালো সমবায়ীকে অনুসরন করে অন্য মানুষ সমবায়ের সদস্য হয়। একটি ভালো সমবায়কে অনুসরন করে একটি নতুন সমিতি প্রতিষ্ঠা হয়। এভাবে চলতে চলতে সমবায় বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ও জাতীয় সমিতির মাধ্যমে সমিতিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বময় এবং এতে উপকৃত হচ্ছে সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
(৭) সমাজের জন্য চিন্তা: সমবায় সদস্যদের সমগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। কোন সমাজের মানুষের সম্পূর্ণ টেকসই উন্নয়ন করাই সমবায়ের মূল্য লক্ষ্য। একটি সমাজ যখন সমবায়ের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অর্জন করে তখন তা সারা দেশসহ বিশ্বে জালের মত বিস্তার লাভ করে।
সমবায় ভাবনা (১৬)
আজ ঢাকা ক্রেডিটের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
আজ দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) এর ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আজ থেকে ৬৬ বছর আগে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসি-এর হাত ধরে মাত্র ৫০ জন সদস্য নিয়ে ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দিনটি ছিলো ৩রা জুলাই ১৯৫৫। আজকের দিনে আমরা ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তিনি এদেশে না আসলে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলন শুরুই হতো না। শুধু ঢাকা ক্রেডিট নয়, ধর্মপল্লী পর্যায়ে সকল ক্রেডিট ইউনিয়ন গঠনে ফাদারের অবদান রয়েছে।
সমবায় ভাবনা (১৭)
(আজ ৩ জুলাই। আজ ঢাকা ক্রেডিটের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভ দিনে বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের জনক ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসি সম্পর্কে দু’চারটি কথা বলার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস)
ফাদার ইয়াং : ক্রেডিট ইউনিয়নের অগ্রদূত
১। ভূমিকা
ফাদার চার্লস ইয়াং, সিএসসি ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ৩ মে তারিখে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক রাজ্যের অবার্ণ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ডানিয়েল ইয়াং এবং মায়ের নাম মেরী জেনিংস। দুইজনই ছিলেন আইরিশ বংশোদ্ভূত। চার্লস ছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। ছোট বেলায় তাঁর মা মারা যান বলে তাঁকে এতিমখানায় এবং পরে একটি পরিবারে থেকে পড়াশুনা করেন ও বড় হন। পবিত্র ক্রুশ সংঘের সেমিনারীতে প্রবেশ করেন ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুন তারিখে তিনি নভিশিয়েটে প্রবেশ করেন ও পরবর্তী বছর, অর্থাৎ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই তারিখে তিনি পবিত্র ক্রুশ সংঘের সদস্য হিসেবে প্রথম ব্রত এবং তিন বছর পর ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই তিনি চিরব্রত গ্রহণ করেন। এসময় তিনি পড়াশুনা চালিয়ে যান ও ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি, এ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ওয়াশিংটনে অবস্থিত ফরেইন মিশন সেমিনারীতে ঐশতত্ত¡ অধ্যয়ন করার পর ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুন তারিখে ইন্ডিয়ানার নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাপেলে যাজকপদে অভিষিক্ত হন এবং একই বছরেরই অক্টোবর মাসে মিশনারী কাজের জন্য তৎকালীন পূর্ববঙ্গে আগমন করেন।
২। ফাদার চার্লস ইয়াং-এর পুরো নাম
ফাদার ইয়াং-এর নাম আমরা চার্লস জে, ইয়াং বলে জানি। “জে” কথাটি দ্বারা তাঁর কী নাম ছিল তা জানা ছিল না। কিন্তু ফাদার ইয়াং-এর ফাইল ঘেটে ফাদারেরই নিজের হাতে লেখা কাগজ থেকে জানা যায় তাঁর ঐ মাঝের নামটি হচ্ছে ‘যোসেফ’। কাজেই তাঁর পুরো নামটি হচ্ছে ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং, সিএসসি।
৩। ফাদার ইয়াং-এর কর্মস্থলসমূহ
এদেশে এসে ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং প্রথমে বাংলা শিখেন। এজন্য তাঁর প্রথম কর্মস্থল হয় হাসনাবাদ ধর্মপল্লী। এখানে এক বছর অবস্থান করার পর ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ফাদার চার্লস-এর নতুন কর্মস্থল হয় রাণীখং মিশন। পরবর্তী ১২ বছরের অধিক সময় তিনি ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন ধর্মপল্লীতে কাজ করেন। এর পর তিনি বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ আমাদের দেশে নানা রকম সমাজকর্মে ব্যাপৃত ছিলেন। তিনি একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন বলে আমাদের অনেকের হয়ত জানতে ইচ্ছা করতে পারে কোথায় কোথায় তিনি কাজ করেছেন। তাই সংক্ষিপ্তভাবে ফাদার ইয়াং-এর কর্মস্থলের নামগুলো নি¤েœ উল্লেখ করছি।
১৯৩৩ : তৎকালীন পূর্ববঙ্গে আগমন, ১৯৩৩ - ৩৪ : হাসনাবাদ (বাংলা শেখা ও ধর্মপল্লীর কাজ), ১৯৩৪ - ৩৯ : রাণীখং, ১৯৩৯-৪৩ : মরিয়মনগর, ১৯৪৩ -৪৬ : বিড়ইডাকুনী, ১৯৪৭ – ৪৯ : আগরতলা, ১৯৪৯ - ৫৩: মরিয়মনগর, ১৯৫৪ - ৫৫ : রমনা, ১৯৫৫ - ৫৬ : বিড়ইডাকুনী, ১৯৫৬- ৫৭ : রমনা,
১৯৫৭ - ৫৮ : তেজগাঁও, ১৯৫৮ - ৭৩ : ৬১/১ সুবাস বোস এভেন্যু (সমাজ কর্ম, কারিতাস), ১৯৭৩ - ১৯৮৮-এর ১৪ নভেম্বর : মরো হাউস, জিন্দাবাহার।
ফাদার ইয়াং কারিতাস-এর কর্মী হিসেবে এডুকেশন অফিস, এনএফপি, ক্রেডিট ইউনিয়ন ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন কারিতাস প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ ১৯৭১ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত। এরপর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। কারিতাস সেন্ট্রাল অফিস থেকে ফাদারকে বিদায় জানানো হয়েছিল ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে। কারিতাস ফাদার ইয়াং-কে বিদায় জানালেও মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি এসব কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি ও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
৪। সমবায় ভাবনা
রেভা. ফাদার চার্লস জোসেফ ইয়াং সি.এস.সি. সমবায়ের ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, সমবায় আন্দোলনের একজন পথিকৃৎ। ৫০-এর দশকে সারা দেশের তথা খ্রীষ্টানদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তখন তারা চড়া সুদে কাবুলিওয়ালাদের অথবা সুদখোর মহাজনদের নিকট থেকে টাকা এনে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে চাইলেও পক্ষন্তরে তাদের চড়া সুদের টাকা গুনতে গুনতে শেষ সম্বল ভিটে-মাটি পর্যন্ত হারাতে হয়েছে। খ্রীষ্টানদের এই অবস্থা ফাদার ইয়াংকে অসম্ভব পীড়া দিয়েছে। শুধু তাঁকে নয়, তৎকালীন খ্রীষ্টান ধর্মগুরু আর্চ বিশপ লরেন্স এল. গ্রেনার সি.এস.সি.-কে ও মর্মাহত করেছে। তিনি ভাবতে থাকেন কিভাবে এ দরিদ্র খ্রীষ্টান জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো যায়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি ১৯৫৩ সালের নভেম্বর মাসে ফাদার ইয়াংকে সমবায়ের উপর প্রশিক্ষণের জন্য কানাডার সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার ইউনিভার্সিটির কোডি ইন্সটিটিউটে পাঠান। সেখানে তিনি একাডেমিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন সমিতি পরিদর্শন ও নের্তৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সমবায়ের উপর সম্যক ধারণা লাভ করেন। সেখান থেকে তিনি আবার ঢাকায় এসে সমবায় গঠন করার চিন্তা-ভাবনা করেন। এরপর তিনি ৩ জুলাই, ১৯৫৫ খ্রীষ্টাব্দে ল²ীবাজারে একটি সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। সেটাই এখন “দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ,ঢাকা” যা ঢাকা ক্রেডিট নামে সমধিক পরিচিত। আজ থেকে ৬৬ বৎসর পূর্বে যে সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা এখন বিরাট আকার ধারণ করেছে। ইহা দেশের মধ্যে বৃহৎ সমিতি হিসেবে আতœপ্রকাশ করেছে। শুধু ঢাকা ক্রেডিট নয় ধর্মপল্লী পর্যায়ে যত ক্রেডিট আছে সেগুলি প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিরাট অবদান রয়েছে।
৫। কিছু কথাঃ
একজন বিদেশী ধর্মযাজক হয়েও তিনি আমাদের দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি আমাদের মাঝে স্বশরীরে নেই। কিন্তু তার অবদান আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। তিনি আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। আমরা তাঁকে কিছুই দিতে পারিনি। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের কথা অনেক সময় আমরা ভূলে যাই। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে আমরা অনেক কিছূ করতে পারি। প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁর কাছে কিছু চাওয়া হলে তা তিনি প্রদান করেন। তাঁেক ঈশ্বরের সেবক হিসেবে ঘোষণা দেবার প্রত্রিয়া হাতে নেয়া যেতে পারে। অনেক খ্রীষ্টান সমবায় সমিতিতে তার ছবি পর্যন্ত নেই, যা রীতিমত দুঃখজনক। সব সমবায় সমিতিতে তাঁর একটা ছবি থাকা আবশ্যক। ঢাকা ক্রেডিট ফাদার ইয়াং-এর নামে ইতোমধ্যে ফাদার ইয়াং ফাউন্ডেশন গঠন করেছে। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আদর্শ সমবায়ীদের ‘ইয়াং’ খেতাব দেয়া যেতে পারে। কেন্দ্রীয়ভাবে ফাদার ইয়াং লাইব্রেরী করা যেতে পারে। সেখানে ফাদার ইয়াং সম্পর্কে এবং সমবায় সম্পর্কে পুস্তক থাকবে যা অধ্যয়ন করে সমবায় জ্ঞান ভান্ডার পূর্ণ করা যাবে। আমরা ফাদার ইয়াং-এর নামে স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তাঁর নামে বৃত্তি প্রদান করতে পারি। ফাদার ইয়াং-এর কোন প্রচার নাই। আজকে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ডঃ ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেছেন, এটা আমাদের জন্য অবশ্যই গর্বের বিষয়। ৬৬ বছরে সমবায় যে সাফল্য আনতে পারেনি, গ্রামীণ ব্যাংক মাত্র ৪৫ বছরে সে সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। সমবায়ের কথা আমাদের প্রচার করতে হবে। দেশের মানুষকে সমবায়ের পতাকাতলে আনতে হবে।
আমরা আশা করি, আমাদের ফাদার ইয়াং-এর সমবায় দুঃখ ভারাক্রান্ত সদস্য-সদস্যাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে কোন এক দিন নোবেল পুরস্কার পাবে। তার জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে যা দরকার তা আমাদের অবশ্যই করতে হবে।
৬। মৃত্যুঃ
১৯৮৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ নভেম্বর সড়ক দূর্ঘটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে তেজগাঁও কবরস্থানে অন্তিম শয়ানে শায়িত করা হয়।
সমবায় ভাবনা -১৮
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ফাদার আদম এস, পেরেরা, সিএসসি
করোনা ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
-স্বপন রোজারিও
আমি দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) -এর একজন কর্মী। ঢাকা ক্রেডিটে আমার কর্মকাল সুদীর্ঘ দুই যুগ পেরিয়ে সিকি শতাব্দিও পার হয়ে গেছে। আমি ঢাকা ক্রেডিটে যোগদান করার পর থেকে সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁকজমতের সাথে উদযাপন করতে দেখেছি। বিগত ১৫ বছর সমিতির সেক্রেটারিয়েটে কাজ করার সুবাদে সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করার বিষয়টিকে খুব কাছে থেকে গভীরভাবে উপলব্দি করেছি। প্রায় প্রতিবছর সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ও জাঁকজমকমন্ডিত পরিবেশে। আমরা দিনটা শুরু করতাম দেশে ক্রেডিট ইউনিয়নের জনক ও সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসি এর নামে খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করার মাধ্যমে। তারপর তেজগাঁস্থ ফাদার ইয়াং-এর কবরসহ সমিতির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হতো। সমিতির একটি দল ঢাকার ওয়ারী কবরস্থানে যেত সেখানে সমাহিত নেতৃবৃন্দের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার জন্য। আর বিকেলে অনুষ্ঠিত হতো আলোচনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। বিকালের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ এসে আমাদের অনুষ্ঠান ধন্য করতেন। তাঁদের মধ্যে মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও, সিএসসি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এড. প্রমোদ মানকিন এমপিসহ আরও গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গ। আমরা এ অনুষ্ঠানগুলো উপভোগও করতাম।
কিন্তু করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাবের ফলে আমরা বিগত দুই বছর সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে পারি নি। আমরা আশা করি, অচিরেই করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে এবং আমরা আগের মত সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করতে পারবো।
সমবায় ভাবনা -১৯
ফাদার চার্লস জে, ইয়াং ফাউন্ডেশন: ঢাকা ক্রেডিটের অনবদ্য সৃষ্টি
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা সংক্ষেপে ঢাকা ক্রেডিট এদেশের খ্রীষ্টান সমাজ তথা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ইহা দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রাচীনতম ক্রেডিট ইউনিয়ন। এই ক্রেডিট ইউনিয়নটি দেশের শ্রেষ্ঠ সমবায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের নিকট থেকে স্বর্ণপদক পেয়েছে অনেকবার। শুধু তাই নয়, এই প্রতিষ্ঠানের ৪ জন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সরকারের নিকট থেকে শ্রেষ্ঠ সমবায়ীর পুরস্কার অর্জন করেছে। এই সমিতির উদ্যোগে গঠিত হয়েছে সমবায়ের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লি: (কালব)’ ও ‘দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস লি: (কাককো)।
ঢাকা ক্রেডিটের উদ্যোগে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘ফাদার চার্লস জে ইয়াং ফাউন্ডেশন।’ বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের জনক ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় ফাদার চার্লস জে. ইয়াং সিএসসি -এর নামকে অমর করে রাখার জন্য তাঁর নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এই ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনটি মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করবে। সমবায় সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা এই ফাউন্ডেশন থেকে করা হবে। নারীর ক্ষমতায়নে এই প্রতিষ্ঠানটি রাখবে বিশেষ অবদান। বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতাসহ সমাজ উন্নয়নমূলক সব কাজ করবে এই ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি এই ফাউন্ডেশনটি সরকারের জয়েন্ট স্টক কোম্পানী থেকে নিবন্ধন লাভ করেছে।
আমরা আশা করি, এই ফাউন্ডেশনটি সমাজ উন্নয়নে বিপুল ভূমিকা পালন করবে। ঢাকা ক্রেডিটের ৬৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনে আমরা এই ফাউন্ডেশনের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি।
সমবায় ভাবনা -২০
(আজ ঢাকা ক্রেডিটের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস)
ঢাকা ক্রেডিটের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস : একটি অনন্য উদ্যোগ
-স্বপন রোজারিও
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) বাংলাদেশের সমবায় অঙ্গনে সর্বপ্রথম এটিএম সেবা চালু করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সদস্যগণ যাতে তাদের জরুরী প্রয়োজনে ২৪ ঘন্টা ৭ দিন সঞ্চয়ী হিসাব থেকে অনায়াসে টাকা উত্তোলন করতে পারেন সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন কল্পে ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দে এটিএম সেবা চালু করা হয়েছে। ঢাকা ক্রেডিটের কর্মএলাকার মোট ১০টি স্থানে বুথ স্থাপনের মাধ্যমে এ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা ক্রেডিটে এটিএম এর চেয়ে আরও আধুনিকতম একটি সেবা রয়েছে যা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) হিসেবে পরিচিত। এখন সদস্যগণ তাদের মোবাইলে ঢাকা ক্রেডিট অ্যাপ ইন্সটল করে এমএফএস গ্রহণের মাধ্যমে কিউ আর কোড জেনারেট করে ঢাকা ক্রেডিটের যে কোন এটিএম বুথ থেকে সহজেই এবং নির্বিঘেœ টাকা উত্তোলন করতে পারেন। প্রয়োজনে যে কোন সময় এমএফএস ব্যবহারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা যায়। এই সার্ভিস চালু করার ফলে ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যদের জীবন অতি সহজ হয়ে গেছে। এখন সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কাছাকাছি যে কোন এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন সুবিধা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়। এই সার্ভিসের মাধ্যমে একজন সদস্য ঘরে বসে অন্য একজন সদস্যের সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা স্থানাস্তর করতে পারেন। সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা থাকলে ডিপোজিট রিকোয়েষ্টের মাধ্যমে নিজের এবং অন্য সদস্যের হিসাবে ঋণের ও জমার টাকা প্রদান করতে পারেন। তাছাড়া সদস্য যাদের জামিন দিয়েছেন এবং যাদের জামিন এনেছেন তাদের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়। এর ফলে সদস্যগণ ভাচ্যুয়াল মাধ্যমের দিকে অনবরত ধাবিত হচ্ছে এবং ডিজিটালাইজ হচ্ছে। ক্যাশ ট্রানজেকশন করার কোন প্রয়োজন হয় না। একজন সদস্য অন্য সদস্যকে ফিজিক্যাল ক্যাশ (টাকা) না দিয়ে সহজে ও নিরাপদে টাকা স্থানান্তর করতে পারে। সারা বিশে^ এখন আর ফিজিক্যাল ট্রানজেকশন হয় না। সারা বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা ক্রেডিট তার সদস্যদের সুবিধার জন্য এই এমএফএস চালু করেছে। এই করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মানুষ বাড়ীতে বসে তার প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এ কঠিন পরিস্থিতিতে এমএফএস মানুষের জীবনকে রাঙ্গীয়ে তুলেছে অনেক। এই সার্ভিসের মাধ্যমে সদস্যগণ তাদের ঋণের তথ্য জানতে পারে এবং এই ঋণের বিপরীতে সুদসহ কত টাকা পরিশোধ করতে হবে তার তথ্যও পাওয়া যায়। এই সার্ভিসের মাধ্যমে সদস্যের ঢাকা ক্রেডিটে কতটি হিসাব রয়েছে, হিসাবে কত টাকা স্থিতি রয়েছে এবং নমিনির তথ্য পাওয়া যায়। সদস্যদের নাম, পিতা-মাতার নামসহ অন্যান্য তথ্য তো রয়েছেই। রয়েছে কার্ডের তথ্য। এমএফএস -এর মাধ্যমে সদস্যগণ তাদের হিসেবের ১ বছরের স্টেটমেন্ট দেখতে পান এবং তা পিডিএফ আকারে সেভ করতে পারেন। এই সার্ভিস পাওয়ার জন্য সদস্যকে একটি নির্ধারিত ফরম পূরণ সাপেক্ষে তার মোবাইল ও ই-মেইল নম্বরটি নিবন্ধন করিয়ে নিতে হয়। একটি মোবাইল নম্বর শুধু একটি হিসাবের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
ঢাকা ক্রেডিটের রয়েছে একটি অ্যাপ। এই অ্যাপ মোবাইলে ইন্সটল করলে সদস্যরা ক্রেডিট ইউনিয়ন, মন্ডলী ও দেশ-বিদেশের খবর পড়তে পারে। প্রয়োজনে পেতে পারে অ্যাম্বুলেন্স কল করার সুযোগ। ঢাকা ক্রেডিটের সকল বিজ্ঞপ্তি এই অ্যাপ থেকে পাওয়া যায়। এই অ্যাপ থেকে জানা যায় ঢাকা ক্রেডিটের সঞ্চয়ী ও ঋণ প্রোডাক্টের কথা। ঢাকা ক্রেডিটের বিভিন্ন প্রকল্প পরিচিতিও এই অ্যাপ থেকে পাওয়া যায়। ঢাকা ক্রেডিটের রয়েছে বিভিন্ন সেবাসমূহ। এই সেবাসমূহের বর্ণনা রয়েছে অ্যাপ-এ। ঢাকা ক্রেডিটের কয়টি সেবাকেন্দ্র রয়েছে, কিভাবে সেখানে যোগাযোগ করা যায় তার দিক নির্দেশনাও রয়েছে এই অ্যাপ-এ।
সমবায় ভাবনা-২১
(আজ ঢাকা ক্রেডিটের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমার এই ক্ষুদ্র নিবেদন)
ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল: সমবায় ইতিহাসে প্রথম হাসপাতাল
বাংলাদেশের সমবায়ের ইতিহাসে প্রথম হাসপাতাল ‘ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল।’ হাসপাতালটি দেশের সর্ববৃহৎ ক্রেডিট ইউনিয়ন ‘দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা সংক্ষেপে ঢাকা ক্রেডিট কর্তৃক গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার নাগরী ইউনিয়নের মঠবাড়ীতে নির্মাণ করা হচ্ছে। হাসপাতাল নির্মাণের পাশাপাশি সেখানে মেডিক্যাল কলেজ ও নার্সিং ইন্সটিটিউট ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে ৩৫% সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০২২ খ্রীষ্টাব্দের শেষার্ধে হাসপাতালটির শুভ উদ্বোধন করা হবে। হাসপাতালটি চালু হলে ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যদের পাশাপাশি গাজীপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী জেলাসহ সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। হাসপাতালটি ১০০০ জন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।
সমিতির এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আমরা আশা করি হাসপাতালটি তার উদ্দেশ্য পূরণে ১০০% সফল হবে।
সমবায় ভাবনা - ২২
ক্রেডিট ইউনিয়নে সঞ্চয়
ক্রেডিট ইউনিয়ন এর সদস্যদের সঞ্চয়ী মনোভাবাপন্ন হতে উৎসাহিত করে এবং এটাই ক্রেডিট ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অন্যতম। এই সঞ্চয়ী মনোভাবী হওয়ার প্রবনতা সদস্যদের ভবিষ্যতের দিনগুলো সুদৃঢ় করে। বিপদের দিনের বন্ধু হিসেবে পাশে থাকে। তাই প্রতিটি ব্যক্তিকে প্রতি মাসে আবশ্যিকভাবে সঞ্চয় করতে হয়। সঞ্চয়ের সনাতন (আগের) ধারনা ছিলো- মোট আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যা থাকে তা সঞ্চয় করতে হবে। কিন্তু সঞ্চয়ের এই ধারনা এখন পরিবর্তন হয়েছে। এখন সঞ্চয়ের ধারনা হলো- মোট আয় থেকে সঞ্চয় বাদ দেয়ার পর যা থাকবে তা ব্যয় করতে হবে। এখন সব ক্রেডিট ইউনিয়ন সঞ্চয়ের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। অনেক ক্রেডিট ইউনিয়ন শেয়ারের পাশাপাশি সঞ্চয়ী হিসাবে জমা দেয়ার বিষয়টিকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। ক্রেডিট ইউনিয়ন যেহেতু বাইরে থেকে ফান্ড আনে না সেহেতু ক্রেডিট ইউনিয়নে শেয়ারের পাশাপাশি সঞ্চয়ী হিসাব না থাকলে ফান্ডের অভাবে ঋণ দেয়াও যায় না। তাই সঞ্চয়ী হিসাবে জমা করা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
পেনশন বেনিফিট স্কীম : ঢাকা ক্রেডিটের একটি যুগান্তকারী সঞ্চয়ী প্রোডাক্ট
-স্বপন রোজারিও
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) ইতোমধ্যে বাংলাদেশের একটি অনুকরণীয় মডেল ক্রেডিট ইউনিয়ন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট ও প্রকল্প নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সদস্যদের পাশে থেকেছে সদা-সর্বদাই। ইদানিং ঢাকা ক্রেডিট নিয়ে এসেছে আরও একটি আকর্ষণীয় ও যুগান্তকারী সঞ্চয়ী প্রোডাক্ট ‘পেনশন বেনিফিট স্কীম’ বা পিবিএস। অবসরকালীন সময়ে কোন ব্যক্তিকে যাতে অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে বরং আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী ও সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন প্রশান্তিময় জীবন যাপন করতে পারেন সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে এই স্কীমটি ইতোমধ্যে চালু করা হয়েছে। ক্রেডিট ইউনিয়নের জন্য এটি একেবারেই একটি নতুন ধারনা। ধারনা করি, ঢাকা ক্রেডিট ছাড়া বাংলাদেশের কোন ক্রেডিটই এই ধরনের সঞ্চয়ী প্রোডাক্ট চালু করে নি, এই দিক বিশ্লেষণে ঢাকা ক্রেডিটকে এ বিষয়ে পাইওনিয়ারের মর্যাদাও প্রদান করা যেতেই পারে। এখানে ‘পেনশন বেনিফিট স্কীম’ বা পিবিএস সম্পর্কে কিছু কথা বলার প্রয়াস পাচ্ছি।
এই হিসাবটির দুইটি পর্যায় রয়েছে। একটি জমা পর্যায় এবং একটি সুবিধা পর্যায়। জমা পর্যায়ে হিসাবধারী মাসিক হারে টাকা জমা প্রদান করবেন এবং সুবিধা পর্যায়ে হিসাবধারী মাসিক হারে সুবিধা প্রাপ্য হবেন। এটাও একটি নতুন ধারনা বলে বিবেচিত হচ্ছে। কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাধারণত: কোন সঞ্চয়ী প্রোডাক্টের টাকা আমানতকারীকে একবারে প্রদান করে থাকে। একবারে টাকা পেলে সেই টাকা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এই স্কীমের টাকাটা মাসে মাসে পেলে তা মানুষের জন্য বেশী উপকারী।
এই হিসাবটি খুবই লাভজনক। এখানে ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকা এবং হাজারে গুণিতক হারে সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত মাসিক হারে জমা প্রদান করা যায়। একজন হিসাবধারী ৬ বছর ৫০০ টাকা মাসিক হারে জমা প্রদান করলে পরবর্তীতে ৪ বছর মাসে মাসে ১১৩৮ হারে টাকা প্রাপ্য হবেন. এভাবে একজন হিসাবধারী ৩০ বছর ২৫,০০০ টাকা মাসিক হারে জমা প্রদান করলে পরবর্তীতে ২০ বছর মাসে মাসে ৩,৮২,২৭৫ টাকা হারে প্রাপ্য হবেন।
১৮-৬৫ বছর পর্যন্ত যে কোনো সঞ্চয়ী হিসাবধারী নির্ধারিত আবেদনপত্র পূরণ করে এক বা একাধিক হিসাব খুলতে পারবেন। এই হিসাবে প্রতি মাসে অথবা অগ্রিম হিসাবে টাকা জমা প্রদান করা যাবে। এই হিসাবে কোন মাসে জমা প্রদান না করা হলে জরিমানা দিতে হবে না তবে হিসাবের মেয়াদ পূর্তি ১ মাস পিছিয়ে যাবে। অন্যান্য সঞ্চয়ী হিসাবের মত এই হিসাবের জমাকৃত অর্থ নিজস্ব সাধারণ ঋণ অথবা পরিবারের যে কোনো একজনের ঋণের বিপরীতে জামিন প্রদান করা যায় এবং এ স্কীমের বিপরীতে জমার ৯০% ঋণ গ্রহণ করা যায় এবং ঋণের সুদের হার মাত্র ১২%।
১ বৎসর পর জমা বা সুবিধা চলাকালীন সময় হিসাবটি বন্ধ করা হলে নির্ধারিত হারে সরল সুদ প্রদান করা হবে। এই হিসাবধারীর মৃত্যু হলে নির্ধারিত সুদ প্রদান করা হবে। হিসাবের জমা ২৫% সম্পন্ন হওয়ার পর অথবা সুবিধা চলাকালীন সময়ে হিসাবধারীর মৃত্যু হলে তাঁর উত্তরাধীকারী (নমিনী) নিজ নামে সুদ সমেত হিসাবটি পরিচালনা করতে পারবেন। এটা একটি ব্যতিক্রমধর্মী সুযোগ যা শুধু এই সঞ্চয়ী প্রোডাক্টেই আছে।
সঞ্চয় মানুষের বিপদের দিনের বন্ধু। মানুষের জীবনে যত বেশী সঞ্চয় থাকে, সেই মানুষের জীবন তত বেশী নিরাপদ ও শক্তিশালী হয়। সুতরাং সঞ্চয় মানুষকে করতেই হবে। আর এই সঞ্চয় হোক ঢাকা ক্রেডিটের ‘পেনশন বেনিফিট স্কীম’ বা পিবিএস-এর মাধ্যমেই।
সমবায় ভাবনা (১৫)
সমবায়ের সপ্ত মূলনীতি
সমবায়ের ৭টি মূলনীতি রয়েছে। ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের ’রচডেল সোসাইটি অব ইক্যুটেবল পাইওনিয়ারস’ এর ’বন্ধু সমাজ বা সমবায়ী সমাজ’ গঠনের প্রথম সফল ’রসডেল সমবায়ী মূলনীতি’র আলোকে পরিবর্তিত সংস্করণ এই মূলনীতিসমূহ। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট ইউনিয়নের জাতীয় সংগঠন ‘দি ক্রেডিট ইউনিয়ন ন্যাশনাল এসোসিয়েশন (সিইউএনএ)’ সাতটি মূলনীতি প্রকাশ ও ব্যাখ্যা করে। সমবায়ের ৭টি মূলনীতি হল-
(১) স্বেচ্ছা ও উন্মুক্ত সদস্যপদ: সমবায়ের সদস্যপদ নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবার জন্য উন্মুক্ত এবং সমবায়ে সবার অধিকার সমান। কোন সমবায় সমিতির কর্মএলাকাভূক্ত ১৮ বছর পূর্ণ হওয়া কোন দরিদ্র মানুষও যদি ঐ সমবায়ের সদস্য হতে চায় তবে তাকে অবশ্যই সদস্যপদ প্রদান করতে হবে, তাকে কোন প্রকার উছিলায়ই সদস্যপদ প্রদান থেকে বিরত করা যাবে না।
(২) গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ: সমবায়ের মালিক এর সদস্যগণ। সমবায়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে গণতন্ত্রের ছোঁয়া থাকা অত্যাবশ্যক। নির্বাচন, বার্ষিক সাধারণ সভা ও অন্যান্য সভাসহ সবকিছুতে থাকতে হবে গণতন্ত্র চর্চা। কোন নারী বা দরিদ্র সদস্যকে কোন প্রকারেই নির্বাচন বা বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা যাবে না। সমবায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্তে থাকতে হবে গণতন্ত্রের সরব উপস্থিতি।
(৩) অর্থনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ: সমবায়ীদের অর্থনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি মাসে টাকা জমা দিতে হবে, তা শেয়ারে ও সঞ্চয়ে হতে পারে। এই টাকা সমিতি বিনিয়োগ করে সদস্যদের লভ্যাংশ প্রদান করবে। এইভাবে অর্থনীতির চাকা সচল থাকবে। সমাজ ও দেশ হবে সমৃদ্ধ। অর্থনৈতিক লেনদেন ছাড়া সমবায় চলে না।
(৪) স্বাধীন ও পৃথক সত্তা: সমবায়ের একটি পৃথক ও আইনগত সত্তা রয়েছে যা দিয়ে সমবায়কে অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা করা যায়। ইহা একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠানও বটে। এই প্রতিষ্ঠানের নামে থাকবে সীলমোহর ও অফিস লেটার হেড। এর আইনগত ভিত্তি থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানটি তার নামে মামলা পরিচালনা করতে পারবে এবং অন্য প্রতিষ্ঠানও সমবায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে।
(৫) শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও তথ্য সরবরাহ: সমবায়ে একটি ধারাবাহিক প্রাতিষ্ঠানিক রূপরেখা থাকা আবশ্যক। সমবায়ে থাকবে ধারাবাহিক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা। থাকবে তথ্য প্রবাহ। সমবায়ীদের প্রতিনিয়ত শিক্ষা সেমিনারের মাধ্যমে সমবায়ী শিক্ষা প্রদান করতে হবে। সমবায়ের সাথে যুক্ত সবাইকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। সমবায়কে শুধুই লেনদেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে তা বেশীদিন টেকসই হবে না।
(৬) সমবায়ী অংশগ্রহণ: সমবায়ে অংশগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমবায়ে সদস্যরা আর্থিক কর্মকান্ডসহ অন্যান্য কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। একজন ভালো সমবায়ীকে অনুসরন করে অন্য মানুষ সমবায়ের সদস্য হয়। একটি ভালো সমবায়কে অনুসরন করে একটি নতুন সমিতি প্রতিষ্ঠা হয়। এভাবে চলতে চলতে সমবায় বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ও জাতীয় সমিতির মাধ্যমে সমিতিগুলো ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বময় এবং এতে উপকৃত হচ্ছে সারাবিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।
(৭) সমাজের জন্য চিন্তা: সমবায় সদস্যদের সমগ্রিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে। কোন সমাজের মানুষের সম্পূর্ণ টেকসই উন্নয়ন করাই সমবায়ের মূল্য লক্ষ্য। একটি সমাজ যখন সমবায়ের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন অর্জন করে তখন তা সারা দেশসহ বিশ্বে জালের মত বিস্তার লাভ করে।
সমবায় ভাবনা (১৬)
আজ ঢাকা ক্রেডিটের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
আজ দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) এর ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। আজ থেকে ৬৬ বছর আগে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসি-এর হাত ধরে মাত্র ৫০ জন সদস্য নিয়ে ঢাকা ক্রেডিট প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দিনটি ছিলো ৩রা জুলাই ১৯৫৫। আজকের দিনে আমরা ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তিনি এদেশে না আসলে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলন শুরুই হতো না। শুধু ঢাকা ক্রেডিট নয়, ধর্মপল্লী পর্যায়ে সকল ক্রেডিট ইউনিয়ন গঠনে ফাদারের অবদান রয়েছে।
সমবায় ভাবনা (১৭)
(আজ ৩ জুলাই। আজ ঢাকা ক্রেডিটের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই শুভ দিনে বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের জনক ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসি সম্পর্কে দু’চারটি কথা বলার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস)
ফাদার ইয়াং : ক্রেডিট ইউনিয়নের অগ্রদূত
১। ভূমিকা
ফাদার চার্লস ইয়াং, সিএসসি ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ৩ মে তারিখে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক রাজ্যের অবার্ণ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম ডানিয়েল ইয়াং এবং মায়ের নাম মেরী জেনিংস। দুইজনই ছিলেন আইরিশ বংশোদ্ভূত। চার্লস ছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। ছোট বেলায় তাঁর মা মারা যান বলে তাঁকে এতিমখানায় এবং পরে একটি পরিবারে থেকে পড়াশুনা করেন ও বড় হন। পবিত্র ক্রুশ সংঘের সেমিনারীতে প্রবেশ করেন ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুন তারিখে তিনি নভিশিয়েটে প্রবেশ করেন ও পরবর্তী বছর, অর্থাৎ ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই তারিখে তিনি পবিত্র ক্রুশ সংঘের সদস্য হিসেবে প্রথম ব্রত এবং তিন বছর পর ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দের ২১ জুলাই তিনি চিরব্রত গ্রহণ করেন। এসময় তিনি পড়াশুনা চালিয়ে যান ও ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি, এ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর ওয়াশিংটনে অবস্থিত ফরেইন মিশন সেমিনারীতে ঐশতত্ত¡ অধ্যয়ন করার পর ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুন তারিখে ইন্ডিয়ানার নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যাপেলে যাজকপদে অভিষিক্ত হন এবং একই বছরেরই অক্টোবর মাসে মিশনারী কাজের জন্য তৎকালীন পূর্ববঙ্গে আগমন করেন।
২। ফাদার চার্লস ইয়াং-এর পুরো নাম
ফাদার ইয়াং-এর নাম আমরা চার্লস জে, ইয়াং বলে জানি। “জে” কথাটি দ্বারা তাঁর কী নাম ছিল তা জানা ছিল না। কিন্তু ফাদার ইয়াং-এর ফাইল ঘেটে ফাদারেরই নিজের হাতে লেখা কাগজ থেকে জানা যায় তাঁর ঐ মাঝের নামটি হচ্ছে ‘যোসেফ’। কাজেই তাঁর পুরো নামটি হচ্ছে ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং, সিএসসি।
৩। ফাদার ইয়াং-এর কর্মস্থলসমূহ
এদেশে এসে ফাদার চার্লস যোসেফ ইয়াং প্রথমে বাংলা শিখেন। এজন্য তাঁর প্রথম কর্মস্থল হয় হাসনাবাদ ধর্মপল্লী। এখানে এক বছর অবস্থান করার পর ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে ফাদার চার্লস-এর নতুন কর্মস্থল হয় রাণীখং মিশন। পরবর্তী ১২ বছরের অধিক সময় তিনি ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন ধর্মপল্লীতে কাজ করেন। এর পর তিনি বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ আমাদের দেশে নানা রকম সমাজকর্মে ব্যাপৃত ছিলেন। তিনি একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন বলে আমাদের অনেকের হয়ত জানতে ইচ্ছা করতে পারে কোথায় কোথায় তিনি কাজ করেছেন। তাই সংক্ষিপ্তভাবে ফাদার ইয়াং-এর কর্মস্থলের নামগুলো নি¤েœ উল্লেখ করছি।
১৯৩৩ : তৎকালীন পূর্ববঙ্গে আগমন, ১৯৩৩ - ৩৪ : হাসনাবাদ (বাংলা শেখা ও ধর্মপল্লীর কাজ), ১৯৩৪ - ৩৯ : রাণীখং, ১৯৩৯-৪৩ : মরিয়মনগর, ১৯৪৩ -৪৬ : বিড়ইডাকুনী, ১৯৪৭ – ৪৯ : আগরতলা, ১৯৪৯ - ৫৩: মরিয়মনগর, ১৯৫৪ - ৫৫ : রমনা, ১৯৫৫ - ৫৬ : বিড়ইডাকুনী, ১৯৫৬- ৫৭ : রমনা,
১৯৫৭ - ৫৮ : তেজগাঁও, ১৯৫৮ - ৭৩ : ৬১/১ সুবাস বোস এভেন্যু (সমাজ কর্ম, কারিতাস), ১৯৭৩ - ১৯৮৮-এর ১৪ নভেম্বর : মরো হাউস, জিন্দাবাহার।
ফাদার ইয়াং কারিতাস-এর কর্মী হিসেবে এডুকেশন অফিস, এনএফপি, ক্রেডিট ইউনিয়ন ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন কারিতাস প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ ১৯৭১ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত। এরপর তিনি অবসর গ্রহণ করেন। কারিতাস সেন্ট্রাল অফিস থেকে ফাদারকে বিদায় জানানো হয়েছিল ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর তারিখে। কারিতাস ফাদার ইয়াং-কে বিদায় জানালেও মৃত্যুর দিন পর্যন্ত তিনি এসব কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি ও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
৪। সমবায় ভাবনা
রেভা. ফাদার চার্লস জোসেফ ইয়াং সি.এস.সি. সমবায়ের ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র, সমবায় আন্দোলনের একজন পথিকৃৎ। ৫০-এর দশকে সারা দেশের তথা খ্রীষ্টানদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তখন তারা চড়া সুদে কাবুলিওয়ালাদের অথবা সুদখোর মহাজনদের নিকট থেকে টাকা এনে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি করতে চাইলেও পক্ষন্তরে তাদের চড়া সুদের টাকা গুনতে গুনতে শেষ সম্বল ভিটে-মাটি পর্যন্ত হারাতে হয়েছে। খ্রীষ্টানদের এই অবস্থা ফাদার ইয়াংকে অসম্ভব পীড়া দিয়েছে। শুধু তাঁকে নয়, তৎকালীন খ্রীষ্টান ধর্মগুরু আর্চ বিশপ লরেন্স এল. গ্রেনার সি.এস.সি.-কে ও মর্মাহত করেছে। তিনি ভাবতে থাকেন কিভাবে এ দরিদ্র খ্রীষ্টান জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো যায়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিনি ১৯৫৩ সালের নভেম্বর মাসে ফাদার ইয়াংকে সমবায়ের উপর প্রশিক্ষণের জন্য কানাডার সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার ইউনিভার্সিটির কোডি ইন্সটিটিউটে পাঠান। সেখানে তিনি একাডেমিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন সমিতি পরিদর্শন ও নের্তৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনা করে সমবায়ের উপর সম্যক ধারণা লাভ করেন। সেখান থেকে তিনি আবার ঢাকায় এসে সমবায় গঠন করার চিন্তা-ভাবনা করেন। এরপর তিনি ৩ জুলাই, ১৯৫৫ খ্রীষ্টাব্দে ল²ীবাজারে একটি সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। সেটাই এখন “দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ,ঢাকা” যা ঢাকা ক্রেডিট নামে সমধিক পরিচিত। আজ থেকে ৬৬ বৎসর পূর্বে যে সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা এখন বিরাট আকার ধারণ করেছে। ইহা দেশের মধ্যে বৃহৎ সমিতি হিসেবে আতœপ্রকাশ করেছে। শুধু ঢাকা ক্রেডিট নয় ধর্মপল্লী পর্যায়ে যত ক্রেডিট আছে সেগুলি প্রতিষ্ঠায় তাঁর বিরাট অবদান রয়েছে।
৫। কিছু কথাঃ
একজন বিদেশী ধর্মযাজক হয়েও তিনি আমাদের দেশের আপামর জনসাধারণের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তিনি আমাদের মাঝে স্বশরীরে নেই। কিন্তু তার অবদান আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। তিনি আমাদের অনেক কিছু দিয়েছেন। আমরা তাঁকে কিছুই দিতে পারিনি। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালনের কথা অনেক সময় আমরা ভূলে যাই। তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে আমরা অনেক কিছূ করতে পারি। প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁর কাছে কিছু চাওয়া হলে তা তিনি প্রদান করেন। তাঁেক ঈশ্বরের সেবক হিসেবে ঘোষণা দেবার প্রত্রিয়া হাতে নেয়া যেতে পারে। অনেক খ্রীষ্টান সমবায় সমিতিতে তার ছবি পর্যন্ত নেই, যা রীতিমত দুঃখজনক। সব সমবায় সমিতিতে তাঁর একটা ছবি থাকা আবশ্যক। ঢাকা ক্রেডিট ফাদার ইয়াং-এর নামে ইতোমধ্যে ফাদার ইয়াং ফাউন্ডেশন গঠন করেছে। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আদর্শ সমবায়ীদের ‘ইয়াং’ খেতাব দেয়া যেতে পারে। কেন্দ্রীয়ভাবে ফাদার ইয়াং লাইব্রেরী করা যেতে পারে। সেখানে ফাদার ইয়াং সম্পর্কে এবং সমবায় সম্পর্কে পুস্তক থাকবে যা অধ্যয়ন করে সমবায় জ্ঞান ভান্ডার পূর্ণ করা যাবে। আমরা ফাদার ইয়াং-এর নামে স্কুল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে পারি। তাঁর নামে বৃত্তি প্রদান করতে পারি। ফাদার ইয়াং-এর কোন প্রচার নাই। আজকে গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে ডঃ ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করেছেন, এটা আমাদের জন্য অবশ্যই গর্বের বিষয়। ৬৬ বছরে সমবায় যে সাফল্য আনতে পারেনি, গ্রামীণ ব্যাংক মাত্র ৪৫ বছরে সে সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে। সমবায়ের কথা আমাদের প্রচার করতে হবে। দেশের মানুষকে সমবায়ের পতাকাতলে আনতে হবে।
আমরা আশা করি, আমাদের ফাদার ইয়াং-এর সমবায় দুঃখ ভারাক্রান্ত সদস্য-সদস্যাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে কোন এক দিন নোবেল পুরস্কার পাবে। তার জন্য আন্তর্জাতিক ভাবে যা দরকার তা আমাদের অবশ্যই করতে হবে।
৬। মৃত্যুঃ
১৯৮৮ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ নভেম্বর সড়ক দূর্ঘটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে তেজগাঁও কবরস্থানে অন্তিম শয়ানে শায়িত করা হয়।
সমবায় ভাবনা -১৮
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ফাদার আদম এস, পেরেরা, সিএসসি
করোনা ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
-স্বপন রোজারিও
আমি দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) -এর একজন কর্মী। ঢাকা ক্রেডিটে আমার কর্মকাল সুদীর্ঘ দুই যুগ পেরিয়ে সিকি শতাব্দিও পার হয়ে গেছে। আমি ঢাকা ক্রেডিটে যোগদান করার পর থেকে সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁকজমতের সাথে উদযাপন করতে দেখেছি। বিগত ১৫ বছর সমিতির সেক্রেটারিয়েটে কাজ করার সুবাদে সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করার বিষয়টিকে খুব কাছে থেকে গভীরভাবে উপলব্দি করেছি। প্রায় প্রতিবছর সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ও জাঁকজমকমন্ডিত পরিবেশে। আমরা দিনটা শুরু করতাম দেশে ক্রেডিট ইউনিয়নের জনক ও সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসি এর নামে খ্রীষ্টযাগ উৎসর্গ করার মাধ্যমে। তারপর তেজগাঁস্থ ফাদার ইয়াং-এর কবরসহ সমিতির অন্যান্য নেতৃবৃন্দের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হতো। সমিতির একটি দল ঢাকার ওয়ারী কবরস্থানে যেত সেখানে সমাহিত নেতৃবৃন্দের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার জন্য। আর বিকেলে অনুষ্ঠিত হতো আলোচনা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান। বিকালের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ এসে আমাদের অনুষ্ঠান ধন্য করতেন। তাঁদের মধ্যে মহামান্য কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও, সিএসসি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী এড. প্রমোদ মানকিন এমপিসহ আরও গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গ। আমরা এ অনুষ্ঠানগুলো উপভোগও করতাম।
কিন্তু করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদুর্ভাবের ফলে আমরা বিগত দুই বছর সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে পারি নি। আমরা আশা করি, অচিরেই করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতি ভালো হয়ে যাবে এবং আমরা আগের মত সমিতির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করতে পারবো।
সমবায় ভাবনা -১৯
ফাদার চার্লস জে, ইয়াং ফাউন্ডেশন: ঢাকা ক্রেডিটের অনবদ্য সৃষ্টি
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা সংক্ষেপে ঢাকা ক্রেডিট এদেশের খ্রীষ্টান সমাজ তথা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ইহা দেশের সর্ববৃহৎ এবং প্রাচীনতম ক্রেডিট ইউনিয়ন। এই ক্রেডিট ইউনিয়নটি দেশের শ্রেষ্ঠ সমবায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের নিকট থেকে স্বর্ণপদক পেয়েছে অনেকবার। শুধু তাই নয়, এই প্রতিষ্ঠানের ৪ জন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ সরকারের নিকট থেকে শ্রেষ্ঠ সমবায়ীর পুরস্কার অর্জন করেছে। এই সমিতির উদ্যোগে গঠিত হয়েছে সমবায়ের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘দি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লীগ অব বাংলাদেশ লি: (কালব)’ ও ‘দি সেন্ট্রাল এসোসিয়েশন অব খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভস লি: (কাককো)।
ঢাকা ক্রেডিটের উদ্যোগে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘ফাদার চার্লস জে ইয়াং ফাউন্ডেশন।’ বাংলাদেশে ক্রেডিট ইউনিয়ন আন্দোলনের জনক ও ঢাকা ক্রেডিটের প্রতিষ্ঠাতা স্বর্গীয় ফাদার চার্লস জে. ইয়াং সিএসসি -এর নামকে অমর করে রাখার জন্য তাঁর নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এই ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনটি মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করবে। সমবায় সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা এই ফাউন্ডেশন থেকে করা হবে। নারীর ক্ষমতায়নে এই প্রতিষ্ঠানটি রাখবে বিশেষ অবদান। বিভিন্ন আর্থিক সহযোগিতাসহ সমাজ উন্নয়নমূলক সব কাজ করবে এই ফাউন্ডেশন। সম্প্রতি এই ফাউন্ডেশনটি সরকারের জয়েন্ট স্টক কোম্পানী থেকে নিবন্ধন লাভ করেছে।
আমরা আশা করি, এই ফাউন্ডেশনটি সমাজ উন্নয়নে বিপুল ভূমিকা পালন করবে। ঢাকা ক্রেডিটের ৬৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনে আমরা এই ফাউন্ডেশনের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি।
সমবায় ভাবনা -২০
(আজ ঢাকা ক্রেডিটের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস)
ঢাকা ক্রেডিটের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস : একটি অনন্য উদ্যোগ
-স্বপন রোজারিও
দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা (ঢাকা ক্রেডিট) বাংলাদেশের সমবায় অঙ্গনে সর্বপ্রথম এটিএম সেবা চালু করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সদস্যগণ যাতে তাদের জরুরী প্রয়োজনে ২৪ ঘন্টা ৭ দিন সঞ্চয়ী হিসাব থেকে অনায়াসে টাকা উত্তোলন করতে পারেন সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন কল্পে ২০১৯ খ্রীষ্টাব্দে এটিএম সেবা চালু করা হয়েছে। ঢাকা ক্রেডিটের কর্মএলাকার মোট ১০টি স্থানে বুথ স্থাপনের মাধ্যমে এ সেবা প্রদান করা হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা ক্রেডিটে এটিএম এর চেয়ে আরও আধুনিকতম একটি সেবা রয়েছে যা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) হিসেবে পরিচিত। এখন সদস্যগণ তাদের মোবাইলে ঢাকা ক্রেডিট অ্যাপ ইন্সটল করে এমএফএস গ্রহণের মাধ্যমে কিউ আর কোড জেনারেট করে ঢাকা ক্রেডিটের যে কোন এটিএম বুথ থেকে সহজেই এবং নির্বিঘেœ টাকা উত্তোলন করতে পারেন। প্রয়োজনে যে কোন সময় এমএফএস ব্যবহারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা যায়। এই সার্ভিস চালু করার ফলে ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যদের জীবন অতি সহজ হয়ে গেছে। এখন সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। কাছাকাছি যে কোন এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন সুবিধা পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়। এই সার্ভিসের মাধ্যমে একজন সদস্য ঘরে বসে অন্য একজন সদস্যের সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা স্থানাস্তর করতে পারেন। সঞ্চয়ী হিসাবে টাকা থাকলে ডিপোজিট রিকোয়েষ্টের মাধ্যমে নিজের এবং অন্য সদস্যের হিসাবে ঋণের ও জমার টাকা প্রদান করতে পারেন। তাছাড়া সদস্য যাদের জামিন দিয়েছেন এবং যাদের জামিন এনেছেন তাদের হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়। এর ফলে সদস্যগণ ভাচ্যুয়াল মাধ্যমের দিকে অনবরত ধাবিত হচ্ছে এবং ডিজিটালাইজ হচ্ছে। ক্যাশ ট্রানজেকশন করার কোন প্রয়োজন হয় না। একজন সদস্য অন্য সদস্যকে ফিজিক্যাল ক্যাশ (টাকা) না দিয়ে সহজে ও নিরাপদে টাকা স্থানান্তর করতে পারে। সারা বিশে^ এখন আর ফিজিক্যাল ট্রানজেকশন হয় না। সারা বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা ক্রেডিট তার সদস্যদের সুবিধার জন্য এই এমএফএস চালু করেছে। এই করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির কারণে মানুষ বাড়ীতে বসে তার প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। এ কঠিন পরিস্থিতিতে এমএফএস মানুষের জীবনকে রাঙ্গীয়ে তুলেছে অনেক। এই সার্ভিসের মাধ্যমে সদস্যগণ তাদের ঋণের তথ্য জানতে পারে এবং এই ঋণের বিপরীতে সুদসহ কত টাকা পরিশোধ করতে হবে তার তথ্যও পাওয়া যায়। এই সার্ভিসের মাধ্যমে সদস্যের ঢাকা ক্রেডিটে কতটি হিসাব রয়েছে, হিসাবে কত টাকা স্থিতি রয়েছে এবং নমিনির তথ্য পাওয়া যায়। সদস্যদের নাম, পিতা-মাতার নামসহ অন্যান্য তথ্য তো রয়েছেই। রয়েছে কার্ডের তথ্য। এমএফএস -এর মাধ্যমে সদস্যগণ তাদের হিসেবের ১ বছরের স্টেটমেন্ট দেখতে পান এবং তা পিডিএফ আকারে সেভ করতে পারেন। এই সার্ভিস পাওয়ার জন্য সদস্যকে একটি নির্ধারিত ফরম পূরণ সাপেক্ষে তার মোবাইল ও ই-মেইল নম্বরটি নিবন্ধন করিয়ে নিতে হয়। একটি মোবাইল নম্বর শুধু একটি হিসাবের জন্য ব্যবহার করা যাবে।
ঢাকা ক্রেডিটের রয়েছে একটি অ্যাপ। এই অ্যাপ মোবাইলে ইন্সটল করলে সদস্যরা ক্রেডিট ইউনিয়ন, মন্ডলী ও দেশ-বিদেশের খবর পড়তে পারে। প্রয়োজনে পেতে পারে অ্যাম্বুলেন্স কল করার সুযোগ। ঢাকা ক্রেডিটের সকল বিজ্ঞপ্তি এই অ্যাপ থেকে পাওয়া যায়। এই অ্যাপ থেকে জানা যায় ঢাকা ক্রেডিটের সঞ্চয়ী ও ঋণ প্রোডাক্টের কথা। ঢাকা ক্রেডিটের বিভিন্ন প্রকল্প পরিচিতিও এই অ্যাপ থেকে পাওয়া যায়। ঢাকা ক্রেডিটের রয়েছে বিভিন্ন সেবাসমূহ। এই সেবাসমূহের বর্ণনা রয়েছে অ্যাপ-এ। ঢাকা ক্রেডিটের কয়টি সেবাকেন্দ্র রয়েছে, কিভাবে সেখানে যোগাযোগ করা যায় তার দিক নির্দেশনাও রয়েছে এই অ্যাপ-এ।
সমবায় ভাবনা-২১
(আজ ঢাকা ক্রেডিটের ৬৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমার এই ক্ষুদ্র নিবেদন)
ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল: সমবায় ইতিহাসে প্রথম হাসপাতাল
বাংলাদেশের সমবায়ের ইতিহাসে প্রথম হাসপাতাল ‘ডিভাইন মার্সি জেনারেল হাসপাতাল।’ হাসপাতালটি দেশের সর্ববৃহৎ ক্রেডিট ইউনিয়ন ‘দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:, ঢাকা সংক্ষেপে ঢাকা ক্রেডিট কর্তৃক গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার নাগরী ইউনিয়নের মঠবাড়ীতে নির্মাণ করা হচ্ছে। হাসপাতাল নির্মাণের পাশাপাশি সেখানে মেডিক্যাল কলেজ ও নার্সিং ইন্সটিটিউট ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হবে। ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটির নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে ৩৫% সম্পন্ন করা হয়েছে। ২০২২ খ্রীষ্টাব্দের শেষার্ধে হাসপাতালটির শুভ উদ্বোধন করা হবে। হাসপাতালটি চালু হলে ঢাকা ক্রেডিটের সদস্যদের পাশাপাশি গাজীপুর, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী জেলাসহ সারা দেশের সর্বস্তরের মানুষকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। হাসপাতালটি ১০০০ জন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।
সমিতির এই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে আমরা আশা করি হাসপাতালটি তার উদ্দেশ্য পূরণে ১০০% সফল হবে।
সমবায় ভাবনা - ২২
ক্রেডিট ইউনিয়নে সঞ্চয়
ক্রেডিট ইউনিয়ন এর সদস্যদের সঞ্চয়ী মনোভাবাপন্ন হতে উৎসাহিত করে এবং এটাই ক্রেডিট ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে অন্যতম। এই সঞ্চয়ী মনোভাবী হওয়ার প্রবনতা সদস্যদের ভবিষ্যতের দিনগুলো সুদৃঢ় করে। বিপদের দিনের বন্ধু হিসেবে পাশে থাকে। তাই প্রতিটি ব্যক্তিকে প্রতি মাসে আবশ্যিকভাবে সঞ্চয় করতে হয়। সঞ্চয়ের সনাতন (আগের) ধারনা ছিলো- মোট আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যা থাকে তা সঞ্চয় করতে হবে। কিন্তু সঞ্চয়ের এই ধারনা এখন পরিবর্তন হয়েছে। এখন সঞ্চয়ের ধারনা হলো- মোট আয় থেকে সঞ্চয় বাদ দেয়ার পর যা থাকবে তা ব্যয় করতে হবে। এখন সব ক্রেডিট ইউনিয়ন সঞ্চয়ের উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে। অনেক ক্রেডিট ইউনিয়ন শেয়ারের পাশাপাশি সঞ্চয়ী হিসাবে জমা দেয়ার বিষয়টিকেও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে। ক্রেডিট ইউনিয়ন যেহেতু বাইরে থেকে ফান্ড আনে না সেহেতু ক্রেডিট ইউনিয়নে শেয়ারের পাশাপাশি সঞ্চয়ী হিসাব না থাকলে ফান্ডের অভাবে ঋণ দেয়াও যায় না। তাই সঞ্চয়ী হিসাবে জমা করা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৩/০৭/২০২১
ভালো লেগেছে।