www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম (৬৮-৭০)

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম (৬৮)!
কানামাছি খেলা!
আমরা আগে কানামাছি খেলতাম। খুবই ভাল লাগতো। এখন সেই সব দিনের কথা মনে পড়লে মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে দর দর করে জল পড়ে যায়। এই খেলায় দুটি পক্ষ থাকে। একটি কানা ও অন্যটি মাছি। তবে এই খেলার নাম কানামাছিরা হলে মনে হয় যথাযথ হত। কারণ এখানে কানা থাকে একজন এবং মাছি থাকে অনেক জন। তাই কানামাছিরা হলে আসলেই সঠিক হত। এই খেলায় কানা আসলে কানা নয়। তাকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে কানা বানানো হয়। আর মাছিরা কানার চারিদিকে ঘুরাঘুরি করে, কিন্তু কানার কাছে ধরা দেয় না। আর কানার কাজ মাছিদের ধরা। একজনকে ধরলে সে খেলা থেকে বাদ হয়ে যেত। অনেকবার আমাকে কানা সাজতে হয়েছে। চোখগুলো গামছা দিয়ে এমনভাবে বাঁধতো যে, চোখ একেবারে ব্যাথা হয়ে যেত। তবে আমি মাছিদের অনেক কষ্টে রাখতাম। যেহেতু অনেক মাছি থাকতো সেহেতু যে কোন একদিন জোরে দৌড় দিতাম আর যে কোন একটি মাছিকে ধরে ফেলতাম। মাঝে মাঝে দৌড় দিতে গিয়ে মাটিতে পড়ে যেতাম। তবে আবার পরক্ষণে উঠেই খেলা শুরু করতাম। এভাবে খেলতে খেলতে কখন যে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে যেত টেরই পেতাম না। মার বকুনিতে অগত্যা খেলা শেষ করতে হত। কিন্তু খেলার রেস অনেকক্ষণ থাকতো। আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম !
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম (৬৯)!
টুকুরী-টুকুরী খেলা
আমরা আগে টুুকুরী-টুকুরী খেলতাম। গ্রামের মানুষ এই খেলাটি সম্পর্কে ভালো জানেন। আমরা ছোটকালে এই খেলাটি খেলেছি অনেক। তবে এখন এই ধরনের খেলা গ্রামগঞ্জে তেমন একটা দেখা যায় না। ইন্টারনেটেও নেই এই খেলা সম্পর্কে তেমন কিছু । এই খেলাটি অনেকটা ইচ্ছা করে লুকিয়ে থাকা এবং খুঁজে বের করার খেলা। এই খেলায় দুটি পক্ষ থাকে। একপক্ষ ইচ্ছায় লুকিয়ে থাকে এবং আরেকপক্ষ তাকে খুঁজে বের করে। আমরা সমবয়সী অনেক ছেলে-মেয়ে ছিলাম যারা এ খেলাটি বেশী পছন্দ করতাম। আমরা একদল বিভিন্নজায়গায় লুকিয়ে থাকতাম। কেউ চৌকির তলায়, কেউ আলমারীর পিছনে, কেউ খেরে পাড়ার পিছনে, কেউ পাট ক্ষেতে লুকিয়ে থাকতাম। আর আরেকদল হন্যে হয়ে খুঁজতো লুকিয়ে থাকাদের। আর কোনভাবে যদি লুকিয়ে থাকা ব্যক্তিকে পেয়ে যেতাম তবে কি যে অট্ট হাসি দিতাম, যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়ে যেতাম। এভাবে কেটে যেত আমাদের মিষ্টি-মধুর সময়গুলো। আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম !

আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম (৭০)!
পানিতে ডুব দিয়ে মাছ ধরা
আমাদের বাড়ীর চারিদিকে প্রায় ৬ মাস পানি বেষ্টিত ছিলো। এই পানিতে থাকতো রূপালী মাছ। আমরা প্রতিদিন প্রকৃতির এই দান ‘মাছ’ ধরতাম। কোন টাকা পয়সা লাগতো না! বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আমরা এই মাছ ধরতাম। এর একটি হল পানিতে ডুব দিয়ে মাছ ধরা। তখন আমাদের অনেক দম ছিলো অর্থাৎ পানিতে ডুব দিয়ে অনেকক্ষণ থাকতে পারতাম। যারা পানি বেষ্টিত এলাকায় থাকে তাদের প্রায় সবা্রই একই অবস্থা ছিলো। অর্থাৎ প্রকৃতগত কারণে সবারই বেশী দম ছিলো। এ যেন প্রকৃতির উজার করা এক মহা দান মানব জাতির জন্য। যেন প্রকৃতির অকৃত্রিম এক ভালবাসা প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের প্রতি। এ যেন এক প্রকান্ড শক্তি যা মানুষকে উজ্জীবিত করে রাখে। আবার প্রকৃতির সংস্পর্শে না থাকলে, এই শক্তি আপনা আপনি বিলীন হয়ে যায়। এই দম যার বেশী থাকতো সেই বেশী সময় পানিতে ডুব দিয়ে থাকতে পারতো এবং বেশী বেশী মাছ ধরতে পারতো। পানিতে ডুব দিয়ে মাছ ধরতে ধরতে অনেক নেশা ধরে যেত। মাছ ধরা ছাড়া আর কিছুই বুঝতাম না। এই মাছ ধরতে ধরতে কখনো স্কুলে যাওয়ার সময় পার হয়ে যেত, আর দেরী করে স্কুলে যাওয়ার জন্য পিঠে বেত্রাঘাত যে কত পড়েছে এর কোন হিসাব নেই। আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৮৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৪/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ন্যান্সি দেওয়ান ২৮/০৪/২০২১
    Darun
  • রেদোয়ান আহমেদ ২৬/০৪/২০২১
    আহা সুনীল সেসব দিনগুলো।
  • ভাল লিখেছেন। ধন্যবাদ।
  • সুব্রত ব্রহ্ম ২৪/০৪/২০২১
    অসামান্য লেখা।
  • কানামাছি খেলার কথা খুব মনে পড়ে।
  • ফয়জুল মহী ২৩/০৪/২০২১
    দারুণ , শুভকামনা থাকলো
 
Quantcast