আমাদের ছোট্ট গ্রাম
আগে স্কুলে পড়াবস্থায় প্রায়ই ‘আমাদের গ্রাম’ নিয়ে রচনা লিখতাম। বিশেষ করে পরীক্ষার সময় রচনা লিখে মন ভরেনি। বাংলা দ্বিতীয়পত্রে রচনা লিখতে হত। পরীক্ষা শুরু হলে প্রথমে ব্যাকরণ লিখতাম। কারণ ব্যাকরণে সাক্কা নম্বর পাওয়া যায়। সাক্কা নম্বর অর্থ পূর্ণ নম্বর। অর্থাৎ ১০ থেকে ১০। রচনা লিখতাম সবার শেষে । কারণ রচনা যত ভালই লিখতাম, কিন্তু সাক্কা নম্বর পাওয়া যেত না। স্যারেরা কিছু নম্বর কেটে ফেলতেন। রচনা অর্ধেক লিখলেই পরীক্ষা শেষের ঘন্টা টন টন করে বেজে উঠতো। আর তখন লেখার গতি দিতাম বাড়িয়ে। স্যারকে অনুরোধ করে, অনুনয় বিনয় করে আরও ২/১ মিনিট লিখতাম। কিন্তু শেষে স্যার টেনে খাতা নিয়ে নিতেন। মন ভরে লিখতে পারতাম না।
যাই হোক, আজ একটু মনে হল- আমাদের গ্রামকে নিয়ে কিছু লেখার। জানি না কতটুকু লিখতে পারবো। গ্রামের নাম হাড়িখোলা। মাত্র চারটা বাড়ী নিয়ে এই গ্রাম। করিগ বাড়ী, মদন বাড়ী, ঠাকুর বাড়ী ও বলাই বাড়ী। এখন অবশ্য আরও দুটি বাড়ী বেড়েছে। করীগ বাড়ী থেকে ৩টি পরিবার গিয়ে এই দুটি অতিরিক্ত বাড়ী করেছে। এতো ক্ষুদ্র গ্রাম পৃথিবীতে আরো আছে কি না আমার জানা নেই। মানুষ ভুল করে আমাদের গ্রামের নাম বলে ‘আড়িখোলা’। ‘আড়িখোলা’ আসলে রেলষ্টেশনের নাম। অনেক কষ্ট করে মানুষকে বুঝাতে হয়- আমাদের গ্রাম ‘আড়িখোলা’ নয়, ইহা ‘হাড়িখোলা’। আমাদের গ্রাম এক্কেবারে পাত্তুরী বিলের ধারে। পাশে রয়েছে শীতলক্ষ্যা নদী। শীতলক্ষ্যা নদীর বাতাস যখন পাত্তুরী বিল হয়ে গায়ে লাগে তখন অসুস্থ্য মন একেবারে সতেজ হয়ে যায়। দক্ষিণা হাওয়া যখন আসতে থাকে তখন কবিগুরুর বিখ্যাত গান ‘তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে.......’ গাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
একটু কষ্টের কথা বলি, বেরিবাঁধ দিয়ে আমাদের গ্রামের যৌবন অনেকটা নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এখন একটা একঘেয়েমি বিরাজ করছে আমাদের গ্রামে। শুধুই ধু ধু মাঠ। কিন্তু আগে ইহা এরকম ছিলো না। আগে গ্রামে ছয় মাস জল ও ছয় মাস স্থল ছিলো। পানি আসলে আমাদের গ্রামটি পূর্ণ যৌবন ফিরে পেত। পানিতে থাকতো নানা ধরনের মাছ। এই মাছ খেয়ে আমরা গ্রামবাসী পুষ্ঠি নিবারণ করতাম। পানি শুকালে তো বোরে ধান ছিলোই। পানির উপর থাকতো নৌকা ও কুন্দা। ভরা মৌসুমে আমাদের বিলটাকে একটা সাজানো বাগানের মত লাগতো। মনে হত কোন শিল্পী যেন মনের মাধূরী মিশিয়ে এই গ্রামের ছবি এঁকে দিয়েছেন। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে্যর গ্রাম আর কোথাও পাওয়া যাবে না।
আমাদের গ্রামের মানুষগুলো খুবই সরল সোজা। বেশীরভাগের পেশা কৃষক। সামাজিক বন্ধন আমাদের সুদৃঢ়। একের বিপদে অন্যে একেবারে ঝাঁপিয়ে পরে। একেবারে নিখাদ ভালবাসা। আমাদের গ্রাম থেকে স্কুল অনেক দূর। তাই রোদ-বৃষ্টিতে আমাদের অনেক কষ্ট করে স্কুলে যেতে হয়েছে। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ লোক শিক্ষিত। অনেকে ভালো ভালো চাকরি-বাকরি করে। স্কুল মাষ্টার রয়েছে কয়েকজন। মাষ্টারর্ ডিগ্রীধারীও রয়েছে কয়েক জন। এজন্য আমরা গরবিত। দু’চার জন স্বপ্নের দেশ মেরিকাতেও আছে। আপনাদের জানিয়ে রাখি, ইদানিং আমাদের গ্রামে একটি কীতর্ন দল হয়েছে। কয়েক বছর হল- দলটি গঠিত হয়েছে। দলটি প্রতি বড়দিনে বাড়ী বাড়ী কীতর্ন করে ফান্ড গঠন করে। আমাদের রয়েছে বেশ কয়েকজন অভিনেতা। তবে বেশী অভিনেতা না থাকার কারণে নাটক নামাতে পারি না। পাশের পিপ্রাশৈর ও বোয়ালী গ্রামের সাথে মিশে বেশ কয়েকটা নাটক করেছি। নাটকগুলো জনপ্রিয়তাও পেয়েছে বিপুলভাবে।
আমাদের গ্রাম ছোট্ট হওয়ায় কোন স্কুল নেই, কলেজ নেই, পোষ্ট অফিস নেই। এগুলো থাকলে লেখাটি আরেকটু বড় করতে পারতাম। শেষে একটি কথা বলে রাখি, আমাদের গ্রামে সবই আছে, আছে বিভিন্ন সংগঠন, গানের দল, তবে এককভাবে নয়, পিপ্রাশৈর ও বোয়ালী গ্রামের সাথে মিলে। এটাও আমাদের গ্রামের একটি বৈশিষ্ট্য বলা যায়!
০৭.০৪.২১
যাই হোক, আজ একটু মনে হল- আমাদের গ্রামকে নিয়ে কিছু লেখার। জানি না কতটুকু লিখতে পারবো। গ্রামের নাম হাড়িখোলা। মাত্র চারটা বাড়ী নিয়ে এই গ্রাম। করিগ বাড়ী, মদন বাড়ী, ঠাকুর বাড়ী ও বলাই বাড়ী। এখন অবশ্য আরও দুটি বাড়ী বেড়েছে। করীগ বাড়ী থেকে ৩টি পরিবার গিয়ে এই দুটি অতিরিক্ত বাড়ী করেছে। এতো ক্ষুদ্র গ্রাম পৃথিবীতে আরো আছে কি না আমার জানা নেই। মানুষ ভুল করে আমাদের গ্রামের নাম বলে ‘আড়িখোলা’। ‘আড়িখোলা’ আসলে রেলষ্টেশনের নাম। অনেক কষ্ট করে মানুষকে বুঝাতে হয়- আমাদের গ্রাম ‘আড়িখোলা’ নয়, ইহা ‘হাড়িখোলা’। আমাদের গ্রাম এক্কেবারে পাত্তুরী বিলের ধারে। পাশে রয়েছে শীতলক্ষ্যা নদী। শীতলক্ষ্যা নদীর বাতাস যখন পাত্তুরী বিল হয়ে গায়ে লাগে তখন অসুস্থ্য মন একেবারে সতেজ হয়ে যায়। দক্ষিণা হাওয়া যখন আসতে থাকে তখন কবিগুরুর বিখ্যাত গান ‘তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে.......’ গাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
একটু কষ্টের কথা বলি, বেরিবাঁধ দিয়ে আমাদের গ্রামের যৌবন অনেকটা নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এখন একটা একঘেয়েমি বিরাজ করছে আমাদের গ্রামে। শুধুই ধু ধু মাঠ। কিন্তু আগে ইহা এরকম ছিলো না। আগে গ্রামে ছয় মাস জল ও ছয় মাস স্থল ছিলো। পানি আসলে আমাদের গ্রামটি পূর্ণ যৌবন ফিরে পেত। পানিতে থাকতো নানা ধরনের মাছ। এই মাছ খেয়ে আমরা গ্রামবাসী পুষ্ঠি নিবারণ করতাম। পানি শুকালে তো বোরে ধান ছিলোই। পানির উপর থাকতো নৌকা ও কুন্দা। ভরা মৌসুমে আমাদের বিলটাকে একটা সাজানো বাগানের মত লাগতো। মনে হত কোন শিল্পী যেন মনের মাধূরী মিশিয়ে এই গ্রামের ছবি এঁকে দিয়েছেন। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে্যর গ্রাম আর কোথাও পাওয়া যাবে না।
আমাদের গ্রামের মানুষগুলো খুবই সরল সোজা। বেশীরভাগের পেশা কৃষক। সামাজিক বন্ধন আমাদের সুদৃঢ়। একের বিপদে অন্যে একেবারে ঝাঁপিয়ে পরে। একেবারে নিখাদ ভালবাসা। আমাদের গ্রাম থেকে স্কুল অনেক দূর। তাই রোদ-বৃষ্টিতে আমাদের অনেক কষ্ট করে স্কুলে যেতে হয়েছে। আমাদের গ্রামের অধিকাংশ লোক শিক্ষিত। অনেকে ভালো ভালো চাকরি-বাকরি করে। স্কুল মাষ্টার রয়েছে কয়েকজন। মাষ্টারর্ ডিগ্রীধারীও রয়েছে কয়েক জন। এজন্য আমরা গরবিত। দু’চার জন স্বপ্নের দেশ মেরিকাতেও আছে। আপনাদের জানিয়ে রাখি, ইদানিং আমাদের গ্রামে একটি কীতর্ন দল হয়েছে। কয়েক বছর হল- দলটি গঠিত হয়েছে। দলটি প্রতি বড়দিনে বাড়ী বাড়ী কীতর্ন করে ফান্ড গঠন করে। আমাদের রয়েছে বেশ কয়েকজন অভিনেতা। তবে বেশী অভিনেতা না থাকার কারণে নাটক নামাতে পারি না। পাশের পিপ্রাশৈর ও বোয়ালী গ্রামের সাথে মিশে বেশ কয়েকটা নাটক করেছি। নাটকগুলো জনপ্রিয়তাও পেয়েছে বিপুলভাবে।
আমাদের গ্রাম ছোট্ট হওয়ায় কোন স্কুল নেই, কলেজ নেই, পোষ্ট অফিস নেই। এগুলো থাকলে লেখাটি আরেকটু বড় করতে পারতাম। শেষে একটি কথা বলে রাখি, আমাদের গ্রামে সবই আছে, আছে বিভিন্ন সংগঠন, গানের দল, তবে এককভাবে নয়, পিপ্রাশৈর ও বোয়ালী গ্রামের সাথে মিলে। এটাও আমাদের গ্রামের একটি বৈশিষ্ট্য বলা যায়!
০৭.০৪.২১
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ন্যান্সি দেওয়ান ১৩/০৪/২০২১Darun
-
এম এম হোসেন ০৯/০৪/২০২১ভালো
-
নাসরীন আক্তার রুবি ০৮/০৪/২০২১প্রতিটি গ্রামের গল্পই এক। ভাল লাগল।
-
নীলা ০৮/০৪/২০২১আমার গ্রাম সত্তি অসাধারন
-
সাইয়িদ রফিকুল হক ০৮/০৪/২০২১গ্রামের কথা মনে পড়ে গেল!
-
ফয়জুল মহী ০৮/০৪/২০২১অনন্য প্রকাশ
-
মাহতাব বাঙ্গালী ০৮/০৪/২০২১গ্রামের সুন্দর বর্ণনা; ভালো লেগেছে
-
আব্দুর রহমান আনসারী ০৭/০৪/২০২১গ্রামের প্রতি অসাধারণ ভালোবাসা আর মমত্ব জড়িয়ে খুব খুব সুন্দর লেখা