www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুনরুত্থান পর্বের শিক্ষা

রবিবারদিন খুব ভোরেই যীশুর শিষ্যরা তাঁর সমাধিস্থানে এলেন। তাঁরা দেখতে পেলেন, পাথরখানা (যা দ্বারা সমাধির মুখ বন্ধ করা হয়েছিল) যীশুর সমাধিগুহার মুখ থেকে একপাশে গড়িয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তখন তাঁরা ভেতরে ঢুকলেন, তবে সেখানে তাঁরা প্রভু যীশুর মৃতদেহটি খুঁজে পেলেন না। সেই সময় বিদ্যুতের মত উজ্জ্বল পোশাক-পরা কারা দু’জন এসে তাঁদের জানালেন- ‘যিনি জীবিতই আছেন, তাঁকে তোমরা মৃতদের মধ্যে খুঁজে বেড়াচ্ছ কেন? তিনি এখানে নেই, তিনি তো পুনরুত্থিত হয়েছেন।’ (লুক ২৪ঃ৫)
পৃথিবী যখন বিভিন্ন পাপ-পঙ্কিলতায় ছেয়ে গিয়েছিল, মানুষে-মানুষে হিংসা, দ্ব›দ্ব ও বিদ্বেষ যখন চরম আকার ধারণ করেছিলো, ভাইয়ে ভাইয়ে যখন যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগে গিয়েছিল, ঠিক তখনই মানব বেশ ধারন করে যীশু খ্রীষ্ট নামের মহামানব এই ধরাতে ‘শান্তির বাণী’ নিয়ে আগমন করেছেন। তাঁর এ আগমন ত্যাগ, সরলতা ও নম্্রতার এক মহান আদর্শ স্থাপন করে গেছে এ পৃথিবীতে, যা দ্বিতীয়টি নেই। তাঁর এ শান্তির বাণী মানুষকে পাপ পংকিল পথ পরিহার করে সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে সর্বদা শিক্ষা দিয়েছে, সহযোগিতা করেছে। তাঁর প্রদর্শিত পথই ছিলো সর্বোৎকৃষ্ট। কিন্তু বিপদগামী ইহুদীরা যীশু খ্রীস্টের ভালো কাজ সহ্য করতে পারেনি। তারা ফন্দি আটতে থাকে কিভাবে তাঁকে হত্যা করা যায়। আর এ হত্যা হতে হবে ক্রুশীয় এবং যা সবার কাছে লজ্জাজনক। আর হলো ও তাই। তারা যীশুকে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা করলো। এমন কোন যন্ত্রনা/যাতনা নেই, যা তারা যীশুকে দেয়নি। কিন্তু মৃত্যুর তৃতীয় দিনে তিনি মৃত্যুকে জয় করে স্বর্গারোহন করেছেন অর্থাৎ তিনি পুনরুত্থান করেছেন। তিনি হয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়ি। আজকের এ শুভ এদিনটি পৃথিবীর খ্রীষ্টান জনসাধারণ ‘পুনরুত্থান রবিবার’, ‘পাস্কা পর্ব’ অথবা ‘ইস্টার সানডে’ হিসেবে পালন করে। এ দিন পৃথিবীর খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ, তাঁদের ত্রাণকর্তা যীশু খ্রীষ্ট আজকের দিনে অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন। তিনি মৃত্যুকে পরাজিত করে বিজয়ী বেশে স্বর্গধামে, পরম পিতার কাছে আশ্রয় নিয়েছেন। মৃত্যুকে জয় করা খুবই কঠিনতম কাজ। এটা কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়। কিন্তু প্রভু যীশু খ্রীষ্ট এ জগতে, প্রমাণ করে গেছেন যে, এ জগতে বিশ্বাস, আশা, সততা, দৃঢ়তা ও প্রেমের মাধ্যমে মানুষের জন্যে ভালো কাজ করলে, পবিত্র জীবন যাপন করলে মৃত্যুকেও জয় করা অসম্ভব কিছুই নয়।
কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা বড়ই বিরূপ এবং কঠিন। প্রকৃতপক্ষে, বাস্তব জীবনে আমরা সর্বদাই বড় কিছু/বেশী কিছু/ভালো কিছু পেতে অত্যন্ত আগ্রহী। স্বার্থপরতা, বড় এবং সুন্দর দ্রব্যের প্রতি লোভ আমাদের ক্রমেই বিপদগামী করছে এবং ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ স্বার্থপরতা দানা বাঁধতে থাকলে পৃথিবী একদিন জনমানব বাস অনুপযোগী হয়ে ধবংস হয়ে যাবে এবং যীশু খ্রীষ্টের মহান আত্মত্যাগের মূল্য কোথাও পাওয়া যাবে না।
ইস্টার সানডে বা পাস্কা পর্বে আমরা যীশুর রেখে যাওয়া উজ্জ্বল দৃষ্টান্তগুলো বাস্তবায়িত করার কাজে ব্রতী হবো, এটাই মূল কথা। করোনা ভাইরাসের ফলে পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। মৃতদেহ ফেলে মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। এ সময় যীশুর শিক্ষা অনুসারে মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। পাস্কা পর্বে কোন ধরনের চাকচিক্য বা বাহুল্যতা বা দামী পোশাকের বাহার চলে না। অথচ আমরা তাই করিছ। পাস্কা পর্বে আমরা মজার মজার খাবার খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু আমরা গরীবদের সাথে সে খাবার সহযোগিতা করি না। এধরনের কাজ কোন ক্রমেই পাস্কা পর্বের অর্থকে তাৎপর্যপূর্ণ করতে পারে না। পাস্কা পর্বের অর্থ হতে হবে সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সরলতা, নম্্রতা ও ত্যাগস্বীকারের। একজনে খাবে অন্য জন উপোস থাকবে, এটা হলে পাস্কা পর্বের যথার্থতা প্রকাশ পায় না। মোট কথা, পাস্কা পর্বে সবাইকে মনেপ্রাণে বড় মানুষ ও সাদা মনের মানুষ হতে হবে, হতে হবে ত্যাগের, সরলতার ও নম্রতার মানুষ। তবেই যীশু খ্রীষ্ট আমাদের মধ্যে বিরাজ করবেন এবং পাস্কা পর্ব হবে স্বার্থক ও মহিয়ান।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩৫৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৩/০৪/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast