আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম
এই গানের কথাগুলো মনে ধারণ করলেই আগের দিনের কথা আমাদের মনে স্থান করে নেয়। আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম! আসলেই আগের দিনগুলো আনেকটা সহজ-সরলভাবে কেটে যেতো। বর্তমানের কুটিলতার লেশমাত্র আমাদের আগের দিনের জীবনে ছিলো না। এখন চিন্তা করলে মনে হয়, আগের জীবনটা যেন অন্যের সহযোগিতায় ভরপুর ছিলো। মনে পড়ে, আগে বেশীরভাগ খাবারই অন্যের বাড়ীতে বা ঘরে খেয়েছি। পাশের ঘরে মুড়ি ভাজলে সেখান থেকে চেয়ে গরম গরম মুড়ি খেতাম। কি আনন্দই না লাগতো! নিজেদের বরই গাছ থাকলেও অন্যের বাড়ীর বরই গাছের প্রতি আমাদের নজর বেশী থাকতো। অন্যের গাছের বরই খাওয়ার মজাটাই আলাদা ছিলো। অন্যের গাছের বরই খেতে গেলে বড় জোর একটা দৌড়ানী খেতে হত, এর চেয়ে বেশী কিছু নয়। অন্যদিকে অন্য বাড়ীর ছেলেরা আমাদের গাছের বরইও যে ১০০% খেয়ে ফেলত, এতেও কোন সন্দেহ ছিলো না। এভাবে পাল্টা-পাল্টি খাওয়া-খাওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের জীবনটা অনেক রঙ্গীন হতো। কোন উৎসবের দিনে নিজের বাড়ীতে খাওয়া-দাওয়া করার কোন সুযোগই হতো না। অন্যের বাড়ীতে খেয়ে-দেয়ে পেট ভরপুর থাকতো । আবার আমাদের বাড়ীর খাবার অন্য বাড়ীর লোকজন খেয়ে যেত। এভাবে চলতো আমাদের আগের সহযোগিতার জীবন। আমরা দিনের পর দিন তাস খেলে কাটিয়ে দিতাম। এ তাস আসল তাস খেলা নয়। এ তাস হল সিগারেটের কভার দিয়ে খেলা। চাড়া চাল দিয়ে আমরা সিগারেটের কভার আদান প্রদান করতাম। যেই সিগারেটের কভার যত বেশী সুন্দর ছিলো তার দাম তত বেশী ছিলো। এই খেলায় মতবিরোধ হলে পুরস্কার হিসেবে দু’একটা চড়-থাবর কপালে জুটতো। এর বেশী কিছু না! কিন্তু এখন আমাদের নিজেদের মধ্যে কোন মতবিরোধ হলে তা মামলা-মোকদ্দমায় রূপ নেয়। কই চড়-থাবর আর কই মামলা-মোকদ্দমা। আমরা কোথা থেকে কোথায় চলেছি, নিজেরা বুঝতে পারছি না। যেন ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল অবস্থা আর কি! আমরা সরল থেকে কুটিলে চলে গিয়েছি। আমি ছোট থেকে বড় হওয়ার সময়কালে আমাদের বাড়ীতে কোন পুলিশ যেতে দেখিনি। আগে কোন বাড়ীতে পুলিশ যেতে দেখলে তা ভাল চোখে দেখা হত না সামাজিক বাস্তবতার জন্যই । আমরা রাস্তায় পুলিশ দেখলে ভয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে চলতাম। এর কারণ জানি না। আমি প্রথম যখন পাসপোর্ট করি তখন আমার বাড়ীতে পুলিশ যায় ভেরিফিকেশন করার জন্য। তখন আমার মা আতংকে আতকে উঠে। আমার মা’র ধারণা ছিলো, আমি হয়তো বা কোন খারাপ কাজের সাথে জড়িত হয়ে গেছি বিধায় বাড়ীতে পুলিশ এসেছে। পরে আমার মা অবশ্য প্রকৃত ঘটনা বুঝতে পেরেছিলেন। এখানে বিষয়টা উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল- মানুষ যে তখন কত সহজ-সরল ছিলো তা বুঝানোর জন্য। এখন অবশ্য সেই দিন আর নেই। এখন মানুষ বাঘকে ভয় পায় না, পুুলিশ তো দূরের কথা!
গতকাল পুরান ঢাকার ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব দেখে আমি অভিভূত হয়ে আমার শৈশবে ফিরে গেলাম। শৈশবে আমরাও অনেক ঘুড়ি উড়িয়েছি। ঘুড়ি উড়ানো আমাদের নিত্য দিনের কাজ ছিলো। তখন বিভিন্ন রকম ঘুড়িতে আকাশ রঙ্গীন হয়ে যেত। দিনের বেলায় মনে হত আকাশে চাঁদের সমারোহ! আমরা দুই ধরনের ঘুড়ি উড়াতাম। লেজ ছাড়া ও লেজসহ। লেজবিহীন ঘুড়ি বানাতে একটু কষ্ট হত। মেজারমেন্ট ঠিক রাখতে হত। তা না হলে উড়তো না। লেজওয়ালা ঘুড়ি বানানো অপেক্ষাকৃত সহজ। মেজারমেন্টে একটু এর-ফের হলেও লেজ থাকাতে ঘুড়ি উড়তো। এই ঘুড়িগুলো আমরা নিজেরাই বানাতাম। তখন ঘুড়ি কিনতে পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন অনেক ঘুড়ি কিনতে পাওয়া যায়। ঘুড়ি নিজেরা বানিয়ে উড়ানোর মধ্যে একটা মাহাত্ম ও আন্তরিকতা থাকতো যা কেনা ঘুড়ির মধ্যে থাকে না। আর একটি ঘুড়ি যদি হাতছাড়া হতো তবে দু:খে মনটা ভরে যেত এবং কষ্টে রাতে ঘুম হতো না। তখন সমবয়সী অনেকে মিলে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা করতাম। কার ঘুড়ি কত বেশী উচুঁতে উঠতো এবং কার ঘুড়ির সুতা কে কেটে দিতে পারতো, এমন প্রতিযোগিতা। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় থাকতো গ্রামের সবুজ আনন্দ! কখনও নিজেদের মধ্যে ছোট-খাট বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগে যেত। কিন্তু পরক্ষণেই আবার গলাগলি ধরে মিলে যেতাম। এটাই ছিলো আমাদের নিখাদ আনন্দের বিষয়! আমরা শুধু ঘুড়িই উড়াতাম না, সাথে আমরা ঢাউসও উড়াতাম এবং জীবনকে অন্যভাবে উপভোগ করতাম।
- স্বপন রোজারিও, 15/1/21
গতকাল পুরান ঢাকার ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব দেখে আমি অভিভূত হয়ে আমার শৈশবে ফিরে গেলাম। শৈশবে আমরাও অনেক ঘুড়ি উড়িয়েছি। ঘুড়ি উড়ানো আমাদের নিত্য দিনের কাজ ছিলো। তখন বিভিন্ন রকম ঘুড়িতে আকাশ রঙ্গীন হয়ে যেত। দিনের বেলায় মনে হত আকাশে চাঁদের সমারোহ! আমরা দুই ধরনের ঘুড়ি উড়াতাম। লেজ ছাড়া ও লেজসহ। লেজবিহীন ঘুড়ি বানাতে একটু কষ্ট হত। মেজারমেন্ট ঠিক রাখতে হত। তা না হলে উড়তো না। লেজওয়ালা ঘুড়ি বানানো অপেক্ষাকৃত সহজ। মেজারমেন্টে একটু এর-ফের হলেও লেজ থাকাতে ঘুড়ি উড়তো। এই ঘুড়িগুলো আমরা নিজেরাই বানাতাম। তখন ঘুড়ি কিনতে পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন অনেক ঘুড়ি কিনতে পাওয়া যায়। ঘুড়ি নিজেরা বানিয়ে উড়ানোর মধ্যে একটা মাহাত্ম ও আন্তরিকতা থাকতো যা কেনা ঘুড়ির মধ্যে থাকে না। আর একটি ঘুড়ি যদি হাতছাড়া হতো তবে দু:খে মনটা ভরে যেত এবং কষ্টে রাতে ঘুম হতো না। তখন সমবয়সী অনেকে মিলে ঘুড়ি উড়ানোর প্রতিযোগিতা করতাম। কার ঘুড়ি কত বেশী উচুঁতে উঠতো এবং কার ঘুড়ির সুতা কে কেটে দিতে পারতো, এমন প্রতিযোগিতা। এ ধরনের প্রতিযোগিতায় থাকতো গ্রামের সবুজ আনন্দ! কখনও নিজেদের মধ্যে ছোট-খাট বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগে যেত। কিন্তু পরক্ষণেই আবার গলাগলি ধরে মিলে যেতাম। এটাই ছিলো আমাদের নিখাদ আনন্দের বিষয়! আমরা শুধু ঘুড়িই উড়াতাম না, সাথে আমরা ঢাউসও উড়াতাম এবং জীবনকে অন্যভাবে উপভোগ করতাম।
- স্বপন রোজারিও, 15/1/21
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
কাজী জহির উদ্দিন তিতাস ১৬/০১/২০২১অসাধারণ লিখেছেন